পরাবৈদ্যুতিক অথবা অস্তরক (বা অস্তরক পদার্থ) (ইংরেজি: Dielectric) হলো এক প্রকার তড়িৎ অন্তরক(ইন্সুলেটর) যাকে তড়িৎ ক্ষেত্র প্রয়োগে পোলারাইজ (বা মেরুকরণ) করা যায়। যখন কোন অস্তরক পদার্থকে কোন তড়িৎক্ষেত্রে স্থাপন করা হয়, তখন তড়িৎ আধানগুলো যেভাবে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যায় অস্তরক পদার্থের মেরুকরণের কারণে সেভাবে যেতে পারে না। অস্তরক পদার্থের এই মেরুকরণের কারণে ধনাত্মক তড়িৎ আধানগুলো তড়িৎক্ষেত্রের দিকে এবং ঋণাত্মক তড়িৎ আধানগুলো তড়িৎক্ষেত্রের বিপরীত দিকে সরে আসে। ফলে পদার্থের ভেতরে একপ্রকার অভ্যন্তরীণ তড়িৎক্ষেত্র তৈরি হয় যা অস্তরক পদার্থের মধ্য দিয়ে পুরো তড়িৎক্ষেত্রকেই কমিয়ে ফেলে।[১] যদি কোন দূর্বল বন্ধন সম্পন্ন অণু দ্বারা কোন অস্তরক পদার্থ গঠিত হয়, তবে তা শুধু মেরুকরণই হয় না বরং তার ইলেক্ট্রনের অক্ষও ঐ তড়িৎক্ষেত্রের অক্ষের সাথে একই দিকে পূনঃবিন্যাস্ত হয়।
অস্তরক পদার্থের ধর্ম বিশ্লেষন করার ফলে কোন পদার্থের তড়িৎ এবং চৌম্বকীয় শক্তি ধারণ করার ক্ষমতা বোঝা যায়।[২][৩][৪]
তড়িৎবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, কঠিন-অবস্থা পদার্থ বিদ্যা এবং কোষ প্রাণপদার্থবিদ্যার অনেক ক্ষেত্রেই অস্তরক পদার্থের প্রয়োগ রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে অন্তরক শব্দটি প্রযোজ্য হয় কম তড়িত পরিবাহিতার ক্ষেত্রে, যেখানে অস্তরক শব্দটি বোঝায় এমন পদার্থ যার উচ্চ মেরুকরণ ক্ষমতা রয়েছে। একে একটি সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় যাকে আপেক্ষিক তড়িৎভেদ্যতা বলে। সাধারণত অন্তরক শব্দটি তড়িৎ অবরোধ বোঝায়, যেখানে অস্তরক শব্দটি বোঝায় (মেরুকরণের মাধ্যমে)কোন পদার্থের শক্তি সঞ্চয় করে রাখার ক্ষমতা। অস্তরক পদার্থের একটি পরিচিত উদাহরণ হলো, কোন ধারকের দুই ধাতব প্লেটের মাঝে থাকা অন্তরক পদার্থ। তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা সৃষ্ট অস্তরক পদার্থের মেরুকরণ তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা অনুসারে কোন ধারকের পৃষ্ঠ-আধান বৃদ্ধি করে।[১]
অস্তরক এবং অন্তরকের মাঝে মৌলিক পার্থক্য হলো, সকল অস্তরকই অন্তরক, তবে সকল অন্তরক অস্তরক নয়। অর্থাৎ, অস্তরক হলো অন্তরকের একটি প্রকার।
অস্তরক বা ডাইইলেক্ট্রিক শব্দটি (ডাই- +ইলেকট্রিক) মাইকেল ফেরাডের অনুরোধে উইলিয়াম হেওয়েল উদ্ভাবন করেন।[৫][৬] যেহেতু একটি প্রকৃত অস্তরক পদার্থের তড়িৎ পরিবাহীতা শূন্য (তুলনাঃ প্রকৃত তড়িৎপরিবাহকের পরিবাহীতা হলো অসীম)।[৭] কাজেই এটি একটি বিচ্যুতি কারেন্ট তৈরি করে যার মাধ্যমে এটি একটি আদর্শ ধারকের মতো তড়িৎ শক্তি সঞ্চয় করে এবং ফিরিয়েও দেয়।
