কাশীপুর | |
---|---|
কলকাতার অঞ্চল | |
কলকাতার মানচিত্রে কাশীপুরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৭′২৩″ উত্তর ৮৮°২২′৩০″ পূর্ব / ২২.৬২৩° উত্তর ৮৮.৩৭৫° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
মহানগর | কলকাতা |
জেলা | কলকাতা |
নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন | দমদম |
নিকটবর্তী শহরতলি রেল স্টেশন | দমদম জংশন |
পৌরসংস্থা | কলকাতা পৌরসংস্থা |
কলকাতা পৌরসংস্থার ওয়ার্ড | ১, ৬ |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
এলাকা কোড | +৯১ ৩৩ |
লোকসভা কেন্দ্র | কলকাতা উত্তর |
বিধানসভা কেন্দ্র | কাশীপুর-বেলগাছিয়া |
কাশীপুর হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের উত্তরাঞ্চলের একটি এলাকা। এটি কলকাতার একটি প্রাচীন জনবসতি। অঞ্চলটি কাশীপুর থানার অধীনস্থ।[১] কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্র এই অঞ্চলের বিধানসভা কেন্দ্র।
১৭১৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়রের কাছ থেকে তাদের কুঠি-সংলগ্ন আটত্রিশটি গ্রামের রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। এগুলির মধ্যে পাঁচটি গ্রাম হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অধুনা হাওড়া জেলার ভূখণ্ডের অন্তর্গত ছিল। বাকি তেত্রিশটি গ্রাম ছিল কলকাতার দিকে। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার পতনের পর ১৭৫৮ সালে কোম্পানি মিরজাফরের থেকে গ্রামগুলি কিনে নিয়ে পুনর্গঠিত করে। এই গ্রামগুলি একত্রে পরিচিত ছিল "ডিহি-পঞ্চান্নগ্রাম" নামে। কাশীপুর ছিল এই গ্রামগুলিরই অন্যতম। মারাঠা খাতের সীমানার বাইরে অবস্থিত এই অঞ্চলটিকে সেই সময় শহরতলি এলাকা হিসাবে গণ্য করা হত।[২][৩][৪]
এইচ. ই. এ. কটন লিখেছেন, "[হুগলি নদীর] কাশীপু্রের তীরবর্তী অংশটি নদীর তীরবর্তী সবচেয়ে সুন্দর অংশগুলির অন্যতম। এইখানে অনেকগুলি বাগানবাড়ি অবস্থিত। সেই যুগেই কাশীপুর একটি শিল্পাঞ্চল হিসাবে গড়ে ওঠে। এখানে স্থাপিত হয় গভর্নমেন্ট গান ফাউন্ড্রি, স্নাইডার ও রাইফেল শেল কারখানা (কর্নেল হাচিনসন কর্তৃক স্থাপিত) এবং একাধিক চিনিকল ও চটকল।[৫]
১৮৮৮ সালে এন্টালি, মানিকতলা, বেলগাছিয়া, উল্টোডাঙা, চিৎপুর, কাশীপুর, বেনিয়াপুকুরের কিয়দংশ, বালিগঞ্জ, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর এবং গার্ডেনরিচ ও টালিগঞ্জের কিয়দংশ কলকাতা পৌরসংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়। গার্ডেনরিচ এলাকাটিকে পরে কলকাতা থেকে আলাদা করা হয়েছিল।[৬]
কলকাতা পৌরসংস্থার ১ ও ৬ নং ওয়ার্ড দু’টি কাশীপুর অঞ্চলের আওতাভুক্ত। হুগলি নদীর ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট এই অঞ্চলে অবস্থিত। এগুলি হল কাশীপুর ঘাট, সাধুর ঘাট, রানির ঘাট, শ্রীরামকৃষ্ণ মহাশ্মশান ঘাট ও রতনবাবু ঘাট।[৭]
কাশীপুর থানাটি কলকাতা পুলিশের উত্তর ও উত্তর শহরতলি বিভাগের অন্তর্গত। থানার ঠিকানা ৫৮/এ, ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড, কলকাতা ৭০০০০২। কলকাতা পৌরসংস্থার ১ নং ওয়ার্ডটি এই থানার এক্তিয়ারভুক্ত।[৮][৯]
উত্তর ও উত্তর শহরতলি বিভাগের অন্যান্য সব থানাগুলির মতো কাশীপুর থানাটিও আমহার্স্ট স্ট্রিট মহিলা পুলিশ থানার এক্তিয়ারভুক্ত।[৮]
কলকাতা পৌরসংস্থার ১ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত কাশীপুর এবং ২ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত সিঁথি অঞ্চল কাশীপুর থানার অন্তর্গত। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ৯৬,০৪৩। এর মধ্যে ৫১,৪০১ জন পুরুষ ও ৪৪,৬৪২ জন মহিলা। এই অঞ্চলের দশকীয় বৃদ্ধির হার নেতিবাচক। ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত চিৎপুর অঞ্চলের কিছু অংশ কাশীপুর থানার অন্তর্গত।[১০]
