অবস্থান | ১১১ সাউথ গ্রান্ড এভিন্যু, লস এঞ্জলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাস্ট্র। |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ৩৪°০৩′১৯″ উত্তর ১১৮°১৫′০০″ পশ্চিম / ৩৪.০৫৫২৮° উত্তর ১১৮.২৫০০০° পশ্চিম |
মালিক | লস এঞ্জলেস মিউজিক সেন্টার |
ধরন | কনসার্ট হল |
আসনের ধরন | Reserved |
ধারণক্ষমতা | ২,২৬৫ |
নির্মাণ | |
নির্মিত | ১৯৯-২০০৩ |
চালু | ২৪ অক্টোবর, ২০০৩ |
নির্মাণ ব্যয় | $130 million (plus $110 million for parking garage) |
স্থপতি | ফ্র্যাংক ওয়েন গেরি |
ভাড়াটে | |
লস এঞ্জলেস ফিলহরেমোনিক, Los Angeles Master Chorale | |
ওয়েবসাইট | |
Venue website |
আমেরিকার পুরাতন স্টেট ক্যালিফোর্ণিয়ার লস এঞ্জলেস শহরে অবস্থিত ওয়াল্ট ডিজনি কনসার্ট হল আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। দুমড়ানো মোচড়ানো স্টিলের এক ধ্বংসস্তুপের মতো দেখতে এই স্থাপনা স্থপতি ফ্রাঙ্ক গেইরির ডিজাইনে নির্মিত। ১৯৮৭ সালে প্রকল্পের সূচনা হয়। আমেরিকার সর্বকালের সেরা দশ স্থাপত্যের তালিকায় ঢুকে স্থান করে নিয়েছে ব্যতিক্রমী চেহারার এই কনসার্ট হল।
ওয়াল্ট ডিজনী কনসার্ট হলের মুল উদ্যোক্তা লস এঞ্জলেস সিটি কর্পোরেশন। লস এঞ্জলেস মিউজিক সেন্টারের ব্যবহারের জন্য যখন চতুর্থ হল তৈরীর চিন্তা করা হয় তখন আর্থিক বিষয়টা বড় হয়ে দাড়ায়। বাধ্য হয়ে তারা সংস্কৃতিপ্রেমী ধনাঢ্য অধিবাসীদের খুজতে থাকে। এমনই এক পরিস্থিতিতে লিলিয়ান ডিজনী এগিয়ে আসেন। শাশুড়ী ওয়াল্ট ডিজনীর নামে বিশাল অঙ্কের অর্থের যোগান দেয়ার নিশ্চয়তা দেন[১]
মিসেস ডিজনীর চাওয়া ছিলো দৃস্টিনন্দন কিছু একটা করতে হবে। এই চাওয়া পুরনের ভার এসে পড়ে সমকালীন বিখ্যাত স্থপতি ফ্রাঙ্ক ওয়েন গেহরীর কাধে। স্থপতি ফ্রাঙ্ক গেহরী তার গগেনহাম মিউজিয়ামের সুবাদে আমেরিকা জুড়ে বেশ ভালোই পরিচিত। কনসার্ট হলের পরিকল্পনাকালীন স্থপতি গেহরী প্রকল্পের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে বার বার সময় দিয়েছেন মিসেস ডিজনীকে। মিসেস ডিজনী ডিজাইন বুঝতেন না তবু গেরী চেস্টা করতেন তাকে যতটা সম্ভব কাজের সাথে সংযুক্ত রাখতে। তাই প্রতিটি পদক্ষেপে যতটা পারা যায় ডিজাইন সম্পর্কে ধারণা দিতেন।
