দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা | |
---|---|
পশ্চিমবঙ্গের জেলা | |
পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুরের অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রশাসনিক বিভাগ | মালদা |
সদরদপ্তর | বালুরঘাট |
মহকুমা | ৮ |
সরকার | |
• লোকসভা কেন্দ্র | বালুরঘাট |
• বিধানসভা আসন | কুশমণ্ডি, কুমারগঞ্জ, বালুরঘাট, তপন, গঙ্গারামপুর, হরিরামপুর |
আয়তন | |
• মোট | ২,২১৯ বর্গকিমি (৮৫৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১৬,৭৬,২৭৬ |
• জনঘনত্ব | ৭৬০/বর্গকিমি (২,০০০/বর্গমাইল) |
জনতাত্ত্বিক | |
• সাক্ষরতা | ৭২.৮২ % [১] |
• লিঙ্গানুপাত | ৯৫৬ |
প্রধান মহাসড়ক | ৩৪ নং জাতীয় সড়ক |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পশ্চিমবঙ্গের মালদা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। ১৮ই চৈত্র ১৩৯৮ বঙ্গাব্দে (১৯৯২ সালের ১ এপ্রিল) পশ্চিম দিনাজপুর জেলা দ্বিখণ্ডিত হয়ে ওই জেলার দক্ষিণাংশ নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা স্থাপিত হয়। বালুরঘাট এই জেলার জেলাসদর। বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুর এই দুই মহকুমা নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত।
জনশ্রুতি আছে জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তার নামানুসারেই রাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুর, যা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত ৷ পরবর্তীতে ব্রিটিশরা রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর। দেশভাগের পর দিনাজপুর জেলার পশ্চিমাংশ পশ্চিম দিনাজপুর নামে পশ্চিবঙ্গে যুক্ত হলেও তার দক্ষিণাংশ নিয়ে পরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত হয় ৷
আজ থেকে প্রায় দুহাজার বছর আগেও আলাদাভাবে দিনাজপুর অঞ্চলের অস্তিত্ব স্পষ্ট হয়৷ জেলাটি পৌরানিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ৷ দিনাজপুর জেলা যেমন মৌর্য গুপ্ত পাল সেন যুগের ইতিহাস বহন করছে তেমনি ইসলামের অাগমন এবং বৌদ্ধ ও জৈন সময়কালীন ঐতিহ্যে পূর্ণ৷
অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার প্রথম অস্তিত্বের উল্লেখ পাাওয়া যায় প্রাচীণ পুন্ড্র সাম্রাজ্যের একটি অংশ হিসাবে৷ পুন্ড্র সাম্রাজ্যে বসবাসকারী মুল উচ্চবর্ণীয়দের পুণ্ড্র বলা হতো যাদের ঐতরেয় ব্রাহ্মণদের বংশজ বলে মনে করা হয়৷ ঐতিহাসিকদের মতে পুন্ড্রবর্দ্ধন সাম্রাজ্যের রাাজধানী মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ বর্তমান বগুড়া জেলার করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে পাওয়া যায় ৷ সাম্রাজ্যের অন্য নগরগুলি হল পুন্ডনগর ও কোটিবর্ষ৷ পুনর্ভবা নদীতীরে বর্তমান গঙ্গারামপুরের বাণগড়ই ছিলো প্রাচীন নথিতে উল্লেখিত কোটিবর্ষ নগর৷ হিন্দু শাস্ত্র মতে, শ্রীকৃৃষ্ণ দ্বারা বানরাজার হত্যার পর রাজা বিরাট এই কোটিবর্ষ অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করেন৷ বিরাট রাজ্যের রাজধানী পরে অাবার স্থানান্তরিত করা হয়, স্থানান্তরিত রাজধানীটি বর্তমানে হরিরামপুরের বাইরহট্ট অঞ্চলে বলে অনুমান করা হয়৷
