ইসলামপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে ইসলামপুর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৫′২″ উত্তর ৮৯°৪৭′৩৩″ পূর্ব / ২৫.০৮৩৮৯° উত্তর ৮৯.৭৯২৫০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | জামালপুর জেলা |
আসন | জামালপুর-২ |
আয়তন | |
• মোট | ৩৪৩.০২ বর্গকিমি (১৩২.৪৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ২,৯৮,৪২৯ |
• জনঘনত্ব | ৮৭০/বর্গকিমি (২,৩০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৩০.১% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২০২০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৩৯ ২৯ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
ইসলামপুর উপজেলা বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি ১২টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন জামালপুর জেলার ৭ টি উপজেলার একটি এবং এটি জেলার মধ্যভাগে অবস্থিত। ইসলামপুরের উত্তরে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ও বকশীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে মেলান্দহ উপজেলা ও মাদারগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা ও শেরপুর সদর উপজেলা, পশ্চিমে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলা, ফুলছড়ি উপজেলা ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৪ সালে জামালপুর মহকুমাধীনে ইসলামপুর থানা গঠিত হয়। জামালপুর জেলা হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ৩রা নভেম্বর ইসলামপুর উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামপুর উপজেলা জামালপুর-২ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত । এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৩৯ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।
ইসলামপুর উপজেলার আয়তন ৩৪৩.০২ বর্গ কিলোমিটার[১] এবং জনসংখ্যা ২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী ২,৯৮,৪২৯ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ১০০:৯৯, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৮৪৫ জন, শিক্ষার হার ৩০.১%।[২]
ইসলামপুর উপজেলা সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে কাঁসা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রচুর পরিমাণে উন্নতমানের বেগুন চাষ হয়।
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা বিধৌত একটি প্রাচীন জনপদের নাম ইসলামপুর। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার শাখা নদী ও খাল-বিল বহুল এই এলাকা নদীভাঙ্গন ও বন্যাপ্রবণ। প্রাচীনকালে ভূমিকম্পে এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি অনেকটা বদলে যায়। ইংরেজ আমলে এই অঞ্চল পাতিলাদহ পরগণার অধীনে ছিল। বর্তমানে ইসলামপুর সরকারি কলেজের পশ্চিম দিকে সদর রাস্তার দক্ষিণে পাতিলাদহ পরগণার কাচারিঘর ছিল। বর্তমানে সেখানে সরকারি রাজস্ব বিভাগের বিভিন্ন অফিস বিদ্যমান।
এই উপজেলার সাথে ইংরেজ আমলের নীলচাষ ও নীলকর সাহেবদের অত্যচারের নানা ইতিহাস জড়িয়ে আছে। উপজেলা সদর থেকে দেড়মাইল দূরে পলবান্ধা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ২৬৬ একর জমিসহ আশপাশের বিস্তৃত কৃষিজমিতে অত্যাচারী নীলকর সাহেবেরা চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করেছিল। তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি নীল চাষ হতো। এখানে ইংরেজদের নীলকুঠি ছিল। এখনও নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ এবং নীল প্রস্তুতের সরঞ্জমাদির চিহ্ন বিদ্যমান রয়েছে।
