টেরি ফক্স | |
---|---|
জন্ম | টের্যান্স স্ট্যানলি ফক্স ২৮ জুলাই ১৯৫৮ |
মৃত্যু | জুন ২৮, ১৯৮১ নিউ ওয়েস্টমিনিস্টার, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, কানাডা | (বয়স ২২)
মৃত্যুর কারণ | মেটাসটাটিক ওস্টেওসারকোমা |
শিক্ষা | সিমন ফ্রাসার বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | ম্যারাথন অফ হোপ |
উপাধি | কম্পেনিয়ন অফ দ্যা অর্ডার অফ কানাডা |
টের্যান্স স্ট্যানলি "টেরি" ফক্স (২৮ জুলাই ১৯৫৮ - ২৮ জুন ১৯৮১) ছিলেন একজন কানাডিয়ান ক্রীড়াবিদ, মানবহিতৈষী এবং ক্যান্সার গবেষাণা কর্মী। গাড়ী দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে ঘটনাক্রমে তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধে এবং তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে কেমোথেরাপির কষ্টকর অভিজ্ঞতা আর ক্যান্সার আক্রান্ত অন্য বাচ্চাদের যন্ত্রণা দেখে টেরির মন কেঁদে উঠে। ক্যান্সারে আক্রান্ত টেরি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অনুভব করেন, যে দূরারোগ্য রোগের কারণে আজ তিনি মৃত্যুপথ যাত্রী সে রোগ যেন আর কারো জীবন কেঁড়ে নিতে না পারে সে জন্য তার কিছু করা উচিত। তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্যান্সার গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তিনি সংগ্রহ করবেন এবং সেই সঙ্গে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবেন। আর এর জন্য সুবিশাল কানাডার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত তিনি দৌড়াবেন। টেরি আশা করেছিলেন যদি সারা দেশের লোক মাত্র এক ডলার করেও দেয় তাহলেও ক্যান্সার গবেষণার জন্য সংগৃহীত হবে দুই কোটি চল্লিশ লাখ ডলার। তার কেঁটে ফেলা পায়ের জায়গায় একটি নকল পা লাগানো হয়। এই নকল পা দিয়েই তিনি প্রতিদিন একটি ম্যারাথনের (২৬ মাইল) সমান পথ অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের জীবন বাজি রেখে টেরি ক্যান্সার গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করেন। ১৪৩ দিনে পাড়ি দেন ৫,৩৭৩ কিলোমিটার পথ। তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে প্রদান করা হয় অর্ডার অব কানাডা খেতাব, সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তিনি এই খেতাবটি অর্জন করেন। ক্যান্সার গবেষণায় তার অবদানের জন্য কানাডায় তাকে জাতীয় বীর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১]
টেরি ফক্স ১৯৫৮ সালের ২৮ জুলাই কানাডার মানিটোবায় রোল্যান্ড ফক্স এবং বেটি ফক্স দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। টেরির জন্মের কয়েক বছর পরই তার পরিবার পাড়ি জমায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাংকুভারের কাছে; পোর্ট ককুইটলামে।[২] ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিল টেরির অদম্য আগ্রহ। পোর্ট ককুইটলাম সেকেন্ডারি স্কুলের শেষ বর্ষে টেরি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডগ অ্যালওয়ার্ডের সঙ্গে যৌথভাবে বর্ষসেরা অ্যাথলেটের সম্মান অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ভালোবাসতেন ফুটবল, রাগবি, বেসবল এবং বাস্কেটবল। পরবর্তীতে টেরি সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেন।
