ক্রমপ্রসারমাণ মহাবিশ্ব হল একটি পর্যবেক্ষণ যা অনুসারে মহাবিশ্বের প্রসারনের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে,[১][২] যার ফলে কোনো পর্যবেক্ষক থেকে দূরের ছায়াপথ গুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততর বেগে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। [৩]
১৯৯৮ সালে দুটি আলাদা প্রকল্প, সুপারনোভা কসমোলজি প্রজেক্ট ও হাই-জেড সুপারনোভা সার্চ টিম, দূরবর্তী Iএ ধরনের সুপারনোভার ত্বরণ পরিমাপের মাধ্যমে এই পর্যবেক্ষণ করে। [৪][৫][৬] এই ধরনের সব সুপারনোভা গুলির স্বকীয় ঔজ্জ্বল্য মোটামুটি সমান হয় (স্ট্যানডার্ড ক্যান্ডাল বা প্রমাণ মোমবাতিও বলা হয়) । যেহেতু দূরের বস্তু গুলির ঔজ্জ্বল্য কম মনে হয়, তাই এই সুপারনোভা গুলির ঔজ্জ্বল্য পরিমাপের মাধ্যমে তাদের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। এই দূরত্বকে তাদের বিকিরিত আলোকতরঙ্গের মহাজাগতিক লোহিত অপসরণের সাথে তুলনা করে এদের দূরে সরে যাবার হার নির্ণয় করা সম্ভব। [৭] এর ফলাফল হিসেবে পাওয়া যায় যে, মহাবিশ্বের প্রসারনের হার ক্রমশ ত্বরান্বিত হচ্ছে, যা আশা করা হয়নি। তৎকালীন মহাবিশ্বতাত্ত্বিকরা ভেবেছিলেন যে মহাবিশ্বে থাকা পদার্থের মহাকর্ষ বল এই প্রসারনকে ক্রমশ কমাবে। উপর্যুক্ত দুটি প্রকল্পের তিনজন সদস্যকে এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার দ্বারা সন্মানিত করা হয়। [৮] ব্যারিয়ন অ্যাকোস্টিক কম্পন (Baryon Acoustic Oscillation) ক্রিয়া এবং ছায়াপথ সমূহের পুঞ্জীভবন বিশ্লেষণ করে এর চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে।
যেহেতু ৫ বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্ব তমোশক্তি-অধীন যুগ এ প্রবেশ করেছে, তাই ভাবা হয় যে তখন থেকেই প্রসারনের হার ত্বরান্বিত হওয়া শুরু হয়। [৯][টীকা সমূহ ১] সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী ত্বরণ যুক্ত প্রসারনকে মহাজাগতিক ধ্রুবক Λ এর ধনাত্মক মান হিসেবে ধরা যায়, যা তমোশক্তি নামে সুপরিচিত একটি ধনাত্মক ভ্যাকুয়াম শক্তি থাকার সমতুল্য। কয়েকটি অন্য ব্যাখা থাকলেও এটিকেই ভৌত বিশ্বতত্ত্বের বর্তমান মডেলে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে শীতল তমোবস্তু (সিডিএম) ও রয়েছে এবং এটি ল্যামডা-সিডিএম নকশা নামে পরিচিত।
১৯৬৫ সালে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের আবিষ্কারের পরবর্তী কয়েক দশক ধরে [১০]মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বই হল মহাবিশ্বের বিবর্তন সম্পর্কে সর্বাধিক গৃহীত নকশা বা মডেল। ফ্রিদমান সমীকরণ গুলি মহাবিশ্বের অন্তর্গত শক্তি কীভাবে এর প্রসারনকে নিয়ন্ত্রণ করে তা ব্যাখ্যা করে।
ক্রান্তিয় ঘনত্ব হল
এবং ঘনত্ব প্যারামিটার হল
তাহলে হাবল প্যারামিটারকে এভাবে লেখা যায়
