টেড টার্নার | |
---|---|
![]() ২০১৫ সালে টার্নার | |
জন্ম | রবার্ট এডওয়ার্ড টার্নার ৩য় ১৯ নভেম্বর ১৯৩৮ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | উদ্যোক্তা, টেলিভিশন প্রযোজক, মিডিয়া স্বত্বাধিকারী, সমাজসেবী |
কর্মজীবন | ১৯৬০–বর্তমান |
পরিচিতির কারণ |
|
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
সন্তান | ৫ |
ওয়েবসাইট | tedturner |
স্বাক্ষর | |
![]() |
তৃতীয় রবার্ট এডওয়ার্ড টার্নার (টেড টার্নার নামেই অধিক পরিচিত; জন্ম ১৯ নভেম্বর, ১৯৩৮) একজন মার্কিন উদ্যোক্তা, টেলিভিশন প্রযোজক, মিডিয়া স্বত্বাধিকারী এবং সমাজসেবী। তিনি প্রথম ২৪ ঘন্টার কেবল নিউজ চ্যানেল হিসেবে কেবল নিউজ নেটওয়ার্ক (সিএনএন) প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি ডব্লিউটিবিএস প্রতিষ্ঠা করেন যা কেবল টেলিভিশনে "সুপারস্টেশন" ধারণার পথপ্রদর্শক ছিল। পরবর্তীতে টিবিএস ও টিএনটি নেটওয়ার্ক চালু করেন।
সমাজসেবার ক্ষেত্রে তিনি জাতিসংঘ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার জন্য ১ বিলিয়ন ডলার দান করেন। এটি একটি জনহিতৈষী সংস্থা যা যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। টার্নার জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও, ২০০১ সালে তিনি মার্কিন সিনেটর স্যাম নানের সাথে মিলে নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ (এনটিআই) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে কাজ করে। বর্তমানে তিনি এনটিআই এর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
টার্নারের মিডিয়া সাম্রাজ্য শুরু হয় তার বাবার বিলবোর্ড ব্যবসা টার্নার আউটডোর অ্যাডভারটাইজিং দিয়ে যা তিনি ১৯৬৩ সালের মার্চ মাসে তার বাবার আত্মহত্যার পর দখল করেন।[১] এর মূল্য ছিল ১ মিলিয়ন ডলার। ১৯৭০ সালে তার আটলান্টা ইউএইচএফ স্টেশন কেনার মাধ্যমে টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম শুরু হয়। ১৯৮০ সালে তিনি সিএনএন চালু করেন, যা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদ নেটওয়ার্ক।তার মালিকানাধীন আটলান্টা ব্রেভস বেসবল দল ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ল্ড সিরিজ জিতে জাতীয়ভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এছাড়াও, তিনি "গুডউইল গেমস" নামে একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু করেন এবং পেশাদার কুস্তি-এর প্রতি মানুষের মধ্যে নতুন আগ্রহ তৈরি করেন। তিনি "জিম ক্রকেট প্রোমোশন্স" ক্রয় করে তা "ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ রেসলিং" (ডাব্লিউসিডাব্লিউ) নামে পুনঃব্র্যান্ডিং করেন।
টার্নারের বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তাকে "দ্য মাউথ অব দ্য সাউথ" এবং "ক্যাপ্টেন আউটরেজিয়াস" বলা হতো।[২][৩] তিনি পরিবেশ রক্ষার জন্যও বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত জমির মালিক ছিলেন, পরবর্তীতে জন সি. ম্যালোন তাকে অতিক্রম করেন।[৪][৫] তিনি তার বেশিরভাগ জমি খামারের জন্য ব্যবহার করেন। সেখানে বন্য মোষ পালনের মাধ্যমে বাইসনের মাংস জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছেন (যা তার রেস্তোরাঁ চেইন "টেড'স মন্টানা গ্রিল" এর জন্য)। তিনি পরিবেশ সচেতনতামূলক অ্যানিমেটেড সিরিজ ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্সও তৈরি করেছিলেন।[৬]
টার্নার ১৯ নভেম্বর, ১৯৩৮ সালে ওহাইওর সিনসিনাটিতে জন্মগ্রহণ করেন।[৭] তিনি ফ্লোরেন্স (প্রথম রুনি) এবং বিলবোর্ডের একজন ধনী ব্যক্তিত্ব রবার্ট এডওয়ার্ড টার্নার ২য় এর পুত্র।[৮] তার বয়স যখন নয় বছর তখন তার পরিবার জর্জিয়ার সাভানাতে চলে আসে এবং তাকে একজন এপিস্কোপ্যালিয়ান হিসেবে বড় করে তোলে।[৯] তিনি টেনেসির চ্যাটানুগায় অবস্থিত একটি বেসরকারি ছেলেদের বিদ্যালয় দ্য ম্যাকক্যালি স্কুলে পড়াশোনা করেন।
টার্নার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন এবং ব্রাউন বিতর্ক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এবং পালতোলা দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি কাপ্পা সিগমার সদস্য হন। টার্নার প্রথমে ক্লাসিক বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তার বাবা লিখেছিলেন যে এই সিদ্ধান্ত তাকে আতঙ্কিত, এমনকি ভীত করে তুলেছে। একই সাথে তার প্রায় বমি বমি ভাব হচ্ছিল।[১০] টার্নার পরে তার স্নাতকের বিষয় অর্থনীতিতে পরিবর্তন করেন। কিন্তু স্নাতক অর্জনের আগেই তার ছাত্রাবাসের ঘরে একজন ছাত্রী থাকার কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়।[১১] ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রদান করে। তখন তিনি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব কলেজ ব্রডকাস্টার্স-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে ভাষণ দিতে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
ভিয়েতনামে উত্তেজনা যখন তীব্র হতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়ে টার্নার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড রিজার্ভে যোগদান করেন যাতে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদানের আগেই তার চাকরির দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী তাকে কর্তৃক লোন সেইলর পুরস্কারে প্রদান করে। টার্নার দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছিলেন, "আমি নৌকা পছন্দ করতাম", এবং শেষ পর্যন্ত চার্লসটন এবং ফোর্ট লডারডেলে কিছু সুন্দর জায়গায় নৌকা রাখা হয়।[১২]
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করার পর, টার্নার ১৯৬০ সালের শেষের দিকে আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে চলে আসেন। সেখানে তার পিতার ব্যবসার ম্যাকন, জর্জিয়া শাখার সাধারণ ব্যবস্থাপক হন। ১৯৬৩ সালের মার্চে তার পিতার আত্মহত্যার পর তিনি টার্নার বিজ্ঞাপনী সংস্থার সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী হন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে কোম্পানিটিকে একটি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেন। 'এটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ নয়' বই অনুযায়ী তিনি যুব রিপাবলিকান দলে যোগদান করেন। যোগদান করে তিনি বলেছিলেন যে তিনি এই উদীয়মান রক্ষণশীলদের মধ্যে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি আরো বলেন তিনি শুধু তার পিতার শক্ত ডানপন্থী নীতি অনুসরণ করছিলেন।[১]
