ইন্ডিপেন্ডেন্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিজুরি অঙ্গরাজ্যের পঞ্চম বৃহত্তম শহর। এটি জ্যাকসন কাউন্টির আসন এবং সম্পূর্ণরূপে কাউন্টি সীমানার অভ্যন্তরে অবস্থিত।[১] ইন্ডিপেন্ডেন্স ক্যানসাস সিটির উপগ্রহ শহর ও ক্যানসাস সিটি মহানগর এলাকার অংশ। ২০১০ সালে এর জনসংখ্যা ছিল ১,১৬,৮৩০।[২] ইন্ডিপেনডেন্স শহরটি "বালিয়াড়ির রানি" নামেও পরিচিত।[৩] শহরটি একদা ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা ফে ও ওরেগন বালিয়াড়ির বহির্গমনস্থান ছিল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যান ইন্ডিপেন্ডেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এ শহরে হ্যারি এস.ট্রুম্যান প্রেসিডেন্সিয়াল গ্রন্থাগার ও জাদুঘর অবস্থিত। এছাড়াও এখানে রয়েছে ট্রুম্যান ও তার স্ত্রী বেস ট্রুম্যানের সমাধি। শহরটি লেটার ডে সেইন্ট সম্প্রদায়ের লোক পবিত্র বিবেচনা করে থাকেন। তাদের প্রথম উপাসনালয় টেম্পল লট ইন্ডিপেন্ডেন্স শহরে অবস্থিত। এখানে এ সম্প্রদায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
মিজুরি ও ওসেজ উপজাতির মানুষ ইন্ডিপেন্ডেসের আদি বাসিন্দা। পরবর্তীতে স্পেনীয় ও ফ্রেঞ্চরাও এখানে আগমন করে। যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৩ সালে লুইজিয়ানা ক্রয় করে নিলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হয়। লুইস ও ক্লার্ক তাদের ১৮০৪ সালের অভিযাত্রার সময় ইন্ডিপেন্ডেন্স শহর পরিদর্শন করেছিলেন। তারা এখানে বুনো আপেল, রাস্পবেরি ও বরই ফল সহযোগে ক্ষুধা মেটান। ক্যালিফোর্নিয়া বালিয়াড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করা দুর্ভাগ্যতাড়িত "ডোনার পার্টি" অভিযাত্রী দল যে ওয়াগন রেলগাড়িতে রওনা দিয়েছিলেন, সেটি ইন্ডিপেন্ডেন্স শহরে বিরতি নেয়।[৪]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বা ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেসের নামানুসারে শহরটির নাম হয় ইন্ডিপেন্ডেন্স। ১৮২৭ সালের ২৯ মার্চ শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর হিসেবে এর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। মিজুরি নদীর সর্বপশ্চিম বিন্দু এখানেই অবস্থিত হওয়ায় এর ব্যবসায়িক গুরুত্ব বাড়তে থাকে। একসময় ইন্ডিপেন্ডেন্সে পশমব্যবসার প্রসার ঘটে।
১৮৩১ সালে লেটার ডে সেইন্ট সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা জ্যাকসন কাউন্টিতে বসবাস শুরু করেন। সম্প্রদায়ের অধিবাসী জোসেফ স্মিথ আদালতভবনের পশ্চিমে উপাসনালয় নির্মাণের ঘোষণা দেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, এখানেই যিশুখ্রিস্ট পুনরাবির্ভূত হবেন। এ নিয়ে মিজুরিতে সংঘাতময় পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। ১৮৩৩ সালে লেটার ডে সেইন্টদের বিতাড়িত করা হয়, যা ১৮৩৮ সালের মরমন যুদ্ধের ভিত্তি গড়ে দেয়। ১৮৬৭ সালে তারা ইন্ডিপেন্ডেন্সে ফিরে আসতে শুরু করে।
১৮৩০-১৮৪০ এর দিকে ইন্ডিপেন্ডেন্সে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। ১৮৪৮-১৮৬৮ সালে শহরটি ক্যালিফোর্নিয়া বালিয়াড়ির যাবতীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র ছিল। মিজুরি বিধানসভা ১৮৪৯ সালের ৮ মার্চ শহরটিকে স্ব-শাসনের অধিকার প্রদান করেন। সে বছরের ১৮ জুলাই উইলিয়াম ম্যাককয় প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মার্কিন কংগ্রেস প্রণীত একটি আইন শহরটিকে ওরেগন বালিয়াড়ির সূচনাবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে।
আমেরিকান গৃহযুদ্ধের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই এখানে সংঘটিত হয়। প্রথমটি সংঘটিত হয় ১৮৬২ সালের ১১ আগস্ট ; দ্বিতীয়টি সংঘটিত হয় ১৮৬৪ সালের অক্টোবরে। উভয় যুদ্ধেই কনফেডারেট বাহিনী বিজয় লাভ করে। তবে এ যুদ্ধের ফলে ইন্ডিপেন্ডেন্সের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, আজও যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ক্যান্সাস সিটির উত্থানের ফলেও শহরটি তার গুরুত্ব হারাতে থাকে।
রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস ট্রুম্যানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। ১৯২২ সালে তিনি জ্যাকসন কাউন্টির বিচারক ( বিচার বিভাগ নয়, বরঞ্চ প্রশাসনে তিনি কর্মরত ছিলেন) পদে নিযুক্ত হন। ১৯২৪ সালে নির্বাচনে হেরে গেলেও ১৯২৬ ও ১৯৩০ সালে তিনি বিচারক পদে পুনর্নির্বাচিত হন। দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্স ফিরে আসেন। তার স্ত্রী বেস ট্রুম্যানের-ও জন্মভূমি এ শহর।
মিজুরি নদীর দক্ষিণ তীরে ইন্ডিপেন্ডেন্স শহরের অবস্থান। এর আয়তন ৭৮.২৫ বর্গমাইল, যার ৭৭.৫৭ বর্গমাইল স্থল ও ০.৬৮ বর্গমাইল জল। [৫]
২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ইন্ডিপেন্ডেন্সের জনসংখ্যা ১,১৬,৮৩০। এখানে ৩০,১৬৫টি পরিবার বসবাস করে। শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫৮১.৫ জন। বাসিন্দাদের ৮৫.৭% শ্বেতাঙ্গ, ৫.৬% আফ্রিকান আমেরিকান, ০.৬% আদিবাসী আমেরিকান, ০.৭% প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও ১% এশীয়। এদের ৭.৭% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।
শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ৪৫,৮৭৬ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩৪,১৩৮ ডলার ও নারীদের গড় আয় ২৫,৯৪৮ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ১৯,৩৮৪ ডলার। ৬.৪% পরিবার ও ৮.৬% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের মধ্যে ১১.৮% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ৬.৭% এর বয়স ৬৫ এর সমান বা বেশি।