যেখানে মহাবিশ্বের শক্তি ঘনত্বের তাত্ত্বিক অনুমানকৃত চারটি অবদানকারী বিষয় হল - মহাবিশ্বের আকার বা বক্রতা, পদার্থ, বিকিরণ ও তমোশক্তি । [১২] মহাবিশ্বের প্রসারনের (বা স্কেল ফ্যাক্টরের বৃদ্ধির) সাথে সাথে তমোশক্তি বাদে বাকি তিনটি উপাদানের মান হ্রাস পেতে থাকে । এই উপাদান গুলির মান থেকেই পদার্থবিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের প্রসারনের ত্বরণের মান নির্ণয় করেন । ফ্রিদমান সমীকরণ গুলি সময়ের সাপেক্ষে স্কেল ফ্যাক্টরের বিবর্তন নির্দেশ করে
যেখানে চাপ P সংশ্লিষ্ট মহাবিশ্ব তাত্ত্বিক নকশা দ্বারা নির্ধারিত হয়। একসময় পদার্থবিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের মন্দীভবন সম্পর্কে এতই নিশ্চিত ছিলেন যে তারা মন্দীভবন প্যারামিটার q0 এর সূত্রপাত করেন। [১৩] বর্তমান পর্যবেক্ষণ গুলি যদিও এর বিপক্ষেই প্রমাণ দেয়।
মহাবিশ্বের প্রসারনের হার জানার জন্য আমরা প্রমাণ মোমবাতি ব্যবহার করে মহাজাগতিক বস্তু সমূহের ঔজ্জ্বল্য-লোহিত সরণ সম্পর্ক অথবা প্রমাণ মাপকাঠি (স্ট্যান্ডার্ড রুলার) এর সাহায্যে তাদের দূরত্ব-লোহিত সরণ সম্পর্ক অধ্যয়ন করি। বৃহৎ মাপের গঠন সমূহের বৃদ্ধি অধ্যয়ন করেও দেখা যায় যে মহাজাগতিক প্যারামিটার গুলির পর্যবেক্ষণলব্ধ মানগুলি সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দেয় সেই মডেল গুলি যেগুলির মধ্যে ক্রমপ্রসারমাণতা রয়েছে ।
ক্রমপ্রসারমাণতা সপক্ষে প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ১এ ধরনের সুপারনোভা অধ্যয়ন করে, যেগুলি হল আসলে স্থায়ীত্ব সীমা অতিক্রম করা শ্বেত বামন নক্ষত্র সমূহের বিস্ফোরণ । তাদের ভর প্রায় সমান হওয়ায় তাদের স্বকীয় ঔজ্জ্বল্যকে প্রমাণ ধরা যায়। আকাশের কোনো একটি অংশের বিভিন্ন সময়ের ছবি বিশ্লেষণ করে সুপারনোভা খুঁজে পাওয়া যায়, তারপরের পর্যবেক্ষণ গুলি থেকে তার চূড়ান্ত ঔজ্জ্বল্য বের করে তাকে ঔজ্জ্বল্য দূরত্ব (লুমিনোসিটি ডিসট্যান্স) নামক একটি রাশিতে পরিবর্তীত করা হয়। [১৪] তাদের নির্গত আলোর বর্ণালী রেখা বিশ্লেষণ করে লোহিত সরণ নির্ণয় করা যায় । যেসব সুপারনোভার লোহিত সরণ ০.১ এর কম, বা নির্গত আলো মহাবিশ্বের বয়সের ১০% এর কম সময় অতিবাহিত করেছে, হাবলের নীতি অনুযায়ী তারা প্রায় রৈখিক দূরত্ব-লোহিত সরণ সম্পর্ক দেখায়। বৃহৎ দূরত্বে যেহেতু মহাবিশ্বের প্রসারনের হার সময়ের সাপেক্ষে পরিবর্তীত হয়েছে, তাই এই সম্পর্ক আর রৈখিক থাকে না। এটি সময়ের সাপেক্ষে পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে। এর সম্পূর্ণ গণনার জন্য ফ্রিদমান সমীকরন গুলির সমাকলনের দরকার, কিন্তু সাধারণ ভাবে এরকম লেখা যায়: লোহিত সরণ z সরাসরি সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় মহাজাগতিক স্কেল ফ্যাক্টরের মান দেয়।
তাই z =০.৫ মানের লোহিত সরণ যুক্ত সুপারনোভার অর্থ হলো সেই সময় মহাবিশ্ব এর বর্তমান আকারের +১/১ + ০.৫ = +২/৩ অংশ ছিল। ক্রমপ্রসারমাণ মহাবিশ্বে, অতীতে প্রসারনের হার বর্তমানের চেয়ে কম ছিল, যার মানে বর্তমান আকারের +২/৩ অংশ থেকে বর্তমান আকারে পৌঁছাতে ক্রমপ্রসারমাণতাহীন মহাবিশ্বের চেয়ে বেশি সময় লাগবে । এর অর্থ আরোও বেশি আলোর সময় অতিক্রম, বেশি দূরত্ব এবং সুপারনোভার ক্ষীনতর ঔজ্জ্বল্য, যা বাস্তব পর্যবেক্ষণ গুলির সাথে সায় দেয়। অ্যাডাম জি. রেইস দেখেন যে, উচ্চ লোহিত অপসরণ যুক্ত ১এ ধরনের সুপারনোভা গুলির দূরত্ব, নিম্ম ভর ঘনত্ব ΩM = 0.২ যুক্ত এবং মহাজাগতিক ধ্রুবক বিহীন মহাবিশ্বে যা আশা করা যায় তার চেয়ে ১০% থেকে ১৫% বেশি। [১৫] এর অর্থ মন্দন যুক্ত মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে, উচ্চ লোহিত অপসরণ যুক্ত দূরত্ব গুলি কাছের গুলির তুলনায় অনেক বেশি । [১৬]
প্রারম্ভিক মহাবিশ্বে, পুনঃ সংযুক্তি ও বিযুক্তিভবন ঘটার আগে, ফোটন কণা ও পদার্থ একটি প্রারম্ভিক প্লাজমার (primordial plasma) মধ্যে অবস্থান করত। এই ফোটন-ব্যারিয়ন প্লাজমার উচ্চ ঘনত্ব যুক্ত বিন্দু গুলি মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সংকুচিত হত, যতক্ষণ না পর্যন্ত চাপ খুবই উচ্চ হত, এবং তারপর আবার প্রসারিত হত।[১৩][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] এই সংকোচন-প্রসারণ প্লাজমার মধ্যে শব্দ তরঙ্গের সমতুল্য কম্পনের সৃষ্টি করত। তমোবস্তু যেহেতু শুধুমাত্র মহাকর্ষীয় ক্রিয়া দেখায়, তাই এটি এই শব্দ তরঙ্গটির কেন্দ্রে অবস্থান করত, যা হল কিনা মূল অতিঘনত্ব বিশিষ্ট অঞ্চলের কেন্দ্র। মহাবিস্ফোরণের প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পর যখন বিযুক্তিভবন ঘটে,[১৭] ফোটন গুলি পদার্থ থেকে পৃথক হয় ও মহাবিশ্বের মধ্যে মুক্ত ভাবে বিচলন করতে সক্ষম হয় ও মহাবিশ্বের অনুতরঙ্গ পটভূমির জন্ম দেয়, আমরা যেরকম জানি। ইহা তমোবস্তুর অতিঘনত্ব বিশিষ্ট অঞ্চলগুলিকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধে ব্যারিয়নিক পদার্থের গোলকের সৃষ্টি করে। এই দূরত্বকে শব্দ দিগন্ত বলা হয়। সময়ের সঙ্গে মহাবিশ্বের প্রসারনের সাথে সাথে এগুলিই পদার্থ ঘনত্বের অসমসত্ত্বতায় পরিণত হয়, যেখানে ছায়াপথ সমূহের গঠন শুরু হয়। তাই যে দূরত্বে বিভিন্ন লোহিত অপসরণে ছায়াপথগুলি পুঞ্জীভূত হতে প্রবণতা দেখায়, তা পর্যবেক্ষণ করে একটি আদর্শ কৌনিক ব্যাস দূরত্ব নির্ণয় করা সম্ভব ও তার সাথে বিভিন্ন বিশ্বতাত্ত্বিক নকশায় ভবিষ্যতবাণী করা দূরত্ব গুলিকে তুলনা করা সম্ভব। সম্পর্ক অপেক্ষকের (correlation function) (দুটি ছায়াপথের একটি বিশেষ দূরত্বে থাকার সম্ভাবনা) চূড়াগূলি পাওয়া গেছে 100 h−1 Mpc দূরত্বে, যা ইঙ্গিত করে এটিই হল বর্তমানে শব্দ দিগন্তের আকার, এবং এর সাথে বিযুক্তিভবনের সময়ের শব্দ দিগন্তের আকারের তুলনা করে (সিএমবি এর সাহায্যে) আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে মহাবিশ্ব ক্রমপ্রসারমাণ। [১৮]
