ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | আর্চিবল্ড ক্যাম্পবেল ম্যাকলারেন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | হোয়ালি রেঞ্জ, ম্যানচেস্টার, ল্যাঙ্কাশায়ার, ইংল্যান্ড | ১ ডিসেম্বর ১৮৭১|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৭ নভেম্বর ১৯৪৪ ব্রাকনেল, বার্কশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭২)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | আর্চি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৯২) | ১৪ ডিসেম্বর ১৮৯৪ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১১ আগস্ট ১৯০৯ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৮৯০–১৯১৪ | ল্যাঙ্কাশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো, ১৭ নভেম্বর ২০১৭ |
আর্চিবল্ড ক্যাম্পবেল আর্চি ম্যাকলারেন (ইংরেজি: Archie MacLaren; জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৮৭১ - মৃত্যু: ১৭ নভেম্বর, ১৯৪৪) ল্যাঙ্কাশায়ারের হোয়ালিরেঞ্জ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও, ১৮৯৮ থেকে ১৯০৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘আর্চি’ ডাকনামে পরিচিত আর্চি ম্যাকলারেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৩৫ টেস্টে অংশ নিয়েছেন। তন্মধ্যে, ২২ টেস্টে দলকে পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছেন। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজের চার সিরিজে পরাজিত হয় তার দল। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন তিনি।
শৌখিন ক্রিকেটার হিসেবে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করতেন ম্যাকলারেন। খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাউন্টি ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তার সময়কালে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানের মর্যাদা লাভ করেছেন। দ্রুতগতিতে রান তোলার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। ১৮৯৫ সালে সমারসেটের বিপক্ষে এক ইনিংসেই রান তুলেছিলেন ৪২৪। ১৯২৩ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ও ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ইংরেজ ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হিসেবে টিকেছিল। তার অধিনায়কত্বের বিষয়ে ভিন্নমত পরিলক্ষিত হয়। খেলাকে তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন ও ক্রিকেটবোদ্ধাদের অভিমত, কৌশলগতভাবে তিনি বেশ সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে, হতাশা, দল নির্বাচকমণ্ডলীর সাথে তিক্ততাপূর্ণ সম্পর্ক ও সেরা খেলোয়াড়দেরকে তুলে ধরার ব্যর্থতার বিষয়ে অধিকাংশ ধারাভাষ্যকারই দূর্বল নেতৃত্বের পরিচায়ক হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করেছেন।
সরকারী বিদ্যালয়ে অধ্যয়নের পর ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলতে থাকেন। এ সময় তিনি খেলাধূলার বাইরে কর্মজীবন সৃষ্টির জন্য অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তাস্বত্ত্বেও ১৮৯৪ সালে কাউন্টি অধিনায়ক মনোনীত হন ও ইংল্যান্ডের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে খেলতে থাকেন। ল্যাঙ্কাশায়ারের সহযোগী সচিব হিসেবে নিযুক্তির ফলে ১৯০০ সাল থেকে আরও নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ ঘটে তার। ১৮৯৮ সালে আকস্মিকভাবে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড দলের পক্ষে অধিনায়ক মনোনীত হন। তবে, ১৮৯৯ সালে নিজ যোগ্যতাবলে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তার