দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (SAFTA) হলো সার্কচুক্তিভুক্ত দেশসমূহের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এই চুক্তিটি ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৬ তারিখে ১২ তম সার্ক সম্মেলনে সাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের মধ্যে সকল বাণিজ্যিক পণ্যের আমদানি - রপ্তানি শুল্ক মুক্ত করার মাধ্যমে এটি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তিনের ১.৬ বিলিয়ন মানুষের একটি মুক্ত বাণিজ্য এলাকা সৃষ্টি করে। সাতটি দেশের সরকারের চুক্তিটির পক্ষে অনুমোদনে চুক্তিটি ২০০৬ সালের ১লা জানুয়ারি বলবৎ করা হয়।[১] এ চুক্তি অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে (যেমন: ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা) ২ বছর সময়কালের প্রথম পর্য়ায়ে ২০ শতাংশ শুল্ক হ্রাশ করতে হয়, ২০০৭ সালে শেষ হয়। ২০১২ সাল পর্য়ন্ত পাঁচ বছর সময়কালের দ্বিতীয় পর্যায়ে শুল্ক বার্ষিক হ্রাস শুল্ক মওকুফের অংশ হিসেবে ২০ শতাংশ থেকে ০ শতংশ পর্যন্ত হ্রাস করা হয়। ২০০৯ সালে পাকিস্তান এবং ভারত এ চুক্তিকে অনুমোদন দেয়, যেখানে আফগানিস্তান সার্কের অষ্টম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে এই চুক্তিকে ২০১১ সালের মে মাসের ৪ তারিখে অনুমোদন প্রদান করে।[২] ১৯৯৩ সালে ঢাকায় সাফটা চুক্তির পূর্বে সার্ক প্রিফেন্সিয়াল ট্রেডিং অ্যারেঞ্জমেন্ট (SAPTA) নামক বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[২]
চুক্তিটি ২০০৪ সালে সাক্ষরিত হয় এবং ২০০৬ সালের ১লা জানুয়ারি সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনুমোদনে তা কার্যকর হয়। ১৯৯৭ সালের মধ্যে এ চুক্তি স্থাপনের অনুমোদন তৈরির উদ্দেশ্যে যে আন্ত:সরকারি দল তৈরি করা হয় তাকে ১৯৯১ সালের কলম্বতে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ সার্ক সম্মেলনে সম্মতি প্রদান করা হয়।
এ চুক্তির মূল ধারাগুলো হলো:
১। চুক্তির অধীনে থাকা দেশগুলো তাদের নিজ নিজ অর্থনৈতিক অবস্থা এবং শিল্প উন্নয়ন, বহিঃ বানিজ্য নীতি, বাণিজ্য এবং শুল্ক নীতি এবং পদ্ধতি বিবেচনায় রেখে সুবিধা এবং সমান লাভের সামগ্রিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং পারস্পারিকতা।
২। ট্যারিফ সংস্কারের জন্য প্রতি পদক্ষেপে আলোচনা, যা সময়কাল পর্যালোচনা করে ধারাবাহিক পর্যায়ে হয় এবং উন্নত এবং সম্প্রসারিত।
৩। কম উন্নত দেশগুলোর বিশেষ চাহিদা স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের পক্ষে কনক্রিট প্রিফারেন্স চুক্তি করা।
৪। কাচামাল, অর্ধঃ প্রক্রিজাতকৃত এবং প্রক্রিজাতকৃত এই তিন ভাগে তাদের পণ্য, উৎপাদন এবং নিত্যদ্রব্যকে ভাগ করা।
২০১১ সালে, আফগানিস্তানও এই চুক্তির অধীনে আসে।[৩]
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির উদ্দেশ্য হলো দেশগুলোর মধ্যে সাধারণ চুক্তি, যেমন: মধ্যম চুক্তি এবং দীর্ঘ মেয়াদী, বাণিজ্য পরিচালনা সংক্রান্ত চুক্তি, নির্দিষ্ট পণ্যের সর্বরাহ এবং আমদানি ইত্যাদি চুক্তি উৎসাহিত এবং উন্নীত করা। এর মধ্যে শুল্ক অনু্মোদন, যেমন: জাতীয় শুল্ক অনুমোদন, শুল্ক ব্যতীত অনুমোদন অন্তর্ভুক্ত। SAFTA মূল উদ্দেশ্য হলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলা।
এর মূল লক্ষ অঞ্চলটিতে একটি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা এবং প্রত্যেক চুক্তির অধীনে থাকা রাষ্ট্রকে সমান সুবিধা প্রদান করা। এর লক্ষ এই দেশগুলোর মধ্যে স্বচ্ছলতা এবং সততা এনে জনগণকে লাভবান করা। এটির আরও একটি লক্ষ শুল্ক এবং বাধা হ্রাস করে এবং অধিকতর আঞ্চলিক সহায়তার জন্য সার্কের অল্প উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক অবস্থা উন্নয়ন করা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে নিম্নলিখিত ছয়টি নীতি উল্লেখ করা আছে:
১। বিভিন্ন ধারা চুক্তিবদ্ধ দেশসমূহের অনুমোদন অনুযায়ী গৃহীত বিধিবিধান, সিদ্ধান্ত, স্বাক্ষরিত প্রোটকলের মাধ্যমে এ চুক্তি গৃহীত হয়।
২। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মারাকেশ চুক্তির এবং চুক্তিবদ্ধ দেশসমুহ কর্তৃক স্বাক্ষরিত অন্যান্য চুক্তির আওতাভূক্ত অধিকার ও দায়দায়িত্ব ক্ষূন্ন করা হবে না।
৩। চুক্তিবদ্ধ দেশসমূহের স্বকীয় অর্থনৈতিক ও শিল্প উন্নয়নের পর্যায়, বৈদেশিক বাণিজ্যের ধারা এবং শুল্কহারের নীতি ও পদ্ধতির ভিত্তিতে এবং পারস্পরিক ন্যায়বিচারপূর্ণ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এই চুক্তি প্রযোজ্য হবে।
৪। এ চুক্তি অনুযায়ী, চুক্তির আওতাভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে অবাধে পণ্য যাতায়াত নিশ্চিত করা হবে। এ ধরনের চলাচল শুল্কহার, আধাশুল্কহার ও শুল্ক ব্যাতিত বিষয়ে বাধানিষেধ এবং একই ধরনের বিষয় প্রত্যাহারের মাধ্যম্যে চুক্তি জার্যকর হবে।
৫। চুক্তির আওতাভুক্ত দেশসগুলো বাণিজ্যের প্রসার সহায়ক এবং সম্পর্কিত অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামোকে পর্যায়ক্রমে সমতুল্য করার বিষয়টিও থাকবে।
৬। পারস্পরিক সুবিধা বর্হিভুত ভিত্তিতে চুক্তি আওতায় থাকা অঞ্চগুলোর চিহ্নিত স্বল্পোন্নত দেশের জন্য বিশেষ এবং কার্যকরী বাণিজ্য প্রসার সম্পর্কিত সুবিধাদির বিষয়টিতে সম্পর্কে পারস্পরিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
সর্বোপরি একটি অর্থনৈতিক সংঘ প্রতিষ্ঠাই এ চুক্তির এটিতে স্বীকৃতি পাবে।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রয়োজন হয়:
বাণিজ্য উদারকরণ কর্মসূচী অনুযায়ী চুক্তিবদ্ধ প্রত্যেকটি দেশকে নিম্নলিখিত শুল্ক হ্রাসকরণ অনুসূচি অনুসরণ করতে হবে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে ২০ শতাংশ এবং অল্প উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে ৩০ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করতে হয়। কিন্তু এই বাণিজ্য উদারকরণের ব্যাপারটি সংবেদনশীল তালিকার ক্ষেত্রগুলোতে প্রয়োগ করা যাবে না, কারণ সেই তালিকাটি নিয়ে বাণিজ্যের পূর্বে আলোচনা করার প্রয়োজন হয়। সংবেদনশীল তালিকাটির মধ্যে চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে সাধারণ চুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাফটা মন্ত্রিপরিষদ (এসএমসি) প্রতি বছর অন্তর তালিকাটির পরিধি হ্রাস করার উদ্দেশ্যে পর্যালোচনা করে।
সংবেদনশীল তালিকা হলো যেসব দেশে শুল্ক ছাড় অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের তালিকাকে বোঝায়। বাংলাদেশের এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জন্য ১২৩৩ টি পণ্য এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোর জন্য দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি অধীনে ১২৪১ টি পল্য রয়েছে। এ তালিকা থেকে বাংলাদেশ স্বল্ন্নেত রাষ্ট্রগুলোর জন্য ২৪৬ টি পণ্য এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোর জন্য ২৪৮ টি পণ্য হ্রাস করবে।[৫] ভারতের এ তালিকায় ৬৯ টি পণ্য স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর হন্য এবং ৬৯৫ টি পণ্য উন্নত রাষ্ট্রগুলোর জন্য। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় ঘোষণা করেন যে, তিনি এই তালিকা থেকে ৪৬ টি পণ্য হ্রাস করবেন। ভুটানের এই তালিকায় উন্নত এবং স্বল্পোন্নত উভয় রাষ্ট্রের জন্য ১৫০ টি পণ্য রয়েছে এবং এ তালিকা ছোট করার কোনো পরিকল্পণা ভূটানের নেই। নেপালের এ তালিকায় স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জন্য ১২৫৭ টি পণ্য এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোর জন্য ১২৯৫ টি পণ্য রয়েছে। নেপাল এই ১২৯৫ টি পণ্য থেকে ২৫৯ টি পণ্য হ্রাস করেছে। বাণিজ্য ও সরবরাহ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বলেছের এর এর বর্তমান সংখ্যা ১০৩৬।[৬] মালদ্বীপের এ তালিকায় ৬৮১ টি পণ্য সার্কের সদস্য সাতটি রাষ্ট্রের জন্যই রয়েছে। এ তালিকায় পাকিস্তানের ১১৬৯ টি পণ্য ছিল, যার সংখ্যা ২০ শতাংশ হ্রাস করে ৯৩৬ হয়েছে।[৭] নেতিবাচক তালিকায় শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের যথাক্রমে ১০৪২ এবং ১০৭২ টি পণ্য রয়েছে।
এ তালিকাার ক্ষুদ্র বা দীর্ঘ পরিধি মধ্যে ভারসাম্য আনার বিষয়টিই ছিল মুখ্য সমস্যা। কারণ, এ তালিকার পরিধি দীর্ঘ হলে তা মুক্ত বাণিজ্য ধারণার সাথে অসামঞ্জস্য হয়। এ ভারসাম্য রক্ষায় সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর বাণিজ্য প্রসার সংক্রান্ত পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কিছু বিষয় চুক্তি চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ায় দেখা দেয়, যেমন: রাজস্বের ক্ষতিপূরণ, গুরুত্বপূর্ণ দেশজ শিল্পের সুরক্ষা, ভিনদেশে বাণিজ্যের প্রবাহ রোধ, খামার ও বৃহৎ শিল্পের স্বার্থ রক্ষা, ভোক্তার স্বার্থ এবং উৎপাদনের ধাপ।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি আলোকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে বোঝা যায় যে, পণ্যভিত্তিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় সমযয়ের জটিলতা এবং এ জন্য এই ব্যবস্থার বদলে নিষিদ্ধ পণ্য তালিকা প্রবর্তন করা প্রয়োজন এবং উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে বাণিজ্যের অপাধ সম্প্রসারণ করা যয়ি না। এছাড়াও, এ চুক্তি থেকে বোঝা যায়, আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারের জন্য শুল্ক বহির্ভূত প্রতিবন্ধকতা সম্পূর্ণভাবে দূর করা প্রয়োজন। চুক্তিভূক্ত দেশসমূহের বাণিজ্য সংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যার অভাবে দেশগুলোর বিধিবিধানের আওতাভূক্ত নির্দিষ্ট মান সঠিকভাবে মেটানো যায় না এবং পণ্য বিষয়ক রুলস অব অরিজিন এমনভাবে বিন্যাস করতে হবে, যার মাধ্যমে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এ দুটি বিষয়ও এ চুক্তির শিক্ষণীয় বিষয়। দেশভিত্তিক বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ পণ্যগলোর অন্যদিকে প্রকাহিত হওয়া রোধ করা যায় এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত সুবিধাদির সহজ লভ্যতা নিশ্চিত করে লাভবান হওয়ার বিষয়টিও এ চুক্তি থেকে প্রতীয়মান হয়।
ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে পাম তেল ভিন্ন পথে ভারতে পাঠান। সব্জির তেলের শীর্ষ সংঘ, ভারতের সলভেন্ট এক্সট্র্যাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আড়ালে বাংলাদেশ এবং নেপাল থেকে আসা পাম তেল এবং সয়ওয়েল এর অবৈধ উৎস বন্ধ করতে। এটি মালওয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাতির মহাম্মদের ভারতের কাশমীরের বিশেষ স্বীকৃতি বাতিলের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য মাওয়েশিয়ার পাম তেল ভারতে আমদানী রোধের বিরুদ্ধে মালওয়েশিয়াকে বাংলাদেশ ও নেপাল হয়ে ভারতে ঢোকাতে সহায়তা করতে। ভারতের সলভেন্ট এক্সট্র্যাক্টরস ভারতের সরকারকে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্যতে ভিন্ন পথ ব্যবহার করে পাম তেল এবং ' ভারতে বহিঃশুল্ক এড়িয়ে ঢোকানোর উপায় বন্ধ করত বলেছে। শুল্ক এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইন্দোনেশিয়া এবং মালওয়েশিয়ার পালমোলিন পথ পরিবর্তন করে নেপাল থেকে এবং দক্ষিণ আমেরিকার সয়াবিন তেল বাংলাদেশ এবং নেপাল হয়ে ভারতে ঢোকে, এমনটি একটি বক্তব্যে বলা হয়। পাম তেলের জন্য ভারতকে ৫০ শতাংশ, সয়ওয়েলের উপর ৪৫ চার্জের উপর প্রযুক্ত আরো ১০ শতাংশ চার্জ প্রদান করতে হয়। বাণিজ্যিক এই সংস্থা আমদানী তথ্যে উদ্ধৃতি দেয় যে, জুলাই থেকে আগষ্ট মাসে নেপাল ৫৪০৭৬ টন আমদানী এবং ৩৫৭০৬ টন পাম তেল ভারতে রপ্তানি করেছে। আরো বলা হয়েছে যে, এই পথ পরিবর্তন করে ঢোকানোর ফলে সরকারকে প্রতি মাসে ৫০ কোটি রুপি (৭ মিলিয়ন ডলার) রাজস্ব হারাতে হচ্ছে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিশোধনকারীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ভারতের আমদানীকৃত ভোজ্য তেলের তিন ভাগের দুই ভাগই হচ্ছে। ভারত মালওয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম তেল ক্রয় করে এবং সয়তেল মূলত আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল থেকে আসে। দেশটির সূর্যমুখী তেলের উৎস ইউক্রেইন৷[৮]
এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত পারস্পরিক সংঘাত নিঃসন্দেহে এ রূপকল্প বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করবে বিন্তু দুঃখহনকভাবে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকগুলো সমান্তরাল পরিপূরক বিষয় বাণিজ্য সহযোগিতার সীমানারেখার বাইরে আছে। এজন্য চুক্তির বিভিন্ন দিক সংক্রান্ত বিষয়সমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন: বাণিজ্য উদারীকরণ পরিকল্পনা (TLP) এবং পণ্যের রুলস অব অরিজিন (RoO) এবং রাজস্ব ক্ষতিপূরণের পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া।
RoO এর বিষয়টি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে চুক্তিভূক্ত দেশের পারস্পরিক স্বার্থের দন্দ্ব ও আশঙ্কা নিরসন করার বিষয়টিই মূখ্য সমস্যা ছিল। অনুন্নত দেশগুলো নমনীয় করার পক্ষে ছিল। তবে ভারত ও পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশ এ বিষয়টির উপর কড়াকড়ি করার পক্ষে ছিল, কারণ এর মাধ্যমেই এ দেশগুলো স্বীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করতে সক্ষম। অন্য জটিল বিষয়টি ছিল বাণিজ্য উদারীকরণ পদ্ধতি নির্ধারণ।
রুলস অব অরিজিন এর ব্যাপারটি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে চুক্তির আওতায় থাকা রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক স্বার্থের দন্দ্ব ও আশঙ্কা মেটানোর বিষয়টি মূখ্য সমস্যা ছিল। অনুন্নত দেশগুলো নমনীয় করার পক্ষে ছিল। তবে ভারত ও পাকিস্তানসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো এর উপর জোর দেওয়ার পক্ষে ছিল, কারণ চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রগুলো এর স্বার্থ সংরক্ষণে সক্ষম হবে। বাণিজ্য উদারীকরণ পদ্ধতি নির্ধাণও একটি জটিল বিষয় ছিল।
দীর্ঘ আলোচনার পর সম্মিলিত হওয়ার মাধ্যমে এ চুক্তি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। বিশ্লেষণমূলক গবেণায় মাধ্যমে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির ফলে চুক্তির আওতায় থাকা রাষ্ট্রগুলোতে বাণিজ্যের প্রসার ঘটে নি, বরং এ চুক্তির বাস্তবায়ন বাণিজ্য উদরীকরণ পরিকল্পনার মধ্যে সীমিত। এ চুক্তির কারণে বাণিজ্যের পরিধি ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে নি। প্রতীয়মান হয় যে, মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গড়তে কয়েকটি পরিপূরক পদক্ষেপ করা প্রয়োজন, যেমন: বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, শুল্ক ব্যতিত সকল বাধার বিলুপ্তি, বাণিজ্য ও শুল্ক সম্পর্কিত সুবিধাদি, এবং বাণিজ্য সহায়ক সামর্থ্য বৃদ্ধি করা।