প্রকৃত আর্টিকেলঃ তড়িৎ সংবেদনশীলতা এবং তড়িৎ ভেদ্যতা
কোন পদার্থের তড়িৎ সংবেদনশীলতা χe হলো কত সহজে তা তড়িৎক্ষেত্রের ফলে মেরুকরণ হতে পারে তার পরিমাপ। যার মাধ্যমে কোন পদার্থের তড়িৎ ভেদ্যতা নির্ধারিত হয় এবং এটি ঐ মাধ্যমের ক্ষেত্রে ধারক বা ধারকের ধারকত্ব থেকে আলোর গতি পর্যন্ত আরো অনেক বিষয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে।
এটি তড়িৎক্ষেত্র E থেকে প্রণোদিত মেরুকরণ ঘণত্ব P এর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি আনুপাতিক ধ্রুবক,
এখানে ε0 হলো শূন্য মাধ্যমে তড়িৎ ভেদ্যতা
কোন মাধ্যমে তড়িৎ সংবেদনশীলতা ও ঐ মাধ্যমের তড়িৎ আপেক্ষিক ভেদ্যতা εr এর সম্পর্ক হলো,
সুতরাং বায়বীয় মাধ্যমের ক্ষেত্রে,
তড়িৎ বিচ্যুতি D এবং মেরুকরণ ঘনত্ব P এর সম্পর্ক হলো,
সাধারনভাবে, কোন পদার্থই তড়িৎক্ষেত্রের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরুকরণ হতে পারে না। অতএব সময়ের সাপেক্ষে এর ফাংশনের সাধারণ রুপ হলো,
সুতরাং, মেরুকরণ বা মেরুকরণ হলো সময়ের উপর নির্ভরশীল তড়িৎ সংবেদনশীলতা χe(Δt) এর সাথে পূর্বসময়ের তড়িৎক্ষেত্রের কনভলিউশন(বা কুণ্ডলী) ফাংশন। এই ইন্টিগ্রালের সর্বোচ্চ সীমা অসীম পর্যন্ত বর্ধিত করা যায় যদি χe(Δt) = 0 হয় যখন Δt < 0 হবে। ডিরাক ডেল্টা ফাংশনের জন্য তাৎক্ষনিক তড়িৎ সংবেদনশীলতা হবে, χe(Δt) = χeδ(Δt).
একটি লিনিয়ার সিস্টেম বা রৈখিক ব্যাবস্থার ক্ষেত্রে একে ফুরিয়ার রুপে কম্পাঙ্কর ফাংশন হিসেবে প্রকাশ করাটা কিছুটা সহজসাধ্য। কনভলিউশন(বা কুণ্ডলী থিওরি) অনুসারে এই ইন্টিগ্রালটির সহজ রুপ,
তড়িৎ সংবেদনশীলতা (সমতুল্য তড়িৎভেদ্যতা) কম্পাঙ্কর উপর নির্ভরশীল। কাজেই কম্পাঙ্কর সাপেক্ষে তড়িৎ সংবেদনশীলতার পরিবর্তন পদার্থের বিকিরণ ধর্ম নির্ধারণ করে।
অধিকন্তু, পদার্থের মেরুকরণ কেবলমাত্র পূর্বসময়ের তড়িৎক্ষেত্র (যেমন, Δt < 0 এর জন্য χe(Δt) = 0) এর উপরই নির্ভর করে এবং এর কার্যকারণের ফল তড়িৎ সংবেদনশীলতা χe(ω) এর প্রকৃত এবং আনুমানিক(রিয়েল এবং ইমাজিনারি) অংশের উপর ক্রেমার-ক্রনিং সীমাবদ্ধতা আরোপ করে।
চিরায়ত অস্তরক মডেলে একটি অণুর সাথে তড়িৎক্ষেত্রের মিথষ্ক্রিয়া।