ইসলামপুর নামকরণের বিষয়ে তিনটি মত প্রচলিত আছে। প্রথম মতটি হলো- মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ইসলাম খাঁ বাংলার সুবেদার হয়ে আসেন। সুবেদার ইসলাম খাঁ কোন এক সময়ে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। তাঁকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এ অঞ্চলের নাম ইসলামপুর রাখা হয়। দ্বিতীয় মতটি হলো- ইসলাম শাহ নামে একজন কামেল পীর এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। তাঁর নামানুসারে এ এলাকার নামকরণ ইসলামপুর হয়েছে। তৃতীয় মতটি হলো- প্রায় শতাধিক বছর পূর্বে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ইসলামপুর নামে একটি মৌজা ছিল। এই মৌজায় স্থানীয় জনগণ একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করে। থানা সৃষ্টি হলে মৌজার নামনুসারে থানার নামকরণ হয় ইসলামপুর।
একসময় ইসলামপুর অঞ্চলটি তামা ও কাঁসা শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। ইসলামপুরের তামা কাঁসাজাত ধাতব শিল্পের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখানকার কর্মকারেরা নানা আকৃতির ও প্রকৃতির কাঁসার থালা, বাটি, গ্লাস, রেকাবি, পানের বাটা, সুরমাদানি, আতরদানি, দীপাধার, ধূপাধার, খাট-পালঙ্কের খুরা, কলসি, জগ, কাঁসার ঘণ্টা, ছুরি-তরবারির বাট প্রভৃতি প্রস্তুতে সিদ্ধহস্ত ছিল। এ প্রসঙ্গে কিংবদন্তি আছে যে, ইসলামপুরী মসৃণ গ্লাসে থাকা মিষ্টি খাবার জন্য গ্লাসের কানি বেয়ে পিঁপড়াও উঠতে পারত না। এছাড়া ইসলামপুরের বড় গোল বেগুন ও আখের গুড় এ অঞ্চলসহ সারাদেশে বিখ্যাত।
ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চলটি ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার আওতাভুক্ত হয় এবং ১৯১৪ সালে ইসলামপুর থানা গঠিত হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৭ এপ্রিল পাকিস্তান বাহিনী ইসলামপুরে প্রবেশ করে।[৩] ৭ ডিসেম্বর ইসলামপুর হানাদার মুক্ত হয়।[৪] জামালপুর জেলা হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ৩রা নভেম্বর ইসলামপুর উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে ইসলামপুর পৌরসভা গঠিত হয়। ২০১১ সালে ইসলামপুর পৌরসভাকে ‘গ’ শ্রেণি থেকে ‘খ’ শ্রেণি অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।
ইসলামপুর উপজেলা ২৪°৫৭´ থেকে ২৫°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৮´ থেকে ৮৯°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ইসলামপুর উপজেলার আয়তন ৩৪৩.০২ বর্গ কিলোমিটার।[১] এর উত্তরে দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে শেরপুর সদর ও শ্রীবর্দি উপজেলা, পশ্চিমে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি উপজেলা ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা অবস্থিত।[১]
নদ-নদী, খাল, বিল পরিবৃত এই উপজেলা একটি বন্যাপ্রবণ এলাকা। এখানকার আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে তাপমাত্রা ৩০° থেকে ৩৩° সেলসিয়াস থাকে। এখানকার মাটি বেলে-দোআঁশ ও দোআঁশ প্রকৃতির। মোট কৃষিজমির পরিমান ৬৫৩১৩ একর, আবাদি জমির পরিমান ৩৯৬৮২ একর।[৫]
ইসলামপুর উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম ইসলামপুর থানার আওতাধীন।[৬]
এ উপজেলায় ৫৮ টি মৌজা, ১৩০ টি গ্রাম রয়েছে।[৫] জামালপুর-ইসলামপুর বাজার সড়কের পাশে উপজেলা হেডকোয়ার্টার অবস্থিত।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমাধীনে ইসলামপুর থানা গঠিত হয়। জামালপুর জেলা হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ৩রা নভেম্বর ইসলামপুর উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৯৮ সালে ইসলামপুর পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভার আয়তন ১৪.৭১ বর্গ কিলোমিটার, ওয়ার্ডের সংখ্যা ৯টি। ২০১১ সালে ইসলামপুর পৌরসভাকে ‘গ’ শ্রেণি থেকে ‘খ’ শ্রেণি অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামপুর উপজেলা নিয়ে জামালপুর-২ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৩৯ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।
নির্বাচিত সাংসদগণ:
২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী ইসলামপুর উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,৯৮,৪২৯ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ১০০ঃ৯৯, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৮৭০ জন, শিক্ষার হার ৩০.১%। এ উপজেলায় প্রধানত মুসলমান ও হিন্দু এই দুই সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। অন্যান্য ধর্মের লোকসংখ্যা একেবারেই কম। এর মধ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ২,৯৪,১৬১, হিন্দু ৪,১৪৬, খ্রিস্টান ৩, বৌদ্ধ ০ এবং অন্যান্য ১১৯ জন।[১৮]
ইসলামপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সরকারি নেকজাহান পাইলট বিদ্যালয় (১৯১৫), সরকারি জে.জে.কে.এম. গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ (১৯১৭),গাইবান্ধা সুরুজ্জাহান উচ্চ বিদ্যালয়, গাইবান্ধা সাজেদা মাহমুদ উচ্চ বিদ্যালয়, মলমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), কুলকান্দী শামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), ইসলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, নেকজাহান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, চিনাডুলী এস.এন. উচ্চ বিদ্যালয়, গুঠাইল স্কুল এন্ড কলেজ, ঢেংগারগড় ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়, হাড়িয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি।
১৯১৫ সালে ইসলামপুরের জমিদার আইজউদ্দিন চৌধুরীর অর্থায়নে সাবেক এম.এল.এ. রফিক উদ্দিন খাঁ নেকজাহান পাইলট বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার আইজউদ্দিন চৌধুরীর মাতা নেকজাহান বিবির স্মরণে স্কুলটির নামকরণ করা হয়।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো- ইসলামপুর কলেজ (১৯৭০)[১৯], এম এ সামাদ পারভেজ মেমোরিয়াল মহিলা কলেজ, মলমগঞ্জ মডেল কলেজ, এস.এন.সি আদর্শ কলেজ, শাভারচর কলেজ পোড়ারচর বিএম এন্ড টেকনিক্যাল কলেজ ইত্যাদি।[২০]
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে পশ্চিম গঙ্গাপাড়া ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৯৮), ঢেংগারগড় নুরুল হুদা আলিম মাদ্রাসা (১৮৩১), ইসলামপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, চিনাডুলী ফাজিল মাদ্রাসা গাইবান্ধা নছিমন্নেছা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ইত্যাদি।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে ইসলামপুর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৯টি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৩টি, বেসরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০টি, কিন্ডার গার্টেন ১৯টি, এনজিও স্কুল ৪৪টি; সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ২টি, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৪৬টি, স্কুল এন্ড কলেজ ৩টি; সরকারি কলেজ নেই, বেসরকারি কলেজ ৭টি; মাদ্রাসা ৩৩টি, কওমি মাদ্রাসা ২০টি, এবতেদায়ি মাদ্রাসা ২৭টি; টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল ইন্সিটিটিউট ১টি, কৃষি ও ভেটেরিনারি কলেজ ১টি।[১৮]
ইসলামপুর উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,[২১] ১২টি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে ইসলামপুর উপজেলায় ২টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে।[১৮]
ইসলামপুর মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সব ধরনের ফসলই এখানে উৎপন্ন হয়। এখানে ধান, আলু, পাট, তামাক, বেগুন, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, গম, এবং বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। উপজেলাটি দেওয়ানগঞ্জ জিলবাংলা সুগার মিল এলাকার আওতার্ভৃূক্ত হওয়ায় এখানে প্রচুর আখ উৎপন্ন হয়। এখানকার মাটি যে কোন ফসলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ইসলামপুরের বড় গোল বেগুন ও আখের গুড় এ অঞ্চলসহ সারাদেশে বিখ্যাত।
বর্তমানে কাঁসা শিল্প বিলুপ্তির পথে হলেও একসময় ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করে ছিল। ইসলামপুর উপজেলার দরিয়াবাদ গ্রামের হাতে তৈরি নান্দনিক কাঁসার শিল্প গড়ে উঠেছিল। তৎকালীন বৃটিশ সরকার ১৯৪২ সালে লন্ডনের বার্মিংহামে সারা বিশ্বের হস্তশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। সে প্রদর্শনীতে ইসলামপুরের প্রয়াত কাঁসার শিল্পী জগত্চন্দ্র কর্মকার কারুকার্যপূর্ণ কাঁসার শিল্প প্রদর্শন করেন। ওই প্রদর্শনীতে ইসলামপুরের কাঁসার শিল্প সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্প হিসাবে স্বর্ণপদক লাভ করে। তার পর থেকে সারা বিশ্বে কাঁসা শিল্পের পরিচিতি লাভ করে।[২২]
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস হলো- কৃষি ৬৮.৮৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৪৫%, ব্যবসা ১০.৬৯%, চাকরি ৪.২৭%, নির্মাণ ০.৬১%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, শিল্প ০.৫৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৪%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.২১% এবং অন্যান্য ৮.৯৩%।[১]
ইসলামপুর উপজেলার যোগাযোগ সড়ক ও রেল এই দুইভাবেই আছে। বর্ষাকালে সীমিতভাবে নৌপথে চলাচল করে। উপজেলার মোট সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ৫৯৭.৩৪ কিলোমিটার; এর মধ্যে পাকা রাস্তা ১৫২.৭২ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ৪৪৪.৬২ কিলোমিটার।[২৩] এ উপজেলায় রেলপথ আছে ২০ কিলোমিটার।[১] ইসলামপুর থেকে বেশিরভাগ মানুষ রেল পথকেই বেছে নেয়। ইসলামপুর উপজেলা থেকে জামালপুর সদরের দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার। ১৯১২ সালে জামালপুর থেকে ইসলামপুর হয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হয়। ইসলামপুর থেকে চলাচলকারী দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন হল তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস। ঢাকা পর্যন্ত চলাচলকারী কমিউটার ট্রেন হল দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, জামালপুর কমিউটার; এছাড়া ভাওয়াল এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনেও ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করে।
সড়ক পথে পরিবহন বাস যোগে সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করা যায়।
এ উপজেলার প্রধান নদ-নদীর নাম ব্রহ্মপুত্র নদ, যমুনা, বাঙ্গালী ও দশানী নদী।
ব্রহ্মপুত্র নদ: রহ্মপুত্র নদটি তিববতের মানস সরোবর থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে ভারতের অরূণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র (ব্রহ্মার সন্তান) নামে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহস্থানে ৫টি প্রধান উপনদী থেকে ব্রহ্মপুত্র পানি সংগ্রহ করেছে যাদের মধ্যে ডিহঙ্গ এবং লুহিত প্রখ্যাত। এ ধারা পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মাজাহরালীতে দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
যমুনা নদী: অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে যমুনা নদীর উৎপত্তি হয়। পূর্বে তা একটি ছোট্ট খালের মতো প্রবাহিত হতো। তখন তা জানায়ী নামে পরিচিত ছিল। ১৭৭৮ সালে জেমস রেনেলের মানচিত্রে করেন ’যবুনা’ নদী ছিল না।[২৪] ব্রহ্মপুত্র তখন বিশাল নদ। ’দত্তকোবার নিকট ব্রহ্মপুত্রের মুখ পলি পড়িয়া বন্ধ হইয়া যাওয়ায় ক্ষুদ্রতোয়া জনায়ী নদীতে ব্রহ্মপুত্রের প্রবলতর স্রোত প্রবাহিত হয় ও যবুনার উৎপত্তি হয়।’ উদ্ধৃতি অংশে যমুনাকে যবুনা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ উপজেলায় বেশ কয়েকটি খাল ও বিল রয়েছে।
যমুনা নদী: যমুনা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য্য এক কথায় অনন্য। দেশের যে কোন স্থান হতে সড়ক এবং রেলপথে ইসলামপুর পোঁছে রিক্সাযোগে অথবা সিএনজি দিয়ে গুঠাইল বাজার যাওয়ার পর সেখানেই যমুনা নদী দেখা যায়।অথবা মলমগঞ্জ হয়ে মরাডুবী বাজারের পাশেই সেখানেই যমুনা নদী দেখা যায়।