ডিজনী কনসার্ট হলের অন্তস্থ নকশা খুব সাধারন। চতুর্দিকে হাইওয়ে বেস্টিত বর্গাকৃতির জায়গার ঠিক মাঝখানে মুল কনসার্ট হলের অবস্থান। বাইওে থেকে দেখতে জটিল হলেও নকশায় হলের আকৃতি একটি সরল চতুর্ভজ যা কিনা পয়তাল্লিশ ডিগ্রি কোনে বসে আছে। চতুভর্’জের উত্তর পূর্ব কোনে প্রধান প্রবেশ পথ। সিড়ি বেঙে খোলা চত্বরে উঠলে সামনেই চোখে পড়বে স্টিলের পালের আড়ালে স্বচ্ছ কাচের দেয়াল, ভিতওে জমকালো লবি ও লাউঞ্জ। পূর্ব ও উত্তর পাশে আরো দুটো আলাদা প্রবেশ পথ আছে। মুলত তিনটি লেভেলে পুরো কমপ্লেক্সটি বিন্যস্ত। একদম ভিত্তি লেভেলে আছে সার্ভিস এরিয়া। আরো আছে রেস্টুরেন্ট, ছোট্ট মিটিং রুম, অফিস কক্ষ। একদম উপরের লেভেল হচ্ছে অডিটরিয়াম গ্যালারী । লবি লাউঞ্জ এবং এন্ট্রান্স প্লাজার অবস্থানকে মধ্য লেভেল ধরা যায়। এই লেভেলে আরো কিছু খোলামেলা পরিসর আছে যা প্রয়োজনে প্রদর্শনী এবং অস্থায়ী গ্যালারী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। একদম উপরে অডিটরিয়াম হল বাদ দিলে বাকি চতুর্দিকে খোলা ছাদ পাওয়া যায়। খোলা ছাদেও সাথে আছে বসার যায়গা, এম্পি েিথয়েটার বা উম্মুক্ত গ্যালারী। মধ্য লেভেল থেকে খোলা সিড়ি দিয়ে এই ছাদে উঠে আসা যায়। ছাদ থেকে আবার নেমে যাওয়া যায় বাগানে। কমপ্লেক্সের পশ্চিমে বাগানের অবস্থান। উত্তর পাশের ফার্স্ট গ্রান্ড স্ট্রিট থেকে একটি সিড়ি দিয়েও সরাসরি এই বাগানে এসে বসা যায়। অনুস্ঠান শুরু হবার আগে একটু সময় গল্পে কাটানোর কার্যকর ব্যবস্থা। কমপ্লেক্্েরর দক্ষিণ পাশে আরেকটি দ্বিতল ভবন। এটি অবশ্য একদমই সোজা সাপটা। লা ফিলের অফিস এটি। কনসার্ট হলের মুল ব্যবহারকারী আসলে এই এই লা ফিল। (খঅ চযরষ -খড়ং অহমষবং চযরষযধৎসড়হরপ) ্ওয়াল্ট ডিজনী কনসার্ট হলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এর কনসার্ট হল। বাইওে থেকে দেখে যে কারো মধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরী হবে যে এমন আকা বাকা একটি স্থাপনার মধ্যে কীভাবে অডিটেরিয়ামের ব্যবস্থা হবে। কিন্তু ভিতাে প্রবেশ করলেই অবাক হতে হবে যে প্রোগামস্থলটি একদম গোছানো, বাহিরের ধ্বংসস্তুপের সাথে এর কোন মিল নেই। একদম নিয়মিত আকারের পরিসর যেখানে সুসজ্জিত আসন বিন্যাস একটু বসে যাবার জন্য আমন্ত্রন জানিয়ে রাখবে যথারীতি। আসন বিন্যাসকে যদি বৃত্তাকার ধরা যায় তাকলে তার কেন্দ্রে অর্কেস্ট্রার অবস্থান।
কনসার্ট হল চলমান স্থাপত্য ধারার এক অনণ্য সংযোজন। টাইটানিয়োমের পাতলা শিট দিয়ে মোড়ানো ইচ্ছেমতে আকানো বাকানো অদ্ভুত আকারের স্থাপত্যকর্ম।একটু স্থির হয়ে দেখতে থাকলে এর মধ্যেই খুজে পাওয়া যায় অন্তর্নিহিত ছন্দ। অনেক গুলো জাহাজের পাল দক্ষিণা বাতাসে পেট ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে । দাড়িয়ে আছে এক অন্যের সাথে নিবিঢ় বন্ধৃত্ব মাখিয়ে। জাহাজের মাস্তল হারিয়ে গেছে পালের আধিক্যে। স্থপতি গেরী এই পালের নাম দিয়েছেন ভালবাসার পাল।মিসেস ডিজনী বাগান এবং ফুল পছন্দ করতেন। স্থপতি গেরী তার পছন্দমত হলের বহিরাঙ্গনে বাগানের ডিজাইন করলেন, পদ্ম ফুলের মতো দেখতে পাথরের কিছু বসার যায়গাও তৈরী করেন। শুধু বসার যায়গা নয় পুরো কনসার্ট হলটিকেই কখনো কখনো ফুলের সাথে তুলনা করা হতো। শুরুতে বহিরাঙ্গের দেয়াল পাথরের চিন্তা করা হলেও পরে খরচ কমানোর জন্য স্টিলের ব্যবহার করা হয়।[২]