অস্তরক পদার্থের চিরায়ত মডেল অনুসারে, কোন পদার্থ অণু দ্বারা তৈরি। প্রতিটি অণুই তার কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ধণাত্মক আধান কণা এবং তাকে ঘিরে থাকা ঋণাত্মক আধান (ইলেক্ট্রণ) মেঘ দ্বারা গঠিত। তড়িৎক্ষেত্রের উপস্থিতিতে এই আধানের মেঘ বেঁকে যায় যেমনটা উপরে বামপাশের ছবিতে দেখানো হয়েছে।
উপরিপাত তত্ত্ব অনুসারে একে সংকুচিত করে সরল ডাইপোল বা দ্বিমেরুতে রুপান্তর করা যায়। কোন দ্বিমেরুকে তার ডাইপোল মোমেন্ট বা দ্বিমেরু ভরবেগ দ্বারা বর্ণনা করা যায়, চিত্রে M দ্বারা নির্দেশীত নীল তীরচিহ্নটি হলো এর ভেক্টর পরিমাপ। এটি হলো, তড়িৎক্ষেত্র এবং দ্বিমেরু ভরবেগ এর মাঝে সম্পর্ক, যা অস্তরকের ক্রিয়া বৃদ্ধি করে। (লক্ষণীয়, চিত্রে দ্বিমেরু ভরবেগ এবং তড়িৎক্ষেত্রের দিক একই দিকে। এমনটা কিন্তু সবসময় হয় না, তবে বেশিরভাগ পদার্থের ক্ষেত্রেই এটা সঠিক)।
যখন তড়িৎক্ষেত্র সরিয়ে ফেলা হয়, পদার্থের অণু তার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এর জন্য যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে শিথিলকরণ সময় বলা হয়, যা এক্সপনেনশিয়াল সূচকে হ্রাস পায়।
এই তো হলো কেবল পদার্থবিজ্ঞান অনুসারে অস্তরকের মডেলের ব্যাখ্যা, এখন অস্তরকের আচরণ নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর। পরিস্থিতি যত জটিল হবে, মডেলও অস্তরকের আচরণ ততটাই সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবে। জরুরী প্রশ্ন হলোঃ
তড়িৎক্ষেত্র E এবং দ্বিমেরু ভরবেগ M এর সম্পর্ক অস্তরকের বৈশিষ্ট বৃদ্ধি করে। প্রদত্ত যেকোন পদার্থের ক্ষেত্রে একে F ফাংশন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে,
যখন তড়িৎক্ষেত্র এবং পদার্থের প্রকৃতি উভয়টি নির্ধারিত হয়ে যায়, তখন সহজেই F ফাংশন তার আচরনের প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
উদাহরণ স্বরুপ যে আচরণগুলো ঘটতে পারেঃ
দ্বিমেরু মেরুকরণ হলো এমন মেরুকরণ, যা হয় মেরুকরণযোগ্য অণুগুলো (দিকনির্ভর মেরুকরণ) এর মধ্যে নিহিত, অথবা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন অণুকে মেরুকরণের(বাঁকানো মেরুকরণ) মাধ্যমে বাঁকিয়ে তৈরি করা। দিকনির্ভর মেরুকরণ এর ফলাফল স্থায়ী দ্বিমেরু যেমন, পানির অণুতে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনের মাঝে ১০৪.৪৫° কোণ, যা তড়িৎক্ষেত্র ছাড়াই বজায় থাকে। এর ফলে তৈরি হয় ম্যাক্রোস্কোপিক মেরুকরণ।
