কিসান বাবুরাও হজারে | |
---|---|
জন্ম | ভিঙ্গারি, মহারাষ্ট্র, ভারত | জুন ১৫, ১৯৩৭
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পরিচিতির কারণ | জলবিভাজিকা উন্নয়ন কর্মসূচি, তথ্যের অধিকার আইন, দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন |
আন্না হাজারে (জন্ম ১৫ জুন, ১৯৩৭) হলেন একজন ভারতীয় সমাজ সংস্কারক। তার প্রকৃত নাম কিসান বাবুরাও হজারে, (মারাঠি: किसान बाबुराव हजारे)। তিনি ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আহমেদনগর জেলার রালেগণ সিদ্ধি গ্রামের উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বিশেষ পরিচিতি অর্জন করেন। তার প্রচেষ্টায় এই গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রামে পরিণত হয়। এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে তিনি সরকারি কার্যালয়ে দুর্নীতি রোধে জন লোকপাল বিল আইনরূপে বলবৎ করার দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য আমরণ অনশনে বসেছিলেন।
অধুনা মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার ভিঙ্গারি গ্রামে এক অদক্ষ মজুর পরিবারে অন্না হজারে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতামাতার নাম ছিল বাবুরাও হজারে ও লক্ষ্মীবাই। তাদের পাঁচ একর জমি ছিল। অন্না হজারের দু’টি বোন ছিল। ১৯৫২ সালে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার পরিবার রালেগণ সিদ্ধি গ্রামে চলে আসেন। তার এক নিঃসন্তান পিসি তাকে মানুষ করেছিলেন। আর্থিক দুরবস্থার জন্য সপ্তম শ্রেণীর বেশি তিনি পড়াশোনা করতে পারেননি।[২]
অন্না হজারে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই সময় তিনি স্বামী বিবেকানন্দ, মহাত্মা গান্ধী ও বিনোবা ভাবের গ্রন্থাবলি পাঠ করে তাদের দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি গাড়ি চালানোর সময় তিনি দুর্ঘটনায় আহত হন। কিন্তু প্রাণে বেঁচে যান।[৩]
১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ করে তিনি রালেগণ সিদ্ধি গ্রামে ফিরে আসেন। প্রথম দিকে তিনি গ্রামবাসীদের মদ্যপানের নেশা ছাড়াবার জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এরপর তিনি গ্রামবাসীদের শ্রমদান অর্থাৎ স্বেচ্ছাশ্রমিকের কাজে উদ্বুদ্ধ করে নিকটবর্তী পাহাড়ে জলবিভাজিকা উন্নয়ন কল্পে খাল, ছোটোখাটো জলাধার ও জল-সংশোধনাগার গড়ে তোলেন। এর ফলে গ্রামে জলের সমস্যা দূর হয় ও সেচব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব হয়। শ্রমদান পদ্ধতির সাহায্যে তিনি গ্রামবাসীদের উদ্বুদ্ধ করে গ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও গড়ে তোলেন।[২][৩]
১৯৯৮ সালে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা-বিজেপি সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বাবানরাও গোলাপ তার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ দায়ের করলে, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এতে জন-অসন্তোষ দেখা দিলে, পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।[৪]
২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে অন্না হজারে মহারাষ্ট্র রাজ্যে একটি আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের ফলে মহারাষ্ট্র সরকার আগের দুর্বল আইনটি প্রত্যাহার করে একটি শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন পাশ করতে বাধ্য হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি আইনটি অনুমোদন না করা পর্যন্ত তিনি আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন।[৫]
২০১১ সালে অন্না হজারে ভারতীয় সংসদে একটি অধিক শক্তিশালী দুর্নীতি-বিরোধী লোকপাল বিল পাস করানোর জন্য আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা কর্ণাটকের লোকায়ুক্ত এন সন্তোষ হেগড়ে, সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এবং ইন্ডিয়া এগেইনস্ট কোরাপশন আন্দোলনের অন্যান্য সদস্যরা মিলে একটি বিকল্প বিলের খসড়া প্রস্তুত করেন। এই বিলটির নাম দেওয়া হয়েছে জন লোকপাল বিল। পূর্বতন লোকপাল বিলের থেকে এই বিলে লোকপালদের অধিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।[৬]
২০১১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে হজারে দিল্লির যন্তর মন্তরে আমরণ অনশন শুরু করেন। তার দাবি হল সরকার ও নাগরিক সমাজের যৌথ প্রতিনিধিত্বে একটি যৌথ কমিটি গঠন করে অধিক ক্ষমতাশালী ও অধিকতর স্বাধীন লোকপাল ও লোকায়ুক্ত নিয়োগের জন্য নতুন বিলের খসড়া প্রস্তুত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তার দাবি খারিজ করে দেন।[৭]
গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে অন্না হজারের আন্দোলনের কথা ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাকে সমর্থন জানাতে শুরু করেন। ১৫০ জন ব্যক্তি তার সঙ্গে অনশনে যোগ দেন।[৮] তিনি বলেন, কোনো রাজনীতিবিদকে তিনি আন্দোলনে অংশ নিতে দেবেন না। মেধা পাটেকর, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিরণ বেদি হজারের অনশন ও দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসেন। টুইটার ও ফেসবুকের মতো ইন্টারনেট সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও অনেকে তাকে সমর্থন জানান। সেই সঙ্গে ধর্মগুরু স্বামী রামদেব, স্বামী অগ্নিবেশ ও প্রাক্তন ক্রিকেটার কপিল দেব,[৯] শেখর কাপুর, সিদ্ধার্থ নারায়ণ, অণুপম খের, মধুর ভাণ্ডারকর, প্রীতিশ নন্দী, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, প্রকাশ রাজ, আমির খান প্রমুখ বলিউড ব্যক্তিত্বরাও টুইটারের মাধ্যমে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন।[১০]
আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে শরদ পাওয়ার মন্ত্রিগোষ্ঠীর দুর্নীতি পর্যালোচনা প্যানেল থেকে পদত্যাগ করেন।[১১]