ত্রিদিব (১২ ডিসেম্বর ১৯১১ — ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৭) একজন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকারী, সাংসদ ও বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা।[১]
ত্রিদিব চৌধুরীর পিতা গনেশ চৌধুরী পদস্থ পুলিশ কর্তা ছিলেন। তাদের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের পাবনায়। পিতার বদলির চাকরির সুবাদে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর চলে আসেন, ১৯২৬ সালে কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন।[২]
ছাত্রাবস্থাতেই স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বহরমপুর অনুশীলন সমিতির তরুন সংগঠকদের মধ্যে একজন ছিলেন ত্রিদিব। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ঘটনায় আত্মগোপন করেন। কিছুদিন পরে ধরা পড়ে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত কারাবাস করতে হয়। জেলে ১৯৩৩ সালে বিএ ও ১৯৩৬ সালে অর্থনীতি তে এমএ পাশ করেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪০ এই তিন বছর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।[২]
১৯৪০ সালে কংগ্রেস সোশালিস্ট পার্টি থেকে বেরিয়ে যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবি সেন, ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, প্রতুল গাঙ্গুলি প্রমুখদের সাথে মিলে রেভলিউশনারি সোশালিস্ট পার্টি বা বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল গঠন করেন।[৩] ১৯৪০-৪৬ আবার কারাগারে থাকেন। স্বাধীনতার পরে ১৯৫৫ সালে গোয়ার মুক্তি আন্দোলনে যোগ দেন। পর্তুগিজ সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ১৯ মাস আটক রাখে সালজারের জেলে।[৪] আর.এস.পি দলের হয়ে সাতবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র হতে।[৫] ১৯৮৭ সালের পর রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু রাজ্যসভার সাংসদ পদে থাকেন। সাংসদে তার সুবক্তা ও সরকারের অন্যায় নীতির কঠোর সমালোচক হিসেবে সুনাম ছিল। বাস্তুহারাদের অধিকার, মতপ্রকাশ ও গণতান্ত্রিক চেতনার পক্ষে একাধিকার সওয়াল করেছেন। মার্ক্সবাদী দর্শনে গভীর পান্ডিত্য ছিল। সারাজীবন অসংখ্য রাজনৈতিক প্রবন্ধ ও কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছেন ত্রিদিব চৌধুরী। তিনি অকৃতদার ছিলেন ও সহজ সরল জীবনযাত্রা করেছেন আজীবন।[২]
২১ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে ত্রিদিব চৌধুরী মারা যান।[৬]