অনিমেষ চক্রবর্তী | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসসি, এমএসসি, পিএইচডি) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | সবর্গীয় জটিল যৌগ |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | সাধন বসু |
অন্যান্য উচ্চশিক্ষায়তনিক উপদেষ্টা | এফ আলবার্ট কটন রিচার্ড এইচ হোলম |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | অখিল রঞ্জন চক্রবর্তী |
অনিমেষ চক্রবর্তী (জন্ম ৩০ জুন ১৯৩৫) একজন বাঙালি ভারতীয় রসায়ন বিজ্ঞানী। তিনি মূলত অজৈব রসায়ন নিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৭৫ সালে সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ কাউন্সিল কর্তৃক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য রসায়নে শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পান।[১][২]
অনিমেষ চক্রবর্তীর জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। বাবা যোগেন্দ্র চন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ। মায়ের নাম ছিল তরুবালা। ছয় সন্তানের মধ্যে অনিমেষ সবচেয়ে বড়।[২] ছোটবেলা থেকেই তার বাবা তাকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুপ্রাণিত করতেন। শহরের এডওয়ার্ড স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর তিনি মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে পড়াশোনা করেন। ভারতের স্বাধীনতা ও বঙ্গভঙ্গের পর অনিমেষের পরিবার ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গই ছিলেন। পরে তারা ময়মনসিংহ ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন।[২] কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর ১৯৫০ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। যেখান থেকে তিনি ১৯৫২ সালে বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর রসায়নে সাম্মনিক ডিগ্রি লাভ করেন।[২]
রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হন[৩]। এই সময় তিনি অজৈব রসায়নের কোয়ান্টাম বন্ধন তত্ত্ব এবং স্পেকট্রোস্কোপির মতো বিশ্লেষণাত্মক বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৫৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করার পর, তিনি মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজ এবং বিদ্যাসাগর কলেজে স্নাতক স্তরে রসায়নের শিক্ষকতা করেন। পিএইচডি ডিগ্রির জন্য বিখ্যাত পলিমার রসায়নবিদ সাধন বসুর গবেষণা দলে যোগদান করেন। সাধন বসুর তত্ত্বাবধানে তিনি সমবর্তিত দৃশ্যমান আলোতে তামা, নিকেল এবং ক্রোমিয়ামের জটিল যৌগের একক-কেলাসের বর্ণালী নির্ধারণ করেন। পরে লিগ্যান্ড ফিল্ড থিওরি পরিপ্রেক্ষিতে ঐ বর্ণালিগুলিকে ব্যাখ্যা করেন। লিগ্যান্ড হলো একটি আয়ন বা অণু যা একটি কেন্দ্রীয় ধাতু পরমাণুর সাথে বন্ধনে যুক্ত হয়ে একটি জটিল যৌগ গঠন করে। ১৯৫৯-৬০ সালে অনিমেষ এবং সাধন বসু নেচার এবং জার্নাল অফ কেমিক্যাল ফিজিক্স পত্রিকায় যুগ্মভাবে তিনটি গবেষণাপত্রে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেন।[২] নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র দুটির বিষয় ছিল তামার চতুষ্কৌনিক জটিল যৌগ নিয়ে।[৪][৫] জার্নাল অফ কেমিক্যাল ফিজিক্স পত্রিকায় প্রকাশিত অন্য গবেষণা পত্রটি ছিল ক্রোমিয়াম ট্রিস -অ্যাসিটাইলঅ্যাসিটোন নামে একটি রাসায়নিক যৌগের বর্ণালী বিশ্লেষণ নিয়ে।[৬] গবেষণাপত্রগুলি অনিমেষের গবেষণা উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এর জন্য তিনি ১৯৬১ সালে পিএইচ.ডি. লাভ করেন।[২] এরপর তিনি সোনার জটিল রাসায়নিক যৌগের কলয়েড রসায়নের উপর স্বাধীনভাবে গবেষণা করেন। তার কাজ জার্নাল অফ কেমিক্যাল ফিজিক্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।[৭] সোনার জটিল রাসায়নিক যৌগের গবেষণার জন্য সোনা এসেছিল তার মায়ের দেওয়া ভাঙা অলঙ্কার থেকে।[২]
তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনে জিওফ্রে উইলকিনসনের কাছে এবং এমআইটি-তে উইলকিনসনের ছাত্র এফ অ্যালবার্ট কটনের কাছে পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ করার প্রস্তাব পান। ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বর মাসর শেষের দিকে তিনি অ্যালবার্ট কটনের গবেষক দলে যোগ দেন। এই গবেষক দলে থাকার সময় তিনি ইমিডাজোল ডেরিভেটিভের ত্রিমাত্রিক ধাতব জটিল রাসায়নিক যৌগের স্থিতিশীলতা এবং গঠন নিয়ে গবেষণা করেন। পরের বছর অ্যালবার্টের পরামর্শের ভিত্তিতে তিনি অ্যালবার্টের ছাত্র রিচার্ড এইচ. হোলমের সাথে দ্বিতীয় পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ করার জন্য হার্ভার্ডে চলে যান। হোলমের একমাত্র পোস্টডক্টরাল ছাত্র হিসাবে অনিমেষ নিকেল জটিল যৌগের গঠন নিয়ে কাজ করেন।[২] ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কানপুরে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। সেখানে তিনি এবং তার গবেষক দল নতুন ধরনের কৃত্রিম রাসায়নিক যৌগ এবং ঐ সকল যৌগের গঠনমূলক সমস্যা নিয়ে গবেষণা করেন। পরে তিনি আইআইটি কানপুরের রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালের জুন মাসে তিনি অজৈব রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে কলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (আইএসিএস)-এ যোগ দেন।[২] পরের তিন দশকে অখিল রঞ্জন চক্রবর্তী থেকে শুরু করে ৫৮ জন পিএইচডি ছাত্রকে তিনি গাইড করেছেন। ২০০০ সালে তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের ইমেরিটাস অধ্যাপকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ পরও তার গবেষণা থেমে থাকে নি। আনুষ্ঠানিক অবসর গ্রহণের পরেও তার অধীনে শেষ গবেষক ছাত্র ২০০৬ সালে তার গবেষণাপত্র জমা দেয়।[২] তিনি ৩০০ টিরও বেশি গবেষণাপত্র ও ২০টি পর্যালোচনা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।[২] এছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান বইয়ের অধ্যায়ও রচনা করেছেন।