জয়রামবাটী | |
---|---|
গ্রাম/তীর্থস্থান | |
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে জয়রামবাটীর অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৫৫′২৩″ উত্তর ৮৭°৩৬′৩৬″ পূর্ব / ২২.৯২৩° উত্তর ৮৭.৬১° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | বাঁকুড়া |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
ওয়েবসাইট | kamarpukurjayrambati |
জয়রামবাটী হল পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত বিষ্ণুপুর মহকুমার কোতুলপুর থানার একটি গ্রাম। ১৮৫৩ সালে জয়রামবাটী গ্রামে রামকৃষ্ণ পরমহংসের পত্নী সারদা দেবীর জন্ম হয়েছিল।[১] রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীদের কাছে এই গ্রামটি তাই একটি তীর্থস্থানের মর্যাদা পায়।
জয়রামবাটী গ্রামটি রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্মস্থান কামারপুকুর গ্রাম থেকে ৩ মাইল পশ্চিমে। বিষ্ণুপুর ও আরামবাগ শহর দুটি এই গ্রাম থেকে যথাক্রমে সাতাশ মাইল ও বারো মাইল দূরে অবস্থিত। গ্রাম থেকে আধ মাইল দূরে অবস্থিত আমোদর নদ। এটি মূলত কৃষিভিত্তিক একটি গ্রাম।
সারদা দেবীর বাসভবনটি বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধীনস্থ। বাসভবনটি একটি মঠে রূপান্তরিত করা হয়েছে। মঠটির নাম "মাতৃমন্দির মঠ, জয়রামবাটী"। এই মঠের মধ্যে আছে মাতৃমন্দির, মায়ের পুরাতন বাটী ও নূতন বাটী, পূর্ণপুকুর ও সুন্দরনারায়ণ ধর্মঠাকুরের মন্দির।
"মাতৃমন্দির" হল মাতৃমন্দির মঠের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সারদা দেবীর মন্দির। ঠিক যে স্থানটিতে সারদা দেবীর জন্ম হয়, সেই স্থানটির উপর এই মন্দিরটি নির্মিত হয়।
সারদা দেবীর আদি বাড়িটি এই জমিখণ্ডের উপরেই ছিল। সেই বাড়িতে তিনি নয় বছর বয়স পর্যন্ত বাস করেছিলেন। এখানেই রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়।[২] স্বামী সারদানন্দ ১৯২৩ সালের ১৯ এপ্রিল (হিন্দু উৎসব অক্ষয় তৃতীয়ার দিন) মাতৃমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে মন্দিরে সারদা দেবীর একটি তৈলচিত্র পূজা করা হত। ছবিটি সারদা দেবীর শিষ্য ললিতমোহন চট্টোপাধ্যায় লন্ডন থেকে আঁকিয়ে এনেছিলেন। সারদা দেবী নিজেও সেই ছবিটি পূজা করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৫৪ সালে সারদা দেবীর জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানের সময় ছবির পরিবর্তে একটি শ্বেতপাথরের মূর্তি স্থাপিত হয়।
(http://belurmath.org/centres/display_centre.php?centre_id=JYR).
ছবিটি এখন বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ সংগ্রহশালায় রাখা আছে।[২]
বর্তমানে পূজিত শ্বেতপাথরের মূর্তিটির তলায় সারদা দেবীর দেহাবশেষ রক্ষিত আছে। মন্দিরের সামনের প্রার্থনা কক্ষটিও সারদা দেবীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নির্মিত হয়। মাতৃমন্দিরের চূড়ায় বাংলায় "মা" শব্দটি লেখা একটি পতাকা সবসময় ওড়ে।[২]
"মায়ের পুরাতন বাটী" মাতৃমন্দির মঠের প্রধান প্রবেশদ্বারের বাঁদিকে অবস্থিত। এটি সারদা দেবীর পুরনো বাড়ি। ১৯১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫২ বছর সারদা দেবী এই বাড়িতে বাস করেছিলেন। এখানে তার অনেক গৃহী, ব্রহ্মচারী ও সন্ন্যাসী ভক্ত তার কাছ থেকে দীক্ষা পেয়েছিলেন।[২]
"মায়ের নূতন বাটী" মাতৃমন্দির মঠে অবস্থিত সারদা দেবীর নতুন বাড়ি। মঠের প্রধান প্রবেশদ্বারের পাশে একটি ছোটো দরজা দিয়ে নতুন বাড়িতে প্রবেশ করা যায়। এই অংশে অনেকগুলি ঘর দেখা যায়। এর মধ্যে বাঁদিকের প্রথম ঘরটিতে সারদা দেবী ১৯১৫ সালের মে মাস থেকে ১৯২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাস করেন। এই ঘরেও তার অনেক গৃহী, ব্রহ্মচারী ও সন্ন্যাসী ভক্ত তার কাছ থেকে দীক্ষা পেয়েছিলেন। পাশের ঘরটিতে সারদা দেবীর ভ্রাতুষ্পুত্রী নলিনী দেবী বাস করতেন। নলিনী দেবীর ঘরের উল্টোদিকের ঘরটিতে সারদা দেবীর জীবদ্দশায় জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হত।[২]
মাতৃমন্দিরের উল্টোদিকে পূর্ণপুকুর নামে একটি পুকুর আছে। এই পুকুরের জল সারদা দেবী ব্যবহার করতেন। তাই তার ভক্তদের কাছে এটি একটি পবিত্র পুকুর।
পুন্যিপুকুরের পাশে একটি ছোটো ঘরে সারদা দেবীর গৃহদেবতা সুন্দরনারায়ণ ধর্মঠাকুর পূজিত হন। আগে এখানে শীতলা ও শালগ্রাম শিলাও পূজা করা হত। পরবর্তীকালে এই মন্দিরে আরও কিছু দেবদেবীর মূর্তি ও ছবি স্থাপন করা হয়।[২]
জয়রামবাটী গ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সারদা দেবীর সঙ্গিনী "ভানুপিসি"-র বাড়ি, সিংহবাহিনী মন্দির, যাত্রাসিদ্ধিরায় মন্দির, বাঁডুজ্জ্যে পুকুর, মায়ের ঘাট ও আমোদর নদ।
"ভানুপিসি" নামে জনৈকা রমণী ছিলেন সারদা দেবীর ছোটোবেলার সঙ্গিনী। সারদা দেবীর নতুন বাড়ির কাছেই তার বাড়ি ছিল। সারদা দেবী তার বাড়ি গিয়ে মাঝে মাঝেই সময় কাটাতেন। রামকৃষ্ণ-ভক্তদের বিশ্বাস, ভানুপিসি রামকৃষ্ণ পরমহংসকে অবতার ও সারদা দেবীকে মহাশক্তি বলে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। তার বাড়িটি এখন না থাকলেও, যে জমির উপর তার বাড়ি ছিল, সেটি বর্তমানে একটি শ্বেতপাথরের ফলকের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে।[২]
জয়রামবাটী মাতৃমন্দির মঠের কাছে সিংহবাহিনী দেবীর মন্দির অবস্থিত। সিংহবাহিনী জয়রামবাটীর গ্রাম্য দেবী। ইনি দুর্গার একটি রূপ। এই মন্দিরে কোনো দেবীর পূর্ণাঙ্গ মূর্তি নেই। শুধু সিংহবাহিনী দুর্গা, মহামায়া, চণ্ডী ও মনসার ধাতব মুখ পূজা হয়। সারদা দেবী বহুবার এই মন্দিরে পূজা দিয়েছিলেন। এই মন্দিরের মাটি স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাসে পবিত্র এবং ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত।[২]