ইয়েমেনের একত্রীকরণ ১৯৯০ সালের ২২ মে সম্পন্ন হয়। এসময় উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেন একত্রীত হয়ে ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র গঠন করে। নতুন রাষ্ট্র সাধারণভাবে ইয়েমেন নামে পরিচিত হয়।
কোনো গৃহযুদ্ধ বা দখলদারিত্বের কারণে ইয়েমেন বিভক্ত হয়নি। উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ইয়েমেনের সৃষ্টি হয়। তবে এসময় দক্ষিণ ইয়েমেন ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। দক্ষিণ ইয়েমেনে সংঘটিত অভ্যুত্থানের ফলে যুক্তরাজ্য তাদের এই উপনিবেশ ত্যাগ করে।
উত্তর ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গোত্রীয় প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত করে এখানে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তেলের মুনাফা এবং তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রসমূহে কর্মরত নাগরিকদের কাছ থেকে রাষ্ট্রের ভালো আয় হত। ১৯৮০ এর দশকে উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেনের জনসংখ্যা ছিল ১২ মিলিয়ন ও ৩ মিলিয়ন।[১]
দক্ষিণ ইয়েমেনে মার্ক্সবাদীদের উত্থান ঘটে।[২] ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট প্রথমে দেশের নেতৃত্ব দেয়। পরবর্তীতে তা ইয়েমেন সোশ্যালিস্ট পার্টি হিসেবে রূপ ধারণ করে। এসময় দক্ষিণ ইয়েমেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা ও অন্যান্য সমর্থন লাভ করত।[৩]
১৯৭২ সালের অক্টোবরে উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেনের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। সৌদি আরব ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যথাক্রমে উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেনকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে সংঘর্ষ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দুই রাষ্ট্রকে একীভূত করার জন্য ১৯৭২ সালের ২৮ অক্টোবর কায়রো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[৪][৫]
১৯৭৯ সালে দুই পক্ষের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়।[৬] তবে এই সংঘর্ষও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।[৭]
১৯৮০ এর দশকের শেষদিকে দুই রাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী এলাকায় তেল আবিষ্কারের পর একত্রীকরণের ব্যাপারে দুই পক্ষ আগ্রহী হয়।[৮] ১৯৮৮ সালের মে মাসে দুই সরকার সমঝোতায় উপনীত হয়। এর ফলে একত্রীকরণ নিয়ে আলোচনার পথ প্রশস্ত হয়।[৯] একই মাসে খনিজ ও তেল সমপদে বিনিয়োগের জন্য কোম্পানি গড়ে উঠে।[১০] ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে উত্তর ইয়েমেনের আলি আবদুল্লাহ সালেহ এবং দক্ষিণ ইয়েমেনের আলি সালিম আল-বাইদ একটি যৌথ খসড়া সংবিধান গ্রহণ করেন। এতে সীমান্তের সামরিকীকরণ বন্ধ এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে ইয়েমেনিদের সীমানা অতিক্রমের বিধান করা হয় এবং সানাকে রাজধানী করা হয়।
১৯৯০ সালের ২২ মে ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়। আলি আবদুল্লাহ সালেহ রাষ্ট্রপতি ও আলি সালিম আল-বাইদ প্রধানমন্ত্রী হন। দুই রাষ্ট্রের একত্রীকরণের জন্য ৩০ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সময় নির্ধারিত হয়। উভয় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের ভোটে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল নির্বাচিত হয়। এই কাউন্সিল প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করে। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংসদ স্থাপন করা হয়। এতে উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেন থেকে যথাক্রমে ১৫৯ ও ১১১ জন সদস্য এবং কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের নিযুক্ত ৩১ জন সদস্য ছিলেন।
১৯৯০ সালের মে মাসে একটি যৌথ সংবিধানের বিষয়ে সমঝোতা হয়। ১৯৯১ সালের মে মাসে তা গণভোটে গৃহীত হয়। এতে অবাধ নির্বাচন, বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ব্যক্তি মালিকানার অধিকার, আইনের দৃষ্টিতে সমতা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালের ২৭ এপ্রিল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই সংসদে ১৪৩টি আসনে জেনারেল পিপল'স কংগ্রেস, ৬৯টি আসনে ইয়েমেনি সোশ্যালিস্ট পার্টি, ৬৩টি আসনে ইসলাহ, ৬টি আসনে বাথপন্থিরা, ৩টি আসনে নাসেরবাদিরা দল, ২টি আসনে আল হক ও ১৫টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। নতুন সংসদে উত্তর ইয়েমেনের সাংসদদের আধিক্য ছিল।[১১] ইসলাহর প্রধান আবদুল্লাহ ইবনে হুসাইন আল-আহমার সংসদের স্পিকার হন।
