ওড্ডিয়ান (পশতু: اوډيانه; ওড়িয়া: ଓଡ଼ିଆଣ) মধ্যযুগীয় ভারতের একটি ছোট রাজ্য ছিল। এই রাজ্য থেকে বজ্রযান বৌদ্ধধর্ম উদ্ভূত ও সমৃদ্ধ হয় বলে অনুমান করা হয়।[১]
ওড্ডিয়ানের প্রকৃত অবস্থান সম্বন্ধে বিতর্ক রয়েছে।[১] যে সমস্ত স্থানকে ওড্ডিয়ান অঞ্চলের সাথে একাত্ম করা হয়েছে, সেগুলি হল নিম্নরূপ-
ওড্ডিয়ান শব্দটি দ্রাবিড় শব্দ ওট্টিয়ন থেকে এসেছে বলে ভাষাবিদেরা অনুমান করেন, যার অর্থ ওড্রদেশের বাসিন্দা বা তেলুগু ভাষায় ওট্টিয়ম দেশের বাসিন্দা। বর্তমান উড়িষ্যা রাজ্যকে ওড্র বা ওট্টিয়ম বলা হত। আবার, ওড্ডিয়ান শব্দটি উদ্যান শব্দের মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষাগত পরিবর্তিত রূপ বলেও মনে করা হয়। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই নামেই উড়িষ্যার অঞ্চলগুলিকে চিনতেন।[১] ভাষাবিদ পি সি বাগচীর মতে তিব্বতী ভাষায় ও-র্গ্যান বা উ-র্গ্যান (তিব্বতি: ཨུ་རྒྱན་, ওয়াইলি: u rgyan) এবং ও-ডি-ভি-ষা নামক দুইটি পৃথক শব্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ও-র্গ্যান বা উ-র্গ্যান বা ও-ডি-য়া-না রাজ্যের সঙ্গে ওড্ডিয়ানের রাজা ইন্দ্রভূতির নাম জড়িত। অপরদিকে ও-ডি-ভি-ষা বা ওড্র (অধুনা উড়িষ্যা) রাজ্যের সঙ্গে রাজা ইন্দ্রভূতির উল্লেখ পাওয়া যায় না। কিন্তু এন কে সাহুর মতে ওড, ওড্র, উড্র, ওডিভিষা এবং ও-ডি-য়া-না বা উড্ডিয়ান একই শব্দের ভিন্ন রূপ। সাধনমালা গ্রন্থে উড্ডিয়ান শব্দটিকে ওড্রয়ান বানানে এবং কালিকা পুরাণ গ্রন্থে ওড্র বানানে লেখা রয়েছে। চতুরাশিতি সিদ্ধ প্রবৃত্তি গ্রন্থে ইন্দ্রভূতিকে ওডিভিষার রাজা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ব্স্তান-'গ্যুর নামক তিব্বতী গ্রন্থসঙ্কলনে তাকে উড়িষ্যার রাজা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ইন্দ্রভূতি রচিত জ্ঞানসিদ্ধি গ্রন্থের সূচনাতে উড়িষ্যার দেবতা জগন্নাথের বন্দনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে বর্তমান উড়িষ্যা রাজ্যই যে মধ্যযুগে ওড্ডিয়ান ছিল, সেই প্রমাণ পাওয়া যায়।[n ১]
নলিনীনাথ দাশগুপ্ত ওড্ডিয়ানের অবস্থান সম্পর্কে মত পোষণ করেছেন যে এই স্থানটি প্রাচীন বাংলায় অবস্থিত ছিল। ব্স্তান-'গ্যুর গ্রন্থসঙ্কলনে উল্লেখ রয়েছে সরহ পা এবং তৈলিকপাদের জন্ম ওড্ডিয়ানে হয়েছিল। আবার, পাগ-সাম-জোন-জাং নামক তিব্বতী গ্রন্থে তাদেরকে বঙ্গালের অধিবাসী বলা হয়েছে। ব্স্তান-'গ্যুর গ্রন্থসঙ্কলনের দুইটি বিভিন্ন অংশে অবধূতপাদ অদ্বয়বজ্রকে ওড্ডিয়ানবাসী এবং বাঙ্গালী বলা হয়েছে। পাগ-সাম-জোন-জাং গ্রন্থে লুই পাকে ওড্ডিয়ানে জন্ম হয়েছে বলা হলেও ব্স্তান-'গ্যুর গ্রন্থসঙ্কলনে তাকে বাংলার অধিবাসী বলা হয়েছে।[৪] ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় নলিনীনাথ দাশগুপ্তের মতামতকে সমর্থন করেছেন।[৫]