কারাইকল জেলালা কারিকল | |
---|---|
পুদুচেরির জেলা | |
স্থানাঙ্ক: ১১°০১′০০″ উত্তর ৭৯°৫২′০০″ পূর্ব / ১১.০১৬৬৭° উত্তর ৭৯.৮৬৬৬৭° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | পুদুচেরি |
আয়তন[১] | |
• মোট | ১৬১ বর্গকিমি (৬২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ২,০০,২২২ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,২০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | তামিল, ইংরাজি |
• সহ দাপ্তরিক | ফরাসি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৬০৯ ৬০২ |
টেলিফোন কোড | ৯১ (০)৪৩৬৮ |
যানবাহন নিবন্ধন | PY-02 (পি ওয়াই-০২) |
ভারতের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত পুদুচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের চারটি জেলার মধ্যে একটি হল কারাইকল জেলা (ফরাসি: District de Karikal) বা কারিকল জেলা।জেলাটির সদর দপ্তর কারাইকল শহরে অবস্থিত,যা উত্তরে তরঙ্গমবাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং নাগপত্তনম থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
কারাইকল জেলাটি কারাইকল, কোট্টুচেরি, নেড়ুঙ্গাড়ু, তিরুনলারু, নিরবী এবং তিরুমালারায়নপত্তনম পঞ্চায়েতগুলি নিয়ে গঠিত।
অষ্টম শতাব্দীর ৭৩১ থেকে ৭৯৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কারাইকল ছিল পল্লব সাম্রাজ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কবি সেক্কিলার (৯৯২-১০৪২) তার পেরিয়া পুরাণম গ্রন্থে কারাইকলকে "ওয়াঙ্গ মলিক কদর কারৈকল" অর্থাৎ উপকূলীয় একাধিক জলবাহের দেশ কারাইকল বলে উল্লেখ করেছেন। একই গ্রন্থে কবি পুণিতবতীয়ারেরও উল্লেখ করেন যিনি সমস্ত মায়া এবং বাস্তু ভোগ ত্যাগ করে নিজের জীবন তার পরম পূজনীয় শিবের সেবাকার্যে সমর্পণ করেছিলেন। তৎকালে প্রসিদ্ধ প্রাপ্ত কারাইকল শহরের নামে তাকে উপাধি দেওয়া হয়েছিল 'কারাইকল আম্মাইয়ার' নামে।
১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে একজন বিচক্ষণ, শান্তিপ্রিয় সর্বোপরি ভারতে সহজে ফরাসি সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রধান মুখ তথা স্যার ডুমাস তৎকালীন তাঞ্জাবুরের শাসক সহুজীর থেকে চাতুরতা করে কারিকল বা কারাইকল দখলের পরিকল্পনা করেন৷ সেসময় কারাইকল ছিলো কারকলচেরিসহ পার্শ্ববর্তী একাধিক গ্রামের দুর্গস্বরূপ এবং এর মালিকানামূল্য ছিলো ৪০,০০০ চক্র৷ ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি নাগাদ ফরাসিরা কারাইকল শহর, কারকলচেরি বন্দর এবং সংলগগ্ন আটটি গ্রামের দখল নেন৷ এসময়ে তাঞ্জাবুরের শাসক কারাইকল শহর ও কারকলচেরি বন্দরের ৫০,০০০ চক্র মূল্য নির্ধারণ করেন৷
তিনি ময়ূরম বা ময়িলাড়ুতুরাইতে ভূমিমূল্য তিন বছরের জন্য বিনা সুদের ১,৫০,০০০ চক্র এছাড়াও সংলগ্ন পাঁচটি গ্রামের মূল্য বার্ষিক ৪০০০ পেগোডা নির্ধারণ করেন৷ ফরাসিরা অন্যসমস্ত শর্ত মেনে নিলেও ময়ূরমের ত্রিবার্ষিক মান বার্ষিক অতিরিক্ত অগ্রিম করমূল্যে ১০,০০০ চক্র বৃৃদ্ধি পেলে তারা এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেন কারণ তারা ভেবেছিলেন এই অতিরাক্ত মূল্য দুই থেকে তিন হাজার চক্রের মাধ্যমেই নির্ধারণ করা যেতে পারতো৷ ফলে তারা কিলাইয়ুর, মেলাইয়ুর, পুদুতুরাই, কোয়িলপট্টু ও তিরুমালারায়নপত্তনম গ্রামগুলির