অনুরাধা গান্ধী Anuradha Ghandy | |
---|---|
জন্ম | অনুরাধা শনবাগ ১৯৫৪ |
মৃত্যু | ১২ এপ্রিল ২০০৮ | (বয়স ৫৩–৫৪)
মৃত্যুর কারণ | ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | নর্মদা, বর্ষা, রমা, অনু, জানকী |
মাতৃশিক্ষায়তন | এলফিনস্টোন কলেজে, মুম্বাই |
পরিচিতির কারণ | ভারতে মাওবাদী আন্দোলনের বিশিষ্ট ব্যক্তি |
দাম্পত্য সঙ্গী | কোবাদ গান্ধী (বি. ১৯৮৩) |
পিতা-মাতা | কুমুদ (মা) গণেশ (বাবা) |
অনুরাধা গান্ধী (১৯৫৪ — ১২ এপ্রিল ২০০৮) ছিলেন একজন ভারতীয় সাম্যবাদী, লেখক, এবং বিপ্লবী নেত্রী। তিনি ভারতের নিষিদ্ধ ঘোষিত মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন।[১] তিনি বেশিরভাগ প্রচারণার সাথে, এবং সিপিআই এর শহরাঞ্চলের মধ্যে বিদ্রোহে জড়িত ছিলেন।[২] তিনি ভারতের মহারাষ্ট্রে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন ছিলেন।[৩]
মার্কসবাদী আন্দোলন দ্বারা খসড়াকৃত নীতিগত কাগজপত্রের ভেতরে অনুরাধা বর্ণবিভেদ এবং "নারীবাদ এবং মার্কসবাদ"-এর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি দণ্ডকারণ্যের মতো কৃষিভিত্তিক উৎপাদনকেন্দ্রিক এলাকায় গেরিলাদেরকে সম্ভাব্য শ্রমিক সমবায় গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চেষ্টা করেন। তিনি পার্টিতে প্রভাবশালী পিতৃতান্ত্রিক ধারণার আধিপত্যের উপর সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন।[৪]
জ্যোতি পানোয়ানি লিখেছিলেন "নকশাল হুমকি', মনমোহন সিংহ বলেন, 'দেশের জন্য সবচেয়ে বড়ো হুমকি'। কিন্তু আমি মনে করি একটি মেয়ে যে সবসময় হাসত এবং যে সব দিক থেকে একটি সমৃদ্ধ জীবন ছেড়ে দিয়েছিল অন্যদের জীবনকে পরিবর্তন করতে"। জ্যোতি পানোয়ানি হচ্ছেন অনুরাধার ১৯৭০-এর দশকে কলেজের বন্ধু, যে তার মৃত্যু সম্বন্ধে লিখেছিলেন।[৫]
আগের প্রজন্মের সাম্যবাদী, গণেশ ও কুমুদ শনবাগের[৪] মুম্বাই সিপিআই অফিসে বিবাহ হয় এবং এরকম একটি পরিবারে অনুরাধার জন্ম হয়।[৪] তারা ১৯৫০-এর দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত পার্টিতে ছিলেন, তখনও বর্তমানের মতো মাওবাদী ও মার্কসবাদী দলের মধ্যে ভাগ ছিল না।[৪] পরে গণেশ প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্য হন, এবং কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় স্বেচ্ছায় কাজ করতেন।[৪] কুমুদ একজন সক্রিয় সমাজকর্মী হিসেবে তার জীবন কাটিয়েছেন, এবং বর্তমানে তিনি এক নারী দলের সঙ্গে জড়িত আছেন।
তারা তাদের ছেলেমেয়েদের এমনভাবে লালনপালন করেন যে, তারা পরে বিপ্লবী হয়ে ওঠে। অনুরাধার ভাই, বিশিষ্ট মুম্বাই-ভিত্তিক নাট্যকার, প্রগতিশীল নাটক লিখতেন। অনুরাধা সান্তাক্রুজে জে বি ক্ষুদে স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেই স্কুলটি শিশুদের বৈচিত্রময় মতামত এবং ধারনার উন্মুক্ত ছিল এবং সেখানে অনেক পড়তে উৎসাহিত করা হতো। সেখানে যেমন ধ্রুপদী নাচ এবং থিয়েটারের ক্ষেত্রে বিকাশের আয়োজন ছিলো।[৪]
পরিবারটি খুবই কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন ছিলো, যেখানে অনুরাধা কলেজে পড়ার সময় রাজনীতিতে যুক্ত হন। সেই সময়টি ছিলো ভারতে সাম্যবাদ প্রচারের প্রধান সময়, যখন অন্যান্য সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সংগে ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায়, চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পক্ষে তুমুল প্রচারণা চলছিলো। এটা সেই সময় যখন নকশালবাড়ি অস্তিত্বে এসেছিল,[২] যা গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বিপ্লবের আগুন জ্বেলেছিল, অনুরাধা তখন PROYOM নামে একটি বিপ্লবী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
