ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | আর্থার এডওয়ার্ড রবার্ট জিলিগান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ডেনমার্ক হিল, লন্ডন, ইংল্যান্ড | ২৩ ডিসেম্বর ১৮৯৪|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ পালবোরা, সাসেক্স, ইংল্যান্ড | (বয়স ৮১)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | ফ্রাঙ্ক জিলিগান (ভ্রাতা) হ্যারল্ড জিলিগান (ভ্রাতা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২০৭) | ২৩ ডিসেম্বর ১৯২২ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৪ মার্চ ১৯২৫ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯১৯–১৯২০ | কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯১৯ | সারে | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২০–১৯৩২ | সাসেক্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৯ নভেম্বর ২০১৭ |
আর্থার এডওয়ার্ড রবার্ট জিলিগান (ইংরেজি: Arthur Gilligan; জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর, ১৮৯৪ - মৃত্যু: ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৬) লন্ডনের ডেনমার্ক হিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও অধিনায়ক ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২৪ থেকে ১৯২৫ সময়কালে ইংল্যান্ড দলকে নয় টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তন্মধ্যে চার টেস্টে জয়, সমসংখ্যক টেস্টে পরাজিত হয় তার দল। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেমব্রিজ, সারে ও সাসেক্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আর্থার জিলিগান। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলারের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচের সারিতে কার্যকরী ব্যাটসম্যান হিসেবে সুনাম ছিল তার।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে মূলতঃ শৌখিন খেলোয়াড় ছিলেন আর্থার জিলিগান। ১৯২২ থেকে ১৯২৯ সময়কালে সাসেক্স দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ফাস্ট বোলার ও নিচেরসারিতে শক্তিধর ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ১৯২৩ সালে ডাবল লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯২৪ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন তিনি। ইংল্যান্ড দল নির্বাচক ও মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সভাপতি মনোনীত হন। ক্রিকেটে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। ক্রীড়াসূলভ ও বন্ধুত্বসূলভ মনোভাবের পরিচয় দিতেন।
খেলোয়াড়ী জীবনেই তিনি ব্রিটিশ ফ্যাসিবাদী দলের সদস্য ছিলেন। ১৯২৪-২৫ মৌসুমে এমসিসি দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে অস্ট্রেলীয় গোয়েন্দা বিভাগের নজরে ছিলেন ও সম্ভবতঃ অস্ট্রেলিয়ায় ছোট আকারের ফ্যাসিবাদী দল গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন। অজানাই রয়ে গেছে যে, তিনি কতদিন যাবৎ দলের সদস্য ছিলেন। তবে, ১৯২৬ সালে এ সংগঠনটি কার্যতঃ বিলুপ্ত হয়ে যায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ডালউইচ কলেজের পক্ষে আর্থার জিলিগান ক্রিকেট খেলেছিলেন। এরপর ক্যামব্রিজের পক্ষে খেলে দুইবার ব্লু লাভ করেন। সংক্ষিপ্তকালের জন্য সারের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু, ১৯২০ সালে সাসেক্সে স্থানান্তরিত হন। শুরুতে বেশ ধীরগতিতে কাউন্টি দলে খেলতে থাকেন। কিন্তু এরপর বেশ উন্নতি ঘটে তার। মরিস টেটের সাথে অবিস্মরণীয় বোলিং জুটি গড়ে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ১৯২২ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলেন। এরপর ১৯২৪ সালে টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান। পরবর্তী বছরগুলো জিলিগান তার খেলোয়াড়ী জীবনের তুঙ্গে অবস্থান করেন। কিন্তু ব্যাটিংকালে তার অসুস্থতা ধরা পড়ে। ফলশ্রুতিতে তার বোলিংয়ের ধার অনেকাংশেই খর্ব হয়ে যায়। তাস্বত্ত্বেও ১৯২৪-২৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সিরিজে পরাজিত হলেরও তিনি ও তার দল বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে ও সমীহের পাত্রে পরিণত হয়। পরের বছরগুলোয় তিনি অনিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। ১৯২৯ সালে সাসেক্সের অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ও তিন বছর পর অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি লেখক, সাংবাদিক ও ক্রিকেট ধারাভাষ্যকাররূপে আবির্ভূত হলেও সাসেক্সের সাথে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
অধিনায়ক হিসেবে খেলোয়াড়সহ ধারাভাষ্যকারদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তাস্বত্ত্বেও অনেকেই তার কৌশল গ্রহণের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তার নেতৃত্ব গুণে সাসেক্স প্রতিযোগিতাধর্মী দলে রূপান্তরিত হয়েছিল। তিনি তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সন্ধানে থাকতেন। ১৯৩০-এর দশকে খেলোয়াড়দের মাঝে প্রধান মেরুদণ্ডরূপে নিজেকে মেলে ধরেন। ফিল্ডার হিসেবে তিনি দলকে চমৎকার ফিল্ডিংকারী দলে রূপান্তরিত করতে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। পাশাপাশি ১৯২৬-২৭ মৌসুমে এমসিসি দলের অধিনায়করূপে ভারত সফরে যান। তিনি ভারতীয়দেরকে নিজস্ব ক্রিকেট বোর্ড গঠনে উৎসাহিত করেন। ভারতীয় ক্রিকেট পরিচালনায় শ্বেতাঙ্গ ইংরেজদেরকে সংশ্লিষ্ট রাখার কথা জানান। ভারত দলকে টেস্ট খেলার মর্যাদা দানে এমসিসি’র কাছে দেন-দরবার পরিচালনা করতেন। এমসিসি সভাপতি থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালে ডি’অলিভেইরা ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন আর্থার জিলিগান।
লন্ডনের ক্যাম্বারওয়েল এলাকার ডেনমার্ক হিলে[১] আর্থার জিলিগানের জন্ম।[২] উইলি অস্টিন জিলিগান ও অ্যালিস এলিজা কিম্পটন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন।[জ ১][২] তিন পুত্রের প্রত্যেকেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সাসেক্সের সাথে এ পরিবারের জোড়ালো সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। শিশু অবস্থাতেই জিলিগান সাসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীকালে এ ক্লাবের পক্ষে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ফেয়ারফিল্ড স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ১৯০৬ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ডালউইচ কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখানে থাকাকালে অ্যাথলেটিক্স ও ক্রিকেটে তার ক্রীড়া প্রতিভা ফুঁটে উঠে। শেষোক্ত ক্রীড়ায় বিদ্যালয়ের প্রথম একাদশে ভ্রাতৃদ্বয়সহ তার অংশগ্রহণ ছিল। ১৯১৩ সালে তিন ভাই একত্রে দলের পক্ষে খেলেন। ১৯১১ থেকে ১৯১৪ সময়কালে জিলিগান প্রথম একাদশে খেলেন ও শেষ দুই বছর দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।[৩] ১৯১৪ সালে বিদ্যালয়ের ব্যাটিং ও বোলিং - উভয় বিভাগেই তিনি শীর্ষস্থানে আরোহণ করেন।[৪] ১৯১৪ সালে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রতিনিধিত্বকারী বিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন। সর্বমোট দশ উইকেট পান ও দুই খেলায় অংশ নিয়ে একটিতে অর্ধ-শতরান তুলেন।[৫] বিদ্যালয় ক্রিকেটের মানদণ্ডে তার পেশ বোলিং বেশ আশ্চর্যান্বিত ছিল। ১৯১৩ ও ১৯১৪ সালে বিদ্যালয়ের অবকাশকালীন সময়ে সারে কর্তৃপক্ষ তাদের দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে খেলার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানায়। তার বাবা কাউন্টি কর্তৃপক্ষের সদস্য ছিলেন। লন্ডনে জন্মগ্রহণের কারণে জিলিগান খেলার যোগ্যতা লাভে সমর্থ হন।[২][৬]