মালিকানা নেয়৷ এরই সাথে ফরাসিরা আরো দুটি গ্রাম লাভ করে৷ রাজসত্ত্বের যুদ্ধে বিজিত প্রতাপ সিং ১০০০০০ চক্র করের মূল্য একাধিক কিস্তিতে ভাগ করেন ও প্রথম কিস্তিতে ৪০০০ চক্র গ্রহণের বদলে আরো আটটি গ্রামের মালিকানা ফরাসিদের দেন৷ গ্রামগুলি হলো, কোণ্ডগাই, বঞ্জিয়ুর, আরিমুল্লিমঙ্গলম, নিরবী, ধর্মপুরম, উড়িয়াপট্টু, মাট্টকুড়ি (সম্ভবত মাতলণ্ডগুড়ি) এবং পোলাগাম৷ তারপর আবার ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই ফেব্রুয়ারি এই গ্রামগুলির মূল্য পূর্ববর্তী বছরের ৪০,০০০ চক্র মূল্যের বদলে ৬০,০০০ চক্র করা হয়৷
ঐ একই বছর প্রতাপ সিং তিরুনলারু মহানমের জন্য করবাবদ ৫৫৩৫০ চক্র নির্ধারণ করেন এবং ৬০,০০০ চক্রর বিনিময়ে আরো ৩৩টি গ্রামের মালিকানা দিতে রাজী হন৷ ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই জানুয়ারী প্রতাপ সিং ও ফরাসিদের মধ্যে হওয়া চুক্তিতে রাজা কারাইকলকে কেন্দ্র করে মোট ৮১টি গ্রামের মালিকানা তাদের দেন এবং ঐ গ্রামগুলির জন্য বার্ষিক ২০০০ পেগোডার করে অতিরাক্ত করমূল্য বাতিল করেন৷ ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের নিকট নতি স্বীকারের পূর্ব অবধি এই ছিলো তাঞ্জাবুর সাম্রাজ্যের নিকট ফরাসিদের দখলীকৃত অঞ্চল৷ এই অঞ্চল দুবার স্থানীয় রাজা ও ব্রিটিশদের শাসনাধীন থাকলে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের প্যারিস চুক্তি অনুসারে ঐ অঞ্চল ১৮১৬-১৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আবার ফরাসিদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়৷
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই জুন কারাইকল ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা ও ঐ বছরই আরো পূর্বে ৩১শে জানুয়ারী প্রতিষ্ঠিত ছাত্র কংগ্রেস সংগঠনই পরবর্তীকালে ফরাসি শাসনমুক্ত স্বাধীন কারাইকলের সূত্রপাতকে সূচিত করে৷ ফরাসিরা ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে অক্টোবর অবধি এই জেলার ওপর কর্তৃত্ব চালাতে সক্ষম ছিলেন৷ এর পর কারাআকলের সমস্ত সরকারী কার্যালয়গুলি থেকে ফরাসি ঔপনিবেশিকতার ধ্বজ নামিয়ে নেওয়া হয়৷ এই অনুষ্ঠানে দেশীয় সৈন্যবলসহ সরকারী বেসরকারী দেশি ও ফরাসি একাধিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ যোগদান করেন৷ ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কারাইকলের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় ও ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ১৬ই আগস্ট শাসন, আইনসহ সমস্ত সরকারী ব্যবস্থাপনা সরকারীভাবে হস্তান্তর করা হয়৷
কারিগর জেলা ১৫৭ বর্গকিলোমিটার আয়তন জুড়ে বিস্তৃত।[২]
পূর্বতন ফরাসি ভারত সাম্রাজ্যের অন্তর্গত কারাইকল বা কারিকল ছিল একটি উপকূলীয় ছিটমহল। অন্যান্য ছিট মহল তথা পুদুচেরি জেলার একাধিক ছিট মহল, ইয়ানম জেলা এবং মাহে জেলা নিয়ে গঠিত ছিল ফরাসি সাম্রাজ্যভুক্ত পুদুচেরি অঞ্চল,যা পরবর্তীকালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পায়। কারাইকল জেলার উত্তরে রয়েছে ময়িলাড়ুতুরাই জেলা, দক্ষিণে রয়েছে নাগপত্তনম জেলা এবং পশ্চিমে রয়েছে তিরুভারুর জেলা, প্রতিটিই তামিলনাড়ু রাজ্যে অন্তর্গত জেলা এছাড়া পূর্ব দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। ছিটমহলটি পুদুচেরি শহরের থেকে ১৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এবং সাংস্কৃতিক কারণে উল্লেখযোগ্য।
