জেরাইন্ট জোন্স

জেরাইন্ট জোন্স
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
জেরাইন্ট ওয়েন জোন্স, এমবিই
জন্ম (1976-07-14) ১৪ জুলাই ১৯৭৬ (বয়স ৪৮)
কুন্দিয়াওয়া, পাপুয়া নিউগিনি
ডাকনামজোন্সি
উচ্চতা৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৬২৩)
১০ এপ্রিল ২০০৪ 
ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ 
ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৮১/)
২৭ জুন ২০০৪ 
ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ ওডিআই৯ নভেম্বর ২০১৪ 
পাপুয়া নিউগিনি বনাম হংকং
ওডিআই শার্ট নং১০
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০১–২০১৪কেন্ট (জার্সি নং ৯)
২০১৪গ্লুচেস্টারশায়ার (ধারকৃত)
২০১৫গ্লুচেস্টারশায়ার (জার্সি নং ৮)
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৩৪ ৫১ ২০৩ ২১৩
রানের সংখ্যা ১,১৭২ ৮৬২ ৯,০৮৭ ৩,৬৭৯
ব্যাটিং গড় ২৩.৯১ ২৪.৬২ ৩২.৪৫ ২৫.৭২
১০০/৫০ ১/৬ ০/৪ ১৫/৫০ ০/১৭
সর্বোচ্চ রান ১০০ ৮০ ১৭৮ ৮৭
বল করেছে ২৪
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১২৮/৫ ৬৮/৪ ৫৯৯/৩৬ ২০৯/৪২
উৎস: ক্রিকেটআর্কাইভ, ৩০ মার্চ ২০১৬

জেরাইন্ট ওয়েন জোন্স, এমবিই (ইংরেজি: Geraint Jones; জন্ম: ১৪ জুলাই, ১৯৭৬) পাপুয়া নিউগিনিতে জন্মগ্রহণকারী, অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠা ওয়েলশীয় বংশোদ্ভূত প্রথিতযশা সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্বসহ অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন জেরাইন্ট জোন্স। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পাপুয়া নিউগিনির পক্ষে খেলেছেন তিনি।

আগস্ট, ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআই - উভয় স্তরের ক্রিকেটেই ইংল্যান্ডের প্রথম পছন্দের উইকেট-রক্ষক ছিলেন তিনি। তবে, সর্বদাই তাঁকে ক্রিস রিড, পল নিক্সন, ম্যাট প্রায়র ও টিম অ্যামব্রোসের কাছ থেকে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

শৈশবকাল

[সম্পাদনা]

পাপুয়া নিউগিনির কুন্দিয়াওয়ায় জোন্সের জন্ম। শৈশবকালেই পিতা-মাতার সাথে অস্ট্রেলিয়ায় স্থানান্তরিত হন। তার পরিবার ওয়েলশীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। টুওম্বা ও কুইন্সল্যান্ডের ব্রিসবেনে তাঁর শৈশবকাল অতিবাহিত হয়।

কুইন্সল্যান্ড কোল্টসের অনূর্ধ্ব-২১ দলের পক্ষে খেলেন। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ১৯ কিংবা ২০ বছর বয়সে ব্রিসবেন প্রতিযোগিতায় সকলের চেয়ে অধিক ডিসমিসাল ঘটিয়ে উইকেটকিপার্স ট্রফি লাভ করেন তিনি। ইংল্যান্ডের ফরেস্ট ডিনে প্রথমবারের মতো ক্লাব ক্রিকেটে লিডনে সিসি'র পক্ষে খেলেন। কিন্তু, ২২ বছর বয়স পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের জন্য প্রত্যাবর্তন করেন।[]

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

ব্রিটেনে ফিরে আসার পর ক্লেভটন সিসির পক্ষে খেলেন। সেখানেই আবেরিস্টিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জেনের সাথে পরিচয় ঘটে তার। পরের মৌসুমে ওয়লসের আবেরগেভনি সিসি'র সদস্য হন ও পরবর্তীতে অধিনায়কের দায়িত্ব পান। আবেরগেভনিতে অবস্থানকালে ফার্মাসিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। জেরাইন্ট ও জেন দম্পতির রাইস ও টমাস নামীয় দুই পুত্র সন্তান রয়েছে।

