প্রবল ঘূর্ণিঝড় | |
---|---|
![]() ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় আইলা সর্বোচ্চ মাত্রায় রয়েছে | |
গঠন | ২১ মে ২০০৯ |
বিলুপ্তি | ২৬ মে ২০০৯ |
সর্বোচ্চ গতি | ৩-মিনিট স্থিতি: ১১০ কিমি/ঘণ্টা (৭০ mph) ১-মিনিট স্থিতি: ১২০ কিমি/ঘণ্টা (৭৫ mph) |
সর্বনিম্ন চাপ | ৯৬৮ hPa (mbar); ২৮.৫৯ inHg |
হতাহত | 339 |
ক্ষয়ক্ষতি | $1 বিলিয়ন (২০০৯ $) |
প্রভাবিত অঞ্চল | ভারত, বাংলাদেশ |
২০০৯ উত্তর ভারত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড় ঋতুর অংশ |
ঘূর্ণিঝড় আইলা হলো ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয়া দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়টি জন্ম নেয় ২১ মে তারিখে, ভারতের কলকাতা থেকে ৯৫০ কিলোমিটার (৫৯০ মাইল) দক্ষিণে। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে ২৫ মে তারিখে বাংলাদেশের[১] দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে।
ঘূর্ণিঝড় আইলা'র নামকরণ করেন মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা। 'আইলা' শব্দের অর্থ ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী। নামটি এই ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নির্ধারণ করেন জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা 'ইউএন এস্কেপ'-এর (UN Escape) বিজ্ঞানীরা।[২]
২১ মে ২০০৯ তারিখে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় আইলার এবং উপকূলভাগে আঘাত হানে ২৫ মে তারিখে। এর ব্যাস ছিলো প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে, তবে পরে বাতাসের বেগ ৮০-১০০ কিলোমিটার হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি, সিডরের তুলনায় তুলনামূলক কম হয়েছে।[২]
ভারতে আইলার প্রকোপে অন্তত ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়।[৩][৪][৫] এদের মধ্যে দু'জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং বাকি শতাধিক ব্যক্তি অতিবৃষ্টিজনিত বন্যায় আক্রান্ত হয়ে নিহত হন। প্রবল ঝড়ে সমস্ত অঞ্চল জুড়ে গাছ উপড়ে পড়ায় রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।[৬][৭] আটটি গ্রামের ১৫,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রবল বন্যায় ত্রাণ সরবরাহ প্রকল্প থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।[৮] ঝড়ের দাপটে কলকাতা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়।[৯] পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, কলকাতা এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়।[১০] সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে আইলার প্রভাবে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হন।[৫] অন্তত ১০০টি নদীবাঁধ ঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারা দেশে ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা ১,৫০,০০০-এর কাছাকাছি দাঁড়ায়।[১১] উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং-এ প্রবল বর্ষণে পাহাড়ে ধস নামায় ৬ জন নিখোঁজ এবং ২২ জন নিহত হন। ওই অঞ্চলে অন্তত ৫০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[১২] ন্যূনতম ৫০,০০০ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতির শিকার হয়, যার নির্ধারিত মূল্য ১২৫ কোটি টাকা (২৬.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। সারা রাজ্যে মোট ৪০,০০০ বাড়ি ধ্বংস হয় এবং এছাড়া ১,৩২,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্তত ৩,৫০,০০০ মানুষ আইলার দাপটে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন।[১৩][১৪] পরবর্তীকালে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে ১,৭৫,০০০ বাড়ি ধ্বংস হওয়ার ফলে ও ২,৭০,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ২৩,০০,০০০-এরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
ঘূর্ণিঝড় আইলা পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।[২] ঘূর্ণিঝড়ে খুলনা ও সাতক্ষীরায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়। ফলে খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ৭৬ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি এবং ৩৬২ কিলোমিটার বাঁধ আংশিকভাবে ধ্বসে পড়ে।[১৫]
ঘূর্ণিঝড়ের এক বছর পর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন[১৬] অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ নিম্নরূপ:
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দাকোপের ঢাকী নদীর তীর ও বাঁধ ভেঙ্গে তার বিস্তার বেড়েছে দক্ষিণে। এর ফলে ছোট জালিয়াখালি নামক গ্রামটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে, ফলশ্রুতিতে পাল্টে গেছে কামারখোলা ইউনিয়নের মানচিত্র। জালিয়খালি গ্রামের ৮০টি পরিবারের প্রায় ৫০০ জন মানুষ এখন উদ্বাস্তু (প্রেক্ষিত মে ২০১১)। উদ্বাস্তু এসব মানুষের কিছু অংশ (৬৩টি পরিবার) বাঁধের টিকে থাকা অংশে ঘর বেঁধে বসবাস করছেন। উদ্বাস্তুদের অনেকের কাঁচা ঘরের পাশাপাশি কারও কারও একতলা পাকা ভবনও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।[১৭]
সুন্দরবন অঞ্চল যা ২৬৫ টি বাংলার বাঘের আশ্রয় তা বিপন্ন হয়ে যায় এবং ৬.১ মিটার (২০ ফুট) জলের সঙ্গে প্লাবিত হয়।[১৮] আইলার প্রভাবে নিঝুম দ্বীপ এলাকার সকল পুকুরের পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়েছিল।
আইলা পরবর্তী উপকূল ভাগের মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। কারণ ঘূর্ণিঝড় আইলার রেশ কেটে গেলেও তার ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক এলাকায়। পুকুরে মিটিজলের বদলে লোনাজল। ফলে পানীয় জলের সংকট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। লোনা জলের আগ্রাসনে জমিতে উৎপাদন কমে গেছে। বছরে যেখানে দুবার কি তিনবার ফসল চাষ করা যেত, এখন (২০০৯) সেখানে মাত্র একবার ফসল চাষ করা যায়। অনেক এলাকায় মানুষ বিকল্প পন্থায় বাঁচার চেষ্টা করছে: মুরগি পালার বদলে মানুষজন হাঁস পালন শুরু করেছেন, লতানো জাতের পানি সহিষ্ণু গাছের চারা লাগাচ্ছেন, লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের ধানের প্রয়োজনে যোগাযোগ করছেন কৃষি অফিসে।[১৯]
আইলার এক বছর পরও (২০১০ খ্রিষ্টাব্দ) বিভিন্ন বাঁধের ভাঙন মেরামত না হওয়ায় জলবন্দী হয়ে পড়েছে বিপুল এলাকার মানুষ। কোনো কোনো গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কপোতাক্ষ আর খোলপেটুয়া নদীর জল। অনেকে জীবিকার প্রয়োজনে জঙ্গলে গিয়ে বাঘের হাতে মারা পড়ছে। লোনা জলের আগ্রাসনে খাবার পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে অনেক এলাকায়। এমনকি মানুষ অনুপাতে নলকূপের সংখ্যাও নিতান্ত কম।[১৫]
|coauthor=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য);
|তারিখ=
(সাহায্য)