সাম্প্রতিককালে কারাইকল সর্বাধিক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৬শে ডিসেম্বর ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে হওয়া সুনামির জন্য। ওই সময় মরণ ঢেউয়ের কারণে জেলাটিতে প্রায় ৫০০ এবং ততোধিক মৎস্যজীবী এবং তাদের পরিবারের একাধিক সদস্য নিখোঁজ হন এবং মারা যান।
জেলাটির জলের উৎস মূলত কাবেরী নদী। কাবেরী নদীর মূলস্রোত গ্র্যান্ড আনিকটের দক্ষিণ দিকের শাখা কোড়ামুরুত্তি, আরাসালার, বীরচোলনার এবং বিক্রমনার উল্লেখযোগ্য। আরাসালার নদী এবং তার একাধিক শাখা নদী মূলত কারাইকলে বিস্তৃত হলেও কোড়ামুরুত্তি এবং বীরচোলনার নদী দুটি সেচের কাজে জন্য জলের যোগান দেয়।
কাবেরী নদীর কৃষি উর্বর বদ্বীপ এ অবস্থানের দরুন জেলাটির চতুর্দিকে কাবেরী নদীর শাখা নদীগুলি প্রবহমান। সামান্য উঁচু নিচু জমি, পলি পড়া মাটি এবং বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন পলির গভীরতাস্তর যুক্ত এই অঞ্চলটি মূলত সমতল ভূমি হলেও পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের দিকে সামান্য হেলানো। উত্তরে নন্দলার এবং দক্ষিণ-পূর্বে বেট্টার দ্বারা ইহা সীমাবদ্ধ। কডলুর জেলার শিলাময় ভূমি ধীরে ধীরে কারাইকল অঞ্চল অতিক্রম করে নাগপত্তনম জেলার দিকে বিস্তৃত।
২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে কারাইকল জেলার মোট জনসংখ্যা ২০০,২২২ জন,[৩] যা দ্বীপরাষ্ট্র সামোয়ার জনসংখ্যার সমতুল্য।[৪] জনগণনা চলাকালীন ভারতের ৬৪০ টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যার বিচারে এটি ৫৮৯তম স্থানে রয়েছে।[৩] প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জেলাটিতে ১২৭৫ জন তথা প্রতি বর্গমাইলে ৩৩০০ জন বাস করেন।[৩] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে মধ্যে জেলাটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৭.২৯ শতাংশ।[৩] জেলাটিতে প্রতি হাজার পুরুষে ১০৪৮ জন মহিলা বাস করেন এবং [৩] এর সাক্ষরতার হার ৮৭.০৫ শতাংশ, যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৯২.৩৭ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার ৮২.০২ শতাংশ।[৩]
জেলাটিতে তামিল ভাষাভাষীর লোক সংখ্যাগরিষ্ঠ হাওয়ায় তামিল ভাষায় এখানকার সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। কারাইকল-এর বিভিন্ন স্থানে শ্রীলঙ্কীয় তামিল জাতির উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। কারাইকালে ৭৬.২৩ শতাংশ জনসংখ্যা হিন্দু ধর্মাবলম্বী, ৯.১৯ শতাংশ লোক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, ১৪.৪০ শতাংশ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং ০.১৮ শতাংশ অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাস করেন। [৫]
কারিগরের মূল আকর্ষণ হলো শান্ত স্নিগ্ধ মনোরম সমুদ্রতট। যোগাযোগের সুবিধার জন্য তামিলনাড়ুতে পর্যটনে আসা একাধিক পর্যটক কারাইকলেও দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে আসেন। দিল্লিতে অবস্থিত একাধিক উল্লেখযোগ্য স্থান হল,
কারাইকল জেলায় রয়েছে নবনির্মিতকারাইকল বিমানবন্দর, কারাইকল রেলওয়ে স্টেশন এবং নাগুর রেলওয়ে স্টেশন।
Samoa 193,161