লর্ড মেকলে | |
---|---|
সচিব যুদ্ধবিষয়ে | |
কাজের মেয়াদ ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৯ – ৩০ আগস্ট ১৮৪১ | |
সার্বভৌম শাসক | ভিক্টোরিয়া |
প্রধানমন্ত্রী | ভিসকাউন্ট মেলবোর্ন |
পূর্বসূরী | ভিসকাউন্ট হাউইক |
উত্তরসূরী | স্যার হেনরি হার্ডিঞ্জ |
পেমাস্টার জেনারেল | |
কাজের মেয়াদ ৭ জুলাই ১৮৪৬ – ৮ মে ১৮৪৮ | |
সার্বভৌম শাসক | ভিক্টোরিয়া |
প্রধানমন্ত্রী | লর্ড জন রাসেল |
পূর্বসূরী | সম্মানিত বিংহাম বেয়ারিং |
উত্তরসূরী | আর্ল গ্রানভিল |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | লেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ড | ২৫ অক্টোবর ১৮০০
মৃত্যু | ২৮ ডিসেম্বর ১৮৫৯ লন্ডন, ইংল্যান্ড | (বয়স ৫৯)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
রাজনৈতিক দল | হুইগস |
পিতামাতা | জ্যাকারি মেকলে সেলিনা মিলস |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
জীবিকা | ইতিহাসবিদ, কবি |
স্বাক্ষর |
টমাস ব্যাবিংটন মেকলে, প্রথম ব্যারন মেকলে (পিসি, এফআরএস, এফআরএসই) (২৫ অক্টোবর ১৮০০ – ২৮ ডিসেম্বর ১৮৫৯) ছিলেন একজন ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ, কবি এবং হুইগস রাজনীতিবিদ। তিনি ১৮৩৯ থেকে ১৮৪১ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ সচিব এবং ১৮৪৬ থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত বেতন পরিদর্শক জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের শিক্ষানীতি নির্ধারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মেকলের দ্য হিস্টরি অফ ইংল্যান্ড গ্রন্থটি, যেখানে তিনি পশ্চিমা ইউরোপীয় সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব এবং এর সমাজ-রাজনৈতিক উন্নয়নের অবশ্যম্ভাবীতায় নিজের বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন, সেটি তার আকর্ষণীয় গদ্যশৈলীর জন্য প্রশংসিত এবং হুইগ হিস্টরি-এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।[১]
মেকলে ১৮০০ সালের ২৫ অক্টোবর লেইসেস্টারশায়ারের রথলি টেম্পলে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি স্কটিশ হাইল্যান্ডার জাখারি মেকলের পুত্র, যিনি ঔপনিবেশিক গভর্নর এবং দাসপ্রথা বিলুপ্তি আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার মা সেলিনা মিলস, ব্রিস্টলের বাসিন্দা এবং হান্না মোরের শিক্ষার্থী ছিলেন।[৩] তাদের প্রথম সন্তানের নাম রাখা হয় তার কাকা টমাস ব্যাবিংটনের নামে। টমাস ছিলেন লেইসেস্টারশায়ারের একজন জমিদার এবং রাজনীতিবিদ।[৪][৫] তিনি জ্যাখারির বোন জিনকে বিয়ে করেন।[৬] শিশু মেকলে বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। কথিত আছে, হামাগুড়ি দেওয়ার বয়সেই তিনি দোলনায় শুয়ে জানালা দিয়ে একটি কারখানার চিমনি দেখে বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, এই ধোঁয়া কি নরকের আগুন থেকে আসছে!
তিনি হার্টফোর্ডশায়ারের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীতে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করেন।[৭] সেখানে তিনি ১৮২১ সালের জুনে চ্যান্সেলর'স গোল্ড মেডেলসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন[৮] এবং ১৮২৫ সালে এডিনবার্গ রিভিউ পত্রিকায় মিলটনের উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। মেকলে কেমব্রিজে থাকাকালীন শাস্ত্রীয় সাহিত্য অধ্যয়ন করেননি, কিন্তু পরবর্তীকালে ভারতে অবস্থানকালে তিনি এই বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৮৫১ সালে ম্যালভার্নে অবস্থানকালে তিনি তাঁর চিঠিপত্রে ইনিড পাঠের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এবং বলেছেন যে ভের্গিল এর কবিতা তাঁকে অশ্রুসিক্ত করেছে।[৯] তিনি নিজের চেষ্টায় জার্মান, ডাচ ও স্প্যানিশ ভাষা আয়ত্ত করেন এবং ফরাসি ভাষায় তার দক্ষতা ছিল সাবলীল।[১০] আইনশাস্ত্রে অধ্যয়ন শেষে, ১৮২৬ সালে তিনি ব্যারিস্টার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। পরবর্তীতে, তিনি রাজনৈতিক কর্মজীবনে অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠেন।[১১] ১৮২৭ সালে, মেকলে এডিনবার্গ রিভিউ এবং দ্য মর্নিং ক্রনিকল-এ বেনামী চিঠির একটি ধারাবাহিকে, ব্রিটিশ উপনিবেশিক দপ্তরের বিশেষজ্ঞ কর্নেল টমাস মুডি, কেটি কর্তৃক চুক্তিবদ্ধ শ্রমের বিশ্লেষণের সমালোচনা করেন।[১২][১৩] টমাস ব্যাবিংটন মেকলের কট্টরপন্থী হুইগ পিতা জ্যাচারি মেকলে, যিনি আফ্রিকানদের সম-অধিকারের পরিবর্তে 'মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ কৃষক' শ্রেণির প্রতিষ্ঠা কামনা করতেন,[১৪] তিনিও 'অ্যান্টি-স্ল্যাভারি রিপোর্টার' পত্রিকায় মুডির বিভিন্ন যুক্তির সমালোচনা করেন।[১২]
