কিট্টুর চেন্নাম্মা | |
---|---|
![]() | |
রাজত্ব | কিট্টুর, কর্ণাটক, ভারত |
পূর্বসূরি | রাজা মল্লসারজা |
জন্ম | ২৩শে অক্টোবর ১৭৭৮ কাকাতি, বেলাগাভি জেলা, কর্ণাটক |
মৃত্যু | ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৮২৯ বালি হোংগল দুর্গ |
সমাধি | বালি হোংগল তালুক |
স্বামী | রাজা মল্লসারজা |
কিট্টুর চেন্নাম্মা (১৭৭৮―১৮২৯) কোম্পানি শাসনামলে দেশীয় রাজ্য কিট্টুরের রানী ছিলেন।[১] তিনি ১৮২৪ সালে লাপসির মতবাদ অনুযায়ী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিট্টুর রাজ্য দখল করতে চাইলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। প্রথম দুইটি যুদ্ধে কোম্পানি ব্যর্থ হলেও তৃতীয় যুদ্ধে কিট্টুর চেন্নাম্মা পরাজিত হন ও তাকে বন্দি করা হয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী প্রথম দিককার নারী শাসকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাকে এখন কর্ণাটক রাজ্যে বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়।
১৭৭৮ সালের ২৩ অক্টোবর বর্তমান ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেলাগাভি জেলার কাকাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কিট্টুর চেন্নাম্মা। তিনি লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় থেকে এসেছিলেন। অল্প বয়সেই অশ্ব চালনা, তীর নিক্ষেপ, তরবারি চালনা প্রভৃতি সমরবিদ্যা শিখেছিলেন তিনি।
১৫ বছর বয়সে দেসাই পরিবারের রাজা মল্লসারজার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কিট্টুর চেন্নাম্মা।
১৮২৪ সালে এক পুত্র রেখে তাকে ছেড়ে তার স্বামী পরলোকগমন করেন। তাকে সামলাতে হয় কিট্টুর রাজ্য। সেই বছরেই তার পুত্রসন্তানের মৃত্যু ঘটে। পুত্রসন্তানের মৃত্যুর পর তিনি শিবলিঙ্গাপ্পাকে দত্তক নেন এবং কিট্টুর রাজ্যের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন।
বিষয়টি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুনজরে দেখে নি। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ডকট্রাইন অফ ল্যাপস নীতি অনুসরণ করার কথা বলেন। এই নীতি অনুযায়ী যদি কোন দেশীয় রাজ্যের শাসক নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান, বা তার কোন সন্তান যদি উত্তরাধিকারী হবার জন্য বেঁচে না থাকে, তবে সে রাজ্য কোম্পানি অধিগ্রহণ করবে।
এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজ্যটি অধিগ্রহণ করে ও প্রতিনিধি নিযুক্ত করে। রানী কিট্টুর চেন্নাম্মা বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বোম্বে প্রেসিডেন্সির তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাউন্টস্টুয়ার্ট এলফিনস্টোনের কাছে চিঠি পাঠান। কিন্তু, দুই পক্ষ সমঝোতায় না পৌঁছানোয় বিষয়টি যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়।[২]
বিশ হাজারের অধিক সৈন্য নিয়ে ব্রিটিশরা ঝাঁপিয়ে পড়ে কিট্টুর রাজ্যের সেনাবাহিনীর উপর।[৩] প্রথম যুদ্ধে ব্রিটিশরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ব্রিটিশদের রাজনৈতিক এজেন্ট সেন্ট জন থ্যাকারে যুদ্ধে নিহত হন।[২][৪] রানী চেন্নাম্মার সেনাবাহিনীর বীর লেফটেন্যান্ট আমাতুর বালাপ্পা অসাধারণ রণনৈপুণ্য প্রদর্শন করেন।[৫] স্যার ওয়াল্টার এলিয়ট ও স্টিভেনসন বন্দী হন এবং পরে রানী চেন্নাম্মার নির্দেশে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।[৪]
দ্বিতীয় যুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে সোলাপুরের সাব কালেক্টার মুনরো মারা যান।[৪] দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুদ্ধে রানী কিট্টুর চেন্নামা বন্দী হন এবং বালি হোংগল দুর্গে তাকে বন্দী করা হয়। সেখানেই ১৮২৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু ঘটে।[২]
রানী বন্দী হওয়া সত্ত্বেও তার লেফটেন্যান্ট সঙ্গোলি রায়ান্না রানীর পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যান। কিন্তু, রায়ান্না বন্দি হলে সব বিফলে যায়।[২] রানীর পালিত পুত্র শিবলিঙ্গাপ্পাকেও বন্দি করা হয়।[২][৬]
রানী কিট্টুর চিন্নাম্মার স্মৃতিকে ভুলে যায় নি কর্ণাটকের মানুষ। তার স্মৃতিতে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার প্রথম বিজয়কে উপলক্ষ করে প্রতি বছরের ২২-২৪শে অক্টোবর কিট্টুরে কিট্টুর উৎসব উদযাপিত হয়।
২০০৭ সালে ভারতের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল রানী কিট্টুর চেন্নাম্মার মূর্তি উন্মোচন করেন।[৭] মূর্তিটি নির্মিত হয়েছিল কিট্টুর রানী চেন্নাম্মা স্মৃতি কমিটির উদ্যোগে এবং এর নির্মাতা ছিলেন বিজয় গৌর।[৮]
এছাড়াও, বেঙ্গালুরু, বেলগাঁও ও কিট্টুরে তার মূর্তি আছে।[৯]
বালি হোংগল তালুকে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। কিট্টুর চেন্নাম্মার সমাধিসৌধ পড়ে আছে অবহেলায়।[৯]