উদ্ভট তারা হ'ল এক প্রকার কল্পিত সন্নিবিষ্ট তারা যা ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন বা মিউয়ন ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা গঠিত এবং অবক্ষয় চাপ বা অন্যান্য কোয়ান্টাম ধর্ম কর্তৃক মহাকর্ষীয় পতনের বিরুদ্ধে সাম্য যুক্ত। উদ্ভট তারার মধ্যে রয়েছে কোয়ার্ক তারা (কোয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত) এবং সম্ভবত স্ট্রেঞ্জ তারা (স্ট্রেঞ্জ কোয়ার্ক পদার্থ, আপ, ডাউন এবং অদ্ভুত কোয়ার্কের সমন্বয়), পাশাপাশি দূরকল্পী প্রিউয়ন তারা, প্রিয়ন দিয়ে গঠিত, যা কাল্পনিক কণা এবং কোয়ার্কের "গাঠনিক একক", কোয়ার্কগুলির উপ-কণায় পতিত হওয়া উচিত)। প্রস্তাবিত বিভিন্ন ধরনের উদ্ভট তারগুলির মধ্যে সর্বাধিক প্রমাণিত এবং উপলব্ধ হলো কোয়ার্ক তারা।
উদ্ভট তারা মূলত তাত্ত্বিক - প্রথমত এ জাতীয় পদার্থগুলির আচরণ বিশদভাবে পরীক্ষা করা কঠিন এবং দ্বিতীয়ত মহাকর্ষীয়-তরঙ্গ জ্যোতির্বিদ্যার নব্য প্রযুক্তির আগে, চৌম্বকীয় বা জ্ঞাত কণাগুলির মাধ্যমে বিকিরণ করে না এমন মহাজাগতিক বস্তু শনাক্তকরণের কোনও সন্তোষজনক উপায় ছিল না। তাই জ্ঞাত প্রকৃতির থেকে আলাদা করে এই প্রকৃতির নতুন মহাজাগতিক বস্তুগুলি যাচাই করা এখনও সম্ভব হয়নি। এই জাতীয় বস্তুর অভ্যর্থীগুলিকে তাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্য থেকে প্রাপ্ত পরোক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে মাঝেমধ্যে চিহ্নিত করা হয়।
কোয়ার্ক তারা হলো একটি কাল্পনিক বস্তু যা মহাকর্ষীয় চাপের অধীনে তার নিউট্রনের পতন থেকে আপ কোয়ার্ক এবং ডাউন কোয়ার্ক উৎপন্ন করে। এটি প্রত্যাশিত যে এরা নিউট্রন তারার চেয়ে ছোট, ঘন এবং কোনও অতিরিক্ত ভর যুক্ত না হলে এই নতুন দশা অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যমান থাকতে পারে। কার্যকরভাবে, এটি একটি খুব বড় নিউক্লিয়ন। যে কোয়ার্ক তারাগুলিতে অদ্ভুত পদার্থ থাকে তাদের অদ্ভুত তারা বলে।
১০ এপ্রিল ২০০২ সালে চন্দ্র এক্স-রশ্মি মানমন্দির কর্তৃক প্রকাশিত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে, আরএক্স জে১৮৫৬.৫-৩৭৫৪ এবং ৩সি ৫৮ নামক দুটি বস্তু কোয়ার্ক তারার অভ্যর্থী হিসাবে প্রস্তাবিত হয়। প্রথমটি নিউট্রন তারার প্রত্যাশিত ভরের চেয়ে অনেক কম ভর ও বেশি ঘনত্ব সম্পন্ন এবং দ্বিতীয়টি বেশি শীতল বলে মনে হয়েছিল যা প্রকাশ করে যে তারাদুটি নিউট্রোনিয়ামের চেয়েও ঘন উপাদানের সমন্বয়ে তৈরী। যাইহোক, এই পর্যবেক্ষণগুলি গবেষকদের কাছে সন্দেহপ্রবণ মনে হয়। তারা বলেন যে, ফলাফলটি চূড়ান্ত নয়। আরও বিশ্লেষণের পরে, আরএক্স জে১৮৫৬.৫-৩৭৫৪ কে কোয়ার্ক তারার অভ্যর্থীদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।[১]
ইলেক্ট্রোউইক তারা হলো এক ধরনের তাত্ত্বিক বহির্নক্ষত্র যদ্দ্বারা নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় পতন ইলেক্ট্রোউইক জ্বলনের অর্থাৎ কোয়ার্ককে লেপটনে রূপান্তরিত করার সময় ইলেক্ট্রোউইক মিথষ্ক্রিয়ায় যে শক্তি নির্গত হয় তার ফলে উৎপন্ন বিকিরণ চাপ দ্বারা প্রতিহত হয়। এই প্রক্রিয়াটি তারার কেন্দ্রে ঘটে যার আয়তন একটি আপেলের কাছাকাছি এবং ভর প্রায় দুইটি পৃথিবীর সমান।[২]