খেলোয়াড়ী জীবন

[সম্পাদনা]

২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ইংল্যান্ড দলের উইকেট-রক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।[] ক্রিস রিডের স্থলাভিষিক্ত হন। ঐ বছরের শেষদিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট শতক হাঁকান তিনি। তার এ ইনিংসে পনেরোটি চার ও একটি ছক্কার মার ছিল।[] ২০০৪-০৫ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ইংল্যান্ডের পক্ষে সবগুলো টেস্ট ও ওডিআই খেলাগুলোয় অংশ নেন। তন্মধ্যে, ডারবানে ড্র হওয়া টেস্টে দ্রুতগতিতে ৭৩ রান তুলেন তিনি। এরপর ব্লুমফন্তেইনে টাই হওয়া একদিনের আন্তর্জাতিকে অ্যান্ড্রু হলকে স্ট্যাম্পড করেছিলেন। ২০০৫ সালে লর্ডসে অনুষ্ঠিত ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন জেরাইন্ট জোন্স। খেলায় তিনি পাঁচ ক্যাচ নেন ও পল কলিংউডের সাথে ৭১ রানের জুটি গড়ে ৩৩/৫ থাকা অবস্থায় গভীর সঙ্কটে নিপতিত ইংরেজ দলকে টেনে তুলেন। এরফলে দলটি টাই করতে সক্ষম হয়।

টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী মুহুর্ত ছিল স্টিভ হার্মিসনের বোলিংয়ে মাইকেল কাসপ্রোভিচের বিতর্কিত ক্যাচ নেয়া। ২০০৫ সালের অ্যাশেজ সিরিজের এজবাস্টন টেস্টে ইংল্যান্ড দল মাত্র ২ রানের ব্যবধানে জয় পেয়েছিল। পুণঃনিরীক্ষণে দেখা যায় যে, কাসপ্রোভিচ একহাতে ব্যাট ধরেছিলেন ও বল তার গ্লাভসে লেগে যায়, ব্যাটে নয়। এছাড়াও, ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জোন্স। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফকে সেঞ্চুরি করতে সহায়তা করার পাশাপাশি নিজে করেন ৮৫ রান।

নববর্ষের সম্মাননা

[সম্পাদনা]

২০০৬ সালের নববর্ষের সম্মাননার তালিকায় সফলতম অ্যাশেজ সিরিজে অনবদ্য ভূমিকা রাখার প্রেক্ষিতে এমবিই পদবীতে ভূষিত হন তিনি।

উপর্যুপরী ক্যাচ না নেয়া ও স্ট্যাম্পিং না করার বিষয়ে তাঁর ইংল্যান্ড দলে অবস্থানকে অনেক ধারাভাষ্যকারই মেনে নিতে পারেননি। তবে, তাঁর ব্যাটসম্যান হিসেবে ভূমিকা রাখলেও তার তুলনায় রিড ও জেমস ফস্টারের অধিকতর ক্রীড়াশৈলীর জন্য তার স্থান প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় থাকে। তাস্বত্ত্বেও ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দল নির্বাচকমণ্ডলী তার উপর আস্থা রাখে।[]

তারা বিশ্বাস করেন যে, বেশকিছু ভুল করলেও দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে কাণ্ডারীর ভূমিকায় হতে তার জুড়ি মেলা ভার। তবে, ব্যাটে দূর্বলতা প্রকাশ পেলে ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে ক্রিস রিডকে সুযোগ দেয়া হয়। এর পাশাপাশি জোন্স ভাঙ্গা আঙ্গুল নিয়েও লড়াই করছিলেন। দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি ডেভিড গ্রেভনি মন্তব্য করেন যে, জোন্স ব্যাট হাতে সফলতা দেখাচ্ছেন না। তবে, রিডের তুলনায় ব্যাটসম্যান হিসেবে বেশ এগিয়ে ছিলেন।

অ্যাশেজ সফর

[সম্পাদনা]

