ওয়াটারলুর যুদ্ধ

ওয়াটার লু'র যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: ওয়াটারলু ক্যাম্পেইন

দ্বিতীয় উইলিয়াম স্যাডলারের আঁকা ওয়াটার লু'র যুদ্ধ
তারিখ১৮ জুন ১৮১৫[]
অবস্থান
ওয়াটারলু, নেদারল্যান্ডস (বর্তমান বেলজিয়াম)
৫০°৪০′৪৮″ উত্তর ৪°২৪′৪৩″ পূর্ব / ৫০.৬৮০° উত্তর ৪.৪১২° পূর্ব / 50.680; 4.412
ফলাফল

জোটের জয়

বিবাদমান পক্ষ
প্রথম ফরাসি সাম্রাজ্য ফরাসি সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
নেপোলিয়ন ১
মিশেল নে
গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য ওয়েলিংটনের ডিউক
প্রুশিয়া রাজ্য জিভার্ট লিবারেট ভন ব্লুচার
শক্তি

মোট: ৭২,০০০[]-৭৩,০০০[]

  • ৫০,৭০০ পদাতিক
  • ১৪,৩৯০ অশ্বারোহী
  • ৮,০৫০ কামান এবং প্রকৌশলী
  • ২৫২ বন্দুক

মোট: ১১৮,০০০-১২০,০০০[]
ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনী: ৬৮,০০০[][]

  • যুক্তরাজ্য: ২৫,০০০ ব্রিটিশ এবং ৬,০০০ জার্মান রাজার বাহিনী
  • নেদারল্যান্ডস: ১৭,০০০
  • হ্যানোভার: ১১,০০০
  • ব্রান্সউইক: ৬,০০০
  • নাসাউ: ৩,০০০[]
  • ১৫৬ বন্দুক []

ব্লুচারের সেনাবাহিনী:

  • প্রুশিয়ান: ৫০,০০০[]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি

মোট: ৪১,০০০-৪২,০০০[]

  • ২৪,০০০ থেকে ২৬,০০০ হতাহত, ৬,০০ থেকে ৭,০০০ বন্দী সহ[]
  • ১৫,০০০ নিরুদ্দেশ[]
  • ২ ইম্পেরিয়াল ঈগল স্ট্যান্ডার্ড ক্যাপচার করা হয়েছে

মোট: ২৩,০০০[]-24,000
ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনী: ১৭,০০০

  • ৩,৫০০ নিহত
  • ১০,২০০ আহত
  • ৩,৩০০ নিরুদ্দেশ[১০]

ব্লুচারের সেনাবাহিনী: ৭,০০০

  • ১,২০০ নিহত
  • ৪,৪০০ আহত
  • ১,৪০০ নিরুদ্দেশ[১০]
উভয় পক্ষে: ৭,০০০ ঘোড়া নিহত
  বর্তমান যুদ্ধ
  কমান্ডে নেপোলিয়ন
  নেপোলিয়নের কমান্ড ছিল না
ওয়াটারলু'র যুদ্ধ ১৮১৫ সালের ১৮ জুন বেলজিয়ামের ওয়াটারলু নামক স্থানে সংঘঠিত হয়। ফরাসিদের সম্রাট (Emperor of the French) নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এই যুদ্ধে দুইটি সম্মিলিত শক্তি, যথা- ডিউক অব ওয়েলিংটনের অধীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং গাবার্ড ভন ব্লুচারের অধীন  প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীর নিকট পরাজিত হন।

পটভূমি

[সম্পাদনা]
সারা জীবন ধরে নেপোলিয়ান অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এসবের মধ্যে কিছু কিছু যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে বিজয় অর্জন করেন, আবার অনেক যুদ্ধে হেরে তার কতৃত্ব হারান। তিনি যখন ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ দখল করেন, তখন ইউরোপের সমস্ত দেশ মিলে ফ্রান্স তথা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। কিন্তু তখন এত বিশাল সৈন্যবাহিনীর সাথে লড়াই করার সামর্থ্য ছিল না নেপোলিয়ানের। কারণ, এর কিছুদিন আগেই, রাশিয়া আক্রমণের পর ভয়াবহ শীতে আক্রান্ত হয়ে তার অধিকাংশ সৈন্য বাহিনী মারা যায়। তাই তিনি এই যুদ্ধে অংশ নিতে পারতেন না। অপর পক্ষে বিরোধি পক্ষ খুব দ্রুত প্যারিসকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। নেপোলিয়ানের কিছুই করার ছিল না। সবশেষে তার সৈন্যরাও তাকে এলবা দ্বীপে নির্বাসনে দিয়ে দিল।

নেপোলিয়ানের অবর্তমানে ফ্রান্সের রাজসিংহাসনে বসলেন বুরবোঁ পরিবারের অষ্টাদশ লুই। নতুন করে তিনি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে আবার ফ্রান্সকে পুনরুৎজীবীত করতে লাগলেন। কিন্তু ফ্রান্সের জনগণ অষ্টাদশ লুই এবং তার এই নতুন শাসনব্যবস্থাকে মোটেই খুশি মনে স্বীকার করে নেয়নি। দেশে এক অরাজকতা শুরু হল। এলবা দ্বীপে অবস্থান কালে নেপোলিয়ান দেশের এই খারাপ অবস্থার কথা শুনে দেড় হাজার সৈন্য নিয়ে প্যারিসে উপস্থিত হলেন। এদিকে রাজা লুই এই খবর পেয়ে তার সৈন্যবাহিনীকে পাঠান নেপোলিয়ানকে বন্দি করার জন্য। কিন্তু ফ্রান্সের সেনাবাহিনী নেপোলিয়ানের ব্যক্তিত্ব, সাহসিকতা এবং আকর্ষনীয় শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে লুইয়ের পক্ষ ত্যাগ করে নেপোলিয়ানের পক্ষে যোগ দিল। আবার এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৮১৫ সালে ফ্রান্সের রাজসিংহাসনে আবার প্রত্যাবর্তন ঘটে নেপোলিয়ানের।

কিন্তু ১৮১৫ সালের ২০ মার্চ মাসে নেপোলিয়ানের এই প্রত্যাবর্তনের ফলে মোটেই খুশি হল না ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলি। তারা নেপোলিয়ানকে বিতারিত করবার জন্য নানা চক্রান্ত করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আবারো বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে আক্রমণ করল ফ্রান্স। এই আক্রমণের মূল হোতা ছিলেন ডিউক অব ওয়েলিংটন . তিনি এবং পার্শিয়ার সৈন্যবাহিনী মিলে ওয়াটার লু'র প্রান্তরে পরাজিত করেন নেপোলিয়ানকে। আর এই যুদ্ধই ওয়াটার লু'র যুদ্ধ। এই যুদ্ধের চার দিন পর অর্থাৎ ২২শে জুন নেপোলিয়ান পদত্যাগ করে প্যারিস ত্যাগ করেন এবং এর ৭দিন পর সম্মিলিত বাহিনী প্যারিস প্রবেশ করে। 

সৈন্য বাহিনী

[সম্পাদনা]
ডিউক অব ওয়েলিংটন
এই তিনটি সৈন্য বাহিনী অংশ নিয়েছিল: নেপোলিয়ানের আর্মি-ডু-নর্ড, ওয়েলিংটনের ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং বুচারের অধীন পার্শিয়ান বাহিনী। 
ফরাসি সৈন্য বাহিনীর অধীনে ছিল ৬৯,০০০ সৈন্য। যার মধ্যে ৪৮ হাজার পদাতিক সৈন্য, ১৪ হাজার ছিল অশ্বারোহি সৈন্য. ৭,০০০ গোলা এবং কামান সহিত এবং ২৫০ জন বন্দুক সহ ছিল ।[১১][১২] ডিউক অব ওয়েলিংটনএর অধীন ছিল প্রায় ৬৭০০০ সেনাবাহিনী। যার মধ্যে ৫০,০০০ ছিল পদাতিক সৈন্য, ১১,০০০ অশ্বারোহি সৈন্য ,৬,০০০ কামান সহিত এবং ১৫০ জন বন্দুক সহিত।[১৩]