খ্রীষ্টপুর্ব চতুর্থ শতকে মৌর্য সাম্রাজ্যকালে দিনাজপুর অঞ্চলে জৈন ধর্মের প্রসার ঘটে ৷ ভদ্রবাহু ছিলেন মৌর্যসম্রাট অশোকের জৈনগুরু যিনি দিনাজপুরের কোটিপুর নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, উল্লেখ্য এই কোটিপুরই বর্তমান দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর বলে প্রমাণ পাওয়া যায়৷ জেলাটির বিভিন্ন জায়গায় খনন করে প্রমাণ পাওয়া যায় যে সমগ্র পৌন্ড্রবর্দ্ধন সহ উত্তর বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা ছিলো মোর্যসাম্রাজ্যের শাসনাধীন৷ পরবর্তীকালে ষষ্ঠ শতক অবধি গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসন কায়েম হয়৷ এরপর পাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল ও পরে তার উত্তরসূরী মহীপালের শাসনকালে এ অঞ্চলে একাধিক কুপ ও দিঘী খনন করা হয় যার প্রমাণ কুশমণ্ডি, গঙ্গারামপুর, বংশিহারী, তপন অঞ্চলে স্পষ্ট৷ পাল সাম্রাজ্য বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও তারা সাধারণের ওপর কখনোই নিজেদের ধর্ম চাপিয়ে দেয় নি৷ পরে বিজয় সেন দ্বারা পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর পরবর্তী চারশত বছর সেনবংশ দিনাজপুর অঞ্চল শাসন করে৷
১২০৪ খ্রীষ্টাব্দে তুর্কী সেনানায়ক ইখ্তিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখ্তিয়ার খিলজী নবদ্বীপ আক্রমণ করলে গৌড়রাজ লক্ষ্মণসেন মাত্র ১৮ জন সৈনিকের ভয়ে অাত্মসমর্পণ করেন৷ পরে খিলজী দেবকোটে রাজধানী স্থাপন করেন ও ১২০৬ সনে সহস্র সৈন্য নিয়ে তিব্বতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন৷
এরপর আলি মর্দন খিলজী ও মহম্মদ সিরান খিলজী লক্ষণাবতীর সিংহাসনে বসেন৷ পরে রাজধানী দেবকোট থেকে পান্ডুয়া ও তারও পরে গৌড়ে স্থানান্তরিত করা হয়৷ দিনাজপুর অঞ্চল যখন তাজপুর ও পাঞ্জারা সরকার দ্বারা পরাচালিত হয় সে সময় ১৫৮৫ সনে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা আক্রমণ করেন৷ মুঘল শাসন চালু হওয়ার পর দিনাজপুরে জমিদার প্রথা প্রচলন হলেও এই দুশত বছরে বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি৷
১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে যখন বাংলার দেওয়ানী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন থেকে দিনাজপুর ব্রিটিশ শাসনের আওতাভুক্ত হয়৷ ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিকে মালদহের বামনগোলার মদনাবতীতে প্রথম নীল কারখানা স্থাপিত হয়৷ ১৭৯৮ খ্রীষ্টাব্দে উইলিয়াম কেরি কলকাতার পর প্রথম এই অঞ্চলে বাংলাতে বই ছাপানো শুরু করেন কিন্তু ১৭৯৯ তে নীল কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়৷
অষ্টাদশ শতকের মধ্যেই সন্নাসী ফকিরদের জমি জায়গা দিয়ে দিনাজপুরে বিভিন্ন স্থানে বসতি করে দেওয়া হয়৷ পরে তারাই আবার সাধারণ মানুষর ওপর লুঠতরাজ শুরু করলে ইষ্ট ইন্ডিয়া কম্পানির তত্তাবধানে তার অবসান ঘটে৷