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, টার্নারের ব্যবসা সমৃদ্ধ হয়েছিল; সাভানা, ম্যাকন, কলম্বাস এবং চার্লসটনে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ পায়। এটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ নয় অনুসারে, এটি "দক্ষিণ-পূর্বের বৃহত্তম বহিরঙ্গন বিজ্ঞাপন সংস্থা" ছিল। বইটিতে বলা হয়েছে যে টার্নার জানতে পারেন যে তার বাবা বছরের পর বছর কোম্পানির কাছে ঋণ দিয়ে অনেক করযোগ্য আয় লুকিয়েছিলেন। তিনি আরও বুঝতে পারেন যে বিলবোর্ড ব্যবসা অনেক লাভজনক। ফলে খুব কম মূলধন বিনিয়োগে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ পাওয়া যেত।[১৩]
১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি রেডিও স্টেশন কিনতে শুরু করেন।[১৪] ১৯৬৯ সালে, তিনি তার রেডিও স্টেশনগুলো বিক্রি করে আটলান্টার ইউএইচএফ চ্যানেল ১৭ ডব্লিউজেআরজে (বর্তমানে ডাব্লুপিসিএইচ) নামক একটি টিভি চ্যানেল কেনেন।[১৫] সেই সময়, ইউএইচএফ স্টেশন কেবল সেই বাজারে ভালো করতো যেখানে ভিএইচএফ স্টেশন ছিল না বা শুধুমাত্র একটি ভিএইচএফ স্টেশন ছিল, যেমন ফ্রেসনো, ক্যালিফোর্নিয়া। স্বাধীন ইউএইচএফ স্টেশনগুলো বড় শহরেও রেটিংয়ে ভালো করত না বা বেশি লাভ করত না। কিন্তু টার্নার ভাবলেন, লোকেরা ভবিষ্যতে কয়েকটি চ্যানেলের বেশি দেখতে চাইবে। তিনি স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ডব্লিউটিসিজি রাখেন। তিনি বলেন চ্যানেলটির পূর্ণরূপ হল ওয়াচ দিস চ্যানেল ফর গ্রো"। যদিও প্রকৃতপক্ষে এর অর্থ ছিল টার্নার কমিউনিকেশনস গ্রুপ।[১৬]শুরুতে চ্যানেলটিতে পুরনো সিনেমা দেখানো হতো। থিয়েটার কার্টুনও প্রচার করা হতো। পুরনো জনপ্রিয় কমেডি ও নাটকও দেখানো হতো। খরচ কম ছিল বলে তিনি এমন অনুষ্ঠান সংগ্রহ করতেন। মূলধারার ভিএইচএফ চ্যানেলগুলো এগুলো বাতিল করতো। ফলে তার টেলিভিশন স্টেশনে গিলিগানের দ্বীপ, আই লাভ লুসি, স্টার ট্রেক, হ্যাজেল, বাগস বানী ইত্যাদি অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। চ্যানেলটির হাস্যরসাত্মক অনুষ্ঠান কৌতুকশিল্পী বিল টুশ ভোর ৩টায় সংবাদ পাঠ করত। যার ফলে টার্নার মজা করে মন্তব্য করেন "এই মুহূর্তে আমাদের ১০০% শেয়ার আছে"। একবার তার সাথে সহ-সংবাদ পাঠক হিসেবে একটি জার্মান শেফার্ড কুকুর বসানো হয়। কুকুরটি টাই পরে বসে ছিল এবং পিনাট বাটার স্যান্ডউইচ খাচ্ছিল। যদিও এটি মাত্র একবার সম্প্রচারিত হয়েছিল, অনেকেই ভাবতেন এটি প্রতিদিনের একটি অনুষ্ঠান![১৭] ১৯৭২ সালে ডব্লিউটিসিজি আটলান্টা ব্রেভস এবং আটলান্টা হকস দলের খেলার সম্প্রচার স্বত্ব অর্জন করে। পরে তিনি উত্তর ক্যারোলিনার ইউএইচএফ চ্যানেল ৩৬ (বর্তমানে ডব্লিউসিএনসি) কিনে একই ধরনের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকেন।[১৮]
১৯৭৬ সালে, ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন অনুমোদন দেয় যে ডব্লিউটিসিজি তাদের সম্প্রচার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জাতীয় কেবল টিভি নেটওয়ার্কে সম্প্রচার করতে পারবে। সেই বছরের ১৭ ডিসেম্বর, ডব্লিউটিসিজি টিভিতে সুপার-স্টেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং পুরনো সিনেমা, কমেডি, কার্টুন, ও খেলাধুলার সম্প্রচার শুরু করে। কেবল টিভি ব্যবস্থা গড়ে উঠতে থাকলে, অনেক নেটওয়ার্ক টিভি তাদের সময়সূচি পূরণ করতে ডব্লিউটিসিজিতে অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে টেলিভিশনের দর্শকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বিজ্ঞাপনী রাজস্বও বাড়তে থাকে। টার্নারের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছায় এবং তার সম্পদের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। এরপর তিনি দক্ষিণ ক্যারোলিনার জ্যাকসনবোরোতে ৫,০০০ একর জমির একটি বাগান ২ মিলিয়ন ডলার মূল্য খরচ করে কিনে নেন।[১৯]
১৯৭৬ সালে, টার্নার আটলান্টা ব্রেভস কিনে নেন এবং ১৯৭৭ সালে তিনি আটলান্টা হকস কেনেন।[২০][২১] এই দুটি দল কেনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ডব্লিউটিসিজি-তে খেলাধুলার কভারেজ বাড়ানো। যাতে সুপার-স্টেশন ডব্লিউটিবিএস-এর মাধ্যমে ব্রেভসের খেলাগুলোর সম্প্রচার উত্তর আমেরিকার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। এতে দলটি জনপ্রিয়তা পায়। এমনকি ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে তাদের সাফল্যের আগেই এটি পরিচিতি লাভ করে।[২২] এক পর্যায়ে তিনি ১৭ নম্বর জার্সি পরা খেলোয়াড় পিচার অ্যান্ডি মেসারস্মিথকে টেলিভিশন স্টেশনের প্রচারের জন্য তার পদবি নাম "চ্যানেল" রাখার পরামর্শ দেন।[২৩]
১৯৭৮ সালে টার্নার ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এর একটি ছাত্র-পরিচালিত রেডিও স্টেশন, টেকনোলজি ব্রডকাস্টিং সিস্টেম (বর্তমানে ডাব্লুএমবিআর) নামের স্বত্বটি ৫০,০০০ ডলারে কিনে নেন। এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে টার্নার তার "সুপার-স্টেশন" এর ব্র্যান্ডিংকে টিবিএস নামের আদ্যক্ষর ব্যবহার করে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হন। টার্নার কমিউনিকেশনস গ্রুপের নাম পরিবর্তন করে টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম এবং ডব্লিউটিসিজি-এর নাম পরিবর্তন করে ডব্লিউটিবিএস রাখা হয়।[২৪]
১৯৮৬ সালে, টার্নার গুডউইল গেমস চালু করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল মূলত পুঁজিবাদী ও সাম্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা কমানো। সুপার-স্টেশনের মাধ্যমে তিনি অলিম্পিক এর মত ক্রীড়া সম্প্রচার শুরু করেন।