১৯৭৬ সালের ১২ নভেম্বর। ফক্স নিজে গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে আসছিলেন। পথে তার গাড়ির পেছন দিকে একটি পিকআপ ধাক্কা দেয়। টেরি তার ডান পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা পান। কিন্তু ব্যথাকে গুরুত্ব না দিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। ডিসেম্বর মাসে তিনি পায়ে আবার ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু তখন বাস্কেটবল খেলার সময় হওয়ায় এ ব্যথাকে তিনি গুরুত্ব দেননি। ১৯৭৭ সালের মার্চে ব্যথা তীব্রতর হলে তাকে হাসপাতলে ভর্তি হতে হয়। ডাক্তাররা বিভিন্ন পরিক্ষা নিরীক্ষার পরে অস্টিওসারকোমা নামে তার এক ধরনের ক্যান্সার হয়েছে বলে ঘোষণা করেন। ক্যান্সারের উৎপত্তিস্থল হল তার ডান পায়ের গোড়ালি। ডাক্তাররা তাকে বলেন, ডান পা কেটে ফেলতে হবে এবং কেমোথেরাপি চালিয়ে যেতে হবে। তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ। টেরির ডান পা কেটে ফেলতে হলো।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে টেরি অনুভব করলেন তার মতো আরও অসংখ্য মানুষের জীবন-যন্ত্রণাবোধ। খুব কাছ থেকে দেখলেন সর্বনাশা ক্যান্সার কীভাবে টগবগে তারুণ্যকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এক সময় সিদ্ধান্তটা নিয়েই নেন যে, বেঁচে থাকলে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ এবং ক্যান্সার গবেষণার জন্য তিনি কাজ করবেন। সেই ইচ্ছা পূরণ করতে তিনি একটানা দৌড়েছিলেন ১৪২ দিন। পাড়ি দিয়েছিলেন দীর্ঘ ৫ হাজার ৩৭৩ কিলোমিটার পথ। ইতিহাসের পাতায় যা আজ ম্যারাথন অব হোপ নামে পরিচিত। তার উদ্দেশ্য ছিল ক্যান্সার গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, সেই সাথে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী করা। আর সে জন্য সুবিশাল কানাডার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত তিনি দৌড়াবেন। টেরি আশা করেছিলেন, যদি সারা দেশের লোক মাত্র এক ডলার করেও দেয় তাহলেও ক্যান্সার গবেষণার জন্য সংগৃহীত হবে দুই কোটি চল্লিশ লাখ ডলার। সেজন্য ১৪ মাস অনুশীলন করার পর, ১৯৮০ সালের ১২ এপ্রিল পূর্ব কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের পানিতে তার কৃত্তিম ডান পা-টি ডুবিয়ে এবং বড় দুটি বোতলে মহাসাগরের পানি নিয়ে টেরি যাত্রা শুরু করলেন। [৩] তার ইচ্ছে একটি স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে নিজের কাছে রাখা আর অন্যটি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় পৌঁছে প্রশান্ত মহাসাগরের পানিতে বিসর্জন দেয়া। ফোর্ড মোটর কোম্পানি তাকে একটি ক্যাম্পার ভ্যান প্রদান করে, ইম্পেরিয়াল অয়েল জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব নেয় এবং এডিডাস তার জুতো স্পন্সর করে। যেসব কোম্পানি নানা রকম শর্ত সাপেক্ষে ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপনের কথা বলে তাকে স্পন্সর করার প্রস্তাব দেয় তাদের টেরি ফিরিয়ে দেন। টেরি চান নি তার এই মহৎ উদ্দেশ্যের ম্যারাথনের মাধ্যমে কেউ ব্যবসায়িক ভাবে লাভবান হোক। টেরির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডগ এলওয়ার্ড রান্নাবান্নার কাজ এবং ভ্যানে তার প্রয়োজনীয় মালামাল বহন করে তাকে সাহায্য করার দায়িত্ব নেন। তিনি প্রতিদিন গড়ে ম্যারাথনের সমান, ২৬ মাইল দৌড়ানোর পরিকল্পনা করেন।