যখন বাইরে থেকে কোন তড়িৎক্ষেত্র প্রয়োগ করা হয়, তখন দিকনির্ভর মেরুকরণের অনুগুলোর দুইমেরুর মাঝে দূরত্ব সমান থাকে, যদিও মেরুকরণের দিক নিজ থেকেই ঘুরে। এই ঘূর্ণন হয় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যা তার ঘাত এবং পারিপার্শ্বীক অণুর সান্দ্রতার উপর নির্ভর করে, কারণ এই ঘূর্ণন হলো তাৎক্ষণিক ক্রিয়া। দ্বিমেরু মেরুকরণ উচ্চ কম্পাঙ্কে কাজ করে না। কোন তরলে অণু প্রতি পিকো সেকেন্ডে এক রেডিয়ান করে ঘুরে যা লস করে 1011 Hz (মাইক্রোওয়েভ রিজিয়নে)। তড়িৎক্ষেত্রে এই সময়ক্ষেপন তাপ এবং ঘর্ষণ উৎপন্ন করে।
যখন তড়িৎক্ষেত্র অবলোহিত বা আরো কম কম্পাঙ্কে প্রয়োগ করা হয়, তড়িৎক্ষেত্রের ফলে অণুগুলোতে টান লেগে বেঁকে যায় এবং মেরুকরণ ভরবেগ পরিবর্তিত হয়। অণুগুলো কাঁপার কম্পাঙ্ক হলো প্রায় সময়ের বিপরীত মান যা অণুগুলোকে বাঁকিয়ে দেয়, এটি হলো অবলোহিত কম্পাঙ্কে বাঁকানো মেরুকরণ।
আয়নিক মেরুকরণ হচ্ছে এমন মেরুকরণ যা আয়নিক স্ফটিকগুলিতে (উদাহরণস্বরূপ, NaCl) ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আয়নগুলিতে আপেক্ষিক স্থানচ্যুতির কারণে হয়।
যদি কোনও স্ফটিক বা অণুতে একাধিক ধরনের পরমাণু থাকে তবে পুরো স্ফটিক বা অণুতে পরমাণুর আধান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক একদিকে দিকে ঝুঁকে থাকে। ফলে, যখন স্ফটিক জালি কম্পন বা আণবিক কম্পন হয়, তখন তা অণুগুলোকে আপেক্ষিকভাবে স্থানচ্যুত করে, তখন ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আধানের কেন্দ্রগুলিও স্থানচ্যুত হয়। এই কেন্দ্রগুলির অবস্থানের স্থানচ্যুতি তার ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করে। যখন কেন্দ্রগুলি পরস্পর অনুরুপ হয় না, তখন পুরো অণু বা স্ফটিকেই মেরুকরণ দেখা দেয়, এই মেরুকরণকেই আয়নিক মেরুকরণ বলে।
আয়নিক মেরুকরণের ফলে ফেরোইলেকট্রিক প্রভাবের পাশাপাশি দ্বিমেরু মেরুকরণও হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট দিক বরাবর স্থায়ী দ্বিমেরুকে সারিবদ্ধ করার ফলে সৃষ্ট ফেরোইলেকট্রিক স্থানচ্যুতিকে অর্ডার-ডিসঅর্ডার স্থানচ্যুতি দশা বলে। স্ফটিকগুলিতে আয়নিক মেরুকরণের ফলে যে স্থানচ্যুতি ঘটে, তাকে ডিসপ্লেসিভ স্থানচ্যুতি দশা বলে।
আয়নিক মেরুকরণ কোষগুলিতে শক্তি-সমৃদ্ধ যৌগগুলির (মাইটোকন্ড্রিয়ায় প্রোটন পাম্প) উৎপাদন সক্রিয় করে এবং প্লাজমা ঝিল্লিতে রেস্টিং-পটেনশিয়াল প্রতিষ্ঠা করে, আয়নের প্রতিকূল পরিবহনকে শক্তিশালী করে এবং কোষ থেকে কোষে যোগাযোগ (যেমন Na+/K+-ATPase এনজাইম) সক্রিয় করে।