১৯৯৬ সালে, গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস-এর জন্য নির্মিত সেন্টেনিয়াল অলিম্পিক স্টেডিয়াম পরবর্তীতে আটলান্টা ব্রেভসের জন্য টার্নার ফিল্ড নামে রূপান্তরিত হয়, যা তার সম্মানে নামকরণ করা হয়।[২৫]
১৯৭৮ সালে তিনি ২৪ ঘণ্টার খবরের চ্যানেল চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদমাধ্যম নির্বাহী রিস শোয়েনফেল্ডের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন (শোয়েনফেল্ড ১৯৭৭ সালে একই প্রস্তাব নিয়ে টার্নারের কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল)।[২৬] শোনফেল্ড উত্তর দিয়েছিলেন যে, যদি তারা সমস্ত সম্প্রচারের জন্য একটি সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক সম্প্রচার কক্ষ এবং স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ৩০০ জন কর্মী দিয়ে এ চ্যানেল চালু করা যেতে পারে।[২৬] এটি করতে প্রাথমিকভাবে $১৫ থেকে $২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং মাসে কয়েক মিলিয়ন ডলার পরিচালনার খরচ লাগবে।[২৬]
১৯৭৯ সালে, টার্নার তার নর্থ ক্যারোলিনার স্টেশন বিক্রি করে লেনদেনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন এবং সস্তা, ইউনিয়নহীন আটলান্টায় তার সদর দপ্তর স্থাপন করেন।[২৬] শোয়েনফেল্ডকে তখন-কেবল নিউজ নেটওয়ার্ক (সিএনএন) এর প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়।[২৬] সিএনএন জিম কিচেল্লকে নিয়োগ করে। জিম কিচেল্ল এনবিসি-এর সংবাদ বিভাগের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। তিনি প্রযোজনা ও অপারেশনের সহ-সভাপতি হন। স্যাম জেলম্যানকে সংবাদ ও নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। বিল ম্যাকফেইলকে ক্রীড়া বিভাগের প্রধান করা হয়। টেড কাভানাউকে স্টাফ পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বার্ট রাইনহার্ডকে নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়।[২৬] ১৯৮২ সালে, স্কনফেল্ডকে বরখাস্ত করা হয়। টার্নার তার বরখাস্তের বিরোধ করেন। স্যান্ডি ফ্রিম্যান স্কনফেল্ডের স্থলাভিষিক্ত হন।[২৭]
টার্নার তার আত্মবিশ্বাস ও সাহসী মন্তব্যের জন্য পরিচিত ছিলেন, বিশেষ করে সিএনএন চালু হওয়ার আগে তিনি এক বিখ্যাত ঘোষণা দেন: "পৃথিবী শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সই করব না। আমরা থাকব, এবং আমরা পৃথিবীর শেষের কথা সরাসরি সম্প্রচার করব, এবং এটি হবে আমাদের শেষ অনুষ্ঠান... । আমরা কেবল একবার জাতীয় সঙ্গীত বাজাবো। ১লা জুন [নেটওয়ার্ক টিভি এর প্রথম সম্প্রচার ১ জুন, ১৯৮০], এবং যখন পৃথিবীর শেষ আসবে, তখন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করার আগে ' তোমার কাছে, আমার ঈশ্বর, তোমার কাছে ' গানটি বাজাবো।" জানা গেছে, টার্নার সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি একটি সামরিক কুচকাওয়াজ দলের স্তোত্র বাজানোর একটি ভিডিও রেকর্ডিং কমিশন করেছিলেন। টার্নার মাঝে মাঝে সাংবাদিকদের জন্য টেপটি বাজিয়েছেন, তিনি এটি তৈরির কারণ উল্লেখ করেছেন। ২০১৫ সালে, ভিডিওটি সিএনএন এর ডাটাবেসে পাওয়া যায় এবং ফাঁস হয়ে যায়। ভিডিওটি ডাটাবেসে "[মুক্তির জন্য অপেক্ষা করুন] যতক্ষণ না পৃথিবীর শেষ প্রান্ত নিশ্চিত করা হয়" হিসাবে ট্যাগ করা হয়েছিল।[২৮]
১৯৮১ সালে টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম ফ্যাবার্গে ইনকর্পোরেটেড থেকে ব্রুট প্রোডাকশনস অধিগ্রহণ করে।[২৯]
সিবিএস অধিগ্রহণের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর তিনি ১৯৮৬ সালে ১.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কার্ক কেরকোরিয়ানের কাছ থেকে ফিল্ম স্টুডিও এমজিএম/ইউএ এন্টারটেইনমেন্ট কোং কিনে নেন।[৩০] অধিগ্রহণের পর টার্নার প্রচুর ঋণ সংগ্রহ করেছিলেন এবং অধিগ্রহণের কিছু অংশ বিক্রি করেছিলেন। কেরকোরিয়ান পরে এমজিএম/ইউএ এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেল কিনে নেন। কালভার সিটিতে অবস্থিত এমজিএম/ইউএ স্টুডিও লটটি লরিমার/টেলিপিকচারের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। তবে টার্নার এমজিএম-এর মে ১৯৮৬-এর পূর্বের সিনেমা ও টেলিভিশন গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করেন।[৩১]
এরপর, ১৯৮৬ সালের আগস্টে টার্নার এন্টারটেইনমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল অধিগ্রহণকৃত সিনেমা ও টেলিভিশন শোগুলোর পরিচালনা ও সম্প্রচার করা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মোট ২২০০টি সিনেমার মালিকানা লাভের পর, টার্নার তার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সেগুলো সম্প্রচার শুরু করেন।[৩০] তাদের পুরোনো ছবি সম্প্রচারের সময়, তিনি মূলত সাদা-কালো রঙে ধারণ করা ছবিগুলির রঙিন সংস্করণ সম্প্রচার করতেন।[৩২] তবে কালো-সাদার সিনেমাগুলোকে রঙিন করার কারণে তিনি সমালোচনার সম্মুখীন হন। চলচ্চিত্র সমালোচক রজার এবার্ট টার্নারের রঙিন কাসাব্লাঙ্কার সম্প্রচার সম্পর্কে লিখেছেন, "এটি হবে চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখজনক দিনগুলির মধ্যে একটি। এটি দুঃখজনক কারণ এটি প্রমাণ করে যে টার্নার এমন কোনও চলচ্চিত্রকে রেহাই দেবেন না, কোনও ক্লাসিক যত দুর্দান্তই হোক না কেন যা তার কম্পিউটারাইজড গ্রাফিতি দলগুলির অশ্লীলতা থেকে নিরাপদ।"[৩৩] এই বিতর্কের ফলস্বরূপ আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেস "ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রি" গঠন করে, যাতে মূল ফরম্যাটে সিনেমাগুলো সংরক্ষণ করা যায়।[৩৪]
১৯৮৮ সালে, টার্নার জিম ক্রকেট প্রমোশনস কিনে নেন যার নামকরণ করেন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ রেসলিং যা পরে ভিন্স ম্যাকমাহনের ওয়ার্ল্ড রেসলিং ফেডারেশন এর প্রধান প্রতিযোগী হয়ে ওঠে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সোমবার রাতের যুদ্ধ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯০-এর দশক জুড়ে স্থায়ী ছিল। ২০০১ সালে, এওএল টাইম ওয়ার্নারের অধীনে থাকার সময় ডাব্লিউসিডাব্লিউ ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর কাছে বিক্রি করা হয়।[৩৫]