১৮৫৭ সনের সিপাহী বিদ্রোহ বা নবজাগরণের সময় এই জেলা নিজ স্থান অক্ষুণ্ণ রাখে৷ ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রথমবার বঙ্গভঙ্গের সময় এই জেলার জনগণ প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেঅন্যান্য বাঙালী ভাই বোনেদের মতোই৷ লাল মোহন ঘোষের নেতৃৃত্বে বৎসরকালীন বয়কট তথা জেলা রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামীণস্তরের সরকারী নীতির বিরোধীতা চলতে থাকে৷ মহারাজা গিরিজানাথ রায় তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন৷ ইংরেজ সরকারের প্রতিপক্ষ তৈরীর জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুশীলন সমিতি ও ব্রতী সমিতি গড়ে তোলা হয়৷
১৯১৯ সনে জাতীয় কংগ্রেসের সহযোগীতায় সমান্তরাল প্রশাসন তৈরী করা হয় ও ১৯২৪ সনে শ্রী পুর্ণচণ্দ্র দাস গ্রেপ্তার হন৷ স্বরাজ্য দল বালুরঘাট ও দিনাজপুরের আসন দখল করতে সক্ষম হয় ও ১৯২৮ এ সাইমনে কমিশনের বিরূদ্ধে সমগ্র জেলাজুড়ে বন্ধ ঘোষিত হয়৷ ১৯৩২ সনে স্বরাজ্য দলের তত্তাবধানে গঙ্গারামপুরের অাকচা গ্রামে সাঁওতালরা চৌকিদারী কর দেওয়া বন্ধ করে বিদ্রোহ করে৷ ফলস্বরূপ, দিনাজপুরকে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়৷ ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর হিলি স্টেশনে খাকি পোষাকপরিহিত কিছু যুবক স্টেশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ও টাকা লুঠ করে পালিয়ে যায়৷ পরে তারা ধরা পড়লে তাদের দ্বীপান্তর করা হয়৷ ১৯৪২ এ পুর্ণচণ্দ্র দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে বালুরঘাটে ভারতবন্ধ ডাকা হয়৷ ১৪ ই সেপ্টেম্বর শ্রী সরোজ রঞ্জন চ্যাটার্জ্জীর নেতৃত্বে বালুরঘাটে আট হাজার লোক জড়ো হয় ও সরকারী দপ্তরে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়৷
দিনাজপুর জেলা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৯৪৭ সাালে বাংলা ভাগের সময়৷ বালুরঘাট, রায়গঞ্জ ও গঙ্গারামপুর মহকুমা ভারতীয় যুক্ত রাষ্ট্রে যুক্ত হলেও বাকী দিনাজপুর ও পূর্ববঙ্গে দ্বিখণ্ডিত থাকে দিনাজপুর ও রাজশাহীর মধ্যে।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের দক্ষিণাংশের ২২১৯ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল তথা বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুর মহকুমাদ্বয় নিয়ে নতুন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত হয়৷
পরাধীন ভারতে তেভাগা ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে দিনাজপুর তথা দক্ষিণ দিনাজপুরের অবদান অনস্বীকার্য৷[২]
৭ই ফাল্গুন ১৩৫৩ ( ২০শে ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ ) বাংলা তথা ভারতবর্ষের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। দিনাজপুর ( এখন বাংলাদেশের নওগাঁ জেলা ) জেলার বালুরঘাট থানার একটি গ্রাম খাঁপুর । খাঁপুর তার আশেপাশের গ্রামের কৃষক জনতাকে নিয়ে সেই তারিখে রাতের অন্ধকারে এবং সকালের সূর্যের আলোয় এক ভীষণ যুদ্ধে শামিল হয়েছিল। জমিদার-জোতদার শ্রেণী, তাদের স্বার্থবাহী-সেবক ব্রিটিশ রাজ, লীগ মন্ত্রিসভা, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ দলের বিরুদ্ধে এ ছিল এক অসীম সাহসিক দুর্বার সংগ্রাম। প্রগাঢ় শ্রেণী-চেতনায় উদ্বেলিত আধিয়ার-ক্ষেতমজুর-কৃষকরা জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে ব্রিটিশ শাসকের পুলিশের নিক্ষিপ্ত গরম সীসার গুলির সামনে মৃত্যুকে বরণ করেছিলেন। ২২ জন বীর ঐ একদিনের ঘটনায় খুন হয়ে গিয়েছিলেন।