তাত্ত্বিকভাবে, একটি নক্ষত্রের সুপারনোভা ধসের পরের পর্যায়টি হলো সেই পর্যায় যখন ইলেক্ট্রোউইক তারা উৎপন্ন হয়। ইলেক্ট্রোউইক তারাগুলি কোয়ার্ক তারার তুলনায় ঘন এবং এরা উৎপন্ন হতে পারে যখন কোয়ার্ক অবক্ষয় চাপ আর মহাকর্ষীয় আকর্ষণকে প্রতিহত করতে পারে না কিন্তু ইলেক্ট্রোউইক জ্বলনের ফলে উৎপন্ন বিকিরণ চাপ দ্বারা তা প্রতিরোধীত হয়। তারার জীবনের এই পর্যায়টি ১০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে।[২][৩][৪][৫]
প্রিয়ন তারা হলো এক ধরনের কাল্পনিক সন্নিবিষ্ট তারা যা প্রিয়ন (একটি প্রকল্পিত অতিপারমানবিক কণার শ্রেণি) দিয়ে তৈরি। এদের প্রত্যাশিত ঘনত্ব অনেক বেশি; ১০২৩ / এরও বেশি। এদের ঘনত্ব কোয়ার্ক তারা এবং নিউট্রন তারার চেয়েও বেশি হতে পারে, যদিও এরা শ্বেত বামন এবং নিউট্রন তারার চেয়ে ছোট কিন্তু ভারী হবে।[৬] সুপারনোভা বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং থেকে প্রিয়ন তারার উদ্ভব হতে পারে। গামা রশ্মির মহাকর্ষীয় পরকলার মাধ্যমে তাত্ত্বিকভাবে এই জাতীয় বস্তুগুলি শনাক্ত করা যেতে পারে। প্রিয়ন তারাগুলি তমোপদার্থের সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে, কণা ত্বরকের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণগুলি[৭] প্রিয়নের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলে বা অন্ততপক্ষে এদের তদন্তকে অগ্রাধিকার দেয় না, কারণ বর্তমানে একমাত্র কণা শনাক্তকারী, অত্যন্ত উচ্চ শক্তি অন্বেষণ করতে সক্ষম লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারকে এর জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়নি এবং এর গবেষণা কাজটি হিগস বোসন, কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা অধ্যয়ন এবং প্রমিত মডেলের বাইরের পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত অন্যান্য গবেষণার দিকে পরিচালিত হয়। সাধারণ আপেক্ষিকতায়, কোনও তারা যদি তার শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধের চেয়ে ছোট আকারে পতিত হয় তবে তার বহি:প্রকোষ্ঠাস্থিতে একটি ঘটনা দিগন্তের উপস্থিতি থাকবে এবং সেটি একটি কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে। এভাবে, প্রিয়ন তারার আকার ১ মিটারের কাছাকাছি হলে তার পরম ভর ১০০ M🜨 এবং একটি মটর আকারের হলে এর ভর প্রায় চাঁদের সমান হতে পারে।
বোসন তারা হলো এক প্রকার কাল্পনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় বস্তু যা বোসন নামক কণা দ্বারা গঠিত (গতানুগতিক তারাগুলির বেশিরভাগই প্রোটন দ্বারা গঠিত যা একটি ফার্মিয়ন। তবে, হিলিয়াম-৪ নিউক্লিয়াস দ্বারাও গঠিত যা আসলে বোসন)। এই ধরনের তারার অস্তিত্বের জন্য, স্ব-বিতাড়ক মিথস্ক্রিয়া সম্পন্ন একটি স্থিতিশীল বোসন থাকতে হবে; সম্ভাব্য অভ্যর্থীদের একটি কণা[৮] হলো কাল্পনিক "অ্যাক্সিয়োন" (যা এখনও শনাক্ত না হওয়া "অ-বেরিয়োনিক তমোপদার্থ" এর অভ্যর্থী কণা, যা মহাবিশ্বের প্রায় ২৫% ভর গঠন করে বলে মনে করা হয়)। ধারণা করা হয় যে সাধারণ তারার[৯] (যা মহাকর্ষীয় চাপ এবং পারমাণবিক সংশ্লেষণের