ইন্দ্রানী রহমান | |
---|---|
জন্ম | ইন্দ্রানী বাজপাই ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩০ চেন্নাই, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ | (বয়স ৬৮)
পেশা | নৃত্যশিল্পী, নৃত্য পরিকল্পক |
দাম্পত্য সঙ্গী | হাবিব রহমান, ভারত সরকারের প্রধান স্থপতি |
পুরস্কার |
|
ইন্দ্রানী রহমান (১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩০, চেন্নাই – ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, নিউ ইয়র্ক) ছিলেন একজন ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী যিনি ভরতনাট্যম, কুচিপুড়ি, কথাকলি এবং ওড়িশি নৃত্যশৈলীকে পশ্চিমা দেশগুলোয় জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন এবং পরবর্তীকালে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিউ ইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মিস ইন্ডিয়া বিজেতা। পরবর্তীতে তিনি তাঁর মা রাগিণী দেবীর কোম্পানিতে যোগদান করেন। তিনি তাঁর আন্তর্জাতিক ভ্রমণকালে ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী হিসেবে ওড়িশি নৃত্যকে জনপ্রিয় করেছিলেন। ইন্দ্রানী ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে পরিবেশন শিল্পকলায় পদ্মশ্রী ও সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার এবং তারকনাথ দাস পুরস্কারও লাভ করেন।
ইন্দ্রানী রহমান চেন্নাইতে (তৎকালীন মাদ্রাজ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রামালাল বলরাম বাজপাইয়ের (১৮৮০-১৯৬২) কন্যা, যিনি কিছুকাল ইন্দো-আমেরিকান লিগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর পিতা রামালাল বাজপাইয়ের আদি নিবাস উত্তর ভারতে ছিল, যিনি একজন রসায়নবিদ, আমেরিকায় গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্যে। সেখানেই তার সাথে পরিচয় এবং বিয়ে করেন এস্থার লুয়েলা শেরম্যানকে, যিনি জন্মসূত্রে আমেরিকান। জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে পেটোস্কি, মিশিগানে,[১] (মৃত্য ১৯৮২),[২] এস্থার বিয়ের সময় হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং 'রাগিণী দেবী' নাম পরিগ্রহ করেছিলেন।'[৩]
১৯২০-এর দশকে এই দম্পতি ভারতে চলে আসেন। সেই সময় রামলাল লালা লাজপত রায় প্রতিষ্ঠিত ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি নিউ ইয়র্কে ভারতের রাষ্ট্রদূত হন [৪] এবং ইন্দো-আমেরিকান লিগের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। ইতিমধ্যে, রাগিণী ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের একজন উৎসাহী প্রকাশক হয়েছিলেন এবং নৃত্যের পুনর্জাগরণ ও পোষণে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মহীশূরের মহান রাজাদাসী (রাজকন্যা) জেট্টি তয়াম্মার সঙ্গে সৌভাগ্যপূর্ণ সাক্ষাতের পর এটা ঘটেছিল, যাঁর কাছে তিনি ভরতনাট্যম শিক্ষা শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি চেন্নাইয়ের রাজকন্যা গৌরী আম্মার অধীনে তালিম নিয়ে নিজের নৃত্য প্রতিভার স্ফূরণ ঘটান।[৫][৬][৭] রাগিণী নিজে সেই সময় একজন সুপ্রসিদ্ধ নৃত্যশিল্পী হয়েছেন, এবং ১৯৩০-এর দশকের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশকদের একজন ছিলেন।[৮] সেই সময়কালে রাগিণী কথাকলি প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ হয়েছিলেন।