২০০৭ সালে ১২-মাসের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আবদ্ধ হবার সুযোগ ঘটেনি প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস রিডসহ তারও। ২০০৬-০৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে উভয়ই দলে অন্তর্ভুক্ত হন। জোন্সকে সুযোগ দিতে প্রথম টেস্টের পূর্বে বাদ পড়েন। কেননা, জোন্স রিডের তুলনায় শক্তিধর ব্যাটসম্যান ছিলেন।[]

২০০৬-০৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে তার দুঃসময় অতিবাহিত হয়। পার্থের তৃতীয় টেস্টে জোড়া শূন্য পান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে এলবিডব্লিউ'র আবেদনকালীন রিকি পন্টিংয়ের হাতে রান-আউট হন। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ থেকেও তাকে বাদ দেয়া হয়।

পাপুয়া নিউগিনি অধ্যায়

[সম্পাদনা]

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ২০১২ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ বাছাইপর্ব প্রতিযোগিতায় পাপুয়া নিউগিনির পক্ষে জোন্স খেলেন।[] ডেনমার্কের বিপক্ষে ৩৩ বলে ৪৬ রান তুলে দলকে জয়লাভে সক্ষমতা দেখান।[] প্রতিযোগিতায় তার দল ষোল দলের মধ্যে অষ্টম স্থান দখল করে। মার্চের শেষদিকে প্রতিযোগিতাটি শেষ হলে তিনি পুনরায় এপ্রিলের শুরুতে কেন্টে যোগ দেন।

২০১৩ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ বাছাইপর্ব প্রতিযোগিতায় আবারও পাপুয়া নিউগিনির পক্ষে খেলেন। দলে তিনি মাঝারীসারির ব্যাটসম্যানরূপে আবির্ভূত হন। ২৭ গড়ে ২১৬ রান তুলেন। সর্বোচ্চ করেন ৫৫ রান। জানুয়ারি, ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রতিযোগিতায় পাপুয়া নিউগিনির প্রতিনিধিত্ব করেন। এবার তিনি ভালো না করলেও হংকংয়ের বিপক্ষে ৮৮ রানের মূল্যবান ইনিংস উপহার দেন। এটিই পিএনজি’র পক্ষে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল। প্রতিযোগিতায় পাপুয়া নিউগিনি চতুর্থ স্থান দখল করলে ওডিআই ও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের মর্যাদা লাভ করে।

অস্ট্রেলিয়ার টাউন্সভিলে ৮ ও ৯ নভেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে পাপুয়া নিউগিনি দুইটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেয়। ৮ নভেম্বর পাপুয়া নিউগিনির পক্ষে ওডিআই অভিষেক ঘটে তার।[]

অর্জনসমূহ

[সম্পাদনা]

১৩ জুলাই, ২০০৬ তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজে ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্টে জোন্স বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ৪৬ ইনিংসে কোন শূন্য রান করেননি তিনি। এরপর আরও পাঁচ ইনিংসে এ ধারা অব্যাহত থাকলেও ৫২তম ইনিংসে কোন রান সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।[] এরপর তিনি তার শেষ দুই ইনিংসে জোড়া শূন্যের সন্ধান পান।[১০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Cricinfo"Cricinfo – Players and Officials – Geraint Jones"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ 
  2. Cricinfo"England bring in Jones for Read"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ 
  3. Cricinfo"Jones century leads the way for England"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ 
  4. "Geraint Jones"Cricinfo 
  5. BBC (১২ নভেম্বর ২০০৬)। "Jones to return as Ashes keeper"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০০৬ 
  6. "Former England wicketkeeper Geraint Jones joins Papua New Guinea"The Guardian। London। ২১ জানুয়ারি ২০১২। 
  7. "The Home of CricketArchive"cricketarchive.com 
  8. "Hong Kong tour of Australia, 1st ODI: Papua New Guinea v Hong Kong at Townsville, Nov 8, 2014"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৪ 
  9. "Batting records – Test matches – Cricinfo Statsguru – ESPN Cricinfo"Cricinfo 
  10. Frindall, Bill (২০০৯)। Ask BeardersBBC Books। পৃষ্ঠা 202আইএসবিএন 978-1-84607-880-4 

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]