চৈতি ঘোড়া হল ভারতের উড়িষ্যা বা ওড়িশা রাজ্যের এক জনপ্রিয় লোকনৃত্য। এই নৃত্যশৈলী বিশেষভাবে কেওট বা কৈবর্ত উপজাতির মতো আদিবাসী জেলেদের দ্বারা পরিবেশিত হয়।[১] চৈতি শব্দের অর্থ হল চৈত্র মাস যা ওড়িশার স্থানীয় ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের শেষ মাস। চৈত্র মাসের অবধি হল চলতি ইংরেজি ক্যালেন্ডার -এর মার্চ থেকে এপ্রিল মাস।চৈত্র মাসে আর ঘোড়া এই দুটি অর্থের সমন্বয়ে চৈতি ঘোড়া কথাটির উৎপত্তি।[২]
চৈতি ঘোড়া লোকনৃত্য -এর উদ্ভাবনের প্রচলিত গল্প অনুসারে যখন ভগবান রাম একবার নদী পার হতে চেয়েছিলেন তখন কৈবর্ত উপজাতির আদিবাসী জেলেরা তাকে সাহায্য করেছিল। তাদের এই উপকারের বিনিময়ে ভগবান রাম স্বয়ং জেলেদের একটি ঘোড়া দিয়ে তাদের সম্মানিত করেছিলেন।[৩] সেই পুন্য ঘটনাকে স্মরন করতেই চৈতি ঘোড়া নৃত্যশৈলীর উদ্ভাবন।
চৈতি ঘোড়া নৃত্য পরিবেশনার সময় একটি নকল পুতুল ঘোড়া ব্যবহার হয়। এই নকল ঘোড়ার কাঠামো তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। তারপর সেই কাঠামোয় আকর্ষক রঙ করা হয় ও তাকে বিচিত্র বর্ণের কাপড় দিয়ে আবৃত করে সজ্জিত করা হয়। তারপর এই ঘোড়ার পুতুল নাচের সময় ব্যবহার হয়। এই চৈতি ঘোড়া নৃত্য পরিবেশনায় মূলত কৈবর্ত উপজাতির আদিবাসী জেলেরা প্রধান নর্তক হিসাবে অংশ নেয়। জেলেদের স্ত্রীরাও সহকারী নর্তক হিসাবে নাচে অংশ নেয় অথবা তারা নৃত্য পরিবেশনার সময় গান গেয়ে সংগত দেয়। এই নৃত্যে অংশগ্রহনকারী পুরুষদের রাউতা বলা হয় এবং নারীদের রাউতানি বলা হয়।
এই নৃত্যে একটি কালো ঘোড়ার পুতুল ও একটি সাদা ঘোড়ার পুতুল ব্যবহার হয়।[৪] কৈবর্ত মতস্যজীবিদের আরাধ্য দেবতা হলেন বাসুলী দেবী।[৫] এই বাসুলী দেবীর আশীর্বাদ লাভ করতে তারা এই নৃত্য পরিবেশন করে। বাসুলী দেবীর সম্মানে তারা এই উৎসব ৮ দিন ধরে পালন করে।