উপসাগরীয় যুদ্ধে জোট বাহিনীকে সমর্থন না করার সিদ্ধান্তের পর প্রায় ৮,০০,০০০ ইয়েমেনি নাগরিক ও বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদেরকে সৌদি আরব কর্তৃক দেশে ফেরত পাঠানোর ফলে ইয়েমেনে নতুন রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়। এর ফলে রেমিটেন্সের পরিমাণ অনেক কমে যায় এবং অনেক ইয়েমেনিকে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়। বিপুল পরিমাণ নাগরিকের প্রত্যাবর্তনের ফলে জনসংখ্যা ৭% বৃদ্ধি পায়।[১২][১৩]
জোটের মধ্যে সংঘাতের ফলে উপরাষ্ট্রপতি আলি সালিম আল-বাইদ ১৯৯৩ সালের আগস্ট স্বেচ্ছানির্বাসিত হন। দক্ষিণ ইয়েমেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হায়দার আবু বকর আল-আত্তাস প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করতে থাকেন। তবে রাজনৈতিক মতদ্বৈততার জন্য তার সরকার অকার্যকর হয়ে পড়ে। উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেনের নেতাদের আলাপের পর ১৯৯৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আম্মানে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। এসত্ত্বেও সংঘাত চলমান থাকে এবং ১৯৯৪ সালের মে মাসে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
দক্ষিণের নেতারা ১৯৯৪ সালের ২১ মে নতুন ইয়েমেন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গঠন করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একে স্বীকৃতি দেয়নি। দক্ষিণ ইয়েমেনের বহিষ্কৃত নেতা আলি নাসির মুহাম্মদ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশনে সহায়তা করেছিলেন।[১৪] ৭ জুলাই গৃহযুদ্ধ শেষ হয়।
যুদ্ধের পর ইয়েমেনি সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতাবৃন্দ ১৯৯৪ সালের জুলাই মাসে নতুন পলিটব্যুরো নির্বাচন করেন। ইসলাহ দল সেপ্টেম্বরে দলের সম্মেলন আয়োজন করে। পরের বছর ১৯৯৫ সালের জুন মাসে জেনারেল পিপল'স কংগ্রেসও সম্মেলন করে।
১৯৯৪ সালে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল বাতিল করা হয়। সে বছরের ১ অক্টোবর সংসদের ভোটে আলি আবদুল্লাহ সালেহ ৫ বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইয়েমেনে প্রত্যক্ষ ভোটে আলি আবদুল্লাহ সালেহ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।। ইতিপূর্বে ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে সংসদ নির্বাচন হয়। ২০০০ সালের সংবিধানের সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ দুই বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়। পাশাপাশি সংসদের মেয়াদ ছয় বছর করা হয়। ২০০১ সালের সংশোধনীতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেয়া ১১১ সদস্যবিশিষ্ট শুরা কাউন্সিল এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি পরিষদ গঠিত করার বিধান উল্লেখিত হয়।
নতুন রাষ্ট্র গঠনকালে ইয়েমেনে কিছু পরিবর্তন সূচিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে উত্তর ইয়েমেনি রিয়াল এবং দক্ষিণ ইয়েমেনি দিনার বৈধ মুদ্রা হিসেবে চালু ছিল। ১৯৯৩ সালে ইয়েমেনি রিয়াল নামে প্রথম মুদ্রা জারি করা হয়। উত্তর ইয়েমেনের সাবেক রাজধানী সানাকে রাজধানী করা হয়। দক্ষিণের জাতীয় সঙ্গীতকে রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণ করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রসমূহের সকল চুক্তি ও দায় নতুন রাষ্ট্র গ্রহণ করে নেয়।[১৫] উত্তর ইয়েমেনের কান্ট্রি কোড +৯৬৭ কে ইয়েমেনের কান্ট্রি কোড হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
In a joint letter to the UN Secretary-General sent just prior to unification, the Ministers of Foreign affairs of North and South Yemen stated that "All treaties and agreements concluded between either the Yemen Arab Republic or the People's Democratic Republic of Yemen and other States and international organizations in accordance with international law which are in force on 22 May 1990 will remain in effect, and international relations existing on 22 May 1990 between the People's Democratic Republic of Yemen and the Yemen Arab Republic and other States will continue."