কনসার্ট হলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ অর্গান। এই দর্শনীয় জিনিসটিকে সাজানো হয়েছে মসৃন বাকানো কাঠের পাইপ দিয়ে[৩] এবং এখানে আরো আছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, একটি সংযুক্ত কুলুঙ্গি এবং একটি আলাদা পরিবহনযোগ্য কুলুঙ্গি। অর্কেস্ট্রোর চতুর্দিকে শ্রোতার জন্য আসন বিন্যাস। মুল ধারার কনসেপ্ট যেভাবেই হোক তার সৃস্টির রহস্যজনক উপস্থিতিকে নিশ্চিত করেছে। ভবনের সারা গায়ে ঘোলাটে ধাতব আবরন, বিভিন্ন উচ্চতায় প্রবাহমান পরিসর এবং ফাকে ফাকে অনানুষ্ঠানিক ল্যান্ডস্কেপেরে উপর সূর্যরশ্মির কারুকাজ যেন অর্কেস্ট্রার সুরের সহযাত্রী হয়ে বিমূর্ত সৌন্দর্যে ছড়িয়ে পড়ছে লস এঞ্জলেসের ব্যস্ত রাস্তার ধারে। জনবহুল কনসার্ট, অর্কেস্ট্রো প্রোগাম, এবং মর্যাদা সম্পন্ন বক্তব্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়াল্ট ডিজনী কনসার্ট হল জীবন্ত হয়ে উঠেছে । ব্যতিক্রমী শব্দশৈলী এবং আকর্ষণীয় পরিবেশে যায়গা করে নিয়েছে সংস্কৃতি প্রেমী মানুষের অন্তরে।
ওয়াল্ট ডিজনী কনসার্ট হল কমপ্লেক্সের পশ্চিম অংশে একটি ছোট সবুজ বাগান ফার্স্ট গ্রান্ড এভিনিউ থেকে আসা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে। কনসার্ট হলের অন্যতম ডোনার লিলিয়ান ডিজনীর পছন্দ অনুযায়ী এই বাগানের ডিজাইন করা হয়। কনসার্ট হলের যে কোন প্রোগামে আগত অতিথিরা এখানে কিছু সময় অবসর কাটাতে কিংবা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। এখানে বসেই একটু দূরে তাকালে চোখে পড়ে শান্ত পানির লেক। রাতের লাল নীল ঝকঝকে আলো প্রতিবিম্বিত হয় লেকের পানিতে। বাগানের মাঝে একটি সুন্দর বসার যায়গা দেখতে অনেকটা পদ্ম ফুলের মতো। লিলিয়ান ডিজনী পদ্ম ফুল পছন্দ করতেন। স্থপতি গেরী এই কৃত্রিম ফুলটিকে ডিজনীর জন্য তৈরী করেছেন এবং নাম দিয়েছেন রোজ ফর লিলি। ডিজনীর পছন্দের এক ধরনের চিনা মাটির ভাঙা টুকরো দিয়ে এটি তৈরী করা হয়েছে।