১৯১৪ সালে কেমব্রিজের পেমব্রোক কলেজে ভর্তি হন। তবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন বাঁধাগ্রস্ত হয়। ১৯১৫ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার ফুসিলিয়ার্সে যোগ দেন ও ফ্রান্সের যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেন। ১১শ ব্যাটলিয়নের ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। যুদ্ধ শেষ হবার পর পেমব্রোকে ফিরে আসেন ও পুনরায় ক্রিকেট জীবনে জড়িয়ে পড়েন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জিলিগান রয়্যাল এয়ার ফোসে কল্যাণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন ও পরবর্তীতে স্কোয়াড্রন লিডার র্যাঙ্ক লাভ করেন।
চমকপ্রদ ক্রীড়াশৈলীর কারণে লর্ডসে মর্যাদাসম্পন্ন জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলার জন্য নির্বাচিত হন। শৌখিন খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া জেন্টলম্যান দলের পক্ষে খেলেন আর্থার জিলিগান। তার ফিল্ডিং ধারাভাষ্যকারদের মন জয় করে। আরও কয়েকটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান।[জ ২] কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপাধারী ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে বাদ-বাকী ইংল্যান্ড দলের পক্ষে খেলেন। শেষের খেলায় তিনি সর্বমোট আট উইকেট দখল করেন। ঐ মৌসুম শেষে জিলিগানকে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজে অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে তার। [জ ৩][৯]
১৯২২-২৩ মৌসুম থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[১০][১১] এ সময়ে তিনি এমসিসি দলের সঙ্গে ১৯২২-২৩ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯২৪-২৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া এবং ১৯২৬-২৭ মৌসুমে ভারত ও সিলন গমন করেন।
ফ্রাঙ্ক মানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের ঐ সফরে অধিনায়কের প্রিয়পাত্র হওয়া স্বত্ত্বেও ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ পার্সি ফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে জিলিগানকে সহঃ অধিনায়কের মর্যাদা দেয়া হয়।[১২] জিলিগান পাঁচ টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজের দুইটিতে অংশ নেন - প্রথম ও চূড়ান্ত টেস্টে।[১৩] ২৩ ডিসেম্বর, ১৯২২ তারিখে তার টেস্ট অভিষেক পর্বটি সুখকর হয়নি। ঐ টেস্টে ইংল্যান্ড দল পরাজিত হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় অংশগ্রহণে দল বেশ সফলতা পায়। খেলায় তিনি ছয় উইকেট দখল করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংস উপহার দেন। খেলায় দলকে জয়ের পাশাপাশি ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল।[৫][১৪] সামগ্রীকভাবে জিলিগান ২২.৩৭ গড়ে নয়টি টেস্ট উইকেট লাভে সমর্থ হন।[১৫] সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ২২.০৩ গড়ে ২৬ উইকেট পান তিনি।
১৯২৩ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে আসার পর কাউন্টি ক্রিকেটে জিলিগান তার নিজস্ব সেরা মৌসুম অতিবাহিত করেন। ১৭.৫০ গড়ে ১৬৩ উইকেট তুলে নেন। পাশাপাশি ২১.১২ গড়ে ১,১৮৩ রান সংগ্রহ করেন তিনি। এরফলে ১,০০০ রান ও ১০০ উইকেট নেয়ার ডাবল লাভের কৃতিত্ব তার খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র ঘটনা ছিল। পরবর্তী দুই মৌসুম উদীয়মান পেস বোলার মরিস টেটের বোলিং জিলিগানের মনে প্রাণের সঞ্চার করে।[১৬] কার্যকরী বোলিং জুটি গড়ে দলে স্মরণীয় অবদান রাখেন তারা। জিলিগান দুইটি সেঞ্চুরি ও ইনিংসে নয়বার পাঁচ বা ততোধিক উইকেট লাভ করেন। তার এ ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন। এ প্রসঙ্গে উইজডেন মন্তব্য করে যে, এখন তিনি শীর্ষস্থানীয় শৌখিন ক্রিকেটার হিসেবে স্বীকৃত ও ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলার উপযোগী।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের পরপরই অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড দল। দুই টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে ইংল্যান্ড দল শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড দল নির্বাচকমণ্ডলী নতুন অধিনায়ক মনোনয়নের কথা ভাবতে থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ফ্রাঙ্ক মান দলকে নেতৃত্ব দেন। ১৯২১ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে দলের একমাত্র টেস্ট ছিল। ১৯২৪ সালে অনুষ্ঠিত একটি খেলায় সম্ভবতঃ জর্জ ম্যাকাউলি প্রকাশ্যে ইংল্যান্ড দলনায়ক আর্থার জিলিগানের অধিনায়কত্ব ও বোলিং নিয়ে সমালোচনায় মুখরিত হয়েছিলেন।[১৭]
প্রসিদ্ধ ক্রিকেট লেখক অ্যালান গিবসনের মতে, মান বয়সের ভারে ন্যুহ হলেও এ পদের প্রধান দাবীদার ছিলেন। তবে তার ব্যাটিংয়ের মান তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে ফেন্ডার ও আর্থার কার ছিলেন।[১৮] তাস্বত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে ঘিরে ১৯২৪ সালে জিলিগানকে দলের অধিনায়করূপে মনোনীত করা হয়েছিল। এ পদের জন্য তাকে পরীক্ষামূলকভাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।[১৯] অন্যদিকে ক্রিকেট সংবাদদাতা ই. ডব্লিউ. সোয়ানটনের মতে, প্রভাবশালী লর্ড হ্যারিসের স্নেহধন্য ছিলেন জিলিগান। ফলে, তার মনোনয়ন সহজতর হয়।[২০] গিবসন জিলিগানকে ২৯ বছরের আকর্ষণীয়, হাস্যোজ্জ্বল যুবকরূপে আখ্যায়িত করেন।[২১] জিলিগান মৌসুমটি খুবই সুন্দরভাবে শুরু করেন। তিনি ও টেট প্রথম টেস্টের ন্যায় পরবর্তী সপ্তাহগুলোয় তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা উদ্বোধনী বোলিং জুটি হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হন। ঐ সময়ে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটিংকারী দলরূপে সারে ও মিডলসেক্সকে গণ্য করা হতো। উপর্যুপরী খেলায় জিলিগান ও টেট ঐ দল দুটোকে যথাক্রমে ৫৩ ও ৪১ রানে গুটিয়ে ফেলেন। শেষের খেলাটিতে জিলিগান ৮/২৫ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি ও টেট বেশ কয়েকটি কাউন্টি দলকে স্বল্প রানে গুটিয়ে ফেলতে দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। প্রথম টেস্টের মাধ্যমে জিলিগানের ইংল্যান্ড দলের অধিনায়করূপে আত্মপ্রকাশ করেন। জিলিগান মাত্র সাত রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট পেয়েছিলেন। উইজডেন তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, তিনি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বোলিং করেছিলেন ও যে-কোন অগ্নিগোলকের চেয়ে অধিক ছিল তার বল ছোঁড়ার গতি। নো বল ছোঁড়ার পর তিনবার ইনিংসটিতে উইকেট তুলে নিয়েছেন।[২২] ফলো-অনের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫/৮৩ পান। ঐ টেস্টে তিনি ১১ উইকেট পান। প্রথম টেস্টের ন্যায় দ্বিতীয় টেস্টেও ইংল্যান্ড দল ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়। খেলায় তিনি পাঁচ উইকেট দখল করেন। জুন মাস শেষে সকল ধরনের প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে তিনি ১৫ গড়ে ৭৪ উইকেট লাভ করেন। এ পর্যায়ে গণমাধ্যম ও জনগণের মাঝে জিলিগান ও টেটে আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরকে ঘিরে ব্যাপক প্রাণের সঞ্চার সঞ্চালিত করেন।
১৯২৪ সালে গুরুতরভাবে আহত হবার পর জিলিগান দ্রুতগতিতে বল করতে পারছিলেন না। খেলোয়াড় হিসেবে ১৯২৪-২৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে খুব কমই ভূমিকা রেখেছিলেন। আরও আঘাত লাভের ফলে তার ক্রীড়াশৈলী আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।