লেখক | ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যোটে[১] |
---|---|
মূল শিরোনাম | Die Leiden des jungen Werthers[১] |
দেশ | জার্মানি |
ভাষা | জার্মান |
ধরন | পত্র উপন্যাস[১] |
প্রকাশক | Weygand'sche Buchhandlung, Leipzig |
প্রকাশনার তারিখ | ২৯ সেপ্টেম্বর ১৭৭৪ সাল, সংশোধিত ১৭৮৭ সাল[২] |
ইংরেজিতে প্রকাশিত | ১৭৭৯[২] |
ডি লাইডেন ডেস ইউঙেন ভেরটার্স (জার্মান: Die Leiden des jungen Werthers) যা ইংরেজিতে দ্য সরোজ অব ইয়ং ওয়ার্থার নামে অনূদিত হয়, হচ্ছে একটি পত্র উপন্যাস, আংশিকভাবে আত্মজীবনী-মূলক উপন্যাস যা ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যোটে, ১৭৭৪ সালে প্রথম প্রকাশ করেন। ১৭৮৭ সালে এর একটি সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এটা জার্মান সাহিত্যের যুগে স্ট্রাম উন্ড ড্রাং এর একটি সব থেকে উল্লেখযোগ্য রচনা ছিল, এবং এটি পরবর্তীতে রোমান্টিক সাহিত্য আন্দোলনে প্রভাবিত করে।
গ্যোটে, ঐসময়ে চব্বিশ বছরে, ছয় সপ্তাহের নিবিড় লেখনীর মাধ্যমে জানুয়ারি-মার্চ ১৭৭৪ এর মধ্যে ওয়ার্থার লিখে শেষ করেন।[১] এটা তাকে রাতারাতি আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক ব্যক্তিতে পরিণত করে, এবং তার কাজের জন্য তাকে সাধারণ মানুষের কাছে সুপরিচিত করে রেখেছে।[১][২] গ্যোটের জীবনের শেষকালে, বাইমারে ইউরোপের তরুণদের একটি গ্র্যান্ড ট্যুরে প্রমোদ-ভ্রমণ তার জন্য চূড়ান্ত মঞ্চ তৈরি করে দেয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
দ্য সরোজ অব ইয়ং ওয়ার্থার মূলত চিঠিপত্রের সংকলন হিসেবে ওয়ার্থারের দ্বারা লেখা হয়েছে, একজন সংবেদনশীল এবং কামুক স্বভাবের তরুণ শিল্পী, তার বন্ধু ভেলহেমের কাছে। এটা ভেলহেমের কাল্পনিক গ্রামে তার থাকার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করে দেয় (গারবেনহেমের উপর ভিত্তি করে, ভেৎজলারের নিকটবর্তী),[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যার কৃষকেরা তাদের সাধারণ জীবনধারার সাথে তাকে ঢালাওভাবে সম্পৃক্ত করে। সেখানে তিনি চারলটের সঙ্গে দেখা করেন, একজন সুন্দরী তরুণী যে তাদের মা মারা যাবার পর তার ভাইবোনদের দেখাশুনা করত। আলবার্ট নামে চারলটের থেকে এগার বছর বেশি বয়সের এক ব্যক্তির সাথে তার বিবাহ-চুক্তিবদ্ধ জানা সত্ত্বেও ওয়ার্থার তার প্রেমে পড়ে যান।[৩]