ইন্দ্রানী চেন্নাইতে এক মিশ্র-জাতি পরিবারে এই দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সংস্কারমুক্ত এবং স্বাধীনভাবে তাঁর আমেরিকান মায়ের কাছে প্রতিপালিত হয়েছিলেন, যিনি তাঁকে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রেরণা দিতেন। সারা দেশ থেকে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অল্পসংখ্যক অংশগ্রহণকারীকে রাজি করানো গিয়েছিল, ইন্দ্রানী ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে 'মিস ইন্ডিয়া' সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি সেই সময় মাত্র পনেরো বছরের এক স্কুলছাত্রী ছিলেন, তখন তিনি ভারতীয় আইন অনুসারে নাবালক; তিনি তাঁর থেকে দ্বিগুণ বয়সের এক বিশ্বখ্যাত স্থপতি, তিরিশ বছর বয়সী হাবিব রহমানের সঙ্গে গোপনে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
ইন্দ্রানী তাঁর মায়ের প্রতিষ্ঠানে ন-বছর বয়সে নৃত্যশিক্ষা শুরু করেন, এবং তাঁর সঙ্গে দুই আমেরিকা এবং ইউরোপ সর্বত্র ভ্রমণ করেছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে গুরু চোক্কালিঙ্গমের (১৮৯৩-১৯৬৮) কাছে ভরতনট্যমের পাণ্ডানাল্লুর শৈলী পেশাদারিত্বের সঙ্গে শিক্ষা শুরু করেছিলেন, তারপর বিজয়ওয়াদার কোরাদা নরসিমহা রাও-এর থেকে কুচিপুড়ি শিক্ষা করেন, যাঁর সঙ্গে তিনি পরবর্তীকালে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছিলেন।[৯]
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ইন্দ্রানী ভারতের বিশিষ্ট নৃত্য ও শিল্প সমালোচক ড. চার্লস ফ্যাবরির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, যিনি পরবর্তীতে তাঁকে প্রথম ওড়িশি শিখতে ও পেশাদার নৃত্যশিল্পী বানাতে ওড়িশি নিয়ে যান এবং ধ্রুপদী ওড়িশি নৃত্যশৈলী শিক্ষালাভ করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। গুরু শ্রী দেবপ্রসাদ দাসের কাছে তিন বছর তালিম নিয়ে ওড়িশি শিক্ষার পর তিনি ভারত এবং বিশ্বের নানা জায়গায় নৃত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি এই নৃত্যশৈলীকে জনপ্রিয় করার কাজ করে গিয়েছেন।[১০][১১]
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে, যদিও বিবাহিত এবং একটা সন্তান ছিল, তিনি প্রথম মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন,[১২][১৩] এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্স ১৯৫২ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১৪] সত্বর তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গে সারা বিশ্ব ভ্রমণ এবং নৃত্য প্রদর্শন করেছিলেন।[১৫] ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে এশিয়া সোসাইটি কর্তৃক একটা জাতীয় সফরে তিনি প্রথম নৃত্যশিল্পী ছিলেন, এবং ওয়াশিংটন, ডিসিতে নেহরুর সরকারি সফরকালে মার্কিন প্রসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এবং জওহরলাল নেহরু এঁদের সমক্ষেও নৃত্য প্রদর্শন করেছিলেন,[৮] এবং পরবর্তী বছরে তিনি রাজা হেইল সেলাসি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মাও জে-দং, নিকিতা ক্রুশ্চেভ এবং ফিদেল কাস্ত্রো এঁদের জন্যেও নৃত্য প্রদর্শন করেছিলেন।[৩][১৬] ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিউ ইয়র্কের লিঙ্কন সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টস-এর জুলিয়ার্ড স্কুল-এ নৃত্য বিভাগের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হয়েছিলেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে তিনি শিক্ষাদান করেছিলেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বাকি দুই দশক ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করে কাটিয়েছিলেন।
তিনি ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সুপরিচিত স্থপতি হাবিব রহমান-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, এই দম্পতির রাম রহমান নামে এক পুত্র এবং সুকন্যা রহমান (উইকস)[১৭] নামে এক কন্যা আছে, যিনি তাঁর মা এবং মাতামহীর সঙ্গে নৃত্যানুষ্ঠান করেছিলেন। তাঁর পৌত্ররা হলেন ওয়র্ড্রেথ উইকস এবং হাবিব উইকস।
১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন শহরে ইন্দ্রানী রহমানের মৃত্যু হয়।