কৃষক সমিতির কাজ শুরু হলো। কৃষকদের দুরবস্থার বিবরণ ও তার প্রতিকারের বিষয় উল্লেখ করে প্রচারপত্র বিলি করা হলো। নিপীড়িত কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হলো। ১৯৪০-৪১ সালে কৃষক সমিতির উপর ইংরেজ সরকারের প্রশাসনিক আক্রমণ নেমে আসে। ১৯৪২ সালে, নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে সাংগঠনিক কমিটির জায়গায় পার্টির জেলা কমিটি গঠিত হয়। মন্বন্তরের পটভূমিতে নতুন করে কৃষক সমিতির কাজ শুরু হয়। লঙ্গরখানা খোলা, চিকিৎসার বন্দোবস্ত, কাপড়-কেরোসিনের দাবিতে আন্দোলন, মজুত উদ্ধার-কালোবাজারী প্রতিরোধে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। ১৯৪৪ সালে ২৯শে ফেব্রুয়ারি থেকে ২রা মার্চ ঐ লালপুর গ্রামেই বিপুল আনন্দ, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সপ্তম প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলায় মানুষের তৈরি করা মহা মন্বন্তরপর্ব শেষ হলেও তার রেশ তখনও বিদ্যমান , মাথার উপরে ব্রিটিশ রাজ। বাংলার শাসনে মুসলিম লীগ। আর অন্যতম মূল রাজনৈতিক শক্তি কংগ্রেস দল। সবাই তাদের শ্রেণীস্বার্থে গ্রামের কায়েমী স্বার্থবাদীদের পক্ষে। কিন্তু আধিয়ার (বর্গাদার), ক্ষেতমজুর, দিনমজুর, রায়ত কৃষক কেউ আর শোষণ বঞ্চনা মেনে নিতে রাজি নয়। কৃষক সমিতির যোগ্য নেতৃত্ব, গ্রামীণ নিপীড়িত মানুষের এই সংগ্রামী মেজাজকে উপলব্ধি করে, প্রাদেশিক কৃষক কাউন্সিলের সভা ১৯৪৬ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা থেকে বর্গাদারের জন্য দাবি তোলা হলো-তেভাগা চাই। মানে মোট ফসলকে তিনভাগ করে দুইভাগ দিতে হবে বর্গাদারকে। সর্বাধিক তীব্রতায় এই মহান তেভাগা সংগ্রাম বৃহত্তর দিনাজপুর জেলাতেই সংগঠিত হয়েছিল। খাঁপুর গ্রামে শুরুর সময়তেই কৃষক সমিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে ও মূল ঘাঁটি হয় পাশের পতিরাম। কৃষ্ণদাস মহন্তের নেতৃত্বে পতিরাম আর আশেপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছিল কৃষক সমিতি।
ঐ বছরেই মুনাফালোভী সৃষ্ট মহামন্বন্তর শুরু হয়। সে সময় উল্লিখিত এলাকাগুলি থেকে বালুরঘাট মহকুমা সদরে খাদ্যের দাবিতে বিরাট গণ-মিছিল সংগঠিত হয়েছে। খাঁপুর গ্রামের অবদান এ মিছিলে ছিল সব থেকে বেশি। আপাতভাবে যোগসূত্রহীন হলেও, তখনকার ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনেরই এ ছিল ছিল এক অন্যবিধ প্রকাশ। মন্বন্তরের ঐ সময়ে এ গ্রামেই চিয়ারসাই শেখের নেতৃত্বে, শত শত গরুর গাড়িতে করে যখন জমিদার ধান পাচার করছিল, তখন সেসব আটকে দিয়ে ন্যায্য মূল্যে বিলি করে দেওয়া হয়।
জমিদারবাবুর নজরানা, হাট ও মেলায় তোলা আদায়,পার্বণী, পাহাড়াদারি, মহালদারি ইত্যাদি না না বাবদে হরেকরকমের নজরানা দিতে দিতে বর্গাদার নি:স্ব হয়ে যেত। তার সঙ্গে ছিল নির্মম দাদনের কারবার।
