ইস্টার দ্বীপের রাজা

ঐতিহ্যগতভাবে ইস্টার দ্বীপ শাসিত ছিল রাজতন্ত্র দ্বারা, যার নেতা ছিলেন একজন রাজা।

প্রথম সর্বোচ্চ নেতা

[সম্পাদনা]

ইস্টার দ্বীপের কিংবদন্তি, প্রথম প্রধান ছিলেন হোতু মাতুꞌআ, যাঁর আগমনের তারিখ ৪র্থ, ৬ষ্ঠ [] বা ৯ম শতাব্দীতে। [] কিংবদন্তি জোর দিয়ে বলে যে, এই লোকটি মারায়ে রেঙ্গায় বসবাসকারী একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন। মারাই রেঙ্গা "হিভা অঞ্চল" নামে পরিচিত একটি স্থানে বিদ্যমান ছিল বলে জানা যায়। কিছু বই থেকে জানা যায় যে, হিভা অঞ্চলটি মার্কেসাস দ্বীপপুঞ্জের একটি এলাকা ছিল; কিন্তু আজ, এটি বিশ্বাস করা হয় যে ইস্টার দ্বীপবাসীদের পূর্বপুরুষের জমি পিটকেয়ার মাঙ্গারেভা আন্তঃসাংস্কৃতিক অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। গল্পের কিছু সংস্করণ দাবি করে যে, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব হোতু মাতু’আকে তার গোষ্ঠীর সাথে নতুন স্থানে যেতে বাধ্য করেছিল; অন্যরা বলে যে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ (সম্ভবত জলোচ্ছ্বাস) গোষ্ঠীটাকে জায়গাটি ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।

এই পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, গল্পগুলি পরের অংশে একমত: হাউমাকা নামে একজন পুরোহিত একদিন রাতে তার স্বপ্নে হোতু মাতু-এর কাছে হাজির হন। পুরোহিত সমুদ্রের দিকে উড়ে এসে একটি দ্বীপ আবিষ্কার করেন, যাকে তিনি তে পিটো ꞌও তে কাইঙ্গা ("দ্য সেন্টার অফ দি আর্থ") নামে অভিহিত করেন। সাতটি স্কাউট পাঠিয়ে, হোতু মাতুꞌআ তার স্বপ্নকে আলিঙ্গন করে এবং তার স্কাউটদের ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল। খাওয়া, মিষ্টি আলু লাগানো এবং বিশ্রামের পরে, সাতটি স্কাউট সুসংবাদ জানাতে বাড়ি ফিরে আসে। হোতু মাতু’য়া একটি বড় দল, তার পরিবার এবং নতুন দেশে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে নেয়। তারপর, তারা "দ্য সেন্টার অফ দি আর্থ" [] এবং রাপা নুই (ইস্টার দ্বীপ) আনাকেনাতে অবতরণ করে একটি বিশাল, ডবল-হুলড ডিঙি নৌকা নিয়ে।

টু’উ কো ইহো

[সম্পাদনা]
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল মেরিটাইম মিউজিয়াম থেকে টু’উ কো ইহো-এর পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কিত মূর্তিগুলির উদাহরণ।

স্টিভেন রজার ফিশারের, ‘আইল্যান্ড এট দি ইন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ অনুসারে, টু’উ কো ইহো নমে নিদৃষ্ট একজন ব্যক্তি দ্বীপে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ফিশারের বইয়ে দাবি করা হয় যে, তিনি শুধু বসতিই স্থাপন করেননি, কিংবদন্তি মতে, ‘মূর্তিগুলোকে দ্বীপে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদের বাধ্য করেছিলেন হাঁটতে’।

হোতু মাতুꞌআ-এর সন্তান

[সম্পাদনা]

হোতু মাতু’আ-এর মৃত্যুর কিছুদিন আগে, দ্বীপটি তার সন্তানদের দেওয়া হয়েছিল, যারা আটটি প্রধান গোষ্ঠী গঠন করেছিল। অতিরিক্ত, চারটি ছোট ও কম গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী গঠিত হয়েছিল।