[২৩] খেলায় তিনি সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন ৪/১২। দ্বিতীয় খেলায় একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেন ও আর মাত্র একবার পঞ্চাশের কোঠা অতিক্রমে সক্ষমতা দেখান। তবে, তার নেতৃত্বের বিষয়টিই একমাত্র সফলতা ছিল। পূর্ববর্তী সিরিজগুলোয় অস্ট্রেলিয়া ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের তুলনায় বেশ শক্তিধর ছিল। তবে, গিবসনের মতে, জিলিগানের নেতৃত্বে ইংরেজ দল ফিল্ডিংয়ে বিপ্লব আনে যা যুদ্ধের পর প্রথমবার এমনকি ১৯০০-এর দশকের শুরুর দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তুলনা করতে শুরু করে। এ ধারাবাহিকতা বেশ কয়েকবছর প্রভাব বিস্তার করেছিল। তবে, অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রগুলো এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে যে, পাঁচ টেস্টের ঐ সিরিজে ইংল্যান্ড দল কমপক্ষে ২১টি ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হয় যা হয়তো সিরিজের ফলাফলে ব্যাপক ভূমিকা রাখতো। ঐ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দল ৪-১ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ করায়ত্ত্ব করে।[২৪] জিলিগানের নেতৃত্ব তুলনামূলকভাবে কম সফল ছিল। প্রতিপক্ষের হার্বি কলিন্স তার তুলনায় শ্রেয়তর ছিলেন। প্রস্তুতিমূলক খেলায় পরাজিত হয় তার দল যা হয়তো ড্রয়ের দিকে যেতো। তবে, অস্ট্রেলীয় দর্শকদের কাছে মন জয় করেন তিনি ও দলের সকলের কাছে সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন। ১৯৭৯ সালে গিবসন লেখেন যে, অস্ট্রেলিয়ায় আগত যে-কোন ইংরেজ অধিনায়কের চেয়ে তিনি সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এ সফরে জিলিগান প্রচারের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন।
প্রথম দুই টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জয় করে। ফলশ্রুতিতে পার্কিন ইংরেজ কর্তৃপক্ষ বরাবর জিলিগানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রচারমাধ্যমে সমালোচনায় মুখরিত হন ও জ্যাক হবসকে অধিনায়কের দায়িত্বে পুণর্বহালের জন্য পরামর্শ দিয়ে স্বল্পমাত্রায় বিতর্ক সৃষ্টি করেন।[২৫] তৃতীয় টেস্ট বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়। জিলিগানসহ তিনজন বোলার আঘাতের কবলে পড়েন যা সমগ্র সিরিজে প্রভাববিস্তার করে।[২৬] ৩১ রান করলেও অস্ট্রেলিয়ার ১১ রানের স্বল্প ব্যবধানের বিজয়ে জিলিগান বাঁধার প্রাচীর গড়তে পারেননি।[৫][২৭] চতুর্থ টেস্টে ইংল্যান্ড জয় পায় যা যুদ্ধ-পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের প্রথম ছিল। চূড়ান্ত টেস্টে আবারও পরাজিত হয়।[২৮] দলের ফলাফলে সমালোকেরা সন্তুষ্ট হন। এ সফর সম্পর্কে গিবসন মন্তব্য করেন যে, সবকিছুই সুন্দরভাবে হলেও বিজয়ের বিষয়ে ইংরেজরা তীক্ষ্ণভাবে নজর রাখছিল ও ব্যাপক সংখ্যায় বিজয় চাচ্ছিল।
ঐ সিরিজে ৫১.৯০ গড়ে ১০ উইকেট ও ৯.১৪ গড়ে ৬৪ রান তুলেন জিলিগান।[১৫][২৯] গিবসন বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে লিখেন যে, প্রাপ্ত উইকেটগুলোর অধিকাংশই সেরা ব্যাটসম্যানদের ছিল। এ সিরিজে অনেক বোলার দূর্বলমানের বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ঐ হিসেবে প্রদর্শিত পরিসংখ্যান তেমন খারাপ ছিল না। সফরের সকল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে জিলিগান ৩৮.৩৯ গড়ে ২৮ উইকেট ও ১৭.৮৫ গড়ে ৩৫৭ রান তুলেন। এরপর তিনি আর কোন টেস্ট খেলেননি।
১৯২৬-২৭ মৌসুমের শীতকালে এমসিসি দল ভারত ও সিলন সফরে আসে। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় জিলিগানকে এমসিসি দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়। দলটিতে পূর্ণাঙ্গ শক্তিধর ছিল না ও কোন টেস্ট খেলায় অংশ নেয়নি।[৩০] ভারতে ২৬টি ও সিলনে চারটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিল। মরিস টেট, মরিস লেল্যান্ড, অ্যান্ডি স্যান্ডহাম, বব ওয়াট, আর্থার ডলফিন, জর্জ গিয়েরি, ইউয়ার্ট অ্যাস্টিল ও জর্জ ব্রাউনের ন্যায় খেলোয়াড়েরা দলের সদস্য ছিলেন।[৩১] প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় তিনটি অর্ধ-শতরান করেন ও অনিয়মিতভাবে বোলিং করে দশ উইকেট লাভ করেন।
এমসিসি নামে পরিচিত দলটি প্রথমবারের মতো ভারত সফরে আসে ও বেশ সফলতা লাভ করে।[৪][৩২] সহঃ অধিনায়ক রালেই চিচেস্টার-কনস্ট্যাবলের উপর অধিকাংশ দায়িত্ব প্রদান করেন ও বক্তব্য[৩৩] প্রদানেও তেমন দায়িত্ব পালন করেননি।[৩৪]