আধি নাই-তেভাগা চাই, নিজ খৈলানে ধান তোল, জমিদারের কী ধার ধারী—জমিদারী উচ্ছেদ করি, লাঙ্গল যার-জমি তার, জোতদার-জমিদার হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল স্বাধীনতার দাবি, ব্রিটিশ সৈন্য—সরে যাও, সরে যাও, ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট সরে যাও—আপসে গদি ছেড়ে দাও, জাতীয় গভর্নমেন্ট চাই। এসব স্লোগানে মুখরিত হতে থাকল খাঁপুর আর আশেপাশের গ্রামগুলো।
গ্রামগুলোর সবাই বর্গাদার নয়। তবুও প্রায় সবাই এই আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। কারণ, সবাই ছিল কোন না কোন ভাবে জমিদার-জোতদারদের অন্যায় শোষণে জর্জরিত। জমিদার-জোতদাররা বিশাল জোতের মালিক। আধিয়ারদের নানা অছিলায় নির্মমভাবে ঠকায়। ওরাই আবার মহাজনী সুদের কারবারি। ঋণভারে সুদের বোঝায় ন্যূব্জ কৃষকের জীবন। কৃষককর্মীরা খাঁপুর ও আশেপাশের এলাকাতেও ভলান্টিয়ার বাহিনী তৈরি করল, পাড়ায় পাড়ায় মিছিল মিটিং হতে থাকল । নিজ খৈলানে ধান তোলা চলতে থাকল, তা না পারলেও, জমিদার-জোতদারদের খৈলানে যে ধানের আঁটি উঠে গিয়েছিল, সেখান থেকে তা নিয়ে আসা অর্থাৎ খৈলান ভাঙার আন্দোলন চলতে থাকল ৷ জমিদার-জোতদাররা তাদের স্বার্থবাহী প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনের নেতা কর্মী ও যাদের উপর তারা বিরূপ ছিল, তাদের নামে মিথ্যা মামালা রুজু করল। কয়েক জন কৃষকনেতা আত্মগোপন করলেন। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকল না। জমিদারের পদলেহী পুলিসেরা ৬ই ফাল্গুন ১৩৫৩ বঙ্গাব্দ (২০শে ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ ) মধ্যরাতে খাঁপুর গ্রামে ঢুকে কৃষক নেতা ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে লাগল।
ঐ রাত্রিতেই বীরাঙ্গনা মা যশোদার নেতৃত্ত্বে নারী-সংগ্রামীরা শঙ্খধ্বনি দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে , পুলিস এসেছে কৃৃষকদের ধরবার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় কাড়া-নাকাড়া বেজে উঠল। আশেপাশের গ্রাম থেকে বৃষ্টি আর শেষ সময়ের ঠাণ্ডাকে অগ্রাহ্য করে হাতের কাছে যে যা পেল, সেই অস্ত্র নিয়ে ভোরের মধ্যে হাজার হাজার কৃষক কর্মীর এক জঙ্গী বাহিনী জমায়েত হয়ে গেল খাঁপুর গ্রামে। গাড়ি বেরোনোর ডিস্টিক্ট্র বোর্ডের রাস্তায় তারা একটা নিম গাছ কেটে ব্যারিকেড্ তৈরি করল। আধিয়ার-কৃষক–ক্ষেতমজুররা রুখে দাঁড়ালো - গ্রেপ্তার করে কাউকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
পুলিস ভয় পায় ও প্রচণ্ড হিংস্র হয়ে। কিন্তু সংগ্রামীরা ভয় পেল না এতটুকুও। পুলিশ বীরাঙ্গনা মা যশোদাকে গুলি করে হত্যা করল। এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে, পেশায় ক্ষেতমজুর, তেভাগা লড়াইয়ের অন্যতম নেতা চিয়ারসাই শেখ, পাশেই তাঁর বাড়ি থেকে শাবল নিয়ে এসে পুলিসভ্যানের চাকার উপর আঘাত করতে থাকলেন। তাঁকে পর পর তিনটি গুলি করে হত্যা করল পুলিশদল। কৃষকরা ক্ষেপে উঠলে পুলিস এলোপাথারি ১২১ রাউণ্ড গুলি চালাল। পাশের জমিদারের সিংহবাহিনী কাছারি থেকেও গুলি চালানো হয়েছিল। ঐ খানেই ১৪ জন শহীদ হলেন। পরে বালুরঘাট হাসপাতালে আরও ৮ জনের প্রাণপাত হয় ।
এই একটি গ্রাম খাঁপুরেই, তেভাগার লড়াইতে ২২ জন শহীদ মহান মৃত্যুবরণের মধ্য দিয়ে অমরত্ব লাভ করলেন। ২২ জন শহীদের নাম যথাক্রমে