বরফশীতল বৃষ্টি, প্রচণ্ড বাতাস এমনকি তুষারপাতকে অগ্রাহ্য করে টেরি প্রতিদিন ২৬ মাইল দৌড়াতেন। যাত্রা পথে কিছু মানুষ তাকে কটু কথা বলে উত্তক্ত করার চেষ্টা করে যা তাকে একটু রাগান্বিত এবং হতাশ করে তোলে। সন্দেহবাদীদের ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করে দিনের পর দিন দৌড়ে টেরি অতিক্রম করে যান ডার্টমাউথ, শার্লট টাউন, মন্ট্রিয়ল, টরেন্টো। এর মাঝে তিনি বিভিন্ন স্থানে তার বক্তব্য প্রদান করেন। টেরির সেই সব আবেগঘন বক্তব্য স্পর্শ করে যায় অসংখ্য মানুষের হৃদয়। সবার ভালোবাসায় সিক্ত হতে থাকেন এই দুঃসাহসী তরুণ।
টেরি ফক্সের ম্যারাথন অব হোপ – ফোর সিজন হোটেলস এন্ড রিসোর্টের মালিক ইসাডোর শার্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক পা ওয়ালা একটি ছেলে দৌড়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পাড়ি দিয়ে প্রায় অসম্ভব একটি কাজ করার চেষ্টা করছে এই ঘটনা ইসাডোর শার্পকে আবেগাপ্লুত করে তোলে। বছরখানেক পূর্বে তার ছেলেও মেলানোমা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।[৪] তিনি টেরিকে খাবার সরবরাহও যাত্রা বিরতিতে থাকার বন্দোবস্ত করে দেয়ার প্রস্তাব দিলেন। শার্প টেরির তহবিলে প্রতি মাইল দৌড়ের জন্য ২ ডলার করে ডোনেট করলেন এবং আরো ১০০০ জনকে একই কাজ করার জন্য রাজি করালেন। শার্প টেরিকে তার ম্যারাথন অব হোপ চালিয়ে যেতে তাকে নানা ভাবে উৎসাহিত করার চেষ্টা করলেন।
অপারেশনের আগের রাতে টেরির কোচ তাকে একটি ম্যাগাজিন এনে দেন। এই ম্যাগাজিনে তিনি দেখতে পান ডিক ট্রাম নামের এক দৌড়বিদের অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প। ডিক ট্রাম একটি নকল পা নিয়ে ২৬ মাইল ম্যারাথন সফল ভাবে সম্পন্ন করেছেন। এই সংবাদ পড়ে তার মনের জোর অনেক বেড়ে যায়। টেরি ভাবতে লাগলেন এই বয়স্ক লোকটি যদি নকল পা নিয়ে ম্যারাথন দৌড়াতে পারে তবে আমি কেন পারবো না। সফল অস্ত্রোপচার হবার পর তাকে একটি নকল পা পড়িয়ে দেয়া হয়। সেই পা নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে শুরু করেন টেরি। এরপর ফিরে যান খেলাধুলার মাঠে। বাবার সাথে শুরু করে গলফ খেলা। এদিকে একাকী বসে ভাবতে থাকেন হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় পরাজিত ক্যান্সার রোগীদের কথা। বিশেষ করে যন্ত্রণা কাতর শিশুগুলোর মুখ তিনি কিছুতেই ভুলতে পারেন না। তাদের কান্না তিনি শুনতে পান ঘরে বসেও। যে সমস্ত মানুষের হাসি চিরতরে হারিয়ে গেছে তাদের কথা মনে করে তার চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ে। তাই তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় তার স্বপ্নের প্রতি। তার স্বপ্ন সেই ছিল ছোটছোট শিশুদের দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার থেকে বাঁচাতে হবে। দরকার হলে বাকী জীবন উৎসর্গ করে যাবেন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষদের জন্য। শুরু হল প্রস্তুতি। নকল পা লাগানোর পরপরই তিনি হুইল চেয়ারে বসে বাস্কেটবল খেলা শিখতে থাকেন। কেমোথেরাপি চলাকালীন অবস্থায় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করেন জাতীয় পুরস্কার।
চৌদ্দ মাস নকল পা নিয়ে যন্ত্রণাদায়ক এক প্রশিক্ষণ শেষ করেন টেরি। কেউ জানে না কেন এত পরিশ্রম। কখনো পায়ে ফসকা পড়ে যেত, কখনো তীব্র ব্যথা শুরু হতো। আবার কখনোবা রক্ত ঝরত পা থেকে তবুও তিনি ঠিক করলেন তার লক্ষ্যমাত্রা। একদিন মাকে বলে বসলেন মানুষকে বাঁচানোর জন্য দেশের পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম পর্যন্ত তিনি দৌড়ে তিনি অর্থ সংগ্রহ করবেন, যার নাম হবে ‘ম্যারাথন অব হোপ’। তিনি দেশবাসীকে জানাতে চান ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য গবেষণা কতোটা জরুরি আর সেই গবেষণার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা খুবই প্রয়োজন। ছেলের কথা শুনে মা বলেছিলেন, 'পাগলের মত কথা বলছ কেন?' কিন্তু টেরির বাবা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, ছেলে সংকল্পে কতোটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। টেরির মা বললেন, 'অসুস্থ শরীর নিয়ে যদি দৌড়তে চাও তবে নিজ প্রদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখো না কেন, বাইরে যাবার কি দরকার?' উত্তরে টেরি বলেছিলেন, 'মা ক্যান্সারতো আমার ব্রিটিশ কলোম্বিয়াতে সীমাবদ্ধ না।' এরপর তার মা কি আর বলতে পারতেন? কাজেই তিনিও ছেলের পাশে এসে দাঁড়ান। টেরির হার্টেও কিছু সমস্যা ছিল, তাই হার্ট বিশেষজ্ঞের অনুমতি নিতে হয়েছিল তাকে। ডাক্তারকে তিনি কথা দিলেন যদি হার্টের উপর কোন চাপ আসে তবে ম্যারাথন বন্ধ করে দেবেন। এরপর যোগাযোগ করা হলো ক্যান্সার সোসাইটির সাথে। প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে টেরি উড়ে গেলন দেশের পূর্ব প্রান্তের প্রদেশ নিউফাউন্ডল্যান্ডে।
১৯৮০ সালের ১২ এপ্রিল আটলান্টিক মহাসাগরের পানিতে নকল পা ডুবিয়ে সেন্ট জোন্স, নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে বাইশ বছরের ছেলে টেরি ফক্স ‘ম্যারাথন অব হোপ’ শুরু করেন। গন্তব্য কানাডার পশ্চিম তীরের প্রশান্ত মহাসাগরের শহর ভিক্টোরিয়ার ‘মাইল জিরো’ পর্যন্ত। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর তীরের এই ‘মাইল জিরো’র দূরত্ব আট হাজার কিলোমিটার। টেরি তার লক্ষে পৌঁছাতে প্রতিদিন একটি পরিপূর্ণ ম্যারাথন (২৬ মাইল) শেষ করবার পরিকল্পনা করেলেন। সে অনুযায়ী তিনি প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে ২০ কিলোমিটার দৌড়াতেন। মাঝে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে বাকীটা। ছোট বেলার প্রিয় বন্ধু ডগ অ্যালওয়ার্ড গাড়ীতে তাকে সঙ্গ দেন এবং কিছুদিন পর টেরির ছোট ভাই ডারেল ফক্স তার পেছন পেছন গাড়িতে আসা শুরু করেন। বন্ধু ডগ অ্যালওয়ার্ড সমস্ত রকম যোগাযোগ, প্রচার, গাড়ী চালানো, রান্না করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কাজ করতেন।
টেরি ফক্সের যাত্রা প্রথমদিকে কারো উপর কোন প্রভাব ফেলে নি। খুব অল্প মানুষই শুনেছিল তার কথা। কানাডার বৈরী আবহাওয়া, ঠাণ্ডা-গরম রোদ-বৃষ্টি কিছুই তাকে থামাতে পারে নি। এত কষ্ট করেও যখন কোন প্রভাব দেখছিললেন না তখন টেরির মধ্যে হতাশা ভর করে। বিশেষ করে কুইবেক প্রদেশে তার কথা খুব সামান্য মানুষই শুনেছিল। হাইওয়ে কিংবা শহরের মধ্যে দিয়ে একজন ছেলে নকল পা নিয়ে দৌড়চ্ছে দেখে তারা হর্ন বাজাতো। কেউ কেউ গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করতো রাইড লাগবে কি না। টেরি এতোগুলো প্রদেশ পার হয়ে হয়তো কুইবেক পর্যন্ত আসতে পারতেন না যদি না নিউফাউন্ডল্যান্ডের ছোট একটি শহর পোর্টওবাস্কের এক মহিলার কাছ থেকে দশ হাজার ডলারের একটি চেক না পেতেন। সেই ছোট্ট শহরটির লোক সংখ্যা ছিল ১০ হাজার আর মহিলা একাই দশ হাজার ডলারের একটি চেক দিয়েছিলেন টেরিকে। টেরি ভাবলেন এক মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি পথে নেমেছেন। কানাডার প্রতিটি জনগণের কাছ থেকে তিনি এক ডলার আশা করতেই পারেন, এটা কি খুব বেশি চাওয়া? তখনকার জনসংখ্যা অনুযায়ী মোট অঙ্ক দাঁড়ায় ২৪ মিলিয়ন ডলার।
টেরি ফক্স নামের একটি ছেলে এক ডলার করে সাহায্য চাচ্ছে কানাডার প্রতিটি জনগণের কাছে -এই খবর ছড়িয়ে পড়লো। এরপর দেখা গেল লোকজন পরিবার নিয়ে পথে পথে দাঁড়িয়ে আছে টেরির সাথে দেখা করার জন্য। কেউ এলো পরিবারের ক্যান্সার রোগীকে সাথে নিয়ে। কেউ হুইল চেয়ারে, কেউ জগিং সুট পরে টেরির সাথে কিছু সময় দৌড়ে তাকে উৎসাহ দিল। কুইবেক পার হয়ে অন্টারিও প্রদেশে ঢোকার আগেই তিনি জাতীয় তারকায় পরিণত হন। কানাডার রাজধানী অটোয়াতে বসবাসরত গভর্নর জেনারেল তার সাথে দেখা করেন। টেরি সেখানে একটি ফুটবল লীগের কিক-অফ (উদ্বোধন) দেবার সম্মান পান। সেই কিক-অফ মুহূর্তে করতালিতে ফেটে পরেছিল গোটা স্টেডিয়াম। এরপর টেরি টরেন্টোর দিকে রওনা হন। পথে পথে লোকের ভিড় বেড়ে যেতে থাকে। টেরি যতো এগিয়ে চলেন তার পেছনে তত সাফল্য ধেয়ে আসতে থাকে। ইতিমধ্যে অনেকে টেরির পক্ষ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করে দেয়। যেখানে টেরি পৌঁছাতে পারেন না সেখান থেকেও সাহায্য আসতে থাকে। হোটেল মালিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ পরিবার, ফুটবল তারকা -একে একে সাবাই টেরির পাশে এসে দাঁড়াতে থাকেন। টেরি হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার কথা ভেবে কেউ ধূমপান ছেড়ে দেয়। ক্যান্সার থেকে বাঁচবে বলে কেউ নিয়মিত ব্যায়াম ক্লাসে ভর্তি হয়। টেরি দৌড়ে স্বপ্ন বিলি করে যান। "নিজে যেমন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে অন্যকেও সে স্বপ্ন দেখায়", একজন সাধারণ যুবক থেকে কানাডার হিরো হয়ে ওঠেন টেরি ফক্স।
টেরি মাঝে মধ্যে মনোবলও হারিয়ে ফেলতেন। বিশ্রামের কথাও মাথায় এসেছিল কয়েকবার। এমন অবস্থায় পথে ১০ বছরের একটি ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু তাকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা যোগায়। গ্রেগ নামের ১০ বছরের সেই ছেলেটির পায়ে তারই মত একটি নকল পা দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন। ছেলেটির প্রতি টেরির এতো মায়া জন্ম নেয় যে, সেই ছোট্ট ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুটির সাথে তিনি পুরো একটা দিন কাটানোর জন্য যাত্রা বিরতি নেন। ১০ বছরের একটি ছেলে কি যন্ত্রণাই না সহ্য করছে - সেটা উপলব্ধি করে টেরির মন কেঁদে ওঠে।
একদিন বিরতির পর টেরি আবার নতুন উদ্যমে শুরু করেন তার ‘স্বপ্ন দৌড়’। আকাশ ভরা চাঁদের আলো, সূর্য উঠবে উঠবে করছে এমন সময় টেরির পায়ের ঘটঘট শব্দ জাগিয়ে দিত চারিদিকের নিঃশব্দতা। একক ব্যক্তির পক্ষে যদি পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয় টেরি সেটা করে দেখিয়েছেন। তুষার-ঝড়, বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে টেরি ছুটে চলেন পশ্চিমে। তিনি ভুলতে পারেন না পেছনে ফেলে আসা মানুষগুলোর কথা, যারা প্রতিদিন তাকে উৎসাহ দিয়েছে। বিশেষ করে কানাডার রাজধানী অটোয়াতে এসে পৌঁছালে গভর্নর জেনারেল এবং প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ। ১৬ হাজার ফুটবল ভক্তের উপস্থিতিতে ফুটবল লীগের উদ্বোধন। গ্রেগ নামের ১০ বছরের সেই ছোট শিশুটির কথা ভাবতে ভাবতে তিনি টরেন্টো এসে পৌছান। সেখানে বিশাল এক সংবর্ধনা পান। সেখানে একদিনেই তিনি এক লাখ ডলারের বড় অঙ্ক সংগ্রহ করেন।
টরেন্টোতে এসে টেরি বুঝতে পারেন গোটা কানাডাকে তিনি কি ভাবে নাড়া দিয়েছেন। এখন আর পিছপা হবার সুযোগ নেই। কিন্তু মনের জোর আর শরীরের জোর একসাথে কথা বলছিল না। সিটি হলের বিশাল জনসমুদ্রের সামনে তাই তিনি উচ্চারণ করলেন, ‘যদি আমি না পারি আপনারা চালিয়ে যাবেন’।
ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠলো তার কণ্ঠস্বরে। তবুও বুকে সাহস এবং নতুন প্রেরণা নিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন। এভাবেই বাড়তে থাকে টাকার অঙ্ক আর বাড়তে থাকে তার শরীরে লুকানো ক্যান্সার সেল। বিষ ব্যথা নেমে আসে পায়ে, মাথা ঘুরতে থাকে, টেরির দৌড় তবুও থামে না। তার জীবনের শেষ জন্মদিনেও তিনি তার দৌড় চালিয়ে গিয়েছেন। টেরির ভক্তরা পথে দাঁড়িয়ে তাকে গান গেয়ে শোনায় "হ্যাপি বার্থডে টু ইউ"। টেরি হাত নেড়ে তাদের ভালোবাসার জবাব দেন।
একদিন তাকে বলা হলো অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যথার ওষুধ নিতে হবে, এখন তার থেমে যাওয়া উচিত। টেরি আন্দাজ করতে পারেন পথের দূরত্ব তবুও ছুটি নেবার পরামর্শ নাকচ করে দেন। আবার নামেন পথে। অন্টারিও প্রদেশ এত বড় যে শেষ হতেই চায় না তবুও টেরি চান তার ‘স্বপ্ন দৌড়’ শেষ করতে। তখন তার পরিচিতি এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে যে তার নামে চিঠি আসতো প্রাপকের জায়গায় "টেরি ফক্স, কানাডা" -এটুকু লিখলেই। দেশ বিদেশ থেকে ঠিকানা বিহীন সব চিঠি আসতো। "টেরি ফক্স"-ই ছিল সবচাইতে বড় ঠিকানা। অবশেষে অন্টারিওর শেষ প্রান্ত থান্ডার বে-তে এসে দুর্বিনীত এই তরুনকে থামতে হলো, কারণ ক্যান্সার ততদিনে তার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে।