প্রাণীর দেহের টিস্যুগুলিতে কোষগুলো বৈদ্যুতিকভাবে মেরুকৃত থাকে -অন্যভাবে বললে, তারা কোষের প্লাজমা ঝিল্লি জুড়ে একটি বিভব পার্থক্য বজায় রাখে, একে ঝিল্লি বিভব পার্থক্য বলে। এই বৈদ্যুতিক মেরুকরণ আয়ন পরিবহনকারী এবং আয়ন পরিবহন চ্যানেলের মধ্যে পরস্পরে জটিল প্রকৃয়ায় ক্রিয়া করে।
কোষের নিউরনের ঝিল্লিতে আয়ন পরিবহন চ্যানেল ভিন্ন হওয়ার ফলে স্নায়ু, তন্তু সহ বিভিন্ন অংশগুলোতে আয়ন পৌঁছানো সহ বিভিন্ন তড়িৎ ক্রিয়াগুলো ভিন্ন হয়। ফলে কখনো নিউরনের ঝিল্লির কিছু অংশ উত্তেহিত হতে পারে (কাজ করতে সক্ষম) যখন হয়তো অন্য অংশ তা হবে না।
পদার্থবিজ্ঞানে, অস্তরক বিকিরণ হলো প্রদত্ত তড়িৎক্ষেত্রের কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে কোন অস্তরক পদার্থের তড়িৎ ভেদ্য়তার উপর নির্ভরশীলতা। যেহেতু এখানে মেরুকরণের পরিবর্তন এবং তড়িৎক্ষেত্র পরিবর্তনের মধ্যে একটা বিরতি আছে, তাই অস্তরকের তড়িৎভেদ্যতা তড়িৎক্ষেত্রের কম্পাঙ্কের একটি জটিল ফাংশন। অস্তরক পদার্থের প্রয়োগগুলো এবং মেরুকরণ ব্যবস্থা বিশ্লেষণে অস্তরক বিকিরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থের বিকিরণের একটা উদাহরণ হলোঃ তরঙ্গ বিস্তারের জন্য কোন মাধ্যমের কম্পাঙ্ক-নির্ভর প্রতিক্রিয়া।
যখন কম্পাঙ্ক বেশি হয়ঃ
কম্পাঙ্ক অতিবেগুনী রশ্মী রিজিয়নের উপরে হলে তড়িৎভেদ্যতা ধ্রুবক ε0 হয়, এটি হলো শূন্যস্থানের তড়িৎভেদ্যতা। কারণ তড়িৎ ভেদ্যতা তড়িৎক্ষেত্র এবং মেরুকরণের শক্তিমত্তা নির্দেশ করে, যদি কোনও মেরুকরণ প্রক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হারায় তবে তড়িৎভেদ্যতা হ্রাস পায়।
অস্তরকীয় শিথিলতা হলো, কোনও পদার্থের অস্তরক ধ্রুবকের ক্ষণিকের বিলম্ব (বা বিরতি)। এটি সাধারণত কোন অস্তরক মাধ্যমে (উদাঃ ধারকের অভ্যন্তরে বা দুটি বৃহত পরিবাহীপৃষ্ঠের মাঝে) তড়িৎক্ষেত্রের পরিবর্তনের সাপেক্ষে আণবিক মেরুকরণে বিলম্বের কারণে হয়ে থাকে। তড়িৎক্ষেত্রের পরিবর্তনে অস্তরকীয় শিথিলতা পরিবর্তনশীল চৌম্বকক্ষেত্রের (উদাঃ, আবেশক বা ইন্ডাক্টর অথবা ট্রান্সফর্মার কোরে) হিস্টেরেসিসের সমতুল্য হতে পারে। সাধারণভাবে অস্তরকীয় শিথিলতা একটা বিরতি যা একটি লিনিয়ার বা রৈখিক প্রকৃয়া। তড়িৎক্ষেত্র ও মেরুকরণের মাঝের এই বিরতি গিবস মুক্ত শক্তির অপরিবর্তনীয় অবক্ষয়কে বোঝায়।
পদার্থবিদ্যায়, অস্তরকীয় শিথিলতা বলতে বোঝায় কোন অস্তরক মাধ্যমে দুলন্ত বা অসিলেট করতে থাকা বাইরের তড়িৎক্ষেত্রের বিরাম। একে অনেক সময় কম্পাঙ্কের ফাংশনে তড়িৎভেদ্যতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়।,যা আদর্শ মাধ্যমে ডিবে সমীকরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।