১. যশোদা রানী সরকার
২. কৌশল্যা কামারানী
৩. চিয়ার শাই শে
৪. গুরুচরণ বর্মা
৫. হোপন মার্ডি
৬. মাঝি সরেণ
৭. দুঃখনা কোলকামার
৮. পুরনা কোলকামার
৯. ফাগুয়া কোল কামার
১০. ভোলানাথ কোলকামার
১১. কৈলাশ ভূইঁমালী
১২. থোতো হেমরম
১৩. ভবানী বর্মন
১৪. ভাদু বর্মন
১৫. আলু বর্মন
১৬. মঙ্গল বর্মন
১৭. শ্যামাচরণ বর্মন
১৮. নগেন বর্মন
১৯. ভবেন বর্মন
২০. নারান মর্ম
২১.গহনুয়া মাহাতো
২২. জ্ঞান মাহাতো
সুত্র: খাঁপুর গ্রামে জেলা (পশ্চিম দিনাজপুর ) কৃষক সমিতি কর্তৃক শহীদ বেদীর শিলা ফলক থেকে সংগৃহীত।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাটি মুলত সমতল হলেও সামান্য দক্ষিণে ঢালু৷ এটি বরেন্দ্র ভূমি বিস্তৃতাংশ যা পুরাতন পলিমাটি দ্বারা তৈরী৷ জমি উৎকলিত নয় তথা কোনো পাহাড়ে অস্তিত্ব পাওয়া যায় না৷ জেলাটি মোটামুটিভাবে সমুদ্রতল থেকে ১৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত৷ জেলাটি দুটি উপ-অঞ্চলে বিভক্ত যথা ক্রান্তীয় প্রকৃৃতির উত্তরের মহানন্দা সমভূমি ও দক্ষিণ-পূর্বে বালুরঘাট অঞ্চলের সমভূমি৷
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মাত্র 11 বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বনভূমি৷ বনভূমি গুলি জেলার বিভন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে৷
নদ-নদী সমূহ জেলাটির উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত যা কৃষি উপযোগী উর্বর মৃৃত্তিকার উৎস৷ জেলাটিতে ধান ও পাট সহ তৈলবীজের চাষের প্রচলন সর্বাধিক৷
অর্থনীতির ক্ষেত্রে জেলাটি উন্নত নয় ৷ কৃৃষিকাজই আয়ের প্রধান উৎস যেমন ইক্ষু, পাট, তৈলবীজ ইত্যাদি ৷ জেলাটিতে প্রাকৃৃতিক ও খনিজ সম্পদের ঘাটতি জেলাটির অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে ৷ বালুরঘাট শিল্পাঞ্চল ছাড়া অন্যকোনো বড়ো বা মাঝারি শিল্পাঞ্চল প্রায় নেই ফলে জেলাটি শিল্পোন্নত ও নয় ৷ কৃৃষিজ পাট ও তৈলবীজকে কেন্দ্র করে সদরগুলিতে ছোটো ও মাাঝারি শিল্প গড়ে উঠলেও তা পর্যাপ্ত নয় ৷ স্থলবন্দর হিলি ও ঐতিহাসিক স্থানের কারণে জেলাটিতে বহু পর্যটকের আগমন হয় ৷ এছাড়া ব্লকে ব্লকে পুকুর ও দীঘি থাকার দরুণ সরকারী সহযোগীতায় মৎসশিল্পে জেলাটিকে উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে ৷
কৃৃষি ও কৃৃষিজ আয় ছাড়াও জেলাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে৷ বিভিন্ন প্রত্নস্থল, প্রাচীনযুগে রাজাদের বিভিন্ন কীর্তির নিদর্শন পাওয়া যায় ৷ এছাড়াও ধর্মীয় স্থল ও প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্য পর্যটনশিল্পে উন্নতিসাধন করেছে যা জেলাটির অর্থনীতির অন্যতম উৎস৷
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক অনুযায়ী ভাষাভিত্তিক তালিকাবদ্ধ জনসংখ্যা নিম্নরূপ :
গঙ্গারামপুর মহকুমাটিতে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাটি হলো বাংলা যা সমগ্র মহকুমার ৭৭০৭৩৬ জনের মধ্যে ৬৭৪০২০(৮৭.৪৫%) জনের মাতৃভাষা৷ এছাড়া মহকুমাটিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রচলিত ভাষাটি হলো সাঁওতালি যা সমগ্র মহকুমার ৭৩১৮২(৯.৫০%) জনের মাতৃৃভাষা৷