  1. তু’উ মাহেকে : হোতুর প্রথম পুত্র। তিনি আনাকেনা ও মাউঙ্গা টি-টি-এর মধ্যবর্তী জমিগুলি পেয়েছিলেন।
  2. মিরু : আনাকেনা ও হাঙ্গা রোয়ার মধ্যবর্তী জমি পেয়েছিল।
  3. মারামা : আনাকেনা ও রানো রারাকুর মধ্যে জমি পেয়েছিল। রনো রারাকু খনিতে প্রবেশ করা মারামার জমিতে বসবাসকারীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী প্রমাণিত হয়েছে। খনিটি শীঘ্রই দ্বীপের মোয়াই (বড় পাথরের মূর্তি) নির্মাণে ব্যবহৃত পাথরের প্রধান উৎস হয়ে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে, ৯৫% মোয়াই রানো রারাকুতে তৈরি হয়েছিল। []
  4. রাআ: মাউঙ্গা টি-টি’র উত্তর-পশ্চিমে বসতি স্থাপন করে।
  5. কোরো ওরোঙ্গো: আকাহাঙ্গা এবং রানো রারাকুর মধ্যে বসতি স্থাপন করে।
  6. হোতু ইতি: দ্বীপের পুরো পূর্ব অংশই তাকে দেওয়া হয়েছিল।
  7. এবং ৮. টুপাহোতু এবং এনগাউরেকে দ্বীপের অবশিষ্ট অংশ দেয়া হয়েছিলো। []

ইস্টার দ্বীপ জুড়ে রাজকীয় নিদর্শন

[সম্পাদনা]

বছরের পর বছর ধরে, গোষ্ঠীগুলি ধীরে ধীরে দুটি অঞ্চলে একত্রিত হয়েছিল। কো তুꞌউ আরো গোষ্ঠী সংগঠিত ছিলো উত্তর-পশ্চিমে, যখন হোতু ইতি প্রধানত দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে বাস করত। মিরুকে সাধারণত সত্যিকারের রাজকীয় উত্তরাধিকারী হিসেবে দেখা হয়, যে কো তুꞌউ আরো গোষ্ঠী শাসন করতো।

সেই থেকে, ইস্টার দ্বীপের নেতারা বংশগত-শাসক ছিলেন, যারা ঐশ্বরিক জাতি হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করেছিলেন এবং ট্যাবু দিয়ে নিজেদেরকে বাকি দ্বীপবাসীদের থেকে আলাদা করেছিলেন। এই আরিকি শুধুমাত্র গোত্রের ধর্মীয় কার্যাবলীই নিয়ন্ত্রন করত না, বরং খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে যুদ্ধ চালানো পর্যন্ত সবকিছুই পরিচালনা করত।[] যখন থেকে ইস্টার দ্বীপ দুটি উৎকৃষ্ট-গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছিল, তখন থেকেই ইস্টার দ্বীপের শাসকরা একটি অনুমানযোগ্য প্যাটার্ন অনুসরণ করছিলো। সেই সময়ে রাপা নুইয়ের লোকেরা বিশেষভাবে প্রতিযোগিতামূলক ছিল। তারা সাধারণত তাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় একটি বড় মোয়াই তৈরি করতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত, কিন্তু যখন এটি বিরোধের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তখন গোষ্ঠীরা প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং একে অপরের মূর্তি নিক্ষেপ করতো।

