টিউলিপ | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
বিভাগ: | Magnoliophyta |
শ্রেণী: | Liliopsida |
বর্গ: | Liliales |
পরিবার: | Liliaceae |
উপপরিবার: | Lilioideae |
গোত্র: | Tulipeae |
গণ: | টিউলিপা L. 1753 |
প্রতিশব্দ | |
Tulipa:[১] |
টিউলিপ (বৈজ্ঞানিক নাম: Tulipa) পাত্রে চাষাবাদের উপযোগী এক প্রকার পুষ্পজাতীয় উদ্ভিদ। এছাড়াও এটি বাগানে কিংবা বাণিজ্যিকভিত্তিতে জমিতেও চাষ করা হয়। অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ দেখা যায়। গৃহের অঙ্গসৌষ্ঠব বৃদ্ধিকারী ফুল হিসেবে এর সুনাম রয়েছে।
বর্ষজীবি ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভূক্ত উদ্ভিদ। সংকরায়ণসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই টিউলিপ নামে ডাকা হয়। টিউলিপ প্রায় ১৫০ প্রজাতিতে বিভাজ্য এবং অগণিত সংকর প্রজাতি রয়েছে।
টিউলিপ বর্ষজীবি ও বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত। এটি মুকুল থেকে জন্মায়। বিভিন্ন প্রজাতিতে এর উচ্চতা ভিন্নরূপ হয়। সচরাচর ৪ ইঞ্চি (১০ সে.মি.) থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৮ ইঞ্চি (৭১ সে.মি.) পর্যন্ত উচ্চতাসম্পন্ন হয়। অধিকাংশ টিউলিপই ডাঁটা থেকে একটিমাত্র মুকুলের মাধ্যমে বিকশিত হয়। কিন্তু কিছু প্রজাতিতে (যেমন - টিউলিপ তুর্কেস্টানিকা) কয়েকটি ফুল হতে পারে।
জমকালো ও আড়ম্বরপূর্ণ ফুলগুলো সাধারণতঃ কাপ কিংবা তারার আকৃতি হয়ে থাকে। এর তিনটি পুষ্পদল এবং তিনটি বহিঃদল রয়েছে। ফলে এর অভ্যন্তরভাগ গাঢ় রঙের দেখায়। টিউলিপে খাঁটি নীলাভ রঙ ব্যতীত বিভিন্ন রঙের হয়।[২][৩] এর ফল মোড়কে ঢাকা থাকে যা অনেকটা ক্যাপসুল আকৃতির। দুই সারিতে বীজ থাকে।[৪] হাল্কা থেকে ঘন বাদামী বর্ণের বীজগুলো খুবই পাতলা আবরণবিশিষ্ট। টিউলিপের ডাঁটায় অল্প কিছু পাতা থাকে। বৃহৎ প্রজাতিতে অনেকগুলো পাতা থাকতে পারে। সাধারণতঃ দুই থেকে ছয়টি পাতা থাকে। প্রজাতিভেদে এ পাতার সংখ্যা সর্বোচ্চ ১২টি হতে পারে। পাতাগুলো নীলাভ সবুজ রঙের হয়।
বাণিজ্যিকভিত্তিতে অটোম্যান সাম্রাজ্যে চাষাবাদ শুরু হলেও পরবর্তীকালে নেদারল্যান্ডে বাণিজ্যধর্মী আবাদ শুরু হয়। হল্যান্ড বিশ্বের প্রধান টিউলিপ উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত। বার্ষিক তিন বিলিয়নেরও অধিক টিউলিপ কন্দ উৎপাদন করে ও রপ্তানী আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসরূপে বিবেচিত।[৫] নেদারল্যান্ডের সাথে টিউলিপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। চাষাবাদ প্রণালীকে প্রায়শঃই ডাচ টিউলিপ নামে আখ্যায়িত করা হয়। টিউলিপকে ঘিরে শিল্প গড়ে উঠেছে এবং টিউলিপ উৎসব পালন করা হয়।
দু'টি প্রধান কারণে টিউলিপ উৎপাদন করা হয় - (ক) ফুল উৎপাদন এবং (খ) শুষ্ক কন্দ উৎপাদন। উদ্যান, বাগান, গৃহে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কন্দ উৎপাদন করা হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ফুলের বিনিময় মূল্য প্রায় এগার হাজার মিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সচল করে রাখছে।
পামির মালভূমি এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালার এলাকা থেকে উদ্ভূত হয়ে কাজাখস্তানে[৬] স্থানান্তরিত হয় যা পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, ইউরোপের দক্ষিণাংশ, উত্তর আমেরিকা, এশিয়ার আনাতোলিয়া থেকে ইরানের পূর্বাংশ, চীনের উত্তর-পূর্বাংশ এবং জাপানে এ উদ্ভিদ পাওয়া যায়। টিউলিপের সাথে হল্যান্ডের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ষোড়শ শতাব্দী থেকে টিউলিপের চাষ হয়ে আসছে।[৭]
টিউলিপকে ইরান ও তুরস্কে ফার্সি ভাষায় লালে নামে ডাকা হয়। ধারণা করা হয় যে, টিউলিপের অনেক প্রজাতির আদি আবাসস্থল হিসেবে এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকায় গড়ে উঠেছে।
পারস্যে লাল টিউলিপকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করা হয়। লাল টিউলিপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কালো অংশের মাধ্যমে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয় ভেঙ্গে খানখান ও কয়লার ন্যায় পুড়ে যাওয়া এবং হলুদ টিউলিপ বিনিময় করাকে আশাহীন ও সম্পূর্ণভাবে নিরাশাগ্রস্ত আকারে তুলে ধরা হতো।[৮]