কর্পূর (Camphor) মোমের মতন দেখতে স্বচ্ছ কঠিন পদার্থ। এটি দাহ্য এবং তীব্র সুগন্ধযুক্ত। এটি তার্পিনঘটিত যৌগ যেগুলিকে টার্পিনয়েড (terpenoid) বলে। কর্পূরের রাসায়নিক সংকেত হলো C10H16O। কর্পূর গাছ ( বৈজ্ঞানিক নাম - Cinnamomum camphora)-এর কাঠ থেকে কর্পূর নিষ্কাশন করা হয় , এটি হলো প্রাকৃতিক উৎস। রাসায়নিক পদ্ধতিতেও কর্পূর তৈরি করা যায়।
বনজ সম্পদ কর্পূর গাছ থেকে কর্পূর তৈরি একটি শতাব্দী প্রাচীন পদ্ধতি। কর্পূর গাছের কাঠের ছোট ছোট টুকরোকে তাপজারিত করে যে উদ্বায়ী বাষ্প পাওয়া যায় তাকে ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় ঠাণ্ডা করে এবং পরে মিহিগুঁড়ো কাঠে স্টিম চালনা করে যে বাষ্প পাওয়া যায় তাকে ঠাণ্ডা করে কর্পূর পাওয়া যায়।[১]
কর্পূর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। কর্পূরের বিশেষ কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া নীচে দেওয়া হল-
সোডিয়াম বোরোহাইড্রাইডের সাহায্যে কর্পূরকে বিজারিত কর আইসো-বোরনিয়ল তৈরি করা যায়।
১৯৯৮ সালে কোলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়েন্স- এর বিজ্ঞানী কে চক্রবর্ত্তী এবং তাঁর সহযোগীরা মিলে কর্পূর ব্যবহার করে হীরের পাতলা ফ্লিম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।[২]
২০০৭ সালে সাফল্যের সঙ্গে কর্পূরের বাষ্প থেকে কার্বন ন্যানোটিউব তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।[৩]
কর্পূরকে উর্দ্ধপাতনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়। অর্থাৎ তাপ দিলে এটি কঠিন অবস্থা থেকে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। এর তরল অবস্থা হয় না। এই বিশেষ ধর্মের জন্য এর অনেক ব্যবহার রয়েছে।
প্লাস্টিক শিল্পের একেবারে শুরুর দশকে নাইট্রোসেলুলোজ থেকে সেলুলয়েড তৈরি করতে এর নমণীয়তা বাড়ানোর জন্য প্লাস্টিসাইজার হিসাবে প্রচুর পরিমাণে কর্পূর ব্যবহার হতো।[৪]
কীটপতঙ্গদের ক্ষেত্রে কর্পূর বিষাক্ত। পোকামাকড় তাড়াতে কখন কখন কর্পূরের ব্যবহার হয়ে থাকে।[৫] বিশেষ অনুষ্ঠান এবং উৎসবের জন্য যেসব পোশাক ব্যবহৃত হয় সেগুলি সংরক্ষণে কর্পূরের ব্যবহার দেখা যায়। আরশোলা প্রতিরোধক হিসাবে আলমারির কোণগুলিতে কর্পূর রাখা হয়। কর্পূরের ধোঁয়া বা কর্পূর থেকে তৈরি ধূপকাঠির ধোঁয়া পরিবেশ-বান্ধব মশার প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।[৬]
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কর্পূরযুক্ত সুগন্ধী তেল লাল পিঁপড়েদের বিরুদ্ধে ধূপন বিষ ( fumigant ) হিসাবে কার্যকর, কারণ এটি লাল পিঁপড়েদের আক্রমণ, আরোহণ এবং খাওয়ানো প্রভৃতি আচরণকে প্রভাবিত করে।[৭]
পারফিউম হ্যান্ডবুক অনুসারে প্রাচীন আরব বিশ্বে সাধারণ আতরের উপাদান হিসাবে কর্পূর চল ছিল।[৮]