কারণে বিকিরীত হয়) মতো না হয়ে বোসন তারাগুলি আলোকভেদ্য এবং অদৃশ্য হবে। সন্নিবিষ্ট বোসন তারাগুলির অপার অভিকর্ষ এর চারপাশের আলোকে বাঁকিয়ে দিয়ে একটি ফাঁকা অঞ্চল তৈরি করবে যা একটি কৃষ্ণগহব্বরের ঘটনা দিগন্তের প্রতিচ্ছায়ার অনুরূপ। কৃষ্ণগহব্বরের মতো, বোসন তারাও তার চারপাশ থেকে সাধারণ পদার্থগুলি শোষণ করে তবে, স্বচ্ছতার অর্থ হলো শোষিত পদার্থগুলি (যা সম্ভবত গরম হবে এবং বিকিরীত হবে) এর কেন্দ্রস্থলে দৃশ্যমান হবে। ইহা আরও জানায় যে ঘূর্ণয়মান বোসন তারাগুলি ডোনাট-আকৃতির হবে কারণ কেন্দ্রাতিক বল বোসোনিক পদার্থকে এই রূপ দেবে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত, এরকম তারার উপস্থিতির কোনও উল্লেখযোগ্য প্রমাণ নেই। তবে, একজোড়া সহ-প্রদক্ষিণরত বোসন তারার মহাকর্ষীয় বিকিরণের মাধ্যমে এদের শনাক্ত করা যেতে পারে।[১০][১১]
মহাবিস্ফোরণের প্রাথমিক পর্যায়ে বোসন তারাগুলি মহাকর্ষীয় পতনের মাধ্যমে গঠিত হতে পারে।[১২] কমপক্ষে তত্ত্বানুসারে, ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি অতিবৃহৎ বোসন তারা থাকতে পারে যার মাধ্যমে সক্রিয় ছায়াপথের কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণকৃত অনেক বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।[১৩]
বোসন তারাগুলিকেও তমোপদার্থের অভ্যর্থী হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে এবং এটি অনুমান করা হয় যে বেশিরভাগ ছায়াপথকে ঘিরে তমোপদার্থ বলয়গুলি অতিবৃহৎ "বোসন তারা" হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।[১৪][১৫]
সন্নিবিষ্ট বোসন তারা এবং বোসন শেলগুলি প্রায়শই বৃহৎ (বা ভরবিহীন) জটিল স্কেলার ক্ষেত্র, ইউ(১) গেজ ক্ষেত্র এবং অভিকর্ষের সাথে শঙ্কুগত সম্ভাবনা ঘটিত বিষয়ে অধ্যয়ন করা হয়। তত্ত্বানুসারে একটি ধনাত্মকত্ত্বক ঋনাত্বক মহাজাগতিক ধ্রুবকের উপস্থিতি ডি-সিটার স্পেস এবং অ্যান্টি-ডি সিটার স্পেসে এই বস্তুগুলির অধ্যয়ন সহজতর করে।[১৬][১৭][১৮][১৯][২০]
ব্রেটেন, মহাপাত্র এবং জাং তত্ত্বটি দেন যে নতুন ধরনের ঘন অ্যাক্সিয়োন তারার উপস্থিতি থাকতে পারে যেখানে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটের অ্যাক্সিয়োন গড় ক্ষেত্র চাপ দ্বারা মাধ্যাকর্ষণ ভারসাম্যপূর্ণ হয়।[২১] ঘন অ্যাক্সিয়োন নক্ষত্রের উপস্থিতির সম্ভাবনাটিকে কিছু অন্য কাজের দ্বারা চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে যেগুলো এই দাবির সমর্থন করে না।[২২]
লুপ কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষে, প্লাঙ্ক তারা হলো তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যা একটি পতিত নক্ষত্রের শক্তি ঘনত্ব, প্লাঙ্ক শক্তি ঘনত্বে পৌঁছালে তৈরি হয়। এই অবস্থায়, মহাকর্ষ এবং স্থান-কাল কোয়ান্টাইজড বলে ধরে নিলে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি থেকে উদ্ভূত একটি বিতাড়নশক্তি তৈরি হয়। অন্য কথায়, মাধ্যাকর্ষণ এবং স্থান-কাল যদি কোয়ান্টাইজড হয় তবে প্ল্যাঙ্ক তারার অভ্যন্তরে ভর-শক্তির সংগ্রহ এই সীমা অতিক্রম করতে পারে না কারণ এর ফলে এটি স্থান-কালের জন্য নিজেই অনিশ্চয়তার নীতি লঙ্ঘন করবে।[২৩]