১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে মেকলে, ল্যান্সডাউনের মার্কয়েসের আমন্ত্রণে ক্যালনের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। পার্লামেন্টে দেওয়া তাঁর প্রথম ভাষণে তিনি ব্রিটেনে ইহুদিদের উপর আরোপিত নাগরিক সীমাবদ্ধতা বা বৈষম্যমূলক আইন রদ করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। মেকলে ব্যাপকভাবে লেখেন যে,
“ | ইসলাম ও হিন্দুধর্ম বিশ্বকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি এবং আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃত সাহিত্য মানবজাতির জন্য তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেনি।[৮] | ” |
সংসদীয় সংস্কারের পক্ষে মেকলের পরবর্তী বক্তৃতাগুলি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। ১৮৩২ সালের সংস্কার আইন পাশ হওয়ার পরে, তিনি লিডসের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৮] এই আইনের ফলে ক্যালনের সংসদীয় আসন সংখ্যা দুটি থেকে কমিয়ে একটি করা হয় এবং লিডস, যা আগে কোনো প্রতিনিধি ছিল না, দুটি আসন লাভ করে। মেকলে তার বন্ধু ও পূর্বতন পৃষ্ঠপোষক ল্যান্সডাউনের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন।[৮]
মেকলে ১৮৩২ থেকে ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত লর্ড গ্রে-এর অধীনে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৩৩ সালে, তার পিতার আর্থিক দুরবস্থার কারণে, তিনি একটি বেশি আয়ের পদ চান, কারণ সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে তিনি কোনো বেতন পেতেন না। ভারত সরকার আইন ১৮৩৩ পাস হওয়ার পর তিনি এমপি পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং গভর্নর-জেনারেলের কাউন্সিলের প্রথম আইন সদস্য হিসেবে নিয়োগ গ্রহণ করেন। ১৮৩৪ সালে মেকলে ভারতে যান এবং ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন করেন।[১৫] ১৮৩৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার ভারতীয় শিক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা মূলত ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় পাশ্চাত্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য দায়ী।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মেকলে মাধ্যমিক শিক্ষায় নির্দেশনার দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা প্রবর্তনের সুপারিশ করেন, বিশেষত সেইসব স্কুলে যেখানে এর আগে কোনো সরকারি ভাষা ছিল না। এছাড়াও তিনি ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ভারতীয়দের শিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেন।[১] তার প্রস্তাবে, তিনি তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংকে উপযোগবাদ ধারায় মাধ্যমিক শিক্ষা সংস্কারের জন্য আহ্বান জানান, যাতে "দরকারী শিক্ষা" প্রদান করা যায়, এটি ছিল এমন একটি শব্দগুচ্ছ, যা তার কাছে পশ্চিমা সংস্কৃতির সমার্থক। স্থানীয় ভাষায় মাধ্যমিক শিক্ষার কোন ঐতিহ্য ছিল না; ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা সমর্থিত প্রতিষ্ঠানগুলি সংস্কৃত বা ফারসি ভাষায় শিক্ষা দিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অতএব, তিনি যুক্তি দেন, "আমাদের এমন একটি জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করতে হবে, যারা বর্তমানে তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষিত হতে পারে না। আমাদের অবশ্যই তাদের কোনো বিদেশী ভাষা শেখাতে হবে।" মেকলে আরো যুক্তি দেন যে, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা ভারতীয় স্থানীয় ভাষাভাষীদের জন্য ইংরেজির চেয়ে বেশি সহজলভ্য নয় এবং বিদ্যমান সংস্কৃত ও ফারসি গ্রন্থগুলি "প্রয়োজনীয় জ্ঞান" অর্জনের জন্য খুব কমই উপযোগী । তিনি প্রস্তাবনার একটি অংশে লেখেন:
আমি সংস্কৃত বা আরবি কোনোটিই জানি না। কিন্তু তাদের মূল্য সঠিকভাবে অনুমান করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমি সবচেয়ে বিখ্যাত আরবি ও সংস্কৃত রচনাগুলির অনুবাদ পড়েছি। আমি এখানে এবং স্বদেশে উভয় স্থানেই এমন ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করেছি যারা প্রাচ্য ভাষায় দক্ষতার জন্য প্রসিদ্ধ। আমি প্রাচ্যবিদদের নিজেদের মূল্যায়নে প্রাচ্য জ্ঞান গ্রহণ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমি তাদের মধ্যে এমন একজনকেও খুঁজে পাইনি, যিনি এই কথা অস্বীকার করতে পারেন যে একটি ভালো ইউরোপীয় গ্রন্থাগারের একটি মাত্র তাক সমগ্র ভারত ও আরবের স্থানীয় সাহিত্যের সমমূল্যের।
|
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Rupprecht
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি