হাঙ্গেরি |
ইন্দোনেশিয়া |
---|
ইন্দোনেশিয়া-হাঙ্গেরি সম্পর্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং হাঙ্গেরি এর মাঝে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নির্দেশ করে। ১৯৫৫ সালে এই দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় হাঙ্গেরির দূতাবাস চালু হয়।[১] হাঙ্গেরির "ইস্টার্ন ওপেনিং" নীতি,[২] এবং ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক প্রভাব ও সম্ভাবনাময় বাজারের জন্য হাঙ্গেরি সবসময়ই ইন্দোনেশিয়াকে আসিয়ান এর অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। অপরদিকে, ইন্দোনেশিয়া হাঙ্গেরিকে সম্ভাবনাময় বাজার এবং একই সাথে মধ্য ইউরোপ এবং পূর্ব ইউরোপের কৌশলগত প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচনা করে। [৩] জাকার্তায় হাঙ্গেরির দূতাবাস রয়েছে এবং বান্দুং ও ডেনপাসার এ হাঙ্গেরির কনস্যুলেট রয়েছে। অপরদিকে, হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ইন্দোনেশিয়ার একটি দূতাবাস রয়েছে।
২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি, মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী, রাষ্ট্রীয় সফরে হাঙ্গেরি যান। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে পাল্টা সফরে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী, ফেরেঙ্ক জিউরকসাইন, ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরে যান। আবার ২০১৩ সালের ৬-৭ মার্চ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি, সুসিলো বামবাং ইয়ুধনো, হাঙ্গেরিতে রাষ্ট্রীয় সফরে যান।[৩]
১৯৮৮ সালে হাঙ্গেরিয়ান-ইন্দোনেশিয়ান জয়েন্ট কমিশন অন বাইল্যাটারাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (জেসিইসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ প্রতি বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৩ সালে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৭ মিলিয়ন (৩.৭ কোটি) মার্কিন ডলার। যা, ২০১৩ সালে, বেড়ে দাঁড়িয়ে হয় ২১৬ মিলিয়ন (২১.৬ কোটি) মার্কিন ডলার। যদিও ২০০৪ সাল থেকে এই হার নিম্নমুখী হতে থাকে এবং ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭ সালে বাণিজ্যের পরিমাণ হয় যথাক্রমে ১২৬.৩ মিলিয়ন (১২.৬৩ কোটি), ১২৪.৮ মিলিয়ন (১২.৪৮ কোটি), ১০১.৯ মিলিয়ন (১০.১৯ কোটি) এবং ১১৪.৯ মিলিয়ন (১১.৪৯ কোটি) মার্কিন ডলার। [৪] তবে এরপর তা আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ২০১০ সালে গিয়ে পরিমাণ দাঁড়ায় ২২০.৮৩ মিলিয়ন (২২.০৮৩ কোটি) মার্কিন ডলার এবং ২০১১ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ৪৩৮.৩৪ মিলিয়ন (৪৩.৮৩৪ কোটি) মার্কিন ডলার। যদিও ইউরোপ জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার জন্য এই হারের আবার অবনতি হয় এবং ২০১২ সালে গিয়ে ১৮৩.৫ মিলিয়ন (১৮.৩৫ কোটি) মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। বর্তমানে পূর্ব এবং মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরি ইন্দোনেশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।[৩]
হাঙ্গেরিতে, ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি পণ্যের মধ্যে প্রধানত রয়েছে; টেক্সটাইল, জুতা, পাম তেল, মশলা, চামড়া, প্লাস্টিক এবং হস্তশিল্প। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়ায়, হাঙ্গেরির রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে; ঔষধ, রাসায়নিক দ্রব্য, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং ভারী যন্ত্রপাতি।[৪]
১৯৯৯-২০০৯ সালের মধ্যে, ইন্দোনেশিয়ায়, হাঙ্গেরির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ মার্কিন ডলার, বর্তমানে যা বেড়ে দাঁড়িয়ে, ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। ৫ টি প্রকল্পের মাধ্যমে হাঙ্গেরি ইন্দোনেশিয়ায় বিনিয়োগ করছে।[৩]
বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাদেও, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, তথ্য, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, পানি ব্যবস্থাপনা এর মত খাতেও এই দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিস্তৃতি ঘটেছে।[২]