চিনলোন (বর্মী: ခြင်းလုံး, উচ্চারিত: [hkrang:lum:]), এটি ক্যানবোল নামেও পরিচিত, এটি মায়ানমারের ঐতিহ্যবাহী ও জাতীয় খেলা। এটি একটি অপ্রতিযোগিতামূলক খেলা এবং সাধারণত ছয় জন এক সাথে এক দল হিসাবে খেলে। ব্যবহৃত বলটি বেত দিয়ে হাতের মাধ্যমে তৈরি করা হয়, বলটিকে আঘাত করলে ঝুড়ির মত শোনায় । খেলাটি হ্যাকি-স্যাকের মতোই, কিন্তু এটির ক্ষেত্রে খেলোয়াড়রা একটি বৃত্তের মধ্যে একে অপরের মধ্যে বল পা দিয়ে প্রদান করে খেলেন।চিনলোনে, খেলোয়াড়েরা বল প্রদান করার সময় বৃত্তের কেন্দ্রস্থলে একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে হাটেন। খেলার মূল বিষয়টি হল বলটিকে মাটি স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখা এবং এ সময় যতটা সম্ভব সৃজনশীলতার সাথে একে অপরকে বল প্রদান করা। চিনলোন খেলাটি পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা একসাথে খেলতে পারে।[১]
চিনলোন প্রায় ১,৫০০ বছর ধরে মায়ানমারে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। এটির ধরন প্রদর্শন-ভিত্তিক কারণ এটি প্রথম বার্মিজ রয়্যালটি বিনোদন দেওয়ার ক্রিয়াকলাপের মাধ্যম হিসাবে তৈরি হয়েছিল। চিনলোন বার্মিজ মার্শাল আর্ট এবং নৃত্য দ্বারা প্রভাবিত। চিনলোনের আসল রূপ ছাড়াও একক প্রদর্শন রয়েছে যাকে তানপানডিং বলা হয়। যদিও চিনলোনকে ইউরোপীয়রা খেলাধুলার চেয়ে একটি প্রদর্শন হিসাবে বিবেচনা করেন। ১৯১১ সালের, চিনলোন দলগুলি ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রর্দশনী করেছিল।
১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পরও, ব্রিটিশ প্রভাব এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলন দীর্ঘস্থায়ী ছিল, যেমন ব্রিটিশ ক্রীড়া যেমন ক্রিকেট এবং পোলো সহ। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ প্রভাবশালী সংস্কৃতি এখনও বার্মিজ জীবনের উপর ভারী প্রভাব ফেলছে। ১৯৬০ এর দশক থেকে দেশীয় সাংস্কৃতিক অহংকার পুনর্নবীকরণের প্রয়াসে বার্মিজ সরকার তাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণে জোড়ালো প্রচার করেছিল।[২] চিনলোন বার্মিজ জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় মূল ভূমিকা পালন করে।[৩]
বার্মা অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উ আহে ইয়াইনকে ১৯৫৩ সালে চীনলোনের জন্য একটি নীতিমালা তৈরির আদেশ করা হয়েছিল। এই নিয়মগুলি চিনলোনকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করেছে এবং একই বছর ইয়াঙ্গুনে প্রথম সরকারী চিনলোন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চিনলোন বার্মিজ ঐতিহ্যে সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফিরে আসে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের খেলা যেমন দা কৌ (ভিয়েতনাম), কেটার (লাওস), সিপাক রাগ (মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়ায়), সিপা (ফিলিপাইন) এবং তাক্রাও (থাইল্যান্ড) এটির সাথে সম্পর্কিত।[৪]
২০১৩ সালের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় গেমসটি মায়ানমারে ১৯৬৯ সালের পর প্রথম নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চিনলোন প্রতিযোগিতার মধ্যে একটি পৃথক খেলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, এবং সমাপনী অনুষ্ঠানেও প্রদর্শিন করা হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় গেমসে চিনলোনের অন্তর্ভুক্তি বিতর্কিত ছিল, কারণ অন্য দেশগুলি বর্মী খেলাটিতে অংশ নিতে যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না।[৫]