জাইপোংগান বা জাইপং ইন্দোনেশিয়ার সুদানিজ জনগণের একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। ঐতিহ্যবাহী সুদানিজ কেতুক তিলু সঙ্গীত এবং পেনকাক সিলাটের দেহ সঞ্চালনার সমন্বয় ঘটিয়ে গুগুম গুম্বিরা এই নৃত্যধারাটি রচনা করেছিলেন।
গুগুম গুম্বিরা ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং-এ বসবাসকারী একজন সুদানিজ সুরকার, নৃত্যকার এবং উদ্যোক্তা। ১৯৬১ সালের পর, যখন ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুকর্ণ নিজদেশে সকল প্রকার পশ্চিমী সঙ্গীত নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং জনগণকে তাদের সাংস্কৃতিক সঙ্গীত পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তখন গুগুম গুম্বিরা এই নৃত্যশৈলীর সূচনা করেন। এটি করার জন্য তিনি বারো বছর ধরে গ্রামীণ উৎসব, নৃত্য ও সঙ্গীত -এর বিবিধ শৈলীর পর্যবেক্ষণ এবং অধ্যয়ন করেছিলেন। ফলস্বরূপ তিনি এই জাইপোংগান নৃত্যশৈলী রচনা করেন। তিনি ইন্দোনেশিয়ায় জুগালা নামে একটি নিজস্ব রেকর্ডিং স্টুডিও তৈরি করেন।
তিনি বর্তমানে জুগালা নামে একটি রেকর্ডিং স্টুডিওর মালিক যেখানে তিনি তার অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করেন যা জুগালা নামে পরিচিত। একই নামের তার একটি নৃত্য দলও আছে। তারা বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করে ও তাদের সংগীত ও নৃত্যকলা প্রদর্শিত করেন।
জাইপোংগান বা জাইপং পশ্চিম জাভা ও ইন্দোনেশিয়ার সুদানীজ জনগণের একটি সঙ্গীত পরিবেশন ধারা। জাইপোংগানে গেমলানের মতো পুনরুজ্জীবিত আদিবাসী শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় রক অ্যান্ড রোলের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এটি পশ্চিমী সঙ্গীতকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেনি। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য সঙ্গীত ও নৃত্য যাতে কেতুক তিলুর কামুকতার বৈশিষ্ট্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে এটির উৎস এবং শৈলী সম্পূর্ণরূপে ইন্দোনেশিয়ান বা সুদানিজ সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত। এটি মূলত গ্রামী বিশুদ্ধ লোকজ শিল্পের রূপ এবং ঐতিহ্য থেকে উদ্ভাবিত আদিবাসী শিল্প হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ক্যাসেট এবং চলচ্চিত্রের উত্থানের ফলে জাইপোংগানে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এই নৃত্যশিল্প পশ্চিম জাভার সুন্দার বাড়ি অঞ্চল থেকে বৃহত্তর জাভা এবং ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলের এক বিশেষ শিল্প নির্দেশনা গং-চাইম পরিবেশনার অন্তর্গত হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। কেতুক তিলুর মত ঐতিহ্যবাহী সুদানী সাংগীত ও বিনোদন পরিবেশনার সবচেয়ে বড় প্রভাব এই শৈলীতেই দেখা যায়।
জাইপোংগান আসলে "কেতুক তিলুর আরও চটকদার এবং প্রসারিত সংস্করণ"।[১]
জাইপোংগান পরিবেশনাকালে বেশিরভাগ সময় কেতুক তিলুতে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। কেতুক তিলুর বাদ্যযন্ত্র পট-গঙ -এর সমন্বয়ে গঠিত। কেতুক এই শব্দের মানে হল ঠক ঠক শব্দ এবং তিলু কথার অর্থ হল তিনটি। কেতুক তিলু এই শব্দের মাধ্যমে তিনটি গং বাদ্যযন্ত্রকে উল্লেখ করা হয়। এই তিন বাদ্যযন্ত্র হল; একটি রবাব, একটি ছোট খাড়া নমিত যন্ত্র যা স্পাইক ফিডল নামে পরিচিত এবং আরেকটি ছোট আকারের ঝুলন্ত গং (দুটি লোহার প্লেট এবং দুটি বা তিনটি ব্যারেল ড্রামসহ)। এই নৃত্যে মহিলা বা সিন্ডেন ঐতিহ্যবাহী গান করেন ও নাচেন এবং পুরুষদেরকে ইন্দ্রিয়ের ইশারায় তাদের সাথে নাচতে আমন্ত্রণ জানান, তাই ধরে নেওয়া হয় তিনি একজন পতিতা বা রঙ্গেং।
জাইপোংগানে ইডিওফোনিক সঙ্গতিতে কয়েকটি সরন বা একটি গেগুং (গং কাইমসের একটি এল-আকৃতির সারি), এবং প্রায়শই একটি গামবাং (জাইলোফোন) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। অন্যান্য যন্ত্রগুলি কেতুক তিলুর মতোই হয়। একটি ড্রাম কিট, বৈদ্যুতিক গিটার এবং কীবোর্ডের মতো একধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হয়।[২]
২০১১ সালে, জাইপংগানের আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে, তবে এশিয়াতে এই নৃত্য ধারাটি এখনও অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি তার উৎপত্তিস্থল সুন্দার অঞ্চল ও সেইসাথে আশেপাশের গ্রাম এবং শহরগুলিতে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
২০০৯ সালে, মৌলবাদী রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে জাইপং এবং অন্যান্য "কামুক" ইন্দোনেশিয়ান নৃত্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।[৩] নিষেধাজ্ঞার প্রচেষ্টা সফল হয়নি। পরিবর্তে একটি খুব জনপ্রিয় গোপনীয় শৈলী হিসেবে রয়ে গেছে জাইপং-এর অস্তিত্ব রয়ে গেছে যা কেবলমাত্র কামুকতা ও বিনোদন শিল্প ছাড়াও বিদ্রোহী ক্রিয়াকলাপের সাথে জড়িত।
২০১৫ সালে, জাইপংকে সঙ্গীতের একটি আধুনিক শাস্ত্রীয় ধারা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যা প্রায়শই অন্যান্য এশীয় সঙ্গীতে ব্যবহার করা। এর একাধিক উপধারা রয়েছে।
পশ্চিম জাভাতে জনপ্রিয় নাচের উপর জিন হেলউইগ -এর একটি সিনেমা ও বই রয়েছে যাতে জাইপংগানের উপর এক বিস্তারিত অধ্যায় রয়েছে, যার নাম সুদানিজ পপ কালচার অ্যালাইভ।[৪]