ডিবে শিথিলতা হলো, বাইরের বিকল্প তড়িৎক্ষেত্রের প্রতি আদর্শ ও নিরবচ্ছিন্ন সংখ্যক দ্বিমেরুর অস্তরক শিথিলতা। একে সাধারণত কোন মাধ্যমের তড়িৎক্ষেত্রের কম্পাঙ্ক ω এর ফাংশন জটিল তড়িৎভেদ্যতা ε হিসেবে প্রকাশ করা হয়ঃ
এবং τ হলো, কোন মাধ্যমের শিথিলতা বিরতিকাল।
এখন সমীকরণের প্রকৃত এবং কাল্পনীক অংশ তুলনা করে পাই,[৮]
অস্তরকীয় লসকে প্রকাশ করা হয় এভাবেঃ
অস্তরকীয় শিথিলতার মডেলটি তৈরি করেন পদার্থবিজ্ঞানী পিটার ডিবে (১৯১৩)[৯] তার নামানুসারেই এর নামকরন করা হয়। এটি একটি গতিশীল মেরুকরনের বিরতিকালের জন্য প্রযোজ্য।
আরও দেখুন: ফেরোইলেক্ট্রিসিটি
প্যারাইলেক্ট্রিসিটি হলো, প্রদত্ত তড়িৎক্ষেত্রের ফলে পদার্থগুলোর (বিশেষত সিরামিক) মেরুকৃত হওয়ার ক্ষমতা। ফেরোইলেক্ট্রিসিটির বিপরীত, যা এমনকি পদার্থে কোন স্থায়ী তড়িৎ দ্বিমেরুর না থাকলেও হতে পারে এবং তড়িৎক্ষেত্রে অপসারণে পদার্থের মেরুকরণ শূন্য হয়ে যায়।[১০] পদার্থের প্যারাইলেক্ট্রিক আচরণের কারণ হতে পারে- আলাদাভাবে প্রত্যেক আয়নের বিকৃতি (নিউক্লিয়াস থেকে বৈদ্যুতিক মেঘের বিচ্যুতি) অথবা অণুগুলির মেরুকরণ অথবা আয়নসমুহের বিন্যাস বা ত্রুটির মিশ্রণ।
স্ফটিক দশায় প্যারাইলেক্ট্রিসিটি দেখা যেতে পারে যদি তাদের দ্বিমেরুগুলো বিন্যাস্ত না থাকে। ফলে এটি বিন্যাস্ত হতে প্রয়োজনীয় বিভব পার্থক্য বাইরের তড়িৎক্ষেত্রকে দুর্বল করে দিতে পারে।
উচ্চ ডাইইলেক্ট্রিক বা অস্তরক ধ্রুবক সম্পন্ন একটি প্যারাইলেকট্রিক পদার্থের উদাহরণ হলো, স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট।
LiNbO3 স্ফটিকটি 1430 কেলভিন তাপমাত্রার নিচে ফেরোইলেক্ট্রিক এবং এর উপরে এটি একটি বিচ্যুত প্যারাইলেক্ট্রিক। একইভাবে, অন্যান্য পেরভস্কাইটগুলিও উচ্চ তাপমাত্রায় প্যারাইলেক্ট্রিসিটি প্রদর্শন করে।
রেফ্রিজারেশনের কাজে প্যারাইলেকট্রিসিটির সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় তড়িৎক্ষেত্র প্রয়োগ করে প্যারাইলেকট্রিক পদার্থকে মেরুকরণ করলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং তড়িৎক্ষেত্রের অপসারণে তাপমাত্রা হ্রাস পায়।[১১] একটি তাপ পাম্প যা প্যারাইলেক্ট্রিককে মেরুকরণ করলে এটি পরিবেষ্টিত তাপমাত্রায় (অতিরিক্ত তাপকে ছেড়ে দিয়ে) ফিরে যায়, একে তখন কোন জিনিসের (যাকে ঠান্ডা করতে হবে) তার সংস্পর্শে আনলে এবং পদার্থের মেরুকরণ অপসারণ করলেই তার হিমায়ন ঘটে।