১৮০২ সালে স্থাপিত কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি ভারতীয় উপমহাদেশের চালু কারখানাগুলির মধ্যে সর্বপ্রাচীন। এটি কাজ করে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিজ বোর্ডের অধীনে। প্রযুক্তিগত বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই কারখানাও উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে পরিবর্তন আনে এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক মানের অস্ত্র উৎপাদন করতে থাকে। বর্তমানে কারখানাটির আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। এখানে বড়ো ব্যারেল গান থেকে শুরু করে ছোটো ব্যারেল গান, বিভিন্ন ধরনের শেল, ফিউজ ও অসামরিক পণ্য সামগ্রী উৎপাদিত হয়।[১১][১২]
এই কারখানাটি চালু হয়েছিল গান ক্যারেজ এজেন্সি হিসাবে। এজেন্সিটি ১৮১৪ সালে প্রথমে এলাহাবাদে এবং পরে ১৮১৬ সালে ফতেহগড়ে স্থানান্তরিত হলে এই কারখানার গুরুত্ব কমে যায়। শেষে ১৮২৯ সালে কারখানার সকল যন্ত্রপাতি ফতেহগড়ে স্থানান্তরিত হয়। সেই সময় কারখানার শূন্য স্থান ব্যবহৃত হয় ফোর্ট উইলিয়ামের গান ফ্যাক্টরির অত্যাবশ্যকীয় সম্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য। ব্রাস গান উৎপাদনের পাশাপাশি এই কারখানায় আয়রন শট ও শেল উৎপাদনও শুরু হয়।[১১][১২]
১৮৫৫ সাল নাগাদ ব্রিটিশ বাহিনীতে ব্রিচ-লোডিং স্টিল রাইফেলড বন্দুকের ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু সেই সময় এই বন্দুক উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো কাশীপুরের কারখানাটির ছিল না। মিনি-বুলেট ফ্যাক্টরিটি দমদমে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। সেই সময় কাশীপুরে উৎপাদন কমে গেলেও কারখানাটি বন্ধ হয়নি। ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা রাইফেলড বন্দুকগুলির জন্য নতুন এলনগেটেড শেল প্রয়োজন হত। ঠিক হয় যে কাশীপুরের কারখানায় নতুন শেল তৈরি করা হবে। কারখানাটি সম্প্রসারিত হয় এবং ১৮৭২ সালে ‘গান ফাউন্ড্রি’র বদলে এই কারখানার নাম রাখা হয় ‘ফাউন্ড্রি অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি’। নতুন এলনগেটেড শেলের সঙ্গে সঙ্গে সদ্য-প্রচলিত ব্রিচ-লোডিং বন্দুকের উপযোগী আধুনিক ফিউজ ও কার্তুজের উৎপাদনও এই কারখানায় শুরু হয়। তাই ১৮৮৭ ও ১৮৯০ সালে দু’বার এই কারখানার সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছিল।[১১][১২]
১৮৯২ সালে ভারতে প্রথম ইস্পাত ঢালাই করা হয় কাশীপুরে সিমেন’স মার্টিন ওপেন হার্থ প্ল্যান্টে। ১৮৯৬ সালে একটি রোলিং মিল স্থাপিত হয়। অবশ্য ১৯০৩ সালে এই কারখানার ধাতুবিদ্যাগত ইউনিটটি ইছাপুরে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। কারণ সেই সময় কাশীপুরে সম্প্রসারণের উপযুক্ত জায়গা ছিল না। ১৮৯০ সালে আমদানি করা ব্রিচ-লোডিং বন্দুকের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলির উৎপাদন ও সারাইয়ের জন্য একটি দোকান খোলা হয়। ১৯০৫ সালে এই কারখানায় কুইক-ফায়ারিং বন্দুকের উৎপাদন শুরু হয়। বন্দুক উৎপাদন আবার শুরু হলে সেই বছরই কাশীপুরের ইউনিটটির নামকরণ করা হয় ‘গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি’। বর্তমানে কারখানাটি ওই নামেই পরিচিত।[১১][১২]
১৯৪৯ সালে সিইএসই কাশীপুরে বিদ্যুৎ জেনারেটিং কেন্দ্রটি স্থাপন করে। এটির বর্তমান ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট। এখানে দূষণ সৃষ্টি করে না এমন জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
রামকৃষ্ণ মঠের কাশীপুর শাখাটি কাশীপুর উদ্যানবাটী নামে পরিচিত।[১৩] এই বাগানবাড়িতে রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর জীবনের শেষ কয়েক মাস কাটিয়েছিলেন। এখানেই তাঁর মহাসমাধি হয়। ১৯৪৬ সালে এটি রামকৃষ্ণ মঠের শাখাকেন্দ্রে পরিণত হয়।[১৪] প্রতিবছর ১ জানুয়ারি এখানে মহাসমারোহে কল্পতরু উৎসব আয়োজিত হয়।[১৫]