পরিগণক চিত্রের আলোচনায় চিত্রায়ন (ইংরেজি: rendering) বা চিত্র সংশ্লেষণ (ইংরেজি: image synthesis) বলতে একটি পূর্বলিখিত পরিগণক নির্দেশসূচি (কম্পিউটার প্রোগ্রাম) ব্যবহার করে কোনও দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক প্রতিমান থেকে আলোকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বাস্তবানুগ বা অ-বাস্তবানুগ স্থির বা চলমান চিত্র উৎপাদন করার প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়।[১] এই প্রক্রিয়ায় যে চিত্রটি উৎপাদিত হয়, তাকে পরিগণক-উৎপাদিত চিত্র বলে। কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত ভাষা বা উপাত্ত কাঠামো দিয়ে বর্ণিত বস্তুসমূহ ধারণকারী একটি দৃশ্য নথি-তে একাধিক প্রতিমান সংজ্ঞায়িত থাকতে পারে। দৃশ্য নথিটিতে অসদ দৃশ্যটিকে বর্ণনাকারী জ্যামিতি, দৃষ্টিভঙ্গি, বুনট, আলোকসম্পাত ও ছায়া সংক্রান্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। দৃশ্য নথিতে ধারণকৃত উপাত্তগুলি এরপর একটি চিত্রায়ন প্রোগ্রামের কাছে হস্তান্তর করা হয়, যেটি এই উপাত্তগুলিকে প্রক্রিয়াজাত করে উৎপাদ হিসেবে একটি ডিজিটাল চিত্র বা রাস্টার চিত্রের চিত্রনথি বহির্গত করে।
সচল চিত্র বা ভিডিও সম্পাদনার ক্ষেত্রে একটি ভিডিও সম্পাদনা প্রোগ্রামে বিভিন্ন আবহ সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিগণনা সম্পাদনের প্রক্রিয়াটিকে বোঝানো হয়ে থাকে।
চিত্রায়ন কথাটি শিল্পকলা থেকে ধার নেওয়া হয়েছে, যেখানে চিত্রায়ন বলতে বাস্তব বিশ্বের কোনও দৃশ্যকে একজন চিত্রশিল্পী কীভাবে উপস্থাপন করেন, সে ব্যাপারটি নির্দেশ করা হয়।
চিত্রায়ন ত্রিমাত্রিক পরিগণক চিত্র শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপশাস্ত্র, এবং বাস্তব চর্চায় ঐ শাস্ত্রের অন্য সব উপশাস্ত্রের সাথে এটি সম্পর্কিত। এটি চিত্র নলধারার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যাতে প্রতিমান ও সচলচিত্রগুলিকে অন্তিম বাহ্যরূপ প্রদান করা হয়। ১৯৭০-এর দশক থেকে পরিগণক চিত্র শাস্ত্রের পরিশীলতার ক্রমাগত বৃদ্ধির সাথে সাথে চিত্রায়ন ধীরে ধীরে একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্রে পরিণত হচ্ছে।
স্থাপত্য নকশা প্রণয়ন, ভিডিও খেলা, ছদ্মায়ন, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে বিশেষ আবহদৃশ্য সৃষ্টস ও নকশার দৃশ্যায়নে চিত্রায়নের প্রয়োগ রয়েছে। এগুলির প্রতিটিতে চিত্রায়ন-সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও কৌশলসমূহের স্বতন্ত্র ভারসাম্যকৃত সমবায় ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বাজারে বহু বিচিত্র ধরনের চিত্রায়ক প্রোগ্রাম বিদ্যমান। কোনও কোনও চিত্রায়ক প্রোগ্রাম অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর প্রতিমান নির্মাণ ও সচলচিত্র নির্মাণ বাণ্ডিলে সমন্বিত থাকে, কিছু কিছু চিত্রায়ক প্রোগ্রাম স্বতন্ত্র বিক্রি হয়, আবার কিছু কিছু চিত্রায়ক প্রোগ্রাম বিনামূল্যে মুক্ত-উৎসের প্রকল্প হিসেবে বিতরণ করা হতে পারে। একটি চিত্রায়ক প্রোগ্রাম একটি যত্ন সহকারে প্রকৌশল-নির্মিত প্রোগ্রাম যেটিতে একাধিক শাস্ত্রের সম্মিলন ঘটে, যাদের মধ্যে আলোকবিজ্ঞান, দৃক-প্রত্যক্ষণ, গণিত ও সফটওয়্যার নির্মাণের নাম উচ্চার্য।
চিত্রায়ন পদ্ধতিগুলির কারগরি খুঁটিনাটি বিবরণে বৈচিত্র্য থাকতে পারে। তবে কোনও দৃশ্য নথিতে সংরক্ষিত ত্রিমাত্রিক উপস্থাপন থেকে পর্দায় প্রদর্শনযোগ্য একটি দ্বিমাত্রিক চিত্র উৎপাদন করার জন্য যে পরিগাণনিক সমস্যাগুলি সমাধা করতে হয়, সে ব্যাপারটি একটি চিত্রায়ক কলকৌশল যেমন একটি চিত্র প্রক্রিয়াজাতকারী যন্ত্রাংশ বা জিপিউ-তে অবস্থিত চিত্র নলধারাতে মোকাবেলা করা হয়। একটি চিত্র প্রক্রিয়াজাতকারী যন্ত্রাংশ হল এমন একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্মিত কলকৌশল যা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকারী যন্ত্রাংশটিকে চিত্রায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় জটিল পরিগণনাগুলি নির্বাহ করতে সাহায্য করে। যদি কোনও দৃশ্যকে অসদ আলোকসম্পাতের অধীনে মোটামুটি বাস্তবানুগ ও পূর্বাভাসযোগ্যরূপে প্রদর্শন করা আবশ্যক হয়, তাহলে চিত্রায়ক সফটওয়্যারটিকে অবশ্যই চিত্রায়ন সমীকরণটি সমাধান করতে হয়। চিত্রায়ন সমীকরণটি সব ধরনের আলোকীয় ঘটনাবলীকে হিসাবে ধরে না, বরং পরিগণক-উৎপাদিত দৃশ্যাবলীর জন্য একটি সাধারণ আলোকসম্পাত প্রতিমান হিসেবে কাজ করে।
ত্রিমাত্রিক চিত্রের ক্ষেত্রে দৃশ্যগুলিকে প্রাক-চিত্রায়িত করা হতে পারে কিংবা বাস্তবকালীনভাবে উৎপন্ন করা হতে পারে। প্রাক-চিত্রায়ন একটি ধীরগতির ও পরিগণনীয়ভাবে নিবিড় প্রক্রিয়া যা সাধারণত চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যবহার করা হয়, যেখানে চলচ্চিত্রটিকে প্রেক্ষাগৃহে অক্রিয় দর্শকের কাছে প্রদর্শনের অনেক আগেই দৃশ্যগুলি উৎপাদন করার সুযোগ থাকেব। অন্যদিকে যেখানে চিত্রায়িত দৃশ্যের সাথে দর্শক ব্যবহারকারী হিসেবে আন্তঃক্রিয়াশীল থাকে, যেমন ত্রিমাত্রিক ভিডিও খেলা বা অন্যান্য প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বাস্তব সময়ে প্রতি মুহূর্তে দৃশ্য পরিবর্তন করতে হয়, তাই সেসব ক্ষেত্রে বাস্তবকালীন চিত্রায়ন কৌশল অবলম্বন করা হয়। বাস্তবকালীন চিত্রায়নের কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য ত্রিমাত্রিক যন্ত্রাংশসামগ্রী ত্বরক ব্যবহার করা হতে পারে।