এছাড়াও ১৯৮৮ সালে, টার্নার গন উইথ দ্য উইন্ডের সাথে টার্নার নেটওয়ার্ক টেলিভিশন সম্প্রচার চালু করেন। টিএনটি প্রাথমিকভাবে পুরানো সিনেমা এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখানোর পরে, মূল অনুষ্ঠান এবং নতুন পুনঃপ্রচার যোগ করে। টার্নার পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে টার্নার ক্লাসিক মুভিজ তৈরি করেন, যেখানে টার্নারের ১৯৮৬-পূর্ববর্তী এমজিএম চলচ্চিত্রের সম্প্রচার করা হতো। পাশাপাশি ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ১৯৫০ সালের আগে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলিও সম্প্রচারিত হয়, যদিও এটি তখন থেকে তার লাইব্রেরি প্রসারিত করেছে।
১৯৮৯ সালে, টার্নার বৈশ্বিক সমস্যার ইতিবাচক সমাধান প্রদানের জন্য কথাসাহিত্যের জন্য টার্নার টুমরো ফেলোশিপ পুরস্কার চালু করেন। প্রথম বিজয়ী ছিলেন ড্যানিয়েল কুইনের ইসমাইল। ১৯৯০ সালে তিনি টার্নার ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। সংগঠনটি পরিবেশ এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পর্কিত বিষয়গুলির উপর জনহিতকর অনুদানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। একই বছর তিনি ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটকে পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক সুপারহিরো চরিত্র প্রধান রেখে টেলিভিশন সিরিজ ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্স এবং এর পরবর্তী সিরিজ প্রযোজনা করেন।[৩৬]
১৯৯২ সালে টার্নার তার অধিগ্রহণকৃত এমজিএম লাইব্রেরির ভিত্তিতে কার্টুন নেটওয়ার্ক চালু করেন। এই চ্যানেলে লুনি টিউনস, মেরি মেলোডিজ, ফ্লিশার স্টুডিওস-এর পপাই কার্টুনের মতো ক্লাসিক অ্যানিমেশন সম্প্রচার করা হত। ১৯৯১ সালে টার্নার হান্না-বারবেরা প্রোডাকশনস-ও কিনে নেয়। যা পরে স্কুবি-ডু, দ্য ফ্লিন্টস্টোনস, দ্য জেটসনস-এর মতো জনপ্রিয় কার্টুন তৈরি করেছিল।। টার্নারের আদি শহর সিনসিনাটিতে সদর দপ্তর ছিল) কিনে নেয়, এমসিএ ইনকর্পোরেটেড (যার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে ছিল ইউনিভার্সাল পিকচার্স এবং ইউনিভার্সাল ডেস্টিনেশনস অ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্সেস ) এবং হলমার্ক কার্ডস সহ আরও বেশ কয়েকটি দরদাতাকে পিছনে ফেলে। ১৯৯৬ সালে টাইম ওয়ার্নার একীভূত হওয়ার সাথে সাথে, চ্যানেলের আর্কাইভগুলি পরবর্তী ওয়ার্নার ব্রাদার্স কার্টুন লাইব্রেরির পাশাপাশি টাইম ওয়ার্নারের মালিকানাধীন অন্যান্য কার্টুনগুলিও অর্জন করে।
১৯৯৩ সালে, টার্নার এবং রাশিয়ান সাংবাদিক এডুয়ার্ড সাগালাজেভ মস্কো ইন্ডিপেন্ডেন্ট ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই কর্পোরেশনটি রাশিয়ান টেলিভিশনে ষষ্ঠ ফ্রিকোয়েন্সি টিভি-৬ নামে একটি রুশ চ্যানেল চালু করেন। [৩৭] পরবর্তীতে, এটি ব্যবসায়ী বরিস বেরেজোভস্কি কিনে নেন। ২০০৭ সালে টিভি-৬ এর লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং নবায়নের জন্য কোনও আবেদন করা হয়নি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম ১০ অক্টোবর, ১৯৯৬ সালে টাইম ওয়ার্নার এন্টারটেইনমেন্টের সাথে একীভূত হয়। টার্নারকে টাইম ওয়ার্নার এন্টারটেইনমেন্ট এবং টার্নারের কেবল নেটওয়ার্ক বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।[৩৮] সিইও জেরাল্ড লেভিন টার্নারকে কেবল নেটওয়ার্কের প্রধান পদ থেকে বাদ দেন। কিন্তু টাইম ওয়ার্নার এন্টারটেইনমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেই থেকে যান। ২০০১ সালের মার্চ মাসে টার্নার ব্রডকাস্টিংয়ের প্রধান হিসেবে জেমি কেলনার তার স্থলাভিষিক্ত হন। জেমি কেলনার ডব্লিউসিডব্লিউ-এর টেলিভিশন চুক্তি বাতিলের জন্যও অনেকাংশে দায়ী ছিলেন। এই নেটওয়ার্কগুলো আগে টার্নার পরিচালনা করতেন।[৩৯][৪০][৪১] টার্নার ২০০৩ সালে এওএল টাইম ওয়ার্নারের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ২০০৬ সালে টাইম ওয়ার্নারের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন।[৪২][৪৩]
২০০১ সালের ১১ জানুয়ারি আমেরিকা অনলাইন (এওএল) টাইম ওয়ার্নার এন্টারটেইনমেন্ট কিনে নেয়। এটি এওএল টাইম ওয়ার্নার হয়ে ওঠে।[৪৪] এই একীভূতকরণকে টার্নার প্রাথমিকভাবে সমর্থন করেছিলেন। [৪৫] তবে শেয়ারবাজারে ডট-কম বুদবুদের বিস্ফোরণ এওএল বিভাগের বৃদ্ধি ও মুনাফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে এওএল টাইম ওয়ার্নারের কর্মক্ষমতা এবং শেয়ারের দাম কমে যায়। ২০০১ সালের শরতে একটি বোর্ড সভায় টার্নার এওএল টাইম ওয়ার্নারের নির্বাহী জেরাল্ড লেভিনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। এটি লেভিনের পদত্যাগের ঘোষণার দিকে নিয়ে যায়। লেভিন ২০০২ সালের শুরুতে পদ ছাড়েন। রিচার্ড পার্সনস তার স্থলাভিষিক্ত হন।[৪৬]লেভিন সিইও হিসেবে টার্নারকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে দূরে রেখেছিলেন। পার্সনস টার্নারকে কৌশলগত পরামর্শ দেওয়ার জন্য ফিরিয়ে আনেন। তবে টার্নার যে কার্যকরী ভূমিকা চেয়েছিলেন তা পাননি।[৪৭] ২০০৩ সালের অক্টোবরে টাইম ওয়ার্নার তার নাম থেকে এওএল বাদ দেয়। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে এওএল কে টাইম ওয়ার্নার গ্রুপ থেকে আলাদা করে একটি পৃথক কোম্পানি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
টার্নার ছিলেন টাইম ওয়ার্নারের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত ভাগীদার। [৪৬] একীভূতকরণের পর শেয়ার ভেঙে পড়ায় তার প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় বলে অনুমান করা হয়।[৪৮] তার পূর্বের সম্পদ ফেরত কেনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি উত্তর দেন যে "এখন সেগুলি কিনতে পারবে না"। [৪৯] ২০১৪ সালের জুন মাসে, রুপার্ট মারডকের ২১শ শতাব্দীর ফক্স কোম্পানিটির জন্য ৮০ বিলিয়ন ডলার মূল্য নির্ধারণ করে একটি দরপত্র জমা দেয়। টাইম ওয়ার্নারের বোর্ড এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে। ৫ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রত্যাহার করা হয়।[৫০]