ছায়াপথ স্তবক সমূহের ভর অপেক্ষক -এর পরিমাপ, যা একটি ন্যূনতম ভর সীমার উপর থাকা ছায়াপথ স্তবক সমূহের সংখ্যা ঘনত্ব নির্দেশ করে, তমোশক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমাণ যোগায় । [১৯] উচ্চ ও নিম্ন লোহিত সরণে এই ভর অপেক্ষক গুলির মানের সাথে বিভিন্ন বিশ্বতাত্ত্বিক নকশায় ভবিষ্যতবাণী করা মানের তুলনা করলে w ও Ωm এর মান পাওয়া যায় যেগুলি একটি নিম্ন পদার্থ ঘনত্ব এবং অশূন্য মানযুক্ত তমোশক্তির অস্তিত্ব সুনিশ্চিত করে । [১৬]
মহাজাগতিক প্যারামিটার গুলির নির্দিষ্ট মান যুক্ত কোন একটি বিশ্বতাত্ত্বিক নকশা দেওয়া থাকলে ফ্রিদমান সমীকরন গুলির সমাকলনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের বয়স নির্ণয় করা যায়।
মহাজাগতিক প্যারামিটার গুলির বাস্তব মানের সাথে একে তুলনা করে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে মহাবিশ্ব ক্রমপ্রসারমাণ এবং অতীতে এর প্রসারনের হার মন্থর ছিল। [১৬]
তমোশক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হল এর ঋণাত্মক চাপ বর্তমান যা স্থানের মধ্যে তুলনামূলকভাবে সমসত্ত্ব ভাবে বিস্তৃত থাকে ।
যেখানে c হল আলোর বেগ ও ρ হল শক্তি ঘনত্ব । তমোশক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব গুলি w এর বিভিন্ন মানের ইঙ্গিত দেয়, সাথে মহাবিশ্বের ক্রমপ্রসারমাণতার জন্য w < −+১/৩ । (এটি উপরন্তু উপর্যুক্ত ত্বরণ সমীকরণে ä এর ধনাত্মক মানের জন্ম দেয় ) তমোশক্তি সম্পর্কে সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা হল এটি একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক অথবা ভ্যাকুয়াম শক্তি; এক্ষেত্রে w = −১ । এটি ল্যামডা-সিডিএম নকশায় উপনীত হয়, যা ২০০৩ থেকে এখনো পর্যন্ত বিশ্বতত্ত্বের আদর্শ নকশা হিসেবে খ্যাত, কারণ এটিই হল সরলতম নকশা যা বর্তমানে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে। রীস দেখেন যে সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ থেকে তাদের পাওয়া তথ্য ধনাত্মক মহাজাগতিক ধ্রুবক (Ωλ > 0) এবং প্রসারনের বর্তমান ত্বরণ (q0 < 0) সম্পর্কে যেসব বিশ্বতাত্ত্বিক নকশা গুলি ভবিষ্যতবাণী করে তাদের সাথে মিলে যায়। [১৫]
বর্তমান পর্যবেক্ষণ গুলি w < −১ অবস্থার সমীকরণ যুক্ত তমোশক্তি উপাংশ থাকা একটি বিশ্বতাত্ত্বিক নকশা থাকার সম্ভাবনার কথা বলে । এই ফ্যান্টম শক্তি ঘনত্বের মান একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অসীমে পরিণত হবে যেটি একটি বৃহৎ মাপের মহাকর্ষীয় বিকর্ষণের জন্ম দেবে যার ফলস্বরূপ মহাবিশ্বে থাকা সকল কাঠামো তার গঠন হারাবে, যা শেষ পর্যন্ত একটি বিগ রিপ এ দাঁড়াবে । [২০] উদাহরণস্বরূপ, w = −+৩/২ and H0 = ৭০ কিমি·সে−১·Mpc−১ এর জন্য, এই বিগ রিপ এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের অন্ত হবার আগে সময় লাগবে ২২ বিলিয়ন বছর । [২১]