টেরি বুঝতে পারলেন যে তিনি তার জীবনের শেষ কিলোমিটার পার করে এসেছেন। এখন তার গন্তব্য পথ না, ঘর। অশ্রুসজল চোখে এ্যাম্বুলেন্স স্ট্রেচারে শুয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান তার ক্যান্সার ফুসফুস দখল করে নিয়েছে। তাই ১৪৩ দিন পর এবং ৫৩৭৩ কিলোমিটার দৌড়ে এখন তাকে থামতে হচ্ছে।[৫] এখন তিনি বাড়ি যাবেন। যদি দাঁড়াতে পারেন তবে আবার এসে তার দৌড় শেষ করবেন। সেপ্টেম্বর ১, ১৯৮০ তারিখে থেমে যায় টেরি ফক্সের ‘স্বপ্ন দৌড়’। ১৯৮০ সালের ক্রিসমাসের সময় তিনি তার মাকে দুঃখ করে বলেছিলেন, 'আমি ক্যান্সারের জন্য অনেক অর্থ জোগাড় করতে পেরেছি কিন্তু ক্রিসমাসের জন্য তোমাকে কিছু কিনে দেবার মত টাকা আমার কাছে নেই'। তারপর তিনি বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে মাকে একটা গোলাপি রঙের ওয়েস্ট পেপার বাস্কেট উপহার দেন। সেটাই ছিল টেরির জীবনের শেষ ক্রিসমাস।
বাধ্য হয়ে ম্যারাথন অসম্পুর্ন রাখার সময় টেরি ১.৭ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেন। টেরি ম্যারাথন শেষ করার এক সপ্তাহ পরে সিটিভি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক তহবিল সংগ্রহে টেরি ফক্সকে সাহায্য করার জন্য টেলিথন নামে একটি ম্যারাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যেখানে কানাডার এবং কিছু আন্তর্জাতিক সেলিব্রেটি অংশ নেন। মাত্র পাঁচ ঘণ্টার সেই প্রতিযোগিতায় ১০.৫ মিলিয়ন ডলার সংগৃহিত হয়। পরবর্তী এপ্রিল মাস নাগাদ ২৩ মিলিয়ন ডলারের উপর দাঁড়িয়ে যায় টেরি ফক্সের তহবিল।
দ্যা লিউটানেন্ট গভর্নর অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া তাকে অর্ডার অফ দ্যা ডঘহুড সম্মাননায় ভূষিত করে, যা সেই প্রদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা। কানাডার স্পোর্টস হল অফ ফেইম ১৯৮০ সালের কানাডার সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে তাকে লও মার্শ পুরস্কার প্রদান করে। ১৯৮০ সালে তিনি নিউজমেকার অফ দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হন। অটোয়া সিটিজেন জাতীয়ভাবে সাড়া ফেলে দেয়া টেরি ফক্সের ম্যারাথনকে বর্ণনা করেছিল “কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আবেগ ও উদারতা প্রকাশের ঘটনা” হিসেবে।
১৯৮০ সালের ১ সেপ্টেম্বর, থাণ্ডার বে পার হওয়ার সময় টেরি আচমকা তার বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। পরের কয়েক মাসে টেরিকে কিছু কেমোথ্যারাপি দেয়া হয়। কিন্তু ক্যান্সার তার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ার ফলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সমস্ত কানাডার মানুষ তার জীবনের জন্য প্রার্থনা করতে থাকে। দ্বিতীয় পোপ জন পল টেরিকে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়ে লেখেন তিনি তার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন। ১৯৮১ সালের ১৯ জুন টেরিকে নিউ ওয়েস্টমিনিস্টারের রয়াল কলাম্বিয়ান হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি করা হয়, কিন্তু দ্রুত অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে এবং তিনি কোমায় চলে যান। সেখানেই ২৮ জুন ভোর ৪:৩৫ মিনিটে পরিবারের সান্নিধ্যে মাত্র বাইশ বছর বয়সে - এক পা ওয়ালা সেই ফিট ছেলেটি দুই পা ওয়ালা অসংখ্য খোঁড়াদের লজ্জায় ফেলে দিয়ে এই পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন।