টার্নার এবং রুপার্ট মারডকের মধ্যে বহু বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এটি শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। তখন মারডকের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি ইয়ট টার্নারের নেতৃত্বাধীন ইয়ট কনডরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এটি সিডনি থেকে হোবার্ট ইয়ট দৌড় প্রতিযোগিতার সময় ঘটে। এতে কনডর প্রতিযোগিতার শেষ রেখা থেকে ৬.২ মাইল (১০ কিলোমিটার) দূরে আটকে যায়। দৌড় প্রতিযোগিতার পরের নৈশভোজে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় টার্নার মারডককে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। এরপর তিনি মারডককে লাস ভেগাসে একটি টেলিভিশন সম্প্রচারিত মুষ্টিযুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেন।[৫১]
মারডকের ফক্স নিউজ ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি টার্নারের সিএনএন-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। মারডক সিএনএন-কে তার "উদারপন্থী" সংবাদ প্রচারের জন্য তাচ্ছিল্য করতেন। টাইম ওয়ার্নার তাদের নিউ ইয়র্ক শহরে কেবল নেটওয়ার্কে ফক্স নিউজ চালাতে অস্বীকার করে। তখন তারা একটি একীভূতকরণের মধ্যে ছিল। টার্নার বলেন, এটি "রুপার্ট মারডককে পোকার মতো পিষে দেবে।"[৫২]
২০০৩ সালে টার্নার মারডককে আরেকটি মুষ্টিযুদ্ধের জন্য চ্যালেঞ্জ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আক্রমণকে সমর্থন করার জন্য মারডককে "যুদ্ধবাজ" বলে অভিযুক্ত করেন।[৫৩][৫৪]
তবে ২০১৯ সালে সাপ্তাহিক পত্রিকা ভ্যারাইটির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে টার্নার প্রকাশ করে। তিনি বলেন, তারা দুজন এখন মিলেমিশে আছেন।।[৫৫]
ব্রেভসের মালিক হিসেবে তার প্রথম দশকের বেশিরভাগ সময় টার্নার একজন অত্যন্ত সক্রিয় মালিক ছিলেন। মালিক হিসেবে তার দ্বিতীয় বছরে এটি ১৯৭৭ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন][ তথ্যসূত্র প্রয়োজন ]
সান ফ্রান্সিসকো জায়ান্টস থেকে ফ্রি এজেন্ট আউটফিল্ডার গ্যারি ম্যাথিউসকে সই করানোর চেষ্টা করার সময় টার্নারকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য ৩ জানুয়ারী ১৯৭৭ তারিখে বেসবল কমিশনার বোয়ি কুহন এক বছরের জন্য বরখাস্ত করেন। ম্যাথিউস ১৮ নভেম্বর, ১৯৭৬ সালে ব্রেভসের সাথে পাঁচ বছরের ১.৮৭৫ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ১৯৭৬ সালের ওয়ার্ল্ড সিরিজের সময় তৎকালীন জায়ান্টস মালিক বব লুরির প্রতি টার্নারের করা মন্তব্য থেকে কুহনের কর্মকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। এছাড়াও, ১৯৭৮ সালের জুনে হাই স্কুল এবং কলেজের খেলোয়াড়দের ড্রাফটে ব্রেভদের প্রথম রাউন্ডের নির্বাচন থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। [৫৬] তবে টার্নার সফলভাবে স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন এবং কুহন নমনীয় হন এবং খসড়া নির্বাচন পুনর্বহাল করেন, যার মধ্যে একজন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বব হর্নার হবেন। [৫৭]
১৯৭৭ সালের ১১ মে যখন দলটি টানা ১৬ ম্যাচ হারের মধ্যে আটকে ছিল টার্নার ম্যানেজার ডেভ ব্রিস্টলকে ১০ দিনের "স্কাউটিং ট্রিপে" পাঠান এবং টার্নার নিজেই অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কনি ম্যাকের পর মেজরদের প্রথম মালিক/ব্যবস্থাপক হন। জাতীয় লীগের সভাপতি চাব ফিনি তাকে দল পরিচালনা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার আগে তিনি এক খেলায় ( পিটসবার্গ পাইরেটসের কাছে পরাজয়) [৫৮] দলের নেতৃত্ব দেন। ফিনি লিগের প্রধান নিয়মগুলির উদ্ধৃতি দিয়েছেন যা ম্যানেজার এবং খেলোয়াড়দের তাদের ক্লাবে স্টক মালিকানা থেকে বিরত রাখে। টার্নার বেসবল কমিশনার বোয়ি কুনের কাছে আবেদন করেন এবং বাড়ি ফিরে ব্রেভদের পরিচালনা করার জন্য উপস্থিত হন। তবে, কুহন টার্নারের "খেলার কার্যক্রমের সাথে পরিচিতির অভাব" উল্লেখ করে আপিলটি প্রত্যাখ্যান করেন। [৫৯]
১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে টার্নার বেসবল অপারেশন কর্মীদের উপর দৈনন্দিন কাজকর্ম ছেড়ে দিতে শুরু করেন এবং দলটি (এখনও টার্নারের মালিকানাধীন) ১৯৯৫ সালের ওয়ার্ল্ড সিরিজ জিতে নেয়।
২০০৭ সালে টাইম ওয়ার্নার (যা টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেমের সাথে একীভূত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল) আটলান্টা ব্রেভসকে লিবার্টি মিডিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। [৬০]
খেলাধুলা
মিডিয়া
হল অফ ফেম
সাংগঠনিক
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ তারিখে, রয়টার্স নিউজমেকারদের একটি সম্মেলনে, টার্নার ইরানের পারমাণবিক অবস্থান সম্পর্কে বলেছিলেন: "তারা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের ২৮,০০০ পারমাণবিক অস্ত্র আছে। কেন তাদের ১০টি থাকতে পারে না? আমরা ইসরায়েল সম্পর্কে কিছু বলি না কেন — তাদের প্রায় ১০০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে — ভারত, পাকিস্তান বা রাশিয়া।" [৬৯]
স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার বিলের একজন সমর্থক, টার্নার বলেছেন: "আমরাই একমাত্র প্রথম বিশ্বের দেশ যেখানে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নেই এবং এটি খুবই লজ্জাজনক।" [৭০]
২০১০ সালে,গভীর পানির দিগন্ত পরিবেশগত বিপর্যয় এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় আপার বিগ ব্রাঞ্চ মাইন দুর্ঘটনার পর, টার্নার সিএনএন-এ বলেছিলেন যে "আমি ভাবছি ঈশ্বর কি আমাদের বলছেন যে তিনি সমুদ্র উপকূলে খনন করিও না। এবং তার ঠিক আগে, পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় আমাদের সেই কয়লা খনি দুর্ঘটনা ঘটেছিল যেখানে আমরা ২৯ জন খনি শ্রমিককে হারিয়েছিলাম।" ... হয়তো পশ্চিম ভার্জিনিয়ার পাহাড়গুলো ভেঙে পড়েছে, যাতে তারা আরও কয়লা পেতে পারে, তাই হয়তো ঈশ্বর ক্লান্ত। আমার মনে হয় হয়তো আমাদের কয়লা মাটিতে ফেলে দেওয়া উচিত এবং সৌর, বায়ু এবং ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহারে মনোযোগী হওয়া উচিত। ..."
