আন্দিজান Andijon/Андижон | |
---|---|
শহর | |
Location in Uzbekistan | |
স্থানাঙ্ক: ৪০°৪৭′ উত্তর ৭২°২০′ পূর্ব / ৪০.৭৮৩° উত্তর ৭২.৩৩৩° পূর্ব | |
দেশ | উজবেকিস্তান |
অঞ্চল | আন্দিজান অঞ্চল |
প্রথম অন্তর্ভুক্তি | ১০ম শতাব্দী |
আয়তন | |
• মোট | ৭৪৩ বর্গকিমি (২৮৭ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৪৫০ মিটার (১,৪৮০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০০) | |
• মোট | ৩,৩৩,৪০০ |
• জনঘনত্ব | ৪৫০/বর্গকিমি (১,২০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | ইউজেডটি (ইউটিসি+৫) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | পালিত হয় না (ইউটিসি+৫) |
পোস্টাল কোড | ১৭০১০০[১] |
এলাকা কোড | +৯৯৮ ৭৪[১] |
আন্দিজান (উজবেক: Andijon/Андижон; ফার্সি: اندیجان; রুশ: Андижан) উজবেকিস্তানের একটি বিখ্যাত শহর। আন্দিজান অঞ্চলের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে এটি পরিচিত। উজবেকিস্তান-কিরগিজস্তানের সীমান্তবর্তী ফারগানা উপত্যকার দক্ষিণ-পূর্বাংশে আন্দিজান অবস্থিত। ফারগানা উপত্যকার অন্যতম প্রাচীন শহর হিসেবে এর সবিশেষ পরিচিতি রয়েছে।
সমুদ্র স্তর থেকে ৪৫০ মিটার উঁচুতে আন্দিজানে অবস্থান। উত্তর-পূর্ব আসাকা থেকে ২২ কিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্ব নামানগান থেকে ৬৮.৬ দূরে এর অবস্থান। ২০০০ সালে এ শহরের জনসংখ্যা ৩৩৩,৪০০জন ছিল। অনেক জাতিগোষ্ঠীর লোক এ শহরে বাস করছে। তবে, উজবেকের সংখ্যাই অধিক।
শহরের নামকরণ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা যায়নি। দশম শতাব্দীতে আরবের ভৌগলিকগণ শহরটিকে আন্দুকান, আন্দুগান বা আন্দিগান নামে পরিচিতি ঘটিয়েছেন।[২] প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী তুর্কি উপজাতীয় আন্দি বা আদক/আজক নাম থেকে এ শহরের নামকরণ হয়েছে।[৩]
অষ্টাদশ শতকে কোকান্দের খানাতে গঠন করা হলে আন্দিজান থেকে কোকান্দে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়। ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে রুশ সাম্রাজ্য মধ্য এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের করায়ত্ত্ব করে। ১৮৭৬ সালে রুশরা কোকান্দের খানাতেসহ আন্দিজান দখল করে।
১৮৯৮ সালে সুফী সাধক মাদালী ইশানের সমর্থকেরা শহরের রুশ ব্যারাকে আক্রমণ চালিয়ে ২২জনকে নিহত ও ১৬-২০জনকে আহত করে। এ প্রেক্ষিতে আক্রমণ পরিচালনাকারীদের ১৮জনকে ফাসীকাষ্ঠে ঝোলানো হয় ও ৩৬০জনকে নির্বাসন দেয়া হয়।[৪]
শহরের কিছু অংশে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ সপ্তম ও অষ্টম শতকের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আন্দিজান প্রাচীন বাণিজ্য পথ হিসেবে রেশম পথের কারণে গুরুত্বতা পেয়েছে।[৫] শহরটির অন্যতম পরিচিতি হচ্ছে ভারত উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের জন্ম এখানে হয়েছে।[৬] তিমুরীয় আমলে বিশেষতঃ বাবরের রাজত্বকালে আন্দিজান এ অঞ্চলে বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ শহরের মর্যাদা পায়। ঐ সময়ে শহরে শিল্পকলা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটে।
১৬ ডিসেম্বর, ১৯০২ তারিখে বেশ কয়কেটি ভূমিকম্পে ৩০,০০০ বাড়ী-ঘর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় ও প্রায় ৪,৫০০ অধিবাসী নিহত হন।[৫][৭] ১৯১৭ সালে সোভিয়েত শাসনকালে উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনগরীতে পরিণত হয়। এ সময়ে ফারগানা উপত্যকাকে বিভক্ত করে তিনটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অধীনে নিয়ে আসা হয়। তন্মধ্যে আন্দিজান উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অংশে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক সোভিয়েত নাগরিক আন্দিজান ও তার আশেপাশের এলাকায় আশ্রয় নেয়। নাৎসী অধ্যুষিত পোল্যান্ড থেকে ইহুদী শরণার্থীরা সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়ায় পাড়ি দেয়। তাঁদের কিছু অংশ ১৯৪১ সালের শুরুতে আন্দিজানে চলে আসে।
১৯৯০-এর দশকে আন্দিজান ও তার আশেপাশের এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুরু হয়। দারিদ্রতা ও ইসলামী মৌলবাদীদের কার্যক্রমে এ অঞ্চলে দুঃসহ পরিবেশের সৃষ্টি করে। এছাড়াও, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর গুরুতর অর্থনৈতিক ধাক্কা লাগে।
১৩ মে, ২০০৫ তারিখে জীবনযাত্রার মানের অধঃপতন ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলে উজবেকিস্তানের সেনাবাহিনী অগণিত লোককে হত্যা করে যা আন্দিজান গণহত্যা নামে বৈশ্বিক অঙ্গণে পরিচিতি পায়।[৮][৯][১০] সরকারের পক্ষ থেকে ১৮৭জনের কথা বলা হলেও তা কয়েকশত ছিল।[৮][১১] নিহতদের অনেককে গণকবরে সমাহিত করা হয়।[১২] এ ঘটনাকে উজবেক সরকার দেশে অস্থিতিশীলতা আনয়ণকল্পে ইসলামী আন্দোলনকারীদের ও বিক্ষোভকারীদেরকে হিজব উত-তাহিরি’র কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করে।[১৩]