ক্রমপ্রসারমাণ মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও অনেক গুলি বিকল্প ব্যাখ্যা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ কুইনটেসেন্স (Quintessence), যা হল অ-ধ্রুবীয় অবস্থা সমীকরন যুক্ত তমোশক্তির একটি অবস্থা, যার ঘনত্ব সময়ের সাপেক্ষে হ্রাস পায় । অন্য একটি বিকল্প ব্যাখ্যা হল তমোপ্রবাহী, যা তমোশক্তি ও তমোবস্তু কে একটিই কাঠামোর মধ্যে আনার চেষ্টা করে । [২২] বিকল্প হিসেবে কিছু বিজ্ঞানীর মতে মহাবিশ্বের ক্রমপ্রসারমাণতার কারণ হল বিকর্ষণধর্মী প্রতিপদার্থের মহাকর্ষীয় আন্তঃক্রিয়া[২৩][২৪][২৫] অথবা সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের মহাকর্ষীয় নীতিগুলি থেকে বিচ্যুতি। জিডব্লিউ১৭০৮১৭ (GW170817) নামক মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ঘটনা থেকে পরিমাপ করা মহাকর্ষের বেগ, তমোশক্তির বিকল্প ব্যাখ্যা হিসেবে মহাকর্ষের বিভিন্ন পরিবর্তীত তত্ত্বকে বাতিল করে দিয়েছে।[২৬][২৭][২৮]
ব্যাকরিয়্যাকশন অনুমান (backreaction conjecture) নামের অন্য একটি নকশার[২৯][৩০] ধারণা দেন বিশ্বতাত্ত্বিক সিসকি রাসানেন (Syksy Räsänen):[৩১] মহাবিশ্বের প্রসারনের হার সমসত্ত্ব নয়, বরং আমরা এমন একটি অঞ্চলে রয়েছি যেখানে প্রসারনের হার পটভূমির চেয়ে বেশি। আদি মহাবিশ্বের অসমসত্ত্বতার কারণে দেওয়াল ও বুদবুদের সৃষ্টি হয়, যেখানে বুদবুদের ভিতরে গড় মানের চেয়ে কম পদার্থ থাকে। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী এখানে স্থানের বক্রতা দেওয়াল গুলির চেয়ে কম, এবং সেজন্য মনে হয় যে এগুলির আয়তন বেশি ও প্রসারনের হার উচ্চ। অধিক ঘনত্ব যুক্ত অংশ গুলিতে উচ্চ মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে প্রসারনের হার মন্দীভূত হয়। সেজন্য, উচ্চ ঘনত্ব যুক্ত অংশ গুলির ভিতরের দিকে সংকোচন, ও বুদবুদ গুলির ত্বরণ যুক্ত প্রসারনকে একইরকম দেখায়, যা আমাদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত করে যে মহাবিশ্ব ক্রমপ্রসারমাণ।[৩২] এর সুবিধা হল যে এরজন্য তমোশক্তির মতো কোনো নতুন পদার্থবিজ্ঞান লাগে না। রাসানেন যদিও এই নকশাকে সম্ভাব্য বলে মনে করেন না, তবুও কোনো ত্রুটি না থাকায় এর একটি সম্ভাবনা রয়েই যায়। এরজন্য একটি উচ্চ ঘনত্ব বিচ্যুতির (২০%) প্রয়োজন।[৩১]
একটি চূড়ান্ত সম্ভাবনা হল যে তমোশক্তি হল পরিমাপের ত্রুটিজনিত একটি ভ্রমমাত্র। উদাহরণস্বরূপ আমরা যদি স্থানের মধ্যে সাধারণের চেয়ে অধিক শূন্য একটি অঞ্চলে অবস্থান করতাম, তাহলে পর্যবেক্ষণলব্ধ মহাবিশ্বের প্রসারনের হারকে সময় বা ত্বরণের ভিন্নতা হিসেবে ভুল করা যেতে পারত।[৩৩][৩৪][৩৫][৩৬] একটি ভিন্ন ধারণা ইকুইভ্যালেন্স নীতির বিশ্বতাত্ত্বিক পরিবর্ধন ব্যবহার করে দেখাতে যে আমাদের নিকটবর্তী ছায়াপথ স্তবক (লোকাল ক্লাস্টার) ঘিরে থাকা শূন্য অঞ্চল গুলিতে স্থানের কীভাবে প্রসারন ত্বরান্বিত হচ্ছে বলে মনে হয়। দুর্বল হলেও কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে চলা এই ক্রিয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, যা ক্রমপ্রসারমাণ মহাবিশ্বের ভ্রম সৃষ্টি করতে পারে, ও মনে হতে পারে যে আমরা একটি হাবল বুদবুদ এর ভিতর রয়েছি।