অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিক | |
---|---|
ব্যক্তির তথ্য | |
জন্ম | [১] অসলো, নরওয়ে[৪] | ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯
জাতীয়তা | নরওয়েজিয় |
ধর্ম | খ্রিস্টান (নরওয়ের গির্জা)[২][৩] |
হত্যাকাণ্ড | |
তারিখ | ২২ জুলাই ২০১১ ১৫:২৫ |
অবস্থান | অসলো এবং উটোয়া, নরওয়ে |
লক্ষ্য | নরওয়ে লেবার পার্টি |
নিহত | ৭৭ |
আহত | ২৪২[৫] |
অস্ত্র | গাড়ি বোমা কারবাইন পিস্তল |
অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিক নরওয়ের একজন গণহত্যাকারী যিনি ৭৭ জনকে হত্যা এবং ২৪২ জনকে আহত করেছেন।[৬] ব্রেইভিকের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। নরওয়ের এক শান্ত নিরিবিলি ও বিত্তশালী এলাকায়। তার বাবা ছিলেন কূটনীতিক আর মা সেবিকা। ব্রেইভিকের বয়স যখন মাত্র এক বছর, তখনই তার বাবা ও মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।[৭]
ব্রেইভিককে লালন-পালন করেন তার মা। মধ্যবিত্ত পরিবারে মা ও ছেলের অর্থের অভাব ছিল না। তার নিজের ভাষায়, ‘সমস্যা কিংবা সুবিধা বলতে যা ছিল, তা হলো মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতা। আমি তা ভোগ করেছি।’ ভাঙা পরিবারে ব্রেইভিকের এই বেড়ে ওঠা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল শিশু কল্যাণ সংগঠনগুলো। তাদের আশঙ্কা ছিল, শিশু ব্রেইভিকের দেখভাল হয়তো ঠিকমতো হচ্ছে না। চার বছরের ব্রেইভিক সম্পর্কে একজন মনোবিজ্ঞানী লিখেছেন, বৈরী পরিবেশে বেড়ে উঠছে সে। ব্রেইভিক অনেকটা অপ্রতিরোধী ও উদ্বিগ্ন। ব্রেইভিককে নিজের জিম্মায় পেতে চেয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে হেরে যান। পিতৃস্নেহবঞ্চিত ব্রেইভিকের শৈশবে বড় ধরনের কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি। তার বাবার মতে ছোটবেলায় ব্রেইভিক ছিল রাজনীতিবিমুখ খুবই সাধারণ এক ছেলে। ১৫ বছরে পা দেওয়ার পর থেকে অবশ্য ব্রেইভিকের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি তার বাবা। ১৮ বছর বয়সে হাইস্কুলে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দেন ব্রেইভিক। রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৯৯ সালে অভিবাসনবিরোধী মধ্যপন্থী প্রোগ্রেস পার্টিতে যোগ দেন। ২০০৬ সালে এই পার্টি ত্যাগ করেন। এর পর থেকে নিজেকে একদম গুটিয়ে নেন। তবে তিনি ইসলাম ও বহু সংস্কৃতিবাদ ও ‘সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদের’ সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। নিজেকে তিনি জাতীয়তাবাদী যোদ্ধা হিসেবে গণ্য করতে থাকেন। তার মতে, মুসলিমসহ অভিবাসীরা নরওয়েজিয়ানদের বিশুদ্ধ রক্তের জন্য হুমকি। এই ‘দূষণ’ ঠেকাতে তিনি হামলার পরিকল্পনা করেন। [৭]
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও উটোয়া দ্বীপের যুব সমাবেশে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে আটক খ্রিস্টান মৌলবাদী অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিক ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি করত। সে অভিবাসন বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলেরও সদস্য। এছাড়া ইউরোপে বহু সংস্কৃতিবাদের কট্টর সমালোচক ছিল ব্রেইভিক। খ্রিস্টান মৌলবাদী অ্যান্ডার্স ব্রেইভিক তার ব্লগে দাবি করেছে ব্রিটেনের তরুণ মুসলমানদের উল্লেখ্যযোগ্য অংশ কথিত ইসলামী জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট ডকুমেন্ট ডট এনওতে ব্রেইভিক নামে লেখা একটি ব্লগে সে দাবি করেছে, বহু সংস্কৃতিবাদ ইউরোপের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে, ধ্বংস করছে ঐতিহ্য ও পরিচয়, ইউরোপের জাতি-রাষ্ট্রও ধ্বংস হচ্ছে। শেষে সে প্রশ্ন তুলেছে—‘কবে এ বহু সংস্কৃতিবাদের অবসান হবে?’ ব্লগে ব্রেইভিক দাবি করেছে ‘দুটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী শতকরা ১৩ ভাগ ব্রিটিশ মুসলমান আল কায়দার আদর্শ সমর্থন করে।’ [৮] কয়েক বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ জুলাই প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পদ্ধতিগতভাবে বোমা ও গুলি করে ৬৯ জনকে হত্যা করেন ব্রেইভিক।[৭]
গণহত্যাকারী অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিককে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।তবে সমাজের জন্য বিপজ্জনক মনে হলে ব্রেইভিকের দণ্ডের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আদালত। টানা ১০ সপ্তাহ ধরে বিচার চলার পর শুক্রবার ৫ সদস্যের বিচারক প্যানেল এ রায় দেয়।শুনানি চলাকালীন আদালত বলে, গত বছর জুলাইয়ে রাজধানী অসলোয় গুলি করে ৭৭ জনকে হত্যা ও ২৪০ জনকে আহত করাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে ব্রেইভিকের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি সম্পূর্ণই সুস্থ মস্তিষ্কেই ছিলেন বলে রায় দেয় আদালত।তবে রায় ঘোষণার পর কোনো ধরনের অণুশোচনা না করে ব্রেইভিক বলেন, নরওয়েকে ইসলামিকরণের হাত থেকে রক্ষা করতে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রয়োজন ছিল।[৯]