নেতৃত্বে ১৮৯৯, ১৯০১-০২ ও ১৯০২ সালে উপর্যুপরী তিনবার ইংল্যান্ড দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছিল। এ তিনবারের পরাজয়ে ম্যাকলারেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। ফলশ্রুতিতে ১৯০৫ সালে তার কাছ থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নেয়া হয়। তবে, তিনি দলের সদস্য ছিলেন। পরবর্তী বছরগুলো ব্যবসার দিকে ধাবিত হলে খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ১৯০৯ সালে আরও একবার ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে, ঐ সিরিজে দল পরাজিত হলে তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপণ ঘটে। পরের বছর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিয়মিতভাবে খেলাও বন্ধ করে দেন। ১৯২২-২৩ মৌসুম পর্যন্ত মাঝে-মধ্যে খেলতেন। খেলোয়াড়ী শেষদিকে কিছুটা সফলতা পান। নির্বাচিত একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে পূর্বেকার অপরাজিত অস্ট্রেলিয়া দলকে পরাভূত করেন। ১৯২২-২৩ মৌসুমে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। নিউজিল্যান্ড সফরে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলে ২০০ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি।
ক্রিকেট, পরিবার ও জীবনমান উন্নয়নে খেলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য চেষ্টা করেন। বিভিন্ন সময় শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা ও কোচের দায়িত্ব পালন করেন। অনেক বছর ল্যাঙ্কাশায়ারের সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর্থিক দিক বিবেচনায় এনে কমিটির কাছ থেকে নগদ অর্থ প্রদানের কথা বলতেন। ফলশ্রুতিতে কমিটির সাথে তার সংঘাতময় সম্পর্ক তৈরী হয়। কে. এস. রণজিত সিংহের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবেও বেশ কয়েকবছর কাজ করেছেন। রণজিত সিংহের কর্মচারীদের আর্থিক কেলেঙ্কারীর সাথেও তিনি জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে ম্যাকলারেনের অনেকগুলো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় স্ত্রী দিনাতিপাত করলেও তিনি ও তার পরিবার আরামে বসবাস করতো। সমগ্র জীবনে ম্যাকলারেন বিভিন্ন মতানৈক্যের সাথে যুক্ত ছিলেন ও কখনো দলীয় সঙ্গীদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেননি। তাস্বত্ত্বেও, তাকে ঘিরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেখা ক্রিকেট লেখক নেভিল কারদাসের কাছে বীর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
ম্যানচেস্টারের সমৃদ্ধ জেলা হোয়ালি র্যাঞ্জে ১ ডিসেম্বর, ১৮৭১ তারিখে ম্যাকলারেনের জন্ম।[১] তিনি জেমস ম্যাকলারেন ও এমিলি কারভার দম্পতির সাত পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন।[২] তার বাবা তুলা ব্যবসায়ী ও ক্রিকেট অনুরাগী ছিলেন। ১৯০০ সালে জেমসের মৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত ১৮৮১ সাল থেকে ল্যাঙ্কাশায়ার দলের সম্মানীয় কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতেন। পুত্রদেরকে ক্রিকেট খেলায় উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি। এ ক্রীড়ায় সম্যক দক্ষতা আনয়ণে আর্চি ও তার বড় ভাই জেমসকে প্রশিক্ষণের জন্য স্বনামধন্য বিদ্যালয়ে এলস্ট্রিতে ভর্তি করান।[২][৩]
