অ্যান ব্রন্টি | |
---|---|
স্থানীয় নাম | Anne Brontë |
জন্ম | থর্নটন, ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড | ১৭ জানুয়ারি ১৮২০
মৃত্যু | ২৮ মে ১৮৪৯ স্কারবরা, নর্থ ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স ২৯)
সমাধিস্থল | সেন্ট ম্যারিস চার্চইয়ার্ড, স্কারবরা |
ছদ্মনাম | অ্যাক্টন বেল |
পেশা | কবি, ঔপন্যাসিক, গৃহশিক্ষিকা |
ভাষা | ইংরেজি |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
সময়কাল | ১৮৩৬–১৮৪৯ |
ধরন | কল্পকাহিনি, কবিতা |
সাহিত্য আন্দোলন | বাস্তবতাবাদ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | দ্য টেনান্ট অব ওয়াইল্ডফেল হল |
আত্মীয় | ব্রন্টি পরিবার |
স্বাক্ষর |
অ্যান ব্রন্টি (ইংরেজি: Anne Brontë; ১৭ জানুয়ারি ১৯২০ - ২৮ মে ১৮৪৯)[১] ছিলেন একজন ইংরেজ ঔপন্যাসিক ও কবি। তিনি ব্রন্টি বোনদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।
দরিদ্র আইরিশ যাজক প্যাট্রিক ব্রন্টির কন্যা অ্যান তার জীবনের বেশিরভাগ সময় ইয়র্কশায়ারের হাওয়ার্থে কাটান। তিনি ১৮৩৬ থেকে ১৯৩৭ সালে মিরফিল্ডে একটি বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি হাওয়ার্থ ত্যাগ করেন এবং ১৮৩৯ থেকে ১৮৪৫ সালে গৃহশিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতা ছাড়ার পর তিনি লেখনী শুরু করেন। তিনি তার বড় দুই বোনের সাথে মিলে ছদ্মনামে পোয়েমস বাই কুরার, এলিস এবং অ্যাক্টন বেল (১৮৪৬) এবং দুটি উপন্যাস প্রকাশ করেন। গৃহশিক্ষিকা থাকাকালীন তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত তার প্রথম উপন্যাস অ্যাগনেস গ্রে ১৮৪৭ সালে প্রকাশিত হয়। তার দ্বিতীয় ও শেষ উপন্যাস দ্য টেনান্ট অব ওয়াইল্ডলাইফ হল ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত হয়। বইটিকে এখন পর্যন্ত বিদ্যমান প্রথম নারীবাদী উপন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়। দুটি উপন্যাসই তার ছদ্মনাম অ্যাক্টন বেল নামে প্রকাশিত হয়। ১৮৪৮ সালে তার বেল ছদ্মনাম উন্মোচিত হয় এবং পরের বছর তারা তিন বোন লন্ডন লিটারেরি সার্কেলের সাথে যোগ দেন। অ্যান ১৮৪৯ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, ধারণা করা হয় তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
অ্যানের মৃত্যুর পর শার্লট ব্রন্টি কর্তৃক দ্য টেনান্ট অব ওয়াইল্ডলাইফ হল বইটির পুনঃপ্রকাশনা স্থগিত রাখার কারণে তিনি তার অন্য বোনদের মত এত খ্যাতি অর্জন করতে পারেননি। তবুও তার উপন্যাসগুলো তার বোনদের উপন্যাসগুলোর মত ইংরেজি সাহিত্যের ধ্রুপদী সাহিত্যকর্ম হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
অ্যান ১৮২০ সালের ১৭ই জানুয়ারি ব্র্যাডফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পিতা প্যাট্রিক ব্রন্টি সেখানে একজন সহকারী পাদ্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তার মাতা মারিয়া (প্রদত্ত নাম: ব্র্যানওয়েল)। ১৮২০ সালের ২৫শে মার্চ তাকে অভিসিঞ্চিত করা হয়। অ্যানের পিতা হাওয়ার্থে সহকারী পাদ্রি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮২০ সালের এপ্রিল মাসে ব্রন্টি পরিবার হাওয়ার্থে চলে যান এবং তারা বাকি জীবন সেখানেই বসবাস করেন।
অ্যানের যখন মাত্র এক বছর বয়স তার তার মাতা অসুস্থ্য হয়ে পড়েন, যা পরবর্তী কালে জরায়ুর ক্যান্সার বলে চিহ্নিত হয়।[৩] মারিয়া ১৮২১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর মারা যান।[৪] তার সন্তানদের মায়ের স্নেহ দেওয়ার জন্য প্যাট্রিক পুনর্বিবাহের চেষ্টা করেন, কিন্তু বিফল হন।[৫] মারিয়ার বোন এলিজাবেথ ব্র্যানওয়েল (১৭৭৬-১৮৪২) তাদের বাড়িতে আসেন, শুরুতে তার মৃত্যপ্রায় বোনের সেবার জন্য, কিন্তু তিনি তার বাকি জীবন তার সন্তানদের লালনপালনে কাটিয়ে দেন। তিনি নিজের দায়িত্ববোধ থেকে এই কাজ করেন, কিন্তু তিনি খুবই কঠোর ছিলেন।[৬] অন্য সন্তানদের তিনি খুব অল্প স্নেহ করলেও অ্যান তার প্রিয় ছিলেন।