নির্মান কাজের প্রস্তুতি স্বত্তেও বার বার পিছিয়ে যেতে থাকে নকশার অভাবে। গেহরী নিজেই তার এই ডিজাইনকে ঠিক নির্মান উপযোগী নকশায় রুপান্তরিত করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিশেষ কম্পিউটার সফটওয়্যারের সাহায্য নিলেন। কম্পিউটার এইডেড থ্রি-ডাইমেন্শনাল ইন্টার্যাকটিভ এপ্লিকেশন (ঈঅঞওঅ) নামক এই বিশেষ সফট্ওয়্যারটি ফরাসী যুদ্ধ বিমানের ডিজাইন ও নির্মানের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সফটওয়্রার গেহরীর ডিজাইনকে স্তরে স্তরে সাজিয়ে দিয়েছে। একারণেই পুরো প্রজেক্টের নকশা শেষ করতে বেশ সময় লাগে। ১৯৯১ সালে স্থপতি গেরি পূর্নাঙ্গ নকশা হস্তান্তর করেন। ১৯৯২ সালে প্রথম ভূ-গর্ভস্থ পার্কিং পরিসরে দিয়ে নির্মান কাজ শুরু হয়। শুধুমাত্র গ্যারেজের জন্য ১১১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। লসএঞ্জলেস সিটি কর্পোরেশন এ ব্যয় বহন করে।[৪] ১৯৯৬সালে এর নির্মান শেষ হয়। এর মধ্যে ১৯৯৪-১৯৯৬ সাল সময়কালে অর্থের অভাবে কাজ বন্ধ থাকে। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্টানিকভাবে ভিত্তি প্রস্থ হয় মুল হলের নির্মান কাজের। ২,২৬৫ আসনবিশিস্ট ৩,৬৭,০০০ বর্গফুটের এ কনসার্ট হলের নির্মান কাজ শেষে ২০০৩ সালের ২৪শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন হয়।
মিউজিক্যল অনুষ্ঠান হয় এমন যে কোন স্থাপনার ক্ষেত্রে এর বাহ্যিক ডিজাইন বা নকশার চেয়ে গুরুত্বর্পর্ণ হচ্ছে এর শব্দ কৌশল। গেরীর কাজের খুব বড় একটি চ্যলেঞ্জ ছিলো নান্দনিক এবং যান্ত্রিক চাওয়ার মধ্যে সমন্বয় ঘটানো। স্থপতি গেরী একটি নির্দিস্ট ডিজাইন থিম নিয়ে বহিরাঙ্গনের ডিজাইন করছেন এবং এমনকি অন্দরসজ্জাও চোখে পড়ার মতে। কিন্তু সবই অর্থহীন হয়ে যাবে যদি একোস্টিক বা শব্দ বিন্যাসে ত্রুটি থেকে যায়। একজন স্থপতি হয়্ওে গেহরী তাই এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিজস্ব শব্দ প্রকৌশলীদের সাথে নিয়ে প্রতিটি পয়েন্ট সমাধান করেছেন। প্রথম যখন পরীক্ষামুলক ভাবে অডিটরিয়মে অর্কেস্ট্রো বাজানো হয় তখন এর দর্শনার্থীদের মন্তব্য ছিলো এত চমৎকার এবং স্পস্ট ধ্বনি এর আগে আর কোন অডিটরিয়ামে প্ওায়া যায়নি।[৫] এর দেয়াল এবং সিলিং ডেকোরেশন করা হয়েছে ডগলাস নামক এক ধরনের দেবদারু গাছের কাঠ দিয়ে এবং মেঝে বিশুদ্ধ ওক কাঠের তৈরী।[৬] পুরো হলটি যখন দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে তখন প্রায় দুই সেকেন্ডের মতো এর প্রতিধ্বনি শোনা যায়।[৭] এটা নিসন্দেহে বলা যায় যে অডিটরিয়াম তার নিজস্বতা নিয়েই সজ্জিত হয়েছে। নিখুত শব্দ এবং আন্তরিকতার অনুভ’তি নিয়ে একে ডিজাইন করা হয়েছে। যন্ত্রের উ্পস্থিতি এবং ধারালো ডিজাইনের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে স্থপতি গেহরী এবং শব্দকুশলী ম্যানুয়েল রোজেল বেশ দীর্ঘ আলাপের পরে একমতে পৌছতে পারেন।