হ্যারোতে অবস্থানকালে ম্যাকলারেনের উন্নতি ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল।[৪] ১৮৯০ সালে শিক্ষাজীবন শেষ হলে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার জন্য ল্যাঙ্কাশায়ারের সদস্য মনোনীত হন। ১৪ আগস্ট, ১৮৯০ তারিখে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়। সাসেক্সের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ব্যাটিং অনুপযোগী পিচে দুই ঘণ্টার মধ্যেই ১০৮ রানের মনোরম ইনিংস খেলেন। তবে মৌসুমের বাদ-বাকী খেলাগুলোয় তেমন সফলতা পাননি। ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে ২৩.৩৩ গড়ে ১৪০ রান তুলে তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করেন।[৫][৬]
ম্যাকলারেনের আর্থিক সঙ্কট দূরীকরণে ডিস্ট্রিক্ট ব্যাংকে কাজ নেন। ফলশ্রুতিতে ১৮৯১ ও ১৮৯২ সালে ক্রিকেট খেলায় খুব কমই অংশ নিতে পেরেছেন।[২][৭] ১৮৯৪ মৌসুমের পূর্বে ম্যাকলারেন ব্যাংকের চাকুরি থেকে ইস্তফা দেন ও পুরো মৌসুম ক্রিকেট খেলায় ব্যয় করেন।[৮] ঐ সময়ে ল্যাঙ্কাশায়ারের ক্রান্তিকাল অতিবাহিত হচ্ছিল ও অধিনায়কের দায়িত্ব স্থায়ী ছিল না।[৬][৯] মৌসুমের প্রথম ভাগেই কাউন্টি দলটিকে তিনজন অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। কাউন্টি খেলায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শৌখিন খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে ম্যাকলারেনকে অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে ম্যাকলারেন এ পদের জন্য বেশ তরুণ ছিলেন। ক্রিকেটে ব্যাপক অর্থে দূর্বল থাকা স্বত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অটুট থাকে।[১০] দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম খেলাতেই দল পরাজিত হয়।[১১] তবে, মৌসুমের পরবর্তী অংশে দলের উত্তরণ লক্ষণীয়। চ্যাম্পিয়নশীপে দলটি চতুর্থ স্থান দখল করে।[১০] ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে গড়ের দিক দিয়ে ম্যাকলারেন ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ২৫.৬৯ গড় ১,১০৫ রান তুলেন তিনি।[৬][১১] অভিষেকের পর থেকে খুব কমই তার ব্যাটিংয়ের উত্তরণ দেখা যায়।[২] তবে, ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে নেতৃত্বে সফলতা পাওয়ায় কিছু ক্রীড়া সংবাদদাতা তাকে ভবিষ্যতের ইংরেজ অধিনায়ক হিসেবে উল্লেখ করেন।[৮] মৌসুম শেষ হবার পর অ্যান্ড্রু স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে ১৮৯৪-৯৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য শেষ মুহুর্তে তাকে দলের সদস্য নির্বাচিত করা হয়।[১২]
লিভারপুলের আইগবার্থে অনুষ্ঠিত খেলায় গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রথম উইকেট জুটিতে রেজি স্পুনারের সাথে ৩৬৮ রানের জুটি গড়েন যা অদ্যাবধি ল্যাঙ্কাশায়ারের রেকর্ড হিসেবে অক্ষত রয়েছে। পরবর্তী তিন বছরে স্পুনার ও জনি টিল্ডসলেকে সাথে নিয়ে কাউন্টি দলের অবিস্মরণীয় ব্যাটিংশৈলী গড়ে তুলেন। এ পর্যায়ে আগস্ট, ১৯০৩ থেকে জুলাই, ১৯০৫ সাল পর্যন্ত কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের পঁয়তাল্লিশটি খেলায় দলটি অপরাজিত ছিল। ১৮৯৫ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে আর্চি ম্যাকলারেন ৪২৪ রানের ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেন। অদ্যাবধি তার এ সংগ্রহটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে যে-কোন ইংরেজ ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে।
ল্যাঙ্কাশায়ারের অধিনায়ক হিসেবে বল নিক্ষেপ বিতর্কে আর্থার মোল্ডের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন। ঐ বছরের ডিসেম্বর মাসে লর্ডসে প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি দলগুলোর বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বল নিক্ষেপের ন্যায় সমস্যার নিয়েও আলোকপাত ঘটে।[১৩] আর্চি ম্যাকলারেন সভায় উপস্থিত অন্য অধিনায়কদের কাছে আর্থার মোল্ডের বোলিংয়ের বিষয়ে মতামত চান। ম্যাকলারেন জানান যে, তারা মোল্ডের খেলাকে সর্বদাই খেলোয়াড়ীসূলভ দেখতে পান না।[১৪] ম্যাকলারেন দাবী করেন যে একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তিনিই কেবল আর্থার মোল্ডের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিলেন।[১৪]