ইস্টার দ্বীপের সর্বাপেক্ষা প্রধান এবং ঐতিহাসিক রাজাদের তালিকা

[সম্পাদনা]
  • ১. হোতু (আ মাতুয়া), মাতুয়ার পুত্র (আনুমানিক ৪০০)
  • ২. ভাকাই, তার স্ত্রী
  • ৩. তু’উ মা হেকে
  • ৪. নুকু (ইনুকুরা?)
  • ৫. মিরু আ তুমাহেকে
  • ৬. হাটা আ মিরু
  • ৭. মিরু ও হটা
  • ৮. হিউয়ারিরু (হিউ আ মিরু?)
  • ৯. আতুরাউগি। প্রথম অবসিডিয়ান বর্শা ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • ১০. রা’আ
  • ১১. আতাহেগা আ মিরু (মিরুর বংশধর?), প্রায় ৬০০
  • ...... হাকাপুনা?
  • ১৭. ইহু আন আতুরাঙ্গা (ওইহু?)
  • ...... রুহোই?
  • ২০. তু’উ কা(উ)নগা তে মামারু
  • ২১. তাকাহিতা
  • ২২. ওউয়ারা’আ, প্রায় ৮০০
  • ২৩. কোরোহারুয়া
  • ২৪. মাহুতা আরিকি (প্রথম পাথরের ছবিগুলো তার ছেলের সময়ে তৈরি হয়েছিল)
  • ২৫. আতুয়া উরে রাঙ্গি
  • ২৬ আতুয়ামাটা
  • ২৭. উরেমাটা
  • ২৮. তে রিরি তু’উ কুরা
  • ২৯. কোরুয়া রঙ্গো
  • ৩০. টিকি তে হাতু
  • ৩১. টিকি তেনা
  • ৩২. উরু কেনু, প্রায় ১০০০
  • ৩৩. তে রুরুয়া টিকি তে হাতু
  • ৩৪. নাউ তা মাহিকি
  • ৩৫. তে রিকা টি
  • ৩৬. তে তেরাতেরা
  • ৩৭. তে রিয়া কৌতাহিতো (হিরাকাউ-তেহিতো?)
  • ৩৮. কো তে পু ই তে তোকি
  • ৩৯. কুরাতাহোগো
  • ৪০. কো তে হিতি রুয়া নেয়া
  • ৪১. তে উরুয়াকি কেনা
  • ৪২. তু তে রেই মানানা, প্রায় ১২০০
  • ৪৩. কো তে কুরা তাহোঙ্গা
  • ৪৪. তাওরাহা কাইহাঙ্গা
  • ৪৫. টুকুমা (কুমা)
  • ৪৬. তে কাহুই তুহুঙ্গা
  • ৪৭. তে তুহুঙ্গা হানুই
  • ৪৮. তে তুহুঙ্গা হারোয়া
  • ৪৯. তে তুহুঙ্গা "মারে কাপেআউ"
  • ৫০. তোয়াতি রাঙি হাহে
  • ৫১. টাঙ্গারোয়া তাতারারা (সম্ভবত, মাঙ্গাইয়া দ্বীপের টাঙ্গাইয়া ?)
  • ৫২. হাভিনি (ভিনি) কোরো (বা হারিউই কোরো), প্রায় ১৪০০
  • ৫৩. পুনা হাকো
  • ৫৪. পুনা আতে তু’উ
  • ৫৫. পুনা কাই তে ভানা
  • ৫৬. তে রিরি কাটেয়া (? – ১৪৮৫)
  • ৫৭. N/A
  • ৫৮. N/A
  • ৫৯. হাউমোয়ানা, তারাতাকি এবং টুপা আরিকি (পেরু থেকে), ১৪৮৫ থেকে
  • ৬০. মাহাকি তপু ভায়ে ইতি (মাহিকি তপুয়াকীতি)
  • ৬১. এনগাউ-কা তে মাহাকি বা তু’উ কোইহো (কো-তু’উ-ইহু?)
  • ৬২. আনাকেনা
  • ৬৩. হাঙ্গা রাউ
  • ৬৪. মারামা আরিকি, প্রায় ১৬০০
  • ৬৫. রিউ টুপা হোতু (নুই টুপা হোতু?)
  • ৬৬. টোকো তে রাঙ্গি (সম্ভবত মাঙ্গাইয়া দ্বীপের "ঈশ্বর" রঙ্গো?)
  • ৬৭. কাও আরোআরো (রে কাউ’উ?)
  • ৬৮. মাতাইভি
  • ৬৯. কাও হোতো
  • ৭০. তে রাভারাভা (তেরাভা রারা)
  • ৮১. তেহিতেহুকে
  • ৭২. তে রাহাই বা তেরাহাই

