অপারেশন ড্রাগন কিং অপারেশন নাগামিন | |
---|---|
রোহিঙ্গা দ্বন্দ্ব-এর অংশ | |
পরিকল্পনাকারী | নে উইন এর সমাজতান্ত্রিক সরকার |
Objective |
|
তারিখ | ৬ ফেব্রুয়ারি – ৩১ জুলাই ১৯৭৮ (৫ মাস, ৩ সপ্তাহ ও ৪ দিন) |
নিষ্পন্নকারী | তাতমাডো, বর্মী অভিবাসন কর্মী |
ফলাফল | প্রতিবেশী বাংলাদেশে বৃহদাকারে মানবিক সঙ্কট |
হতাহত | ২,০০,০০০[১]–২,৫০,০০০[২] বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। (পরবর্তীতে ১,৮০,০০০ জন প্রত্যাবাসিত) হয়[২] |
অপারেশন ড্রাগন কিং (Operation Dragon King) আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশন নাগামিন (ইংরেজি: Operation Nagamin, বর্মী: နဂါးမင်း စစ်ဆင်ရေး) নামে পরিচিত। নে উইন এর সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে বার্মার উত্তরাঞ্চলীয় আরাকানে (বর্তমান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য) তাতমাডো (মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর আনুষ্ঠানিক নাম) এবং অভিবাসন কর্মকর্তাদের দ্বারা এই সামরিক অভিযানটি পরিচালিত হয়।[৩] নে উইন ছিলেন ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক বার্মার একনায়ক।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী হচ্ছে বার্মার উত্তর আরাকান, বার্মা এর (বর্তমান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, যারা বর্মী সরকার ও সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের দ্বারা ঐতিহাসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।[৪][৫][৬] জেনারেল নে উইন এবং তার বার্মা সোশ্যালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টি (BSPP) ১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে, রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রতিবেশী বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ সমাপ্ত হলে তাদের রাষ্ট্রে "বিদেশী আক্রমণকারীদের" অনুপ্রবেশ নিয়ে বর্মী সরকারের ভয় বৃদ্ধি পায়। তাই ১৯৭৭ সালে সরকার অপারেশন ড্রাগন কিং এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে, যার সূচনা হয় পরবর্তী বছরের শুরুতেই।
অপারেশন ড্রাগন কিং এর আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্য ছিল উত্তর আরাকানের নাগরিকদেরকে নিবন্ধিত করা এবং জাতীয় আদমশুমারির পূর্বে তথাকথিত "বিদেশীদেরকে" সেই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা।[৭] অভিবাসন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সামরিক কর্মীগণ মিলে এই সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীগণ অভিযোগ করে বলে বার্মার সামরিক কর্মীরা তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন, ধর্ষণ ও হত্যার দ্বারা জোড়পূর্বক গ্রাম উচ্ছেদ করেছে।[৮]
১৯৭৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতে, সিত্তুই জেলার সাক্কিপাড়া গ্রামে এই সামরিক অভিযান শুরু হয়, যেখানে প্রচুর সংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে একত্রিত করা হয়। তিন মাসের বেশি সময়ের মধ্যে, প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্মী সরকার হিসাব করে বলে, দেড় লক্ষ রোহিঙ্গা এই সামরিক অভিযানের সময় বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, এবং প্রচার করে যে, এত সংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে চলে যাওয়ার দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে তারা আসলে মিয়ানমারের "অবৈধ অভিবাসী"। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (IRCC) এবং বাংলাদেশ সরকার শরণার্থীদেরকে জরুরি ত্রাণ সহায়তা দান করে, কিন্তু শরণার্থী সঙ্কট এতটাই বেশি ছিল যে তা এই জরুরি ত্রাণ সহায়তাকে ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করে, এবং এর ফলে বাংলাদেশে একটি ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) ত্রাণ দল পাঠানো হয়।
১৯৭৮ সালের ৩১শে জুলাই বার্মা এবং বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছান, এবং এর ফলে ১,৮০,০০০ রোহিঙ্গা বার্মায় প্রত্যাবাসন করে।