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সফরের জন্য দল প্রেরণের আমন্ত্রণ লাভের পর স্টডার্ট তার দলে যোগ দেয়ার জন্য বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হন। স্টডার্ট মাত্র ১৩জনকে সাথী হিসেবে পেয়েছেন।[১৫] তন্মধ্যে, দুইজনই ছিলেন উইকেট-রক্ষক। তাদের মধ্যে একজনকে প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক খেলায় রেখেছিলেন। অন্য আরেকজন বোলার বল উঁচুতে তুলে বোলিং করতেন ও ইতোপূর্বে কোন টেস্টে খেলেননি। এরফলে ম্যাকলারেন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে সকল খেলাতেই অংশ নিতে পেরেছিলেন।[১২]
উপরন্তু, তার বাজে অবস্থানে থাকা স্বত্ত্বেও এ সুযোগ পেয়েছিলেন।[১৬] সফরের প্রথম প্রস্তুতিমূলক খেলায় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২২৮ রান তুলেন।[১৭] এছাড়াও, প্রথম টেস্ট শুরুর পূর্বে আরও একটি অর্ধ-শতরান করেন। ১৪ ডিসেম্বর, ১৮৯৪ তারিখে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে।[১৮] খেলায় তিনি ৪ ও ২০ রান তুলেন। তবে, ফলো-অনের কবলে পড়েও ইংল্যান্ড দল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ী হয়। পরের খেলায়ও ইংল্যান্ড জয় পায়।[১৯] তবে, খেলার প্রথম বলেই ম্যাকলারেন কট আউটে পরিণত হন। এরফলে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম বলেই আউট হবার ন্যায় অগৌরবজনক অধ্যায়ের সাথে যুক্ত করে নেন নিজের নামকে।[২০][২১] তৃতীয় ও চতুর্থ টেস্টে জয়ী হয়ে অস্ট্রেলিয়া খেলায় সমতা আনে। ম্যাকলারেন ব্যক্তিগতভাবে খুব কমই সফলকাম হন। চার খেলার পর তার ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১২.৫০।[১৬]
ঐ সময়ে ম্যাকলারেনের ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটে নিপতিত হন। শৌখিন খেলোয়াড় ছিলেন বিধায় তার সমূদয় ব্যয়ভার সফর আয়োজনকারীদের বহন করতে হয়। তবে খেলার জন্য তিনি কোন অর্থ পাননি। তাকে আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষ সফরের পূর্বে ১০০ পাউন্ড স্টার্লিং প্রদান করে।[১২] সফরের শেষদিকে সমূদয় অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। সম্ভবতঃ ঘোড়দৌড়ে বাজি রাখার কারণেই এমনটি ঘটেছে।
ফলশ্রুতিতে, আরও অর্থ প্রদানের জন্য ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষ বরাবর অনুরোধ বার্তা প্রেরণ করেন। চূড়ান্ত টেস্ট শুরু হবার ঠিক পূর্বক্ষণে আসন্ন ইংরেজ মৌসুমের জন্য অগ্রিম ৬০ পাউন্ড স্টার্লিং পাঠানো হয়। পঞ্চম টেস্টে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সড়ে দাঁড়ান। এ অবস্থানে প্রথম টেস্ট থেকে খেলছিলেন। এর পরিবর্তে পাঁচ নম্বরকে বেছে নেন তিনি।[১৬] এ অবস্থানে থেকে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকান। স্বাভাবিকের তুলনায় অতিমানবীয় ছিল তার ব্যাটিং। ১২০ রান তোলার পর দূর্ভাগ্যবশতঃ ব্যাটের আঘাতে উইকেট বিলিয়ে দেন।[২২] এ টেস্ট জয়ী হয়ে ইংল্যান্ড ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। ফলশ্রুতিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দর্শকদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি করে।[১৮][২৩] এ টেস্ট সিরিজে ২৬.৬৭ গড়ে ২৪০ রান তুলেন ও ইংরেজদের মধ্যে গড়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন আর্চি ম্যাকলারেন।[২৪] তবে, গুরুত্বহীন খেলাগুলোয় তিনি বেশ সপ্রতিভ ছিলেন।[২৫] সফরসূচীতে অন্তর্ভুক্ত আরও কয়েকটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৪৭.২৩ গড়ে সর্বমোট ৮০৩ রান তুলেন তিনি।[৬][১৮]
