ক্যারিবীয় প্রবাল হাঙর | |
---|---|
![]() | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | Chondrichthyes |
উপশ্রেণী: | Elasmobranchii |
বর্গ: | Carcharhiniformes |
পরিবার: | Carcharhinidae |
গণ: | Carcharhinus |
প্রজাতি: | C. perezi |
দ্বিপদী নাম | |
Carcharhinus perezi (Poey, 1876) | |
![]() | |
Range of the Caribbean reef shark | |
প্রতিশব্দ | |
Eulamia springeri Bigelow & Schroeder, 1944 |
ক্যারিবীয় প্রবাল হাঙর (বৈজ্ঞানিক নাম: Carcharhinus perezi) কারকারিনিডি (Carcharhinidae) গোত্রের অন্তর্গত এক প্রজাতির রেকিয়াম হাঙর। পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া ক্যারিবীয় সাগরেও এদের দেখা যায়। অন্যসব রেকিয়াম হাঙরের মত এদের দেহ বেশ শক্তসমর্থ ও মসৃণ। ক্যারিবীয় প্রবাল হাঙরকে বিষন্ন হাঙর (Dusky shark) থেকে পৃথক করা খুবই কঠিন। এরা রেকিয়াম হাঙরের মধ্যে সবচেয়ে বড় শিকারী। এদের প্রধান খাদ্য মাছ ও অক্টোপাস জাতীয় প্রাণী।
একটি নারী ক্যারিবীয় প্রবাল হাঙর বছরে ৪-৬ টি শাবকের জন্ম দেয়। ক্যারিবীয় প্রবাল হাঙর কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ জেলেদের কাছে এই কারণে যে এদের থেকে মাংস, চামড়া, যকৃতের তেল ও মাছের খাবার উৎপাদন করা হয়। তবে এখন এটিকে পরিবেশ পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অনেকে এই হাঙরকে নিজের হাতে খাওয়াতে ভালবাসেন। মানুষের উপর এরা খুব কমই হামলা করেছে।
ক্যারিবীয় প্রবাল হাঙর আবিষ্কার করেন পোই, ১৮৭৬ সালে কিউবাতে। তিনি এটির নাম দেন Platypodon perezi । এর পর ১৯৪৪ সালে Bigelow এবং Schroeder ওই একই প্রজাতির হাঙরের নাম দেন Carcharhinus springeri । Carcharhinus এসেছে গ্রিক "karcharos" থেকে। বর্তমানে এটির বৈধ নাম হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে "C. perezi" নামটি। এই হাঙ্গর এর সাধারণ নাম ক্যারিবিয়ান রীফ শার্ক। অন্যান্য সাধারণ নাম গুলির ভেতর আছে, cabeza dura (স্প্যানিশ), Caribische rifhaai (ডাচ), রীফ হাঙ্গর, requin de récif (ফরাসি), tiburón (স্প্যানিশ), এবং tiburón coralino (স্প্যানিশ)।
ক্যারিবিয়ান রীফ হাঙ্গর পাওয়া যায় ক্যারিবিয়ান সাগর জুড়ে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলে। যেসব এলাকাতে এদের দেখা যায় তার ভিতর রয়েছে ফ্লোরিডা, বারমুডা, মেক্সিকোর উত্তর উপসাগরীয় এলাকা, ইউকাটান, কিউবা, জামাইকা, বাহামা, মেক্সিকো, পুয়ের্তো রিকো, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা এবং ব্রাজিল। এই হাঙর সব থেকে বেশি চোখে পড়ে বাহামা এবং এন্টিলসের আশেপাশে।
এই হাঙর সাধারণত অগভীর জলে বসবাস করে। অন্তত ৯৮ ফুট (৩০ মিটার) গভীরে যাওয়ার কথা রেকর্ড করা আছে। ক্যারিবীয় প্রবাল হাঙর সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় প্রবালদ্বীপের আশেপাশে। এছাড়াও সাগরের নিচে গতিশূন্য ভাবে এদের থাকতে দেখা যায়।
এদের লম্বিত নাক পরিমিতরূপে ছোট এবং বৃত্তাকার হয়। প্রথম পৃষ্ঠদেশীয় পাখন বেশ উচু হয় এবং এটি কাস্তের মতো বাঁকা হয়। প্রথম পৃষ্ঠীয় পাখনার ডগা গোলাকার ও কম সুচালো হয়। এদের দ্বিতীয় পৃষ্ঠীয় পাখনার ডগাটা খুব ছোট হয়। এদের উপরের রং গাঢ় ধূসর বা ধূসর-বাদামী হয় ও পেটের নিচের রঙ সাদা এবং সাদাটে-হলুদ হয়। এদের জোড়া পাখনার রং অনেকটা ধূসর হয়।
ক্যারিবিয়ান রীফ হাঙ্গরের উভয় মুখে ১১-১৩ টি দাঁতের সারি থাকে। এদের দাঁত বেশ সংকীর্ণ ও ধারালো হয়। প্রতিটি পাশের ২-৪ টি দাঁত খাড়া হয় এবং বাকিগুলো তেরছা হয়। এদের নিচের পাটির দাঁত সংকীর্ণ ও খাড়া হয়। শিকার ধরতে নিচের পাটির দাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সর্বাধিক এই ক্যারিবিয়ান রীফ হাঙ্গর ১১৬ ইঞ্চি (২৯৫ সেমি) বাড়ার রেকর্ড আছে। তবে ৬০ থেকে ৬৬ ইঞ্চি (১৫২-১৬৮ সেমি) একটি পুরুষ হাঙ্গর কে পরিপক্ব হাঙ্গর বলা যেতে পারে এবং নারী হাঙ্গরের সঠিক আকার হলো ৭৯-১১৬ ইঞ্চি (২০০-২৯৫ সেমি)। জন্ম হওয়ার পর পর এদের আকার থাকে ২৯ ইঞ্চি (৭৪ সেমি)।
আরো অনেক হাঙ্গরের মতোই Bony Fish (অস্থিময় মাছ) হলো এদের প্রধান খাবার। ঘ্রাণজ, চাক্ষুষ, স্পৃশ্য শ্রাবণ, রাসন, এবং ইলেক্ট্রিক রিসেপশন এই ছয়টা ক্ষমতা ব্যবহার করে এরা শিকার ধরে। এই হাঙর কম ফ্রিকোয়েন্সির ধ্বনি শনাক্ত করতে পারে। এই কারণে এরা লুকিয়ে থাকা শিকারও খুজে বের করতে পারে।
ক্যারিবিয়ান রীফ হাঙ্গর একটি জরায়ুজ প্রজাতি। অর্থাৎ এরা প্ল্যাসেন্টাল (ডিম্বকবাহী গর্ভপত্র - সংক্রান্ত) সংযোগ দ্বারা পরিপুষ্ট। নারী হাঙ্গর একবারে চারটি থেকে ছয়টি শাবকের জন্ম দেয়। এদের গর্ভকাল হল একবছর। জন্ম হওয়ার পর শাবকের আকার হয় ২৯ ইঞ্চি (৭৪ সেমি)।
ক্যারিবিয়ান রীফ হাঙ্গর মাঝে মধ্যে মানুষের উপর আক্রমণ করে বসে। মানুষ সাধারণত আচরণগত কারণেই এটির হামলার শিকার হয়। যদি মানুষের কারণে এই হাঙ্গর নিজেকে কোণঠাসা মনে করে বা পালাবার পথ খোলা না পেলে তখনই হামলা করে। তবে এরা হামলা করার আগে হুমকি প্রদর্শন করতে পারে।
অনেক সময় মানুষ এদের নমুনা নিতে গিয়ে হামলার শিকার হন। এর শুধুমাত্র ২২ টি হামলার কথা জানা গেছে, যার ভিতর ১১ টি হামলা মারাত্মক ছিল।
এই প্রজাতির হাঙ্গরকে খেতে দেওয়াকে ঘিরে অনেক জায়গাতে বেশ লাভজনক শিল্প গড়ে উঠেছে। এরা হাঙ্গরদের আকৃষ্ট করতে একধরনের টোপ ব্যবহার করে। বাহামায় বার্ষিক ৬.০০০.০০০ মার্কিন ডলার খরচ হয় শুধু এই কাজে।
তবে হাঙ্গরদের খেতে দেওয়া নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কেউ বলে হাঙ্গরদের খাবার দিলে তারা মানুষের উপর আক্রমণ কমাবে। বিরোধীরা যুক্তি দেন, এদের খাবার দিলে বাস্তুতন্ত্রের উপর খুব খারাপ প্রভাব পড়ে। হাঙ্গরদের খাওয়ানো ফ্লোরিডা উপকূলে বেআইনি করা হয়েছে। তবে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জতে এটি এখনো অব্যাহত আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুমতিবিহীন জেলেদের ক্যারিবিয়ান রীফ হাঙ্গর ধারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অনেক দেশে এটি শিকার করা অনুমোদিত। গত কয়েক দশকে এটি বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের থেকে মাংস, চামড়া, যকৃতের তেল ও মাছের খাবার উৎপাদন করা হয়। তবে এখন এটিকে পরিবেশ পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। খরিদ্দার বাড়াতে অনেকে ডুব নৌকা নিয়ে এদের খেতে দিতে যান।
ক্যারিবীয় প্রবাল হাঙর বর্তমানে ওয়ার্ল্ড কনসার্ভেশন ইউনিয়ন (IUCN) এর "কাছাকাছি হুমকির" ভিতর থাকা হাঙরের লাল তালিকায় যোগ হয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার মাছ শিকারিদের এটি শিকার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড কনসার্ভেশন ইউনিয়ন (IUCN) এবং সরকারী সংস্থা ও কিছু বেসরকারি সংস্থা অংশীদারত্বভাবে এই প্রজাতির সংরক্ষণে হাত বাড়িয়েছে।