এটা তার মনে কষ্টের উদ্রেক করলেও, ওয়ার্থার তাদের উভয়ের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে সেখানে কয়েক মাস কাটিয়ে দেন। বস্তুত তার কষ্ট এতো অসহনীয় হয়ে পড়েছিল যে তিনি ভেলহেম থেকে ভেইমারে যেতে বাধ্য হন, যেখানে ফ্রাউলিন ফন বি-এর এর সাথে তার চেনাজানা হয়। তিনি ভুলক্রমে যখন সেখানে তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যান, তিনি খুবই বিব্রতবোধ করেন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে সেখানকার পুরো খানদানী এলাকার সপ্তাহিক সমাবেশের মুখোমুখি হন। তার সহ্যের মাত্রা ছিলনা যার ফলে সরে যেতে চান, যেহেতু তিনি কোন গণ্যমান্য ব্যক্তি নন। পরে তিনি ভেলহেমে প্রত্যাবর্তন করেন, যেখানে তিনি আগের তুলনায় অত্যধিক কষ্টে ভোগেন, হয়ত চারলট এবং আলবার্ট ইতোমধ্যে বিয়ে করার কারণে। প্রতিটা দিন যন্ত্রণাদায়ক অনুস্মারক হয়ে দেখা দেয় যে চারলট কখনো তার ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারবে না। সে, তার বন্ধুর করুণার বাহিরে এবং তার স্বামীকে শ্রদ্ধা করে, সিদ্ধান্ত নেয় যে ওয়ার্থার তার সাথে সচরাচর দেখাসাক্ষাৎ করবে না। সে তার সাথে শেষবারের মতো দেখা করে, এবং তারা উভয়েই তাদের আবেগকে পরাজিত করে যখন সে তার নিজস্ব অশিয়ান-এর অনুবাদ থেকে একটি রচনা তাকে আবৃত্তি করে শুনায়।
এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে, ওয়ার্থার চিন্তা করে বের করে যে এই ত্রিভুজ ভালোবাসায় একজন সদস্য– চারলট, আলবার্ট বা ওয়ার্থার নিজে – পরিস্থিতির সমাধানে মরতে হবে। কাউকে আঘাত করতে অসমর্থতা বা সাংঘাতিকভাবে হত্যার পরিকল্পনা ব্যতীত, ওয়ার্থার তার নিজের জীবন নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ দেখেন নি। সে একটি বিদায়কালীন চিঠিতে যা তার মৃত্যুর পর পাওয়া যায়, আলবার্টের কাছে তার পিস্তল দুটি চায়, সে "একটা ভ্রমণে" যাচ্ছে এই অজুহাতে। চারলট সুহৃদভাবে তার অনুরোধ গ্রহণ করে এবং পিস্তল পাঠায়। ওয়ার্থার তখন নিজের মাথায় গুলি চালায়, তবে সে বার ঘণ্টার আগে মরে নি। তাকে একটি টিল্লা গাছের নিচে কবর দেয়া হয় যা সে প্রায়শই তার চিঠিতে উল্লেখ করত। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কোন যাজক তো নয়ই, এমনকি আলবার্ট, চারলট ও অংশগ্রহণ করেনি। ভগ্ন হৃদয়ে চারলটের প্রয়াণ হতে পারে জানিয়ে বইটি সমাপ্ত হয়। "আমি কিছুই বলব না... চারলটের বিষাদ.... চারলটের জীবন নিরাশ হয়ে পড়েছিল," ইত্যাদি।
ওয়ার্থার জার্মান প্রোটো-রোমান্টিক আন্দোলনকে 'স্টর্ম এন্ড ড্র্যাং' নামে পরিচিত করে 'নান্দনিক, সামাজিক ও দার্শনিক আদর্শের সাথে সংযুক্ত গেটের কয়েকটি কাজগুলির মধ্যে একটি', যা তার আগে এবং ফ্রেডরিখ ফন শিলার ভেইমার সাহিত্যানুশীলন শুরু করেন। উপন্যাসটি বেনামীভাবে প্রকাশিত হতে থাকে এবং গ্যোটে তার পরবর্তী বছরগুলোতে এটি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন,[২] এটা তার জন্য খ্যাতি বয়ে নিয়ে আসা সত্ত্বেও সে অনুতাপ করেছিল এবং ফলশ্রুতিতে তার নিজের কৈশোরকালীন ভালোবাসা চারলট বাফের প্রতি তার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। তিনি চব্বিশ বছর বয়সে ওয়ার্থার লিখেছিলেন, আর এজন্যে তার সাথে সাক্ষাতকারী কয়েকজন তাকে বৃদ্ধ বয়সেও চিনতো। তিনি রোমান্টিক আন্দোলনকে "সব রকমের অসুস্থতা" বলেও অভিযুক্ত করেন।[৪]
দ্য সরোজ অব ইয়ং ওয়ার্থার গ্যোটে’কে, পূর্বে অপরিচিত প্রকাশক, রাতারাতি বিখ্যাত ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এটাকে ইউরোপিয়ান সাহিত্যের একটি বিরাট কর্ম হিসেবে মনে করেন, তার তারুন্যে লেখা একটি গ্যোটে-প্রেরণাদায়ক স্বগতোক্তি এবং ওয়ার্থারকে মিশরে তার অভিযানে বহন করেন। এটা "ওয়ার্থার জ্বর" নামে একটা অবস্থারও প্রচলন করে, যা উপন্যাসে বর্ণীত ওয়ার্থারের পোশাকের মতো করে সারা ইউরোপের তরুণ ছেলেদের পোশাক পড়তে দেখা যায়।[৫][৬] বিপণনের জন্য পণ্য যেমন- প্রিন্ট, সজ্জিত মেইজেন চিনামাটির সামগ্রী এবং সুগন্ধি দ্রব্য উৎপাদন হতে থাকে।[৭]
বইটি উদ্বুদ্ধ আত্মহত্যায় প্রথম দিককার কিছু উদাহরণস্বরূপ অখ্যাতিভাবে প্ররোচিত করে। "ওয়ার্থার জ্বর"কে কর্তৃপক্ষসমূহ উদ্বেগের চোখে দেখতে থাকে– উপন্যাস এবং ওয়ার্থারের পোশাকের ধরন উভয়টি ১৭৭৫ সালে লাইপ্ৎসিশে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়; উপন্যাসটি ডেনমার্ক এবং ইটালিতেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।[৭] এটাকে তার সতীর্থ লেখকেরাও মোহনীয় করে দেখে। তাদের একজন, ফ্রেডরিক নিকোলাই, সিদ্ধান্ত নেন যে আনন্দঘন সমাপ্তির মাধ্যমে এর একটি বিদ্রূপাত্মক সংখ্যা বের করবেন, যার শিরোনামে Die Freuden des jungen Werthers ("দ্য জয় অব ইয়ং ওয়ার্থার"), যেটাতে আলবার্ট, ওয়ার্থারের গতিবিধি অনুধাবন করে, পিস্তলে মুরগির রক্ত ভরে দিবে, এভাবে ওয়ার্থারের আত্মহুতির প্রচেষ্টা নিষ্ফল করে দিবে, এবং তার কাছে প্রফুল্ল চিত্তে পরাজয় স্বীকার করবে। প্রাথমিক কিছু দুর্বোধ্যতা কাটিয়ে, ওয়ার্থার তার উৎসাহী প্রাণোচ্ছল দিকটা ফুটিয়ে তুলে এবং সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পুনরায় প্রকাশ করে।[৮]
যাইহোক, গেটে, এতে ফ্রয়ডেন-এর সাথে সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং নিকোলাইয়ের সাথে একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধে লিপ্ত হন যা তার সারাজীবন ব্যাপী চলে, "Nicolai auf Werthers Grabe" ("ওয়ার্থারের সমাধিতে নিকোলাই") শিরোনামে একটি কবিতা লেখেন, যার মধ্যে নিকোলাই (এখানে একজন নামহীন চলন্ত পথচারী) ওয়ার্থারের সমাধিতে মলত্যাগ করে,[৯] যা ওয়ার্থারের স্মৃতিকে অপবিত্র করে তুলে যেটা থেকে গ্যোটে ইতিমধ্যে নিজেকে আলাদা করে নেন, যেরূপ স্ট্রাম উন্ড ড্রাং থেকে। এই বিতর্ক তার সংক্ষিপ্ত সংকলন এবং সমালোচনামূলক কবিতায় চলমান ছিল, জেনিয়েন, এবং তার নাটক ফাউস্ট-এ।