উইলিয়াম লেসেল | |
---|---|
জন্ম | বোল্টন, ইংল্যান্ড | ১৮ জুন ১৭৯৯
মৃত্যু | ৫ অক্টোবর ১৮৮০ মেইডেনহেড, ইংল্যান্ড | (বয়স ৮১)
পরিচিতির কারণ | প্রাকৃতিক উপগ্রহ ট্রাইটন, হাইপেরিয়ন, এরিয়েল ও আমব্রিয়েলের আবিষ্কারক |
পুরস্কার | রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির স্বর্ণ পদক (১৮৪৯) রয়্যাল মেডেল (১৮৫৮) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | জ্যোতির্বিজ্ঞানী |
উইলিয়াম লেসেল এফআরএস এফআরএসই এফআরএসএল এফআরএএস (ইংরেজি: William Lassell; জন্ম: ১৮ জুন, ১৭৯৯ – ৫ অক্টোবর, ১৮৮০) ছিলেন একজন ইংরেজি বণিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী।[১][২][৩][৪][৫][৬] তিনি প্রতিফলক দূরবীনের উন্নতিসাধন এবং চারটি গ্রহীয় উপগ্রহ আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত।
উইলিয়াম লেসেলের জন্ম ল্যাংকাশায়ারের বোল্টনে। তিনি শিক্ষালাভ করেন প্রথমে বোল্টনে এবং পরে রচডেল অ্যাকাডেমিতে।[৭] বাবার মৃত্যুর পর ১৮১৪ থেকে ১৮২১ সাল পর্যন্ত লিভারপুলে এক বণিকের কাছে শিক্ষানবিশি করেন। তারপর বিয়ার প্রস্তুককারক হিসেবে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন। এর ফলে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ইচ্ছা পূরণ করতে সক্ষম হন। লিভারপুলের শহরতলি ওয়েস্ট ডার্বি এলাকায় তাঁর বাড়ি "স্টারফিল্ড"-এ তিনি একটি মানমন্দির গড়ে তোলেন। সেখানে তাঁর একটি ২৪-ইঞ্চি (৬১০ মিমি) অ্যাপারেচার ধাতব দর্পণ প্রতিফলক দূরবীন (যেটিকে "টু ফিট" টেলিস্কোপ বলা হত) ছিল। এটির জন্য তিনি পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুগুলিকে সহজে অনুসরণ করার জন্য একটি নিরক্ষীয় মাউন্ট ব্যবহারের কাজে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি নিজের তৈরি যন্ত্রপাতি দিয়ে দর্পণটিকে নিজেই ভূমিতে স্থাপন ও পালিশ করতেন। ১৮৫৪ সালে মানমন্দিরটি লিভারপুল থেকে আরও দূরে ব্র্যাডস্টোনে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৮৪৬ সালে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহান গটফ্রাইড গেল কর্তৃক নেপচুন আবিষ্কারের ঠিক সতেরো দিন পরে লেসেল তাঁর নিজের তৈরি যন্ত্রটি দিয়ে নেপচুনের বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ ট্রাইটন আবিষ্কার করেন।[৮][৯][১০] ১৮৪৮ সালে তিনি স্বতন্ত্রভাবে শনির প্রাকৃতিক উপগ্রহ হাইপেরিয়ন আবিষ্কার করেন।[৯][১১] এরপর ১৮৫১ সালে তিনি ইউরেনাসের দু’টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ এরিয়েল ও আমব্রিয়েল আবিষ্কার করেন।
১৮৫৫ সালে তিনি একটি ৪৮-ইঞ্চি (১,২০০ মিমি) দূরবীন তৈরি করেন। ইংল্যান্ডের আকাশ প্রায়শই মেঘাচ্ছন্ন থাকার দরুন পর্যবেক্ষণের সুবিধার জন্য তিনি দূরবীনটি স্থাপন করেছিলেন মালটায়। কয়েক বছর মালটায় কাটিয়ে ইংল্যান্ডে ফেরার পর তিনি চলে যান মেইডেনহেডে এবং সেখানে একটি মানমন্দির থেকে তাঁর ২৪-ইঞ্চি (৬১০ মিমি) দূরবীনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যান। ৪৮ ইঞ্চি দূরবীনটির বিভিন্ন অংশ খুলে গিয়েছিল এবং পরে ভেঙে গিয়েছিল।[১২] ১৮৮০-এর দশকে ২৪ ইঞ্চি দূরবীনটি গ্রিনউইচের রয়্যার অবজার্ভেটরিতে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু পরে সেটিরও বিভিন্ন অংশ খুলে যায়।[৯]
১৮৩৯ থেকে লেসেল ছিলেন রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ফেলো (এফআরএএস)। ১৮৪৯ সালে তিনি রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির স্বর্ণ পদক লাভ করেন এবং ১৮৭০ থেকে দুই বছর এই সংস্থার প্রেসিডেন্টের পদ অলংকৃত করেন।[১৩] ১৮৪৯ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন এবং ১৮৫৮ সালে এই সংস্থার রয়্যাল মেডেল জয় করেন।[১৪] এছাড়া লেসেল রয়্যাল সোসাইটি অফ লিটারেচারের ফেলোও (এফআরএসএল) হয়েছিলেন।[১৫] লেসেল রয়্যাল সোসাইটি অফ এডিনবরার সাম্মানিক ফেলো (হনএফআরএসই) এবং সোসাইটি অফ সায়েন্সেস অফ উপসালার সাম্মানিক ফেলো হন এবং ১৮৭৪ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক এলএল.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।[১৬]
১৮৮০ সালে মেইডেনহেডেই লেসেলের মৃত্যু ঘটে এবং তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় সেন্ট ল্যুক’স চার্চে।[১৭] মৃত্যুর সময় তিনি ৮০,০০০ পাউন্ডের (মোটামুটি ২০২১ অনুযায়ী £৭৮,০০,০০০-এর সমতুল্য) সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর দূরবীনটি গ্রিনউইচের রয়্যাল অবজার্ভেটরিকে উপহার দেওয়া হয়েছিল।
তাঁর সম্মানে চাঁদের লেসেল সংঘাত গহ্বর, মঙ্গল গ্রহের লেসেল সংঘাত গহ্বর, গ্রহাণু ২৬৩৬ লেসেল এবং নেপচুনের একটি বলয়ের নামকরণ করা হয়েছে। লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বি.এসসি. পাঠক্রমে স্নাতক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেড প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীকে উইলিয়াম লেসেল পুরস্কার প্রদান করে।[১৮][১৯]
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)