গুঁড়িপানা | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | প্লান্টি (Plante) |
গোষ্ঠী: | ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes) |
ক্লেড: | সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস) |
গোষ্ঠী: | মনোকট্স (Monocots) |
বর্গ: | Alismatales |
পরিবার: | আরাসি (Araceae) |
গণ: | Wolffia (লিনিয়াস) হর্কেল এক্স উইমার |
প্রজাতি: | W. arrhiza |
দ্বিপদী নাম | |
Wolffia arrhiza (লিনিয়াস) হর্কেল এক্স উইমার |
গুঁড়িপানা (বৈজ্ঞানিক নাম: Wolffia arrhiza) পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম সপুষ্পক আবৃতবীজী সংবাহী উদ্ভিদ।[১][২][৩] এটি জলজ উদ্ভিদসমৃদ্ধ আরাসি পরিবারভুক্ত প্রজাতিক সদস্য। অ্যারাম বা পিস্টিয়া প্রভৃতি গণও এই পরিবারভুক্ত।
এটি ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি। এছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে অভিযোজিত উদ্ভিদ হিসেবেও পাওয়া যায়।[৪][৫] এটি এমন একধরনের জলজ উদ্ভিদ, যা সাধারণত শান্ত পানি যেমন পুকুরে জন্মে থাকে।
গুঁড়িপানা উদ্ভিদের সবুজ অংশ অর্থাৎ পাতা একটি চ্যাপ্টা গোলীয় তল, যা উদ্ভিদকে পানিতে ভাসতে সাহায্য করে। উদ্ভিদটি প্রস্থে ১ মিমি চওড়া। এতে মাত্র কয়েক সারি পত্ররন্ধ্র বিদ্যমান।[২] এতে কোনো মূল থাকে না। একটিমাত্র পুংকেশর ও গর্ভকেশরযুক্ত ফুল উৎপাদন করে। তবে প্রায়শই এর গোলাকার অংশ থেকে অঙ্গজ জননের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদ জন্ম নেয়।[২][৬] শীতকালে গুঁড়িপানা সুপ্তাবস্থায় চলে যায় এবং পানির তলদেশে স্টুরিওন বা কন্দ হিসেবে অবস্থান করে। স্টুরিওন হলো এক ধরনের রূপান্তরিত বিটপ যা থেকে শীতের শেষে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়।[৭] এই উদ্ভিদটি উভজীবী হিসেবে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যেমন নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারে, তেমনি পরিবেশ থেকে দ্রবীভূত কার্বন হিসেবেও শক্তি শোষণ করে।[৩]
এই ক্ষুদ্র উদ্ভিদটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। এর সবুজ অংশের শুষ্কভরের প্রায় ৪০% প্রোটিন এবং কন্দের ৪০% হলো শ্বেতসার।[৮][৯] এতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড, তুলনামূলক অধিক পরিমাণে ভোজ্য খনিজ লবণ ও পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্ক ও ভিটামিন বি১২ রয়েছে।[৯] সহজলভ্য ও সস্তা খাদ্য হিসেবে বহু আগে থেকেই বার্মা, লাওস ও থাইল্যান্ডে গুঁড়িপানা খাওয়ার চল রয়েছে। এসব দেশে উদ্ভিদটি খাই-নাম (পানির ডিম) নামে পরিচিত।[১০]
গুঁড়িপানা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। মাত্র ৩ থেকে ৪ দিনেই ভাসমান বেডে চাষ করা যায়। ইন ভিট্রো পদ্ধতিতেও মাত্র চারদিনে দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।[১১]
কৃষিক্ষেত্রে ও পৌর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় গুঁড়িপানা অত্যন্ত উপযোগী।[১২] চিংড়ি খামারের তরল বর্জ্য শোষণ ও আত্তীকরণের কাজে গুঁড়িপানা ব্যবহৃত হয়।[১৩] উদ্ভিদটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পানি থেকে বিপুল পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাস শোষণ করে।[৮] পয়ঃনিষ্কাশনে উৎপন্ন গুঁড়িপানা বিভিন্ন চাষযোগ্য প্রাণি, যেমন কার্পমাছ, নীলনদের তেলাপিয়া এবং মুরগির পরিপূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।[৭][১৪][১৫]