ওয়ালিস | |||||
---|---|---|---|---|---|
ডাচেস অব উইন্ডসর | |||||
জন্ম | [১] ব্লু রিজ সামিট, পেনসিলভানিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ১৯ জুন ১৮৯৬||||
মৃত্যু | ২৪ এপ্রিল ১৯৮৬ বোইস দ্য বুলুগনে, প্যারিস, ফ্রান্স | (বয়স ৮৯)||||
সমাধি | ২৯ এপ্রিল, ১৯৮৬ | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | আর্ল উইনফিল্ড স্পেন্সার, জুনিয়র (বিবাহ ১৯১৬, বিবাহ-বিচ্ছেদ ১৯২৭) আর্নেস্ট অলড্রিখ সিম্পসন (বিবাহ ১৯২৮, বিবাহ-বিচ্ছেদ ১৯৩৭) প্রিন্স এডওয়ার্ড, ডিউক অব উইন্ডসর (বিবাহ ১৯৩৭, মৃত্যু ১৯৭২) | ||||
| |||||
রাজবংশ | হাউজ অব উইন্ডসর | ||||
পিতা | টিকেল ওয়ালিস ওয়ারফিল্ড | ||||
মাতা | এলাইস মন্টাগুই | ||||
পেশা | সমাজকর্মী |
ওয়ালিস সিম্পসন (ইংরেজি: Wallis Simpson; জন্ম: ১৯ জুন, ১৮৯৬ - মৃত্যু: ২৪ এপ্রিল, ১৯৮৬) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী ছিলেন।[১] তিনি তৃতীয় স্বামী হিসেবে ডিউক অব উইন্ডসর প্রিন্স এডওয়ার্ডকে বিয়ে করেন। প্রিন্স এডওয়ার্ড ছিলেন যুক্তরাজ্যের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের পূর্ব নাম, যিনি ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করে স্বেচ্ছায় সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন।
জন্মের অল্প কিছুকাল পরেই বাবা টিকেল ওয়ালিস ওয়ারফিল্ড মারা যান। ফলে বিধবা মাতা এলাইস মন্টাগুই দৃশ্যতঃ বিত্তশালী আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় ওয়ালিস সিম্পসনকে বড় করে তোলেন।
মার্কিন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা উইন স্পেন্সারকে প্রথমবারের মতো বিয়ে করেন। এ বিয়েতে বেশ কয়েকবার তারা পৃথকভাবে বসবাস করলেও শেষ পর্যন্ত তা বিবাহ-বিচ্ছেদে রূপান্তরিত হয়। অতঃপর ১৯৩৪ সালে আর্নেস্ট সিম্পসনকে দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে করেন। ঐ সময়ই তিনি প্রিন্স অব ওয়েলস এডওয়ার্ডের মিস্ট্রেস হয়েছিলেন।[২]
এর দুই বছর পর ১৯৩৬ সালে পিতা রাজা পঞ্চম জর্জের মৃত্যুর পর ৮ম এডওয়ার্ড রাজা হিসেবে ব্রিটেনের রাজসিংহাসনে অভিষেক ঘটান। এরই মধ্যে ওয়ালিস তার দ্বিতীয় স্বামী আর্নেস্ট সিম্পসনকে তালাক দেন। ফলে এডওয়ার্ড তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি বল্ডুইন এডওয়ার্ডকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কারণে তিনি মিসেস সিম্পসনকে বিয়ে করতে পারেন না। দুইজন জীবিত সাবেক স্বামীর সাথে ঘর করার পর তৃতীয়বারের মতো রাজা এডওয়ার্ড তাকে বিয়ের ইচ্ছে পোষণ করায় সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেয়। এটি আরো চূড়ান্তরূপ ধারণ করে যখন রাজা ডিসেম্বর, ১৯৩৬ সালে "এ নারীকে আমি ভালোবাসি" বলে ঘোষণা করেন।[৩] সিম্পসনকে বিয়ে করার ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে ষষ্ঠ জর্জ হাউজ অব উইন্ডসরে তৃতীয় সম্রাট হিসেবে আবির্ভূত হন।
এর ফলে সাবেক রাজা ডিউক অব উইন্ডসর পদবীতে চলে যান। ছয় মাস পর ৩ জুন, ১৯৩৭ সালে ফরাসী মিলিয়নিয়ার চার্লস বেদক্সের সহায়তায় ফ্রান্সের চাতিউ দ্য কেন্ডে গীর্জায় ওয়ালিস এবং এডওয়ার্ড বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৪] বিয়ের পর ওয়ালিস ডাচেস অব উইন্ডসর পদবীতে ভূষিত হলেও 'হার রয়েল হাইনেস' সম্বোধন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন।
ডিউক এবং ডাচেস অব উইন্ডসর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে, সময়কালে এবং পরবর্তী সময়ে নাজিদের সমর্থনে ও সহানুভূতি অর্জনে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং সুশীল সমাজের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে তারা উভয়েই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবসরকালীন জীবনযাপন করেন ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন।
১৯৭২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এডওয়ার্ড মারা গেলে তিনি বাকিংহাম প্রাসাদে[৫] অবস্থান করে শেষকৃত্যে যোগ দেন।[৬] পরবর্তীতে তিনি বেশ কয়েকবার দূর্ঘটনায় পতিত হন এবং দুইবার তার কোমর ভেঙ্গে যায়।[৭] স্বামীর সম্পত্তি এবং রাণী থেকে প্রদত্ত ভাতা দিয়ে জীবনধারন করতেন।[৮] এডওয়ার্ডের মৃত্যুর পর সুজানে ব্লাম নামীয় ফরাসী আইনজীবী নিযুক্ত করে ক্ষমতাপত্র অর্পণ করেন।[৯] ব্লাম বাজার মূল্যের চেয়েও কম দরে তার বন্ধুদের কাছে সম্পত্তি বিক্রয় করে দেন।[১০] ১৯৮০ সালে ডাচেস তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন।[১১] এরপর থেকেই ডাচেস নিভৃতচারী হয়ে যান এবং কদাচিৎ জনসমক্ষে তাকে দেখা যেত। ডাক্তার এবং নার্স ব্যতীত অন্য কোন অতিথির সাথে দেখা করতেন না।[১২]
সিম্পসনের কোন সন্তানাদি ছিল না। তবে তার গর্ভধারন ও গর্ভপাতজনিত ব্যাপক গুজব রয়েছে। ২৪ এপ্রিল, ১৯৮৬ সালে প্যারিসের বোইজ দ্য বোলোগনে এলাকায় অবস্থিত নিজ বাড়ীতে ডাচেস অব উইন্ডসর মৃত্যুবরণ করেন।[১৩] উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে আয়োজিত শবযাত্রায় দুই বোন জামাই, রাণী মাতা, প্রিন্সেস এলাইসসহ রাজ পরিবারের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।[১৪]
তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল তথ্যবহুল এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে তিনি এখনো বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিগণিত হয়ে রয়েছেন।