তিনি ভারতীয়দেরকে নিজস্ব ক্রিকেট বোর্ড গঠনে উৎসাহিত করেন। ভারতীয় ক্রিকেট পরিচালনায় শ্বেতাঙ্গ ইংরেজদের কাউকে সংশ্লিষ্ট রাখার কথা জানান।[৩৫] ভারত দলকে টেস্ট খেলার মর্যাদা দানে এমসিসি’র কাছে দেন-দরবার পরিচালনা করতেন। তিনি তাই করলেন। ১৯২৯ সালে ভারত ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্সের সদস্য মনোনীত হয়।[জ ৪][৩২][৩৬] ভারতীয় ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে মিহির বসু মন্তব্য করেন যে, জিলিগানের প্রভাব অসামান্য ছিল।[৩৬]
ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর জিলিগান সাংবাদিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। বেশ কয়েকটি ক্রিকেট সম্পর্কীয় গ্রন্থ লেখেন। তন্মধ্যে, ১৯৩২ সালে সাসেক্সের ক্রিকেট ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ অন্যতম।[৩৭] বেতারে ক্রিকেট সম্প্রচারে প্রথমদিকের ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে ছিলেন তিনি। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া থেকে অ্যাশেজ সিরিজ ও এমসিসি দলের অস্ট্রেলিয়া পরবর্তী সফরগুলো অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কমিশনে প্রচার করেন। জনপ্রিয় ও সম্মানীয় ধারাভাষ্যকার হিসেবে তিনি সাবেক অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ভিক রিচার্ডসনের সাথে সম্প্রচার জুটি গড়েন। এছাড়াও, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সময়কালে বিবিসি রেডিও ধারাভাষ্যকার দলের সদস্যরূপে টেস্ট খেলায় ধারাভাষ্য দেন।[৩৮] ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে ইংল্যান্ড অ্যাশেজ সিরিজ জয় করে। এ প্রসঙ্গে ১৯৫৫ সালে তিনি ‘দি আর্ন রিটার্নস’ শিরোনামে গ্রন্থ লিখেন।
ক্রিকেট জীবন সমাপণের পরও জিলিগান সাসেক্সের সাথে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।[৩][৩৯] পরবর্তীতে তিনি ক্লাবের সম্মানসূচক আজীবন সদস্যরূপে মনোনীত হন। কাউন্টি দলের সভাপতি, উপদেষ্টা ও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন ও ঐ অঞ্চলের স্থানীয় ক্লাবগুলোকে সহায়তা প্রদান করতেন আর্থার জিলিগান। বক্তা হিসেবেও তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন। জীবনের শেষদিকে গল্ফের দিকেও তার আগ্রহ জন্মায়। ১৯৫৯ সালে ইংলিশ গল্ফ ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কাউন্টি ক্রিকেটার্স গল্ফিং সোসাইটির অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মৃত্যু পূর্ব-পর্যন্ত এ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।
এমসিসির সম্মানীয় আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৮ সময়কালে এমসিসির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যাসিল ডি’অলিভেইরাকে বাদ দেয়ার ন্যায় বিতর্কিত ঘটনায় এমসিসি জড়িয়ে পড়েন। শুরুতে ডি’অলিভেইরাকে দলের বাইরে রাখা হয়। কিন্তু আঘাতের কারণে একজন খেলোয়াড়কে প্রত্যাহার করা হলে ডি’অলিভেইরাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকান সরকার ডি’অলিভেইরাকে অংশগ্রহণে বাঁধার প্রাচীর গড়ে তুললে শেষ পর্যন্ত এমসিসি সফর বাতিল করে দেয়।[৪০][৪১]
এপ্রিল, ১৯২১ সালে সেসিলিয়া মেরি ম্যাথুজ নাম্নী এক রমণীকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির এক কন্যা ছিল। কিন্তু অক্টোবর, ১৯৩৩ সালে বিবাহ-বিচ্ছেদে পরিণত হয়। ১৯৩৪ সালে পুনরায় বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্কিয়িংয়ে থাকাকালে দ্বিতীয় স্ত্রী ক্যাথরিন মার্গারেট ফক্সের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে হোভ ক্রিকেট গ্রাউন্ডের একটি স্ট্যান্ডের নাম তার নামে নামাঙ্কিত হন। তবে, ২০১০ সালে স্টেডিয়ামের অবকাঠামো পুণঃনির্মাণের সময় এ স্ট্যান্ডটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।[৪২]
তার ভাই ফ্রাঙ্ক জিলিগান ও হ্যারল্ড জিলিগান প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে ৮১ বছর বয়সে সাসেক্সের পালবোরা এলাকায় আর্থার জিলিগানের দেহাবসান ঘটে।