১৮৪৫ সালের গ্রীষ্মে ব্রন্টি বোনেরা বাড়িতে অবস্থান করে। কারও কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা ছিল না। শার্লট এমিলির কবিতা রচনার কথা জানতে পারেন, যা শুধু অ্যান জানত। শার্লট তাকে এই কবিতাগুলো প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন। অ্যান তার নিজের কবিতাগুলো দেখান। শার্লট এই প্রসঙ্গে বলেন, "আমি ভেবেছিলাম এই পদ্যগুলোতে তাদের নিজস্ব সুন্দর অকৃত্রিম করুণ রস রয়েছে।" তারা এই সম্মতিতে পৌঁছান যে ব্র্যানওয়েল, তাদের পিতা বা তাদের বন্ধুদের তারা কি করছেন তা জানাবেন না। অ্যান ও এমিলি ২১টি করে কবিতা লিখেন এবং শার্লট ১৯টি কবিতা লিখেন। তাদের খালা ব্র্যানওয়েলের অর্থ দিয়ে তারা তাদের এই কবিতার সংকলন প্রকাশ করেন।[৭]
তাদের কবিতার বইটি প্রকাশের আগেই তারা তাদের প্রথম উপন্যাস রচনা শুরু করেন। শার্লট দ্য প্রফেসর, এমিলি উদারিং হাইটস ও অ্যান অ্যাগনেস গ্রে রচনা করেন। ১৮৪৬ সালের জুলাই মাসের মধ্যে লন্ডনের বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে তিনটি পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয়। কয়েকজন প্রকাশকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর প্রকাশক টমাস কটলি নিউবি এমিলির উদারিং হাইটস ও অ্যানের অ্যাগনেস গ্রে প্রকাশ করতে সম্মত হন, কিন্তু শার্লটের উপন্যাসটি সকল প্রকাশকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়।[৮] শার্লটের অল্প সময়ের মধ্যেই তার দ্বিতীয় উপন্যাস জেন আইয়ার রচনা করেন এবং প্রকাশক স্মিথ, এল্ডার অ্যান্ড কোং তা গ্রহণ করে এবং তিন বোনের মধ্যে তার উপন্যাসটিই প্রথম মুদ্রিত হয়। অন্যদিকে, অ্যান ও এমিলির উপন্যাস দুটি মুদ্রণে বিলম্ব হয়। জেন আইয়ার প্রকাশের পরপরই সফলতা লাভ করেন। অ্যান এবং এমিলি প্রকাশনার খরচ হিসেবে ৫০ পাউন্ড দিতে সম্মত হন। তাদের প্রকাশক জেন আইয়ার-এর সফলতায় ভিত্তিতে ১৮৪৭ সালের ডিসেম্বরে উদারিং হাইটস ও অ্যাগনেস গ্রে প্রকাশ করেন।[৯] দুটি বই'ই বাজারে ভালো কাটে, কিন্তু এমিলির নাট্যধর্মী উদারিং হাইটস অ্যানের অ্যাগনেস গ্রে বইটিকে ছাড়িয়ে যায়।[১০]
অ্যানের দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য টেনান্ট অব ওয়াইল্ডফেল হল ১৮৪৮ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত হয়।[১১] বইটি প্রকাশের পরপরই বিপুল সফলতা লাভ করে এবং ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এটি সমসাময়িক ভিক্টোরিয় উপন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে মর্মস্পর্শী, অ্যানের মদ্যপ ও নীতিভ্রষ্টের চিত্রায়ন উনবিংশ শতাব্দীর সংবেদশীলতার ক্ষেত্রে খুবই বিভ্রান্তিকর। শিরোনামের ভাগচাষী হেলেন গ্রাহাম গিলবার্ট মারখামের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং ধীরে ধীরে সে তার অতীতকে উন্মোচন করে যে সে একজন চিত্রশিল্পী ও আমোদপ্রমোদে লিপ্ত আর্থার হান্টিংডনের স্ত্রী। বইটির বিশেষত্ব হল সে সময়ে নারী অবস্থান উন্মোচন ও এর একাধিক-স্তর বিশিষ্ট গল্প।[১২]
১৮৪৯ সালের ২৭শে মে অ্যান শার্লটকে জানান বাড়িতে ফিরে না গিয়ে স্কারবরা থেকে মারা গেলে তা সহজ হবে। পরের দিন একজন ডাক্তার জানান তার মৃত্যুর আসন্ন। অ্যান এই খবরটি জানতে পারেন। তিনি এলেন ও শার্লটের প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ জানান এবং শার্লটকে হতাশ দেখে তাকে "সাহস রাখতে" বলেন।[১৩] অ্যান ১৮৪৯ সালের ২৮শে মে দুপুর ২টায় ২৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।