টিউনাবল বা পরিবর্তনশীল অস্তরক হলো এমন অন্তরক বিভব পরিবর্তনের সাথে সাথে যার তড়িৎ আধান সংরক্ষণের ক্ষমতা পরিবর্তিত হয়।[১২][১৩]
সাধারণত স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট (SrTiO3) স্বল্প তাপমাত্রার ডিভাইসগুলিতে ব্যবহৃত হয় আর বেরিয়াম স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট (Ba1−xSrxTiO3) স্বাভাবিক বাসার তাপমাত্রার ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়, মাইক্রোওয়েভ অস্তরক এবং কার্বন ন্যানোটিউব (সিএনটি) যৌগগুলো।[১২][১৪][১৫]
২০১৩ সালে বহুস্তর বিশিষ্ট স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট দ্বারা প্রস্তুতকৃত যার প্রতি স্তরে স্ট্রনসিয়াম অক্সাইডের একটি করে শীট ক্রমানুসারে সন্নিবেশিত করে একপ্রকার অস্তরক তৈরি করা হয় যা প্রায় 125 গিগাহার্টজ পর্যন্ত অপারেটিংয়ে সক্ষম। উপাদানটি আণবিক বিম এপিট্যাক্সির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল। এতে দুটো ভিন্ন পদার্থের স্তরের মাঝে ক্রিস্টাল স্পেসিংয়ের ফলে স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট লেয়ারের মধ্যে একপ্রকার ফাঁক তৈরি হয় যা এটিকে অপেক্ষাকৃত কম স্থিতিশীল এবং টিউনাবল বা পরিবর্তনশীল করে তোলে।[১২]
Ba1−xSrxTiO3 এর মতো সিস্টেমগুলোতে পরিবেষ্টিত( বা এমবিয়েন্ট) তাপমাত্রার সামান্য নিচে একটি প্যারাইলেকট্রিক–ফেরোইলেকট্রিক ট্রানজিশন রয়েছে। এজাতীয় ফিল্ম থেকে সিস্টেম ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
বিস্তারিত প্রবন্ধঃ ধারক
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ধারকগুলি সাধারণত সঞ্চিত ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আধানের মধ্যে মধ্যবর্তী মাধ্যম হিসাবে উচ্চ তড়িৎভেদ্যতা সম্পন্ন অস্তরক পদার্থ ব্যবহার করে। এদের ধারক অস্তরক বলা হয়।[১৬]
এই ধরনের অস্তরক ব্যবহার করার সুবিধা হলো এটি পরিবাহী পাতগুলোকে সরাসরি তড়িৎ স্পর্শ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও উচ্চ তড়িৎভেদ্যতা প্রদত্ত বিভবে আধানকে আরো ভালো সঞ্চয় করতে পারে।
সুতরাং তড়িৎভেদ্যতা ε, দুই পাতের মাঝে দূরত্ব d, বিভব পার্থক্য v এবং আধান ঘণত্ব σε হলে,
এবং প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ধারকত্ব,
এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে বড় তড়িৎভেদ্যতা ε অধিকতর চার্জ সঞ্চিত করে যার ফলাফল বৃহৎ ধারকত্ব। ধারকগুলির জন্য ব্যবহৃত অস্তরক পদার্থগুলিও এমনভাবে বেছে নেওয়া হয় যেগুলি আয়নীকরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী।