ওয়াটার লুর যুদ্ধক্ষেত্র

[সম্পাদনা]

যুদ্ধ প্রান্তরটি বেলজিয়ামের ওয়াটার লু শহর থেকে ২ কিলোমিটার দুরে এবং বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বর্তমানে এই প্রান্তরকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলা হয়েছে। এই মাঠের ঠিক মধ্যেখানে রয়েছে একটি ছোট খাট ধরনের টিলা। যার চূড়া আলো করে আছে ২৮টন ওজনের একটি বিশাল ধাতব সিংহ মূর্তি। 

বর্তমান সময়ে ওয়াটার লুর যুদ্ধক্ষেত্র

যুদ্ধের ফলাফল

[সম্পাদনা]

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এই যুদ্ধে দুইটি সম্মিলিত শক্তি, যথা- ডিউক অব ওয়েলিংটনের অধীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং গাবার্ড ভন বুচারের অধীন  পার্শিয়ান সেনাবাহিনীর নিকট পরাজিত হন।

প্রস্তুতি

[সম্পাদনা]
গাবার্ড ভন বুচারের , পার্শিয়ান সেনাবাহিনীর প্রধান, যার আদেশে ওয়াটার লু যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে সাহায্য করে পার্শিয়ান বাহিনী। 

যুদ্ধ পরবর্তী ঘটনা

[সম্পাদনা]

ওয়াটারলু -এর যুদ্ধে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে বিজয়ী শক্তিবর্গ তাঁকে আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে সেন্টহেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেয় । সেখানে অত্যন্ত অনাদরে ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে ৫ মে এই বীর যোদ্ধার মৃত্যু হয়।

ভূমিকা

[সম্পাদনা]
1815 সালে পশ্চিম ইউরোপের কৌশলগত পরিস্থিতি: 250,000 ফরাসিরা চারটি ফ্রন্টে প্রায় 850,000 মিত্র বাহিনীর সৈন্যদের মুখোমুখি হয়েছিল। এছাড়াও, নেপোলিয়নকে একটি রাজকীয় বিদ্রোহ কমাতে পশ্চিম ফ্রান্সে ২০,০০০ সৈন্যকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
পুনরুত্থিত নেপোলিয়নের কৌশল ছিল অ্যাংলো-মিত্র এবং প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করা এবং প্রত্যেককে আলাদাভাবে ধ্বংস করা ।
ওয়েলিংটনের ১ম ডিউক, অ্যাংলো-মিত্র বাহিনীর কমান্ডার, যিনি উপদ্বীপ যুদ্ধে ফরাসিদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছিলেন
গেবার্ড লেবারেখ্ট ফন ব্লুচার প্রুশিয়ান আর্মিকে কমান্ড করেছিলেন, লিপজিগের যুদ্ধে কোয়ালিশন সেনাবাহিনী কে নেপোলিয়ন কে পরাজিত করতে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Bodart 1908, পৃ. 487।
  2. Hofschröer 1999, পৃ. 68–69।
  3. Hofschröer 1999, পৃ. 61 cites Siborne's numbers.
  4. Hamilton-Williams 1994, পৃ. 256 gives 168,000.
  5. Barbero 2005, পৃ. 75–76।
  6. Hamilton-Williams 1994, পৃ. 256।
  7. Chesney 1874, পৃ. 4।
  8. Barbero 2006, পৃ. 312।
  9. Barbero 2005, পৃ. 420।
  10. Barbero 2005, পৃ. 419।
  11. Barbero 2005, p. 75.
  12. Hofschröer 1999, p. 68 gives 73,000.
  13. Barbero 2005, pp. 75–76.