তার মৃত্যুতে কানাডা সরকার জাতীয় ভাবে শোক দিবস ঘোষণা করে এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ প্রদান করে। এমন সম্মান - যা শুধু দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্য। হাউস অফ কমন্স ম্যারাথনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ এবং সাহসী করে তুলতে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালনের জন্য টেরি ফক্সকে জাতীয় বীর ঘোষণা করে।
অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ক্যান্সার গবেষণার জন্য তহবিল গঠন এবং ক্যানসারে আক্রান্ত বিশ্বব্যাপি অসংখ্য মানুষকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগানো টেরি ফক্স কানাডার সর্বোচ্চ সম্মান জনক অ্যাওয়ার্ড অর্ডার অব কানাডা অর্জনকারী সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি।[৬] ১৯৯৯ সালে কানাডার এক জাতীয় জরিপ তাকে কানাডার সর্ব শ্রেষ্ঠ নায়ক খেতাবে ভূষিত করে। ২০০৪ সালে কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরশেন টেরি ফক্সকে সেকেন্ড গ্রেটেস্ট কানাডিয়ান অফ অল টাইম হিসেবে নির্বাচিত করে।[৭] ২০০৮ সালে কানাডা সরকার টেরি ফক্সকে ন্যাশনাল হিস্টোরিক পারসন অব কানাডা সম্মানে ভূষিত করে।[৮]
ইসাডোর শার্প টেরি ফক্সের কাছে ক্যানসার গবেষণার উদ্দেশ্যে তহবিল গঠনের জন্য টেরি ফক্স রান নামে বার্ষিক ম্যারাথন প্রতিযোগিতা আয়োজনের ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। টেরি রাজি হলেন কিন্তু কয়েকটি শর্ত দিলেন। প্রথমত এটি হবে অপ্রতিযোগিতামূলক, এখানে কেউ প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হবে না এবং কোন পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে না। দ্বিতীয়তঃ কোন কোম্পানি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এটি স্পন্সর করতে পারবে না।
বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপি টেরি ফক্স রান আয়োজন করা হয় এবং প্রচুর মানুষ এতে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে ৬০টি দেশের ১ মিলিয়নেরও অধিক মানুষ টেরি ফক্স রানে অংশ নেন এবং সেই বছর ১৫ মিলিয়ন ডলার সংগৃহিত হয়। ২৫ বছর পূর্তির পর থেকে বিশ্বব্যাপি প্রতি বছর ৩ মিলিয়নেরও অধিক মানুষ টেরি ফক্স রানে অংশ নিচ্ছেন। টেরি ফক্সফাউন্ডেশন জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত ৭৫০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে টেরি ফক্স রান ৩০ বছরে পা দেয়।
কানাডিয়ান ক্যান্সার সোসাইটি থেকে আলাদা হয়ে ১৯৮৮ সালে গঠিত হয় টেরি ফক্স ফাউন্ডেশন। ২০০৭ সালে টেরি ফক্স ফাউন্ডেশন কর্তৃক গঠিত হয় টেরি ফক্স রিসার্চ ইন্সটিটিউট। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ক্যান্সার গবেষণা ও ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষদের নানা ভাবে সাহায্য- সহযোগিতা করে আসছে।
টেরি ফক্সের জীবনী নিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৮৩ সালে হোম বক্স অফিসের (এইচবিও) প্রযোজনায় নির্মিত হয় দ্যা টেরি ফক্স স্টোরি। সিনেমাটি জেনি অ্যাওয়ার্ডসের জন্য মনোনীত হয় এবং শ্রেষ্ঠ সিনেমা, শ্রেষ্ঠ অভিনেতাসহ মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়।[৯]