বিস্তারিত প্রবন্ধঃ অস্তরক অনুনাদক
অস্তরক অনুনাদী দোলক(DRO) হলো একপ্রকার কম্পোনেন্ট যা সরু কম্পাঙ্ক(প্রধানত মাইক্রোওয়েভ) রেঞ্জে মেরুকরণে অনুনাদ দেয়। এটি কুঁচকানো সিরামিক দিয়ে তৈরি যার উচ্চ অস্তরক ধ্রুবক রয়েছে। এটি অস্তরকের অতি সাম্প্রতিক একটি আবিষ্কার, যা এখনো পুরোপুরি উদ্ঘাটন করা যায়নি।
২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকান সেনা গবেষণা ল্যাবরেটরি (ARL) এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিল। বেরিয়াম স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট (বিএসটি), একটি ফেরোইলেক্ট্রিক পাতলা ফিল্ম, যা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এবং মাইক্রোওয়েভ সিগনালের উপাদানগুলি যেমন বিভব-নিয়ন্ত্রিত দোলক, সিগনালের টিউন বা পরিবর্তন ছাঁকনী এবং দশা পরিবর্তনের উন্নতির জন্য এটির উপর গবেষণা হয়েছিল।[১৭]
গবেষণাটি ছিল সেনাবাহিনীকে উচ্চ-টিউনেবল, মাইক্রোওয়েভ রেঞ্জে কাজ করার উপযোগী উপকরণ সরবরাহ করার প্রয়াসের অংশ ছিল, যা তীব্র তাপমাত্রায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে পারবে।[১৮] এই গবেষণার ফলে বাক বেরিয়াম স্ট্রনসিয়াম টাইটানেটের টিউনাবিলিটি বা পরিবর্তনশীলতায় উন্নতি হয়েছে, যা তড়িৎউপাদানগুলির জন্য পাতলা ফিল্ম সক্রিয়কারী।[১৯]
2004 এর একটি গবেষণাপত্রে ARL গবেষকরা অনুসন্ধান করেছেন যে সামান্য পরিমাণ সক্রিয়কারী ডোপান্ট কীভাবে বিএসটি-র মতো ফেরোইলেকট্রিক পদার্থগুলির বৈশিষ্ট্য নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়।[২০]
গবেষকরা বিএসটি পাতলা ফিল্মকে ম্যাগনেসিয়াম দিয়ে ডোপ করেন এবং প্রাপ্ত ফলাফলের "কাঠামো, পরিকাঠামো, পৃষ্ঠের গঠন এবং ফিল্ম / সাবস্ট্রেটের গাঠনিক মানের" বিশ্লেষণ করেন। এই ডোপগুলো মাইক্রোওয়েভ রেঞ্জের ডিভাইসগুলিতে "উন্নত অস্তরক বৈশিষ্ট্য, কম তড়িৎপ্রবাহ লস এবং ভাল টিউনবিলিটি বা পরিবর্তনশীলতা" দেখিয়েছিল।[১৭]
অস্তরক পদার্থ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় হতে পারে। এমনকি শূন্যস্থানও অস্তরক হতে পারে, প্রায় ক্ষতিহীন অস্তরক যদিও এর আপেক্ষিক অস্তরক ধ্রুবক একক হয়।[২১]
কঠিন অস্তরকগুলি তড়িৎ প্রকৌশলে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় এবং অনেক কঠিন অস্তরকই খুব ভাল অন্তরক। যেমন, চীনামাটি, কাঁচ এবং বেশিরভাগ প্লাস্টিক। বায়ু, নাইট্রোজেন এবং সালফার হেক্সাফ্লোরাইড তিনটি সর্বাধিক ব্যবহৃত বায়বীয় অস্তরক।