২০১৬ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে টার্নার ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করেছিলেন। [৭১] ২০১৮ সালে তিনি প্রকাশ করেন যে, জেন ফন্ডার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সময় তিনি একবার রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভেবেছিলেন, যিনি তাকে বলেছিলেন যে যদি তিনি তা করেন তবে তিনি তাকে ছেড়ে চলে যাবেন। [৭২]
বিশুদ্ধ পানি এবং জমির উন্নত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি টার্নার জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের উপায়গুলি সমাধানের জন্য টার্নার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। [৭৩] টার্নার তার নিজস্ব অর্থ থেকে ১২৫ মিলিয়ন ডলার ফাউন্ডেশনে বিনিয়োগ করেছেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মোকাবেলায় প্রতি বছর ৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছেন। ১৯৯৬ সালে মন্টানার এক সমাবেশে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, "আমি এখানে কাউকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছি না, আমার নিজের ৫টি সন্তান আছে।" তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য এর ফলে তৈরি সমস্যাগুলি সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। [৭৪]
২০০৯ সালে টার্নার পরিবেশ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য অপরাহ উইনফ্রে, বিল গেটস, জর্জ সোরোস এবং ডেভিড রকফেলার সহ অন্যান্য ব্যবসায়িক নেতাদের সাথে দেখা করেন। এই দলটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিও তুলে ধরে, যেখানে টিকা এবং টিকাদান প্রচেষ্টার সমালোচনা করা হচ্ছে, কারণ ধারণা করা হচ্ছে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জননীতি মুষ্টিমেয় অভিজাতদের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। যদিও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি, তবুও দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক পল হ্যারিস এই অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন তুলে ধরেন।[৭৫]
টার্নার একবার অ্যাশ ওয়েডনেসডের পালনকারীদের " যীশু পাগল " বলে মন্তব্য করেন। যদিও তিনি পরে এর জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। [৭৬] গর্ভপাতের বিরোধীদের " বোজো " বলে মন্তব্য করেন। [৭৬]
১৯৯৯ সালে, পোপ জন পল দ্বিতীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে টার্নার পোলিশ মাইন ডিটেক্টর সম্পর্কে একটি রসিকতা করেছিলেন। পোলিশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদেক সিকোরস্কির কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরে টার্নার ক্ষমা চেয়েছেন। [৭৭]
২০০২ সালে, টার্নার ইসরায়েলকে সন্ত্রাসের জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন: " ফিলিস্তিনিরা মানব আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের সাথে লড়াই করছে, তাদের কাছে এটুকুই আছে। ইসরায়েলিরা ... তাদের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক যন্ত্র রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের কাছে কিছুই নেই। তাহলে সন্ত্রাসী কারা? আমার কাছে মনে হয় যে উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবাদে জড়িত।" তিনি এর জন্য এবং ২০১১ সালে ৯/১১ ছিনতাইকারীদের সম্পর্কে করা মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন, কিন্তু নিজেকেও রক্ষা করেছিলেন: "দেখুন, আমি খুব ভালো চিন্তাবিদ, কিন্তু আমি মাঝে মাঝে ভুল শব্দ ধরি ... মানে, আমি আমার বক্তৃতা টাইপ করি না, তারপর সেখানে বসে টেলিপ্রম্পটার থেকে সেগুলো পড়ে শুনি, তুমি জানো। আমি এটাকে সমর্থন করি।" [৭৮]
২০০৮ সালে, টার্নার পিবিএসের চার্লি রোজ (টক শো/চার্লি রোজ) অনুষ্ঠানে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে যদি বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবেলায় পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বেশিরভাগ মানুষ মারা যাবে। "আমাদের বাকি মানুষেরা নরখাদক হয়ে যাবে"। টার্নার সাক্ষাৎকারে আরও বলেছিলেন যে তিনি আমেরিকানদের দুটির বেশি সন্তান না রাখার পক্ষে ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি বলেছিলেন যে চীনের এক সন্তান নীতি আমেরিকাতে বাস্তবায়ন করা উচিত। [৭৯]
টার্নার এন্টারপ্রাইজেস, ইনকর্পোরেটেড (TEI) হল একটি বেসরকারি আমেরিকান কোম্পানি যা ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং টেড টার্নারের ব্যবসায়িক স্বার্থ, জমির মালিকানা এবং বিনিয়োগ পরিচালনা করে।[৮০] যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আর্জেন্টিনা জুড়ে টার্নারের ২৪টি সম্পত্তির দেখাশোনা করে। দুই মিলিয়ন একর ব্যক্তিগত এবং খামারের জমি নিয়ে টার্নার উত্তর আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জমির মালিক। [৮১] তার ১৯টি খামারের মধ্যে - পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৬টি এবং আর্জেন্টিনায় তিনটি খামার রয়েছে। [৮১] জানুয়ারি ২০১৬ সালে, ওসেজ নেশন ওকলাহোমার ওসেজ কাউন্টিতে অবস্থিত ৪৩,০০০ একর (১৭০ বর্গকিমি) ব্লুস্টেম খামার টার্নারের কাছ থেকে কিনে নেয়। টার্নার ২০০১ সালে মূলত বাইসন পালন করার জন্য এই সম্পত্তিটি কিনেছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন][ তথ্যসূত্র প্রয়োজন ]
টার্নার এন্টারপ্রাইজেসের মাধ্যমে, তিনি কলোরাডো, ক্যানসাস, মন্টানা, নেব্রাস্কা, নিউ মেক্সিকো, ওকলাহোমা এবং দক্ষিণ ডাকোটাতে খামারের মালিক। [৮২][৮৩] তার মালিকানাধীন মোট জমির পরিমাণ ১,৯১০,৫৮৫ একর (৭,৭৩১.৮৬ বর্গকিমি), যা টার্নারকে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম ব্যক্তিগত জমির মালিকদের একজন করে তুলেছে। [৮৩]
