কোষ্ঠকাঠিন্য (ইং: Constipation) একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হন না। সাধারণত: এক-দুই দিন পরপর মলত্যাগের বেগ হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশন কোষ্ঠকাঠিন্য বলে পরিচিত। ডাক্তারদের মতে কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায় তখনই এই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এ অবস্থায় পায়খানায় দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও মল পরিষ্কার হয় না। মল নরম করতে অনেকসময় রোগী জোলাপ ব্যবহার করেন। রোগীরা যতগুলো জোলাপ নেয় তার মধ্য Actilac খুব জনপ্রিয়। ডাক্তার বলেন যে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা সারাই করার পরিবর্তে কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সেভাবে চলাই শ্রেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য শনাক্ত করা কোন কঠিন বিষয় নয়। এই সমস্যায় সচরাচর যে লক্ষণগুলি দৃষ্টিগোচর হয় সেগুলি হলো: মল শুষ্ক, শক্ত ও কঠিন মল, মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা, মল ত্যাগের জন্য অনেক বেশি চাপের দরকার হওয়া, অধিক সময় ধরে মলত্যাগ করার পরও অসম্পূর্ণ মনে হওয়া, মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভব, এবং সাপোজিটরি বা অন্য কোনো উপায়ে মল নিষ্কাশনের প্রচেষ্টা।[১]
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শরীরে অনেক রকম রোগ হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সাধারণত: যে সব রোগে হয় সেগুলি হলো রক্তাল্পতা, অবসাদ(ক্লান্তি), অনিদ্রা, চোখে ব্যথা, চোখের নিচে কালি পড়া, মাথা ঘোরা, কোমর ব্যথা, ক্রমান্বয়ে আলস্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং মনোযোগ হ্রাস পাওয়া। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যত তীব্র হয়, রোগী তত বেশি দুর্বল ও হীনমন্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চর্ম রোগ হতে পারে;- যেমন, চুলকানি, মুখে ঘা, মেচেতা ইত্যাদি। এছাড়া ক্ষুধামন্দ,মুখে দুর্গন্ধ, পেটে গ্যাস ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ।
কোষ্ঠকাঠিন্য আপাত:দৃষ্টিতে জটিল রোগ না হলেও প্রতিকার না হলে এটি জটিল সমস্যায় রূপ নিতে পারে। প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ স্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের সচরাচর যে দুটি সমস্যা হয় তা হলো পাইলস ও এনালফিশার।, এছাড়া আরো যা হতে পারে তা হলো মানুষের মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকী কোন কোন ক্ষেত্রে দিনের পর দিন অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে মলাধার দেহের বাইরে চলে আসতে পারে যাকে বলা হয় রেকটাল প্রোল্যাপস। বা হতে পারে এমন যে খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লেগে যেতে পারে বা খাদ্যনালিতে আলসার বা ফুটো তৈরী হতে পারে। আর কোষ্ঠকাঠিন্য মানুষের মনে প্রচণ্ড চাপ ও অশান্তি সৃষ্টি করে।[২][৩]
বিভিন্ন কারণে মানুষের দেহে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। ডাক্তারদের মতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সচরাচর উৎস হলো
১। আঁশযুক্ত খাবার এবং শাকসবজি কম খাওয়া।
২। পানি কম খাওয়া।
৩। দুশ্চিন্তায় ভোগা।
৪। কায়িক পরিশ্রমের অভাব।
৫। অন্ত্রনালিতে ক্যানসার।
৬। ডায়াবেটিস।
৭। মস্তিষ্কে টিউমার ও রক্তক্ষরণ।
৮। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকা।
৯। ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ, পেট ব্যথার ওষুধ) ইত্যাদি।
এছাড়া ঋতু পরিবর্তনও কখনও কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এছাড়া, বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, যারা অতিরিক্ত চা বা কফি পান করেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাবনা বেশি। একই সাথে চর্বি জাতীয় ও আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের আশঙ্কা আছে। যারা পানি পানে কৃপণ তারাও এই সমস্যায় সহজে আক্রান্ত হতে পারেন।[৪]
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই লাভের উদ্দেশ্যে অনেকে মল নরম করার ঔষুধ ব্যবহার করেন যেমন ল্যাক্সেটিভ। এছাড়া মলদ্বারের ভেতরে দেওয়ার ঔষুধ আছে। এসব ঔষধের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারে স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগের অভ্যাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের মূল কারণ অপসারণের ওপর জোর দেয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ইসবগুল বা ভূসি ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে চিনি বা গুড়সহ নিয়মিত খালি পেটে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পদ্ধতি গ্রামে-গঞ্জে দীর্ঘকাল যাবৎ চালু আাছে। এছাড়া মিষ্টি পাকা বরই চটকে খোসা ও বীজ ফেলে অথবা ছেঁকে অল্প পানি মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম হয়। বেলের সরবতও উপকারী। ৩০-৩৫ গ্রাম পাকা বেলের শাঁস প্রতিবারে ১ গ্লাস পানিতে শরবত তৈরী করে দিনে ২ বার সেবন করতে হয়। এভাবে কমপক্ষে ৫-১০ দিন বেলের সরবাত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। বুচকি দানাও উপকারী। ২ গ্রাম পাতা চূর্ণ রাতে ঘুমানোর সময় গরম পানি অথবা দুধসহ সেবন করতে হবে। খারাপ লাগলে দই খেতে হয়।[৫]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; বাংলা হেলথ তথ্যতীর্থ
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি করা উচিত
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি