খুলনা | |
---|---|
জেলা | |
ডাকনাম: জাহানাবাদ | |
নীতিবাক্য: বাঘের গর্জন, সমৃদ্ধি ও অর্জন | |
বাংলাদেশে খুলনা জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°২১′ উত্তর ৮৯°১৮′ পূর্ব / ২২.৩৫০° উত্তর ৮৯.৩০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | খুলনা বিভাগ |
প্রতিষ্ঠা | ১৮৮১ |
সরকার | |
• জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট | মোঃ ইউসুপ আলী (ভারপ্রাপ্ত) |
আয়তন | |
• মোট | ৪,৩৯৪.৪৫ বর্গকিমি (১,৬৯৬.৭১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০২২[১]) | |
• মোট | ২৬,১৩,৩৮৫ |
• জনঘনত্ব | ৫৯০/বর্গকিমি (১,৫০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৮০.১১% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৯০০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৪০ ৪৭ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
খুলনা জেলা হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। অবস্থানগত কারণে এটি বাংলাদেশের একটি বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা।[২] খুলনা জেলা আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম জেলা। এটির জেলা শহর হলো খুলনা বিভাগের সদর দপ্তর। খুলনা জেলার দক্ষিণে অবস্থিত রয়েছে বঙ্গোপসাগর এবং এর নয়নাভিরাম সমুদ্রসৈকত। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন খুলনা জেলার দক্ষিনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। খুলনা জেলায় রয়েছে দুইটি পৌরসভা এবং একটি সিটি কর্পোরেশন। খুলনা জেলায় উপজেলার সংখ্যা হলো মোট ৯টি। এছাড়া বাংলাদেশের জেলাগুলোর মধ্যে দশম ধনী জেলা হলো খুলনা জেলা[৩] খুলনা জেলার অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবক হলো মৎস্য শিল্প যার কারণে জেলাটির গ্রামাঞ্চল জুড়ে ঘের বা মাছ চাষের বড় জলাধারের আধিক্য বিদ্যমান। এছাড়া জেলাটি শিল্প কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ।
প্রায় ৬০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচারক উলুঘ খানজাহান আলি এই জেলায় এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্য। তিনি প্রথমে সুন্দরবন এলাকা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অত্র অঞ্চলে তার বসতি স্থাপন করেন এবং বাগেরহাটের আশেপাশের এলাকায় তার শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবেই জনবসতি বাড়তে থাকে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে।
পরবর্তীতে ১৯৪৭ এ বঙ্গভঙ্গ এর সময় ভারত এর কবল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে খুলনা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং খুলনা বিভাগের প্রতিষ্ঠার পিছনে প্রধান ভূমিকা ছিল মরহুম খান এ সবুর এর।
শুরুতে ১৮৪২ সালে খুলনা এলাকাটি যশোর জেলার মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। পরবর্তীতে রূপসা নদীর তীরের নতুন উদীয়মান এই খুলনার ক্রমবর্ধমান ভৌগলিক গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় প্রশাসনিক সুবিধার্তে ১৮৮১ সালে খুলনাকে আলাদা জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। পরে অবকাঠামো নির্মাণ শেষে ১৮৮২ সালে সাতক্ষীরা মহাকুমাকে নতুন গঠিত এই খুলনা জেলায় যুক্ত করে খুলনা জেলা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ১২ ডিসেম্বর ১৮৮৪ খুলনা শহর কে পৌরসভা ঘোষণা করা হয় এবং ১২ ডিসেম্বর ১৯৮৪ সালে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়।এরপরে বিভাগীয় শহর খুলনা কে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৬ আগস্ট ১৯৯০ সাল থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।[৪]
খুলনা জেলার উত্তরে যশোর জেলা ও নড়াইল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বাগেরহাট জেলা, পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলা।
খুলনা জেলার উপজেলাগুলি হলো -
খুলনা জেলার অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে। এই জেলার জলবায়ু বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতই নাতিষীতোষ্ণ ও বৃষ্টিবহুল। খুলনা জেলার দক্ষিণে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ঢাল স্বরুপ অবস্থানের কারণে প্রলয়ংকারী অনেক ঘূর্ণিঝড় এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছু অংশে রক্ষা পায় খুলনা শহর সহ খুলনা জেলার জনবসতি।
২০২২ সালে সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী খুলনা জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২৬,১৩,৩৮৫ জন। যার মধ্যে পুরুষ ১,৩১১,৩৮৮ জন, মহিলা ১,৩০০,৬৯৮ জন ও হিজড়া ২২৮ জন।[১]
খুলনা জেলায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নদী। এখানকার নদীগুলো হচ্ছে রূপসা নদী, ভৈরব নদ, আতাই নদী, শিবসা নদী, পশুর নদী, কপোতাক্ষ নদ, নবগঙ্গা নদী, চিত্রা নদী, পশুর নদী, আঠারোবাঁকি নদী, ভদ্রা নদী, বুড়িভদ্রা নদী, শৈলমারী নদী, কাজিবাছা নদী, ডাকাতিয়া নদী, শাকবাড়িয়া নদী, কাঁকরী নদী, ঝপঝপিয়া নদী, তেলিগঙ্গা-ঘেংরাইল নদী, অর্পণগাছিয়া নদী, কুঙ্গা নদী, মারজাত নদী, মানকি নদী, বল নদী, নলুয়া নদী, ঘনরাজ নদী।[৫][৬][৭]
খুলনা জেলায় শিক্ষার হার ৮০.১১%।[৮] খুলনায় একটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে স্বনামধন্য কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনা জেলার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য রয়েছে:
বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনা শহরকে শিল্প নগরী হিসেবে ডাকা হয়।[৯] খুলনাকে বলা হয় রুপালি শহর। খুলনা নগরীর হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি শিল্পের কারণে খুলনা এই নামটি দ্বারা পরিচিত হয়েছে।[১০] এখন কৃষির দিক বাদ দিয়ে মানুষের শিল্পের দিকে ঝোক বেশি, তারপরও খুলনার গ্রামাঞ্চলে এখনো নোনা পানি, মিষ্টি পানির বিভিন্ন জাতের চিংড়ি, সাদা মাছ চাষ হচ্ছে। এই কারণে খুলনার গ্রামাঞ্চলে অনেক ঘের দেখতে পাওয়া যায়। খুলনায় বর্তমানে মাছ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে খুলনা মহানগরীতে মংলা সমুদ্র বন্দর যা কিনা দেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর এবং নোয়াপাড়া নদী বন্দর,দেশের সব থেকে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল এবং খুলনার নিজস্ব নদী বন্দরের বদৌলতে এবং পদ্মা সেতুকে ঘিরে খুলনায় একাধিক বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ায় খুলনাঞ্চলের অর্থনীতি শিল্প বাণিজ্য বেশ দ্রুত এগোচ্ছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পূর্বে খুলনায় সব থেকে বেশি ছিল পাটপাটজাত উৎপাদন শিল্প, তবে বর্তমানে সারা দেশের ন্যায় খুলনায়তেও পাটশিল্পের অবনতি হচ্ছে যদিও এখনো বড় বড় পাট শিল্পকারখানার মধ্যে সব কারখানা বন্ধ হয়নি, এখনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।কয়েকটি পাট শিল্প কারখানা পিপিপি এর ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে দেওয়ার কারণে অত্র অঞ্চলের শ্রমিক ও সাধারণ মানুষেরা নতুনভাবে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে।টিকে থাকা বড় পাট কলকারাখানা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্পিনিং মিলস (সেনহাটি) যা তার উৎপাদন রপ্তানি ও বাজারজাতকরণ ধরে রেখেছে সুনামের সাথে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বর্তমানে খুলনার উল্লেখযোগ্য শিল্প হলো বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা রপ্তানীযোগ্য চিংড়ী মাছ এবং হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি শিল্প। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তারশিল্প কারখানা বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড খুলনায় অবস্থিত। খুলনায় বর্তমানে সহজ উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, বন্দর সুবিধা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং পদ্মা সেতুকে ঘিরে বড় সব প্রকল্প হাতে নেওয়ায় খুলনায় অনেক শিল্প গড়ে উঠছে। নতুন গড়ে ওঠা শিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো সিমেন্ট শিল্প ও মংলা বন্দর কেন্দ্রিক বিভিন্ন শিল্প বিশেষ করে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট শিল্প।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এ ছাড়া খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া তে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য শিল্প বিদ্যমান রয়েছে যেমন মৃৎশিল্প,হস্তশিল্প ইত্যাদি। খুলনাঞ্চলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প হলো মাদুড় বা পাটি, এটি বেতের তৈরী একধরনের কার্পেট যা মাটিতে বসার ক্ষেত্রে কিংবা অন্যান্য হরেক কাজে লাগে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
জারি, সারি, কীর্তন, গাজীর গান, হালুই গান, মনসার ভাসান, ভাটি পূজার গান উল্লেখযোগ্য। কাবাডি, গোল্লললাছুট, হাডুডু, ঘোড়দৌড়, কানামাছি, লাঠিখেলা, কুস্তি, ডাংগুটি, নৌকাবাইচ, বাঘবন্দি, জোড়-বিজোড় প্রভৃতি খেলা এ অঞ্চলে এখনও প্রচলিত। বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠীর নাট্যচর্চাও এখানে পরিলক্ষিত হয়।
খুলনা থেকে যে সমস্ত প্রত্রিকা প্রকাশিত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: