জেসন ক্রেজা

জেসন ক্রেজা
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
জেসন জন ক্রেজা
জন্ম (1983-01-14) ১৪ জানুয়ারি ১৯৮৩ (বয়স ৪১)
নিউটাউন, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামক্রেজি
উচ্চতা১.৮৪ মিটার (৬ ফুট ০ ইঞ্চি)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ ব্রেক
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৪০৪)
৬ নভেম্বর ২০০৮ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট২১ ডিসেম্বর ২০০৮ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৮৭)
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ ওডিআই২৪ মার্চ ২০১১ বনাম ভারত
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০৪ - ২০০৬নিউ সাউথ ওয়েলস
২০০৫লিচেস্টারশায়ার
২০০৬ - ২০১৩তাসমানিয়ান টাইগার্স
২০১১ - ২০১৩হোবার্ট হারিকেন্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৪৪ ৫৭
রানের সংখ্যা ৭১ ১৩ ১,৩৯৯ ৬০৮
ব্যাটিং গড় ২৩.৬৬ ১৩.০০ ২২.৯৩ ১৯.০০
১০০/৫০ ০/০ ০/০ ১/৭ ০/১
সর্বোচ্চ রান ৩২ ১০১* ৫২*
বল করেছে ৭৪৩ ৪২৫ ৮,৬৭০ ২,৭৬৬
উইকেট ১৩ ১১২ ৬১
বোলিং গড় ৪৩.২৩ ৪৭.২৮ ৪৮.৮৭ ৩৭.৫৭
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৮/২১৫ ২/২৮ ৮/২১৫ ৬/৫৫
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/– ২/– ৩১/– ২৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জেসন জন ক্রেজা (ইংরেজি: Jason Krejza; জন্ম: ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮৩) নিউ সাউথ ওয়েলসের নিউটাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৮ থেকে ২০১১ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে তাসমানিয়ানিউ সাউথ ওয়েলস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ ব্রেক বোলিং করতেন ‘ক্রেজি’ ডাকনামে পরিচিত জেসন ক্রেজা

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেসন ক্রেজা’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ক্রেজার পিতা চেকোস্লোভাকিয়ায় ফুটবল খেলতেন ও মাতা পোল্যান্ডের নাগরিক ছিলেন। ক্রেজা অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। দলে মূলতঃ ডানহাতি অফ ব্রেক বোলিং করতেন। তবে, মাঝারিসারিতে নিচেরদিকে ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটিং করে সক্ষমতা দেখিয়েছেন তিনি।

২০০৪-০৫ মৌসুম থেকে এনএসডব্লিউ দলে নিয়মিতভাবে খেলতেন। তবে, ২০০৬-০৭ মৌসুমে এসে স্বীয় স্থানচ্যুত হন। তাসত্ত্বেও, সিডনি গ্রেড দল ইউটিএস-বালমেইনে চমৎকার সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের শেষদিকে এনএসডব্লিউর সীমিত ওভারের দলে তার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়। ২১ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলস ব্লুজ দল পরিত্যাগ করে তাসমানিয়ান টাইগার্সে যোগ দেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। এর প্রধান কারণ হিসেবে স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল, নাথান হারিৎজবিউ ক্যাসনের পর চতুর্থ স্পিনার হিসেবে দলে রাখার ন্যায় বিষয়টি জড়িত ছিল।[]

২০০৬-০৭ মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে তাসমানিয়ার পক্ষে খেলার পর পুরা কাপে দুই খেলায় অংশ নিয়ে ৫ উইকেট ও দুই ইনিংসে মাত্র ১৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ফোর্ড র‍্যাঞ্জার কাপ প্রতিযোগিতায় চার খেলায় ৮ উইকেট ও ৮৩ রান সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে একটি খেলায় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৩* রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

মৌসুম বহির্ভূত সময়ে দ্রুতগতিতে ও মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে হোবার্ট পুলিশ আটক করলে ক্রিকেট জীবন হুমকির মুখোমুখি হয়ে পড়ে তার।[] এরফলে, তাসমানিয়ার মৌসুম-পূর্বে প্রশিক্ষণ কর্মে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন ও মদ্যপান গ্রহণে সতর্কসূচক বার্তা পান।[]

২০০৭-০৮ মৌসুমে নবরূপে নিজেকে উপস্থাপনায় সচেষ্ট হন তিনি। পুরা কাপে ৭ খেলায় অংশ নিয়ে ৩৬.১২ গড়ে ২৮৯ রান তুলেন। সর্বোচ্চ করেন ৬৩ রান। এছাড়াও, ৪৭.১১ গড়ে ১৮ উইকেট দখল করেন তিনি। তবে, ঐ মৌসুমে একদিনের দলের বাইরে খেলার সুযোগ পাননি। এ পর্যায়ে অভিষেক ঘটা জেভিয়ার ডোহার্টিই কেবল একমাত্র স্পিন বোলার হিসেবে তাসমানিয়ার একদিনের দলে খেলছিলেন। তিনি মাত্র একটি খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান এবং ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে তাসমানিয়ার বিজয়ে দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্ট ও আটটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন জেসন ক্রেজা। ৬ নভেম্বর, ২০০৮ তারিখে নাগপুরে স্বাগতিক ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে পার্থে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

আগস্ট, ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া এ দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। এর পরপরই ভারতে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের সফরে অন্যতম সদস্য হন। ব্রাইস ম্যাকগেইনের পর দলটিতে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে নিযুক্তি পান তিনি। তবে, আঘাতের কারণে ম্যাকগেইনকে দেশে ফিরে যেতে হয়েছিল। প্রধানত তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ভারতীয় বোর্ড সভাপতি একাদশের বিপক্ষে বেদম নাকানিচুবানির শিকারে পরিণত হন তিনি। ৩১ ওভারে ১৯৯ রান খরচ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি তিনি।

ব্রাইস ম্যাকগেইনের স্থলাভিষিক্ত হওয়া ক্যামেরন হোয়াইটকে প্রথম তিন টেস্টে খেলানো হয়। তাসত্ত্বেও অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের স্থির বিশ্বাস ছিল যে, ক্রেজাকে খেলানো হলে ভারতের জ্যেষ্ঠ ব্যাটসম্যানেরা হিমশিম খাবেন। এরপর নাগপুরে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অভিষেক ঘটে তার। ঐ টেস্টে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দল জয় পেয়ে সিরিজ ড্র করতে সমর্থ হয় ও বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি নিজেদের কাছেই রেখে দেয়।

ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ক্লার্ক ব্যর্থ হলে ক্যামেরন হোয়াইটের সাথে বোলিং জুটি গড়েন ও রাহুল দ্রাবিড়কে প্রথম আউট করেন। প্রথম ইনিংসে ৮/২১৫ লাভ করেছিলেন তিনি।[] এ পর্যায়ে চতুর্দশ অস্ট্রেলীয় বোলার হিসেবে অভিষেকে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট লাভের মর্যাদার অধিকারী হন। এছাড়াও, অভিষেকে সর্বাধিক রান খরচের ন্যায় অগৌরবজনক রেকর্ড গড়েন তিনি। পাশাপাশি প্রথম টেস্ট ইনিংসে সর্বাধিকসংখ্যক উইকেট লাভ করেন তিনি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সেরা ৪/৯১ বোলিংয়ে পরিসংখ্যান গড়ার নিজস্ব রেকর্ড ভঙ্গ করেন।[] দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরও ৪/১৪৩ পান। খেলায় সর্বমোট ৩৫৮ রান খরচায় ১২ উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান। ফলশ্রুতিতে, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টে সর্বাধিকসংখ্যক রান দেয়ার নজির গড়েন। তার পূর্বে ১৯২৯-৩০ মৌসুমে জ্যামাইকার কিংস্টনে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টমি স্কট ৩৭৪ রান খরচ করে ৯ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক খরুচে বোলারের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন।[] ঐ টেস্টে তার দল পরাজিত হলেও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি

[সম্পাদনা]

ব্রিসবেনে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট থেকে বাদ পড়েন। ঐ পিচে সিমারদের উপযোগী হওয়ায় কোন স্পিনারকে দলে নেয়া হয়নি। অ্যাডিলেডের দ্বিতীয় টেস্টে খেলার জন্যে আহুত হন। তবে, খেলা শুরুর পূর্বে পায়ের গোড়ালীতে আঘাত পেলে দলীয় সঙ্গী নাথান হারিৎজকে অস্প স্পিন বোলিংয়ের জন্য স্থলাভিষিক্ত করা হয়। উভয় টেস্টেই অস্ট্রেলিয়া দল জয় পেয়েছিল। পার্থে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি ১/১০৩ ও ০/১০৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ঐ খেলায় সফরকারীরা ৪১৪/৬ তুলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে। এরফলে, দ্বিতীয় টেস্টে পুনরায় হারিৎজকে রাখা হয় ও তিনি দল থেকে বাদ পড়েন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বেশ কয়েক বছর দূরে থাকার পর বিস্ময়করভাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের ৭ম ওডিআই খেলার জন্যে অস্ট্রেলিয়া দলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রথম পছন্দের স্পিনার নাথান হারিৎজ ও স্টিভ স্মিথের আঘাতপ্রাপ্তি এবং জেভিয়ার ডাহার্টি’র বিকল্প হিসেবে রাখাই এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। পার্থে তার ওডিআই অভিষেক ঘটে ও ৯ ওভারে ২/৫৩ পান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে অপরাজিত ৬* রান তুলে দলকে ৫৭ রানে জয়ী করেন ও সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দল ৬-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এছাড়াও, ভারতীয় উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন। এবারও, হারিৎজ ও ডোহার্টি আঘাতের কারণে দলে অনুপস্থিত ছিলেন।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Krejza moves to Tasmania"। Cricinfo। নভেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৭ 
  2. "Tasmanian cricketer faces court"। news। ২৭ আগস্ট ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  3. http://www.news.com.au/mercury/story/0,22884,24222851-3462,00.html  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) [অকার্যকর সংযোগ]
  4. "4th Test: India v Australia at Nagpur, Nov 6-10, 2008"espncricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৩ 
  5. Jamie Alter (নভেম্বর ২০০৮)। "Stunning Krejza keeps India to 441"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৭ 
  6. Frindall, Bill (২০০৯)। Ask BeardersBBC Books। পৃষ্ঠা 128–129। আইএসবিএন 978-1-84607-880-4 

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]