টার্নার এন্টারপ্রাইজেস খামারগুলি মূলত বাইসন পালনের জন্য ব্যবহৃত হয়। তার বাইসনের পালে ১৫টি খামারে প্রায় ৫১,০০০ পশু রয়েছে যা বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত পাল। [৮১] কোম্পানির লক্ষ্য হলো "টার্নারের ভূমিগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই এবং পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীলভাবে পরিচালনা করা, পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির প্রাণীর সংরক্ষণকে উৎসাহিত করা।" [৮১] সম্পত্তিতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী প্রজাতির মধ্যে রয়েছে সাদা লেজযুক্ত হরিণ, বন্য টার্কি এবং ববহোয়াইট কোয়েল রয়েছে। [৮৪] বাইসন পালন ছাড়াও, খামারগুলিতে বাণিজ্যিকভাবে মাছ ধরা এবং শিকারের জন্যও ব্যবহৃত হয়। সীমিত টেকসই কাঠ সংগ্রহের পাশাপাশি নিউ মেক্সিকো খামারগুলিতে ইকো-ট্যুরিজমের জন্যও ব্যবহৃত হয়।[৮১] তার সবচেয়ে বড় খামার হল নিউ মেক্সিকোর ভার্মেজো পার্ক খামার। ৯২০ বর্গমাইল (২,৪০০ বর্গকিমি) আয়তনের এই খামারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যক্তিগত মালিকানাধীন, সংলগ্ন ভূমি।
টার্নার এন্টারপ্রাইজেস জনহিতকর এবং দাতব্য স্বার্থের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ ফাউন্ডেশন, নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ, টার্নার ফাউন্ডেশন,[৮৫] প্ল্যানেট ফাউন্ডেশন,[৮৬] এবং টার্নার বিপন্ন প্রজাতি তহবিলের প্রতিষ্ঠা করে। [৮০] টার্নার এন্টারপ্রাইজেসের সদর দপ্তর জর্জিয়ার আটলান্টায় অবস্থিত টার্নার বিল্ডিংয়ে (পূর্বে বোনা অ্যালেন অফিস বিল্ডিং ) অবস্থিত, যেখানে টেড'স মন্টানা গ্রিল রেস্তোরাঁ চেইন, টেড টার্নার রিজার্ভস [৮৭] এবং টার্নার রিনিউয়েবল এনার্জিও অবস্থিত। [৮৮][৮৯] ২০১১ সালে, টেড টার্নার এবং টিইআই কোম্পানির পার্কিং লটে ২৫টি সৌর প্যানেল স্থাপন করেন, যা ভবন ও এর ব্যবসাগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করে।[৯০]
টার্নারের সভাপতিত্বে, টার্নার এন্টারপ্রাইজেস, ইনকর্পোরেটেড এর নির্বাহী নেতৃত্বে সিইও এবং প্রেসিডেন্ট এস. টেলর গ্লোভারও রয়েছেন। [৯১]
টার্নার তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং পরে তিনবারই বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন জুডি নাই (১৯৬০–১৯৬৪), দ্বিতীয় স্ত্রী জেন শার্লি স্মিথ (১৯৬৫–১৯৮৮), এবং তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জেন ফন্ডা (১৯৯১–২০০১)। তার পাঁচজন সন্তান রয়েছে। [৯২] ৩ মে, ২০১২ তারিখে পিয়ার্স মরগানের সাথে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে, টার্নার বলেছিলেন যে তার.৪ জন বান্ধবী রয়েছে, যা তিনি স্বীকার করেছেন যে এটি জটিল কিন্তু তবুও বিবাহিত হওয়ার চেয়ে সহজ। [৯৩] তার সন্তানদের মধ্যে একজন, রবার্ট এডওয়ার্ড "টেডি" টার্নার ৪র্থ, ২০১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ঘোষণা করেন যে তিনি দক্ষিণ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এটি ছিল সেই কংগ্রেসীয় আসন, যা টিম স্কট মার্কিন সিনেটে মনোনীত হওয়ার পর খালি হয়েছিল। তবে নির্বাচনে টেডি টার্নার চতুর্থ স্থান অধিকার করেন এবং মাত্র ৭.৯০% ভোট পান।[৯৪][৯৫]
২০১০ সালে, টার্নার ওয়ারেন বাফেট এবং বিল গেটসের দান অঙ্গীকার নামক দাতব্য সংস্থায় যোগ দেন। মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির বেশিরভাগ অংশ দাতব্য কাজে দান করার প্রতিশ্রুতি দেন। [৯৬]
১৯৯৩ সালে প্রকাশিত "এটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ নয়" জীবনীতে, লেখক পোর্টার বিব টার্নারের লিথিয়াম গ্রহণ ও মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া, ১৯৮১ সালে প্রকাশিত "নেতৃত্ব দিন, অনুসরণ করুন অথবা পথ থেকে সরে আসুন" বইতে ক্রিশ্চিয়ান উইলিয়ামস সিএনএন চ্যানেল প্রতিষ্ঠার কাহিনি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। [৯৭] ২০০৮ সালে, টার্নার তার আত্মজীবনী ''আমাকে টেড বলে ডাকুন" প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি তার কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। [৯৮]
২০১৮ সালে সিবিএস সানডে মর্নিং -এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, টার্নার তার শরীরে লুই বডি ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্তের কথা জানান। [৯৯]
টার্নারের বয়স যখন ২৬, তখন তিনি সাভানা ইয়ট ক্লাবে পালতোলা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৪ সালে অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। [১০০] তিনি প্রথম ১৯৭৪ সালে আমেরিকা'স কাপ জেতার চেষ্টা করেন। ১২ মিটার ক্লাস ইয়ট ইউএস–২৫ মেরিনারে চড়ে প্রতিযোগিতায় রক্ষক দলের বাছাইপর্বে পরাজিত হন। ইউএস–২৬ কারেজিয়াস ইয়াট- এ টেড হুডের কাছে টার্নার পরাজিত হন।
টার্নারকে ১৯৭৭ সালে নিউ ইয়র্ক ইয়ট ক্লাবের জন্য হুড এবং লি লুমিস দ্বারা গঠিত আমেরিকা'স কাপ প্রতিরক্ষা সংস্থার সাথে যোগ দেওয়ার জন্য টার্নারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই দলটি তখনও কারেজিয়াসের মালিক ছিল কিন্তু ১৯৭৪ সালের আমেরিকা'স কাপ জয় রক্ষার জন্য একটি নতুন ১২ মিটার - ইউএস–২৮ স্বাধীনতা - নকশা এবং নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বাছাইপর্বে, টার্নারের নেতৃত্বে তিন বছর পুরনো কারেজাস হুড এবং ইন্ডিপেন্ডেন্সের চেয়ে দ্রুততম ইয়াট প্রমাণিত হয় [১০১] এবং ১৯৭৭ সালের দৌড়ে দৌড়ানোর জন্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৭ সালের ১৩ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, টার্নারের নেতৃত্বে, কারেজাস নোয়েল রবিন্সের নেতৃত্বে প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ইয়াটকে টানা চার দৌড় প্রতিযোগিতায় পরাজিত করে।[১০২] চারটি দৌড়ের মধ্যে কারেজিয়াস ইয়াটের সর্বোচ্চ জয়ের ব্যবধান ছিল ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ড। [১০২][১০৩]