(তেরাহাইয়ের পরে অন্যান্য শাসকরা হলো: কোরোহারুয়া, রিকি-কা-আতেয়া, যার ছেলে ছিলেন হোতু মাতুয়া, এরপর কাইমাকোই, তেহেতু-তারা-কুরা, হুয়েরো, কাইমাকোই (বা রাইমোকাকি)), সর্বশেষ, গাআরা যিনি নিচের প্রধান তালিকায় এনগারা।)

  • ৭৩. তে হুকে
  • ৭৪. তুউ, মাতা নুই থেকে (কো তুউ?), প্রায় ১৭৭০ সালের দিকে
  • ৭৫. হোতু ইতি (মাতা ইতি থেকে জন্ম)। ১৭৭৩ সালের দিকে যুদ্ধ।
  • ৭৬. হোঙ্গা
  • ৭৭. তে কেনা
  • ৭৮. তে তিতে আঙ্গা হেনুয়া
  • ৭৯. নাগা'রা (সি. ১৮৩৫ - ঠিক ১৮৬০ সালের পূর্বে), রাজা কাই মাকো’ইয়ের পুত্র
  • ৮০. মৌরাতা (১৮৫৯ - ১৮৬২)
  • ৮১. কাই মাকো’ই’আইতি (= ছোট কাইমাকোই) (– ১৮৬৩), এনগারা-এর পুত্র, ১৮৬২ সালের মহান পেরুর দাস অভিযানে পেরুর দাসদের দ্বারা দ্বীপের ধ্বংসযজ্ঞ, একজন ক্রীতদাস হিসাবে মারা যান (১৮৬৩ সালে?)
  • ৮২. টেপিটো []
  • ৮৩. গ্রেগোরিও;[] অর্থাৎ, কেরেকোরিও মানু রাঙ্গি, রোকোরোকো হে তাউ
  • ৮৪. আতামু তেকেনা, সংযোজন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, ইস্টার দ্বীপ সংযুক্ত করা হয়, ১৮৯২ সালের আগস্টে মারা যায়
  • ৮৫. সিমিওন রিরো কাইঙ্গা, ১৮৯৯ সালে চিলির ভালপারাইসোতে মারা যান
  • ৮৬. এনরিক ইকা আ তু’উ হাতি (১৯০০-১৯০১), স্বীকৃত নয় []
  • ৮৭. মইসেস তু’উ হেরেভেরি (১৯০১-১৯০২), স্বীকৃত নয়। []
আধুনিক দাবিদার
  • ২০১১-২০১৭: ভ্যালেন্টিনো রিরোরোকো টুকি, (মুকুট পরে জুলাইয়ে, ৮ আগস্ট ২০১১ ঘোষিত) [] সিমিওন রিরো কাইঙ্গার নাতি।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  • হোতু মাতু’য়া
  • রাজা নগা'রা
  • রাপা নুই
  • রাপা নুই পুরাণ

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Carlos Mordo, Easter Island (Willowdale, Ontario: Firefly Books Ltd., 2002) Page 14
  2. Edmundo Edwards and Alexandra Edwards When The Universe was an Island Archaeology and Ethnology of Easter Island. Page 18, Ediciones Reales 2012
  3. Mordo: P. 49
  4. Mordo: P. 109
  5. Mordo: P. 50
  6. Mordo: P. 50-51
  7. Englert, Sebastián (২০০৪)। La tierra de Hotu Matu'a: historia y etnología de la Isla de Pascua : gramática y diccionario del antiguo idioma de Isla de Pascua। Editorial Universitaria। পৃষ্ঠা 65। আইএসবিএন 978-956-11-1704-4 
  8. Pakarati, Cristián Moreno (২০১৫)। Los últimos 'Ariki Mau y la evolución del poder político en Rapa Nui। পৃষ্ঠা 13–15। 
  9. Aaron Nelsen (৩০ মার্চ ২০১২)। "A Quest for Independence: Who Will Rule Easter Island's Stone Heads?"। Time। ২৭ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২২ 

আরও পড়ার জন্য

[সম্পাদনা]
  • Alfred Metraux (১৯৩৭)। "The Kings of Easter Island"। Polynesian Society: 41–62। ৩০ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