[৩৭][৩৮][৩৯] আরও অন্যান্য সম্ভাবনা গুলি হল যে মহাবিশ্বের ক্রমপ্রসারমাণতা একটি ভ্রম যার কারণ মহাবিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সাপেক্ষে আমাদের আপেক্ষিক গতি,[৪০][৪১] অথবা ব্যবহৃত সুপারনোভা সমূহের সংখ্যা পর্যাপ্ত ছিলনা।[৪২][৪৩]
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে, বিকিরণ ও সাধারণ তমোবস্তুর ঘনত্ব, তমোশক্তির ঘনত্বের চেয়ে দ্রুততর ভাবে হ্রাস পায়, (দেখুন অবস্থার সমীকরণ) ও ক্রমেই তমোশক্তি আধিপত্য লাভ করে। নির্দিষ্ট করে বললে, যখন মহাবিশ্বের আকার দ্বিগুণ হয়, তখন পদার্থের ঘনত্ব আটভাগ কমে যায়, কিন্তু তমোশক্তির ঘনত্ব প্রায় অপরিবর্তিত থাকে (তমোশক্তি যদি মহাজাগতিক ধ্রুবক হয় তবে এটি একটি ধ্রুবক) । [১৩][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
যেসব বিশ্বতাত্ত্বিক নকশায় তমোশক্তি একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক, সেক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাবিশ্ব ক্রমশ এক্সপোনেন্সিয় ভাবে প্রসারিত হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি ডি-সিটার স্থানকালে উপনীত হয়। এর ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাবিস্ফোরণের সমস্ত প্রমাণ লোপ পাবে, কারণ মহাজাগতিক অনুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ ক্রমশ নিম্ন প্রাবল্য ও উচ্চ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের দিকে লোহিত অপসরিত হবে। ক্রমেই এর কম্পাঙ্ক এতই কম হবে যে এই বিকিরণ আন্তঃ নাক্ষত্রিক মাধ্যম দ্বারা শোষিত হবে ও ছায়াপথের মধ্যে থাকা যেকোনো পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি থেকে ঢাকা পড়ে যাবে। মহাবিশ্বের বর্তমান বয়সের ৫০ গুন বয়সের কম সময়ের মধ্যেই এটি ঘটবে, যা মহাবিশ্বের দূরবর্তী অংশ গুলির অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বতত্ত্ব বলে আমরা যা জানি, তার অন্ত ঘটাবে।[৪৪]
অশূন্য মানের মহাজাগতিক ধ্রুবক যুক্ত একটি ক্রমপ্রসারমাণ মহাবিশ্বের একটি ক্রমহ্রাসমান পদার্থ ঘনত্ব রয়েছে যা একটি অনিশ্চিত বিন্দু পর্যন্ত হ্রাস পেতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত পদার্থ ঘনত্বের মান শূন্যে পৌঁছায়। ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন দ্বারা গঠিত সমস্ত পদার্থ আয়নিত ও বিয়োজিত হবে, ফলস্বরূপ সমস্ত বস্তু ক্রমশ বিয়োজিত হবে।[৪৫]
মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি সম্পর্কে অন্যান্য তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে উপরে উল্লিখিত বিগ রিপ, তাছাড়া বিগ বাউন্স, বিগ ফ্রীজ, বিগ ক্রান্চ ও সম্ভাব্য প্রোটন ক্ষয়।