১৯৭৯ সালের ফাস্টনেট দৌড় প্রতিযোগিতায় এক ঝড়ের মধ্যে যেখানে ১৫ জন প্রতিযোগী নিহত হন, তিনি এসএন্ডএস -ডিজাইন করা [১০৪] ৬১-ফুট লম্বা টেনাসিয়াসের নেতৃত্ব দেন এবং সংশোধিত সময়ের ভিত্তিতে বিজয়ী হন।[১০৫]
১৯৭৭ সালের আমেরিকা কাপ জেতার পর টার্নার ৪ জুলাই, ১৯৭৭ তারিখে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের প্রচ্ছদে উপস্থিত হন।[১০৬][১০৭] টার্নার ১৯৯৩ সালে আমেরিকা'স কাপ হল অফ ফেমে [১০৮] এবং ২০১১ সালে ন্যাশনাল সেলিং হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। [১০৯]
টার্নারকে কেবল টেলিভিশন শিল্পকে ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছিলেন তাকে "সম্প্রচার জগতের মহান আলেকজান্ডার" হিসেবে ধরা হয়:[১১০]
যদিও টার্নারকে একজন "বীর মুক্তিদাতা" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলিকে নিপীড়ক বদমাশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবুও বিষয়বস্তুর দিক থেকে তার পরিচালিত অনুষ্ঠানগুলি অনুপ্রেরণামূলক ছিল না। তার নেটওয়ার্কটি সিটকম রিরান, পুরানো সিনেমা, কার্টুন এবং আটলান্টা ব্রেভস গেমের সম্প্রচারের ওপর তৈরি হয়েছিল। তিনি অতীতের ক্লাসিক নাটকের জন্য দর্শক খুঁজে পেয়েছিলেন, সেই সাথে পেশাদার কুস্তির মতো সামান্য নিম্নমানের বিষয়বস্তুতেও দর্শক পেয়েছিলেন। তবুও, তিনি পুনরায় প্রচারিত অনুষ্ঠান ও অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় বিষয়বস্তুর জন্যও মহিমান্বিত ভাষা ব্যবহার করতেন এবং দাবি করতেন যে তিনি আমেরিকাকে টেলিভিশনের সোনালি যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একবার তিনি বলেছিলেন, "আমি সেই নীতিগুলোর দিকে ফিরে যেতে চাই যা আমাদের ভালোর দিকে নিয়েছিল।" তার প্রোগ্রামিংয়ের মতোই, তার দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল নস্টালজিক, দ্বৈততাবাদী এবং আত্মনির্ভরশীল। [১১০]
১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে কেবল শিল্পের প্রসার ঘটে, যখন টার্নার মডেলের উপর ভিত্তি করে প্রায় এক ডজন কেবল নেটওয়ার্ক টেলিভিশন চালু হয়। এর মধ্যে ইএসপিএন, এমটিভি, ব্রাভো, শোটাইম, বিইটি, ডিসকভারি চ্যানেল এবং ওয়েদার চ্যানেল সহ আমরা এখন কেবল টিভির প্রধান বিষয়গুলি বিবেচনা করি এমন অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে কিছু নেটওয়ার্ক যেমন আর্টস, সিবিএস কেবল ও স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেল টিকে থাকতে পারেনি এবং অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়ে যায় বা সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।[১১০]
আটলান্টা ভিত্তিক একটি স্বাধীন সংস্থা হোপ-বেকহ্যামের সহ-মালিক এবং সভাপতি বব হোপ বর্ণনা করেছেন যে "অসাধারণ। তার দৃষ্টি, তার সংকল্প এবং কখনোই হাল না ছাড়ার মানসিকতা ছিল সংক্রামক। তিনি ছোট পরিসর থেকে শুরু করতে প্রস্তুত ছিলেন এবং তার ধারণাগুলোকে বড় করে তোলার ধৈর্য ও অধ্যবসায় ছিল"। [১১১] হোপ আরও বলেন যে, "কিছু কিছু দিক থেকে তিনি বিতর্কিত ছিলেন, তবে বেশিরভাগ দিক থেকেই তিনি অসাধারণ। তিনি বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, যোগাযোগের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তিনি বলতেন, 'একজনের কাছে যে সন্ত্রাসী, অন্যজনের কাছে সে স্বাধীনতার যোদ্ধা।' যদি তিনি মানুষকে একে অপরকে বোঝাতে সক্ষম হতেন, তাহলে যুদ্ধ হতো না। তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সাহসী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সাহসী এবং সংক্রামক। তাঁর গুডউইল গেমস, জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের সৃষ্টি এবং মূল সিএনএন-এর সংবাদের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল শান্তির জন্য নিবেদিত আবেগের প্রতিফলন"। [১১১]
পেশাদার কুস্তির প্রবর্তক এবং ডাব্লিউসিডাব্লিউ- এর প্রাক্তন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, টার্নারের পরে দ্বিতীয় দায়িত্বে থাকা, এরিক বিশফ টার্নারের প্রশংসা করে বলেছেন, "তিনি একজন অনুপ্রেরণামূলক নেতা ছিলেন, তিনি একজন ঝুঁকি গ্রহণকারী ছিলেন, ঝুঁকি নেওয়া লোকদের তিনি প্রশংসা করতেন, তিনি ব্যর্থতাকে ভয় পেতেন না, যদিও বেশিরভাগ মানুষ ভয় পান।" টেড ব্যর্থ হতে ভয় পেত না, বরং সে চেষ্টা না করে পরবর্তী দিগন্ত জয় না করতে আরও ভয় পেত। ” [১১২]
১৯৯৯ সালের ২৪শে জুন, ভিন্স ম্যাকমাহন লেট নাইট উইথ কোনান ও'ব্রায়ানে বলেছিলেন: "টেড সম্পর্কে আমি শুধু এটুকুই বলব যে সে একজন কুত্তার বাচ্চা, তা ছাড়া, সে সম্ভবত খারাপ লোক নয়, তবে আমি তাকে মোটেও পছন্দ করি না"। [১১৩] ২০২১ সালের শেষের দিকে, টার্নারের ডাব্লিউসিডাব্লিউ-এর তুলনায় নতুন অল এলিট রেসলিং এর সাথে তুলনায় জিজ্ঞাসা করা হলে, ম্যাকমাহন অল এলিট রেসলিং-কে উড়িয়ে দেন, বলেন যে "এটি অবশ্যই এমন পরিস্থিতি নয় যেখানে 'উচ্চ জোয়ার' আসে কারণ সেই সময় টেড টার্নার টাইম ওয়ার্নারের সমস্ত সম্পদ নিয়ে আমাদের পিছনে ছুটছিলেন"। [১১৪]
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
Renamed Turner Field – after Ted Turner, the founder of Cable News Network (CNN) whose global headquarters are in the city – the stadium has hosted Major League Baseball (MLB) for almost 20 years.
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)