ছয় সপ্তাহব্যাপী ঐ সফরে ম্যাকলারেন ঘোড়দৌড়ের কর্মকর্তার কন্যা ও অস্ট্রেলীয় সমাজকর্মী মড পাওয়ারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। ১৮৯৮ সালে তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।[২][২৬]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ম্যাকলারেন লেফট্যানেন্ট হিসেবে রয়্যাল আর্মি সার্ভিস কোরে কর্মরত ছিলেন।[২৭] ম্যানচেস্টার অঞ্চলে সেনাবাহিনীতে লোক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। শারীরিক শিক্ষা মাঠে দায়িত্বের থাকার পূর্বে ক্যাপ্টেন হিসেবে উপনীত হন। যুদ্ধ শেষ হবার পর লিওনেল রবিনসনের ক্রিকেট ম্যানেজারের দায়িত্ব পান ও বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং ক্রিকেট প্রকাশনা সংস্থায় লিখতে থাকেন। ম্যাকলারেন ও তার পরিবারের আর্থিক শোচনীয়তার এক পর্যায়ে তারা রবিনসনের সম্পত্তিতে বসবাস করতে বাধ্য হন।[২৭] তিনি রবিনসনকে ক্রিকেট পিচ প্রস্তুতের বিষয়ে উপদেশ দেন ও খেলা আয়োজনের মাধ্যমে তার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আসতে বলেন।[২৮] এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ম্যাকলারেন ১৯২১ সালে অস্ট্রেলিয়া দলকে আমন্ত্রণ জানান। রবিনসন্স ক্রিকেট মাঠে নির্বাচিত দল নিয়ে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
জনতার রায়কে মেনে নিয়ে ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষ ১৯২২ মৌসুমে দলের কোচ হিসেবে মনোনীত করে। এছাড়াও তিনি ল্যাঙ্কাশায়ার দ্বিতীয় একাদশেরও নেতৃত্বে ছিলেন। দায়িত্বভার নেয়ার পূর্বেই আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় তাকে দুইবার বেতনের অগ্রিম নিতে হয়।[২৯] কোচ হিসেবে তিনি স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দিতেন। তবে, খেলোয়াড়দেরকে নিজেদের করণীয় সম্পর্কেও উৎসাহ দিতেন। কিছু খেলোয়াড়ের কাছে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন না ও নিয়মিতভাবে ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তেন।[৩০]
১৯২২-২৩ মৌসুমের শীতকালে এমসিসি কর্তৃপক্ষ দুইটি ক্রিকেট সফরের আয়োজন করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট দল প্রেরণ এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে তরুণ, উদীয়মান ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতার লক্ষ্যে প্রেরণ করে। ম্যাকলারেনকে শেষ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিজ্ঞতা ও স্বীয় সফলতাকে পুঁজি করে তরুণ ক্রিকেটারদেরকে সাথে নিয়ে ১৯২১ সালে অস্ট্রেলীয়দের বিপক্ষে জয় তুলে নেয়।[৩১] খেলা চলাকালীন দর্শকদের কাছ থেকে তিনি বেশ সাড়া পান। সংবাদ মাধ্যমেও তার কৌশল গ্রহণের বিষয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করা হয়। নিউজিল্যান্ড থেকে দলটি অপরাজিত অবস্থায় ফিরে আসে।[৩২] পূর্ণাঙ্গ শক্তিধর নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে ম্যাকলারেন অপরাজিত ২০০ রান তুলেন। ২৬৪ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করেন তিনি যা তার সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ ছিল। এ সময়ে তিনি হাঁটুতে আঘাতপ্রাপ্ত হন ও সফরের আর কোন খেলায় অংশ নিতে পারেননি।[১৮][৩৩] ৩৪.১৫ গড়ে ২২,২৩৬ রান তুলে ম্যাকলারেন তার প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপণ ঘটান।[৩৪]
অস্ট্রেলিয়ায় দলটি ফিরে আসার পর ম্যাকলারেন নিউজিল্যান্ডে খেলার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কের বিষবাষ্প তুলে ধরেন যা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও তিনি তাসমানিয়ার বিপক্ষে বিল পন্সফোর্ডের ৪২৯ রানের রেকর্ডসংখ্যক প্রথম-শ্রেণীর ইনিংসের মর্যাদার বিষয়ে অনুসন্ধানের কথা বলেন। দেশের পথে ফেরাকালে ম্যাকলারেন ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষকে আরও অর্থ প্রদানের জন্য বার্তা পাঠান। তবে, কর্তৃপক্ষ অর্থ প্রদানে অসম্মতি প্রকাশ করে ও কোচ হিসেবে তার সাথে চুক্তি বাতিল করে। ল্যাঙ্কাশায়ার এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে যে, ম্যাকলারেনের হাঁটুর আঘাতপ্রাপ্তির ফলে তিনি আর দায়িত্বভার চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।[৩৫]
অবসর পরবর্তী বছরগুলোয় ম্যাকলারেন ও তার পরিবার ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটে ভুগতে থাকে। স্ত্রীর পরিবার থেকে মাঝে-মধ্যে অর্থ প্রেরণ করলেও যখনই অর্থ হাতে আসতো ম্যাকলারেন প্রায়শঃই মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতেন।[৩৬] একবার নিবন্ধ লেখা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিয়ে দামী হোটেলে বন্ধুদের নিয়ে নৈশভোজনের আয়োজন করেন।[৩৭] ঋণে জর্জরিত ছিলেন তিনি। ১৯২৩ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শ্যাম্পেনের ব্যয় বহন করতে পারেননি। অনেক বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ ধার করেন।
সাংবাদিকতা ও কোচ হিসেবে দায়িত্বে থাকা স্বত্ত্বেও স্ত্রীর উপার্জিত অর্থে ভাগ বসাতেন। অন্যান্য ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মধ্যে, ক্রিকেট ব্যাট নকশা, ক্রিকেট সম্পর্কীয় চলচ্চিত্রের বিশেষ অংশে উপস্থিতি, সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হোটেলের মালিকানাস্বত্ত্ব লাভ ও ঘোড়ার এজেন্সি পরিচালনার চেষ্টা চালান।[৩৬] ক্লাব ক্রিকেটে খেলতে থাকেন ও ১৯২৪-২৫ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।[৩৮]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার অল্পকিছুদিন পূর্বে ম্যাকলারেনের স্ত্রী বিশাল অঙ্কের অর্থের মালিক হন। এরফলে এ দম্পতি বেশ আরামপ্রদ জীবনযাপনের অধিকারী হন। তারা সম্পত্তি ক্রয় করে গৃহ নির্মাণ করেন।[৩৯] সেখানে এ দম্পতি ভোগ-বিলাসে পরিপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন। এ সময়ে তিনি আমেরিকা সফরে যান। হলিউড চলচ্চিত্র দ্য ফোর ফিদার্সে বিশেষ দৃশ্যে অংশগ্রহণ করেন। এ চলচ্চিত্রে তার বন্ধু ও সাবেক ক্রিকেটার সি. অব্রে স্মিথ নায়কের ভূমিকায় ছিলেন।[৪০]
১৯৪০-এর দশক থেকে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। গাড়ী দূর্ঘটনায় তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। এরপর ক্যান্সার রোগের জীবাণু ধরা পড়ে। ৭২ বছর বয়সে নভেম্বর, ১৯৪৪ সালে ম্যাকলারেনের দেহাবসান ঘটে। এর কয়েকমাস পর তার স্ত্রীও একই পথে গমন করেন।[৪০]
ক্রীড়া অবস্থান | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী মার্টিন হক |
ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়ক ১৮৯৯–১৯০২ |
উত্তরসূরী প্লাম ওয়ার্নার |
পূর্বসূরী আর্থার জোন্স |
ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯০৯ |
উত্তরসূরী হেনরি লেভেসন-গাওয়ার |
রেকর্ড | ||
পূর্বসূরী ডব্লিউ. জি. গ্রেস |
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ৪২৪ ল্যাঙ্কাশায়ার ব সমারসেট, টনটন, ১৮৯৫ |
উত্তরসূরী বিল পন্সফোর্ড |