১৯৭০ সালে, মুম্বাইর এলফিনস্টোন কলেজ চরমপন্থী বামপন্থী কর্মীদের জন্য একটি ভরকেন্দ্র ছিল, এবং অনুরাধা সেক্ষেত্রে একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করেন। সেই সময়ের যুদ্ধ আক্রান্ত বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির দেখে, এবং মহারাষ্ট্রের দুর্ভিক্ষ-আক্রান্ত এলাকাগুলো দেখে, তিনি সামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। তারপর তিনি প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ মুভমেন্ট (PROYOM)-এ যোগ দেন, যেখানে তিনি তৎকালীন নকশাল আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে ওয়রলি দাংগা প্রতিরোধে অংশ নেন। তিনি এফ্রো- আমেরিকান বিপ্লবী সংগঠনের আদলে গড়া ওঠা ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে দলিত পন্থের আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৭৭ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সিভিল লিবার্টি কনফারেন্সে রাজনৈতিক বন্দীমুক্তির পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন তিনি। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সংগঠন CPDR এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাদের ভেতর তিনি ছিলেন একজন। নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব পড়ানোর কাজে যুক্ত থাকায় বহু ছাত্র ও শিক্ষক তার দ্বারা বিপ্লবী রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। ভারতের জরুরী-অবস্থা পরবর্তীকালে যখন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তখন তিনি একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৮২ সালে ট্রেড ইউনিয়ন এবং দলিত আন্দোলনে তার আগ্রহের কারণে তাকে মুম্বাই থেকে নাগপুরের বিদর্ভ অঞ্চলে পাঠানো হয়। নাগপুর ছাড়াও কাম্পতি, খাপারখোলা, জবলপুর, অমরাবতী এলাকায় বিড়ি, ঠিকা ও রেলশ্রমিকদের সংগঠিত করেছেন। তিনি এই সময় প্রায় বেশ কয়েক বার গ্রেফতার হন, যার ফলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।[৪][৬]
আত্মগোপন থাকাকালীন তার বাস্তারের গোন্দ আদিবাসীদের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের ভেতর তিনবছর থেকে আদিবাসী সমস্যা, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন করেন ও তাদের কাছের মানুষ হিসেবে রাজনৈতিক শিবির, শিক্ষা শিবির, স্বাস্থ্য শিবির ইত্যাদির মাধ্যমে সচেতন করতে থাকেন। আদতে তিনি একজন গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। রাইফেল তৈরীর কাজটিও নিজে হাতে শিখে নিয়েছিলেন। পশ্চিম বস্তারের ন্যাশনাল পার্ক অঞ্চলে তীব্র দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ১৯৭৭ সালে, তখন তিনি প্রথমবার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হন। সুস্থ হয়ে পূনরায় বিপ্লবী কাজকর্ম চালান। পাশাপাশি লেখালিখিও করেছেন হিন্দি ইংরেজি মারাঠি ইত্যাদি ভাষায়। স্বনামে ও ছদ্মনামে পিপলস মার্চ, জনসংগ্রাম, কলম পত্রিকায় লিখেছেন। অনুবাদ করেছেন দক্ষিণ ভারতের বিপ্লবী কবি চেরবান্দারাজুর কবিতা। ভারতে জাতপাত প্রশ্নে তার পলিসি পেপার পূর্বতন CPI(ML) (Peoples War) পার্টি দলিল হিসেবে গৃহীত হয়।[৬] তিনি পার্টির নারী শাখার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন, এবং তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আত্মগোপনে থেকে কাজ করে গেছেন।[৪] ২০০৭ সালের ঐক্য কংগ্রেসে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)র কেন্দ্রীয় কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য হিসেবে যোগ দেন।[৬]
অনুরাধা শনবাগ ১৯৮৩ সালে কোবাদ গান্ধীকে বিয়ে করেন,[৭] যিনি একটি গুজরাটি পার্সি পরিবারের সদস্য ছিলেন।[৮]
অনুরাধা ১২ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখে ম্যালেরিয়া ফ্যালসিপেরাম এর সাথে সম্পর্কিত রোগে মারা যান। তার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, যা একাধিক অঙ্গ ব্যর্থতা বয়ে আনে; ফলে হাতের লেখা খারাপ হয়ে যায়।[৯] এটা ঘটেছিল তার ঝাড়খণ্ডে অবস্থানের সময়, যখন তিনি সমাজে নারীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের শিক্ষাদান করছিলেন, তখন তিনি সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।[৪] তার শেষ দিনগুলোতে, তিনি নারী ক্যাডারদের নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশের জন্য তিনি প্রশিক্ষণ দিতেছিলেন।
|কর্ম=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)