ক্রম | সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের নাম | সর্বমোট জনসংখ্যা - ২০১১ | সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা | দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা | তৃৃতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা | চতুর্থ সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা | অন্যান্য ভাষাসমূহের জনসংখ্যা | পাই চিত্র |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | কুশমণ্ডি | ১৯৮৭৫২ | বাংলা - ১৮৫৪৭৯ (৯৩.৩২%) | সাঁওতালি - ১০৪১১ (৫.২৪%) | অন্যান্য - ২৮৬২ | |||
২ | গঙ্গারামপুর | ২৩৭৬২৮ | বাংলা - ২০৭৭৩০ (৮৭.৪২%) | সাঁওতালি - ২০৮৮১ (৮.৭৯%) | ওরাওঁ - ৩১২৩ (১.৩১%) | সাদরি - ২৪৪৮ (১.০৩%) | হিন্দী - ১৬৫৩ (০.৭%) , অন্যান্য - ১৭৯৩ | |
৩ | বংশিহারী | ১৪১২৮৬ | বাংলা - ১১২৪০৯ (৭৯.৫৬%) | সাঁওতালি - ২২২৭১ (১৫.৭৬%) | হিন্দী - ২০৫৫ (১.৪৫%) | কুড়মালী - ১৬৯৬ (১.২০%) | সাদরি - ১১৯০ (০.৮৪%) , অন্যান্য - ১৬৬৫ | |
৪ | হরিরামপুর | ১৩৬৮৫৩ | বাংলা - ১১৪৭৭১ (৮৩.৮৬%) | সাঁওতালি - ১৭৫৫৬ (১২.৮৩%) | হিন্দী - ২৪৩১ (১.৭৮%) | অন্যান্য - ২০৯৫ | ||
৫ | গঙ্গারামপুর পৌরসভা | ৫৬২১৭ | বাংলা - ৫২৬৩১ (৯৩.৬২%) | সাঁওতালি - ২০৬৩ (৩.৬৭%) | হিন্দী - ১১৩৯ (২.০৩%) | অন্যান্য - ৩৮৪ |
বালুরঘাট মহকুমাটিতে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাটি হলো বাংলা যা সমগ্র মহকুমার ৯০৫৫৪০ জনের মধ্যে ৭৪০৮৫৬(৮১.৮১%) জনের মাতৃভাষা৷ এছাড়া মহকুমাটিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রচলিত ভাষাটি হলো সাঁওতালি যা সমগ্র মহকুমার ৮৯১৩৪(৯.৮৪%) জনে মাতৃৃভাষা৷
ক্রম | সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের নাম | সর্বমোট জনসংখ্যা - ২০১১ | সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা | দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা | তৃৃতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা | চতুর্থ সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা | অন্যান্য ভাষাসমূহের জনসংখ্যা | পাই চিত্র |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | কুমারগঞ্জ | ১৬৯১০২ | বাংলা - ১৪১৫৩১ (৮৩.৭০%) | সাঁওতালি - ২২৯৩৫ (১৩.৫৬%) | হিন্দী - ১১৩২ (০.৬৭%) | ওরাওঁ - ৮৬৫ (০.৫১%) | অন্যান্য - ২৬৩৯ | |
২ | তপন | ২৫০৫০৪ | বাংলা - ১৯৯৭৫০ (৭৯.৭৪%) | সাঁওতালি - ২৭১০০ (১০.৮২%) | ওরাওঁ - ১১৯৪৬ (৪.৭৭%) | সাদরি - ৬০৭৯ (২.৪৩%) | হিন্দী - ২০৭১ (০.৮৩%) , অন্যান্য - ৩৫৫৮ | |
৩ | বালুরঘাট | ২৪৮৯০১ | বাংলা - ১৮৮০৪১ (৭৫.৫৫%) | সাঁওতালি - ৩১৩৯৪ (১২.৬১%) | সাদরি - ৭১২৬ (২.৮৬%) | হিন্দী - ৫৪২১ (২.১৮%) | মুন্ডা - ৪৯৭৮ (২%) , ওরাওঁ - ৪০১৫ (১.৬১%) , কুড়মালী - ৩৭৪৪ (১.৫%), অন্যান্য - ৪১৮২ | |
৪ | হিলি | ৮৩৭৫৪ | বাংলা - ৬৮৭৮৮ (৮২.১৩%) | সাঁওতালি - ৪৯২৭ (৫.৮৮%) | সাদরি - ৩১৪৫ (৩.৭৬%) | হিন্দী - ১৭৯৯ (২.১৫%) | মুন্ডা - ১৫৭১ (১.৮৭%) , ওরাওঁ - ১৫৫৪ (১.৮৬%) , কুড়মালী - ১২৮০ (১.৫৩%) , অন্যান্য - ৬৯০ | |
৫ | বালুরঘাট পৌরসভা | ১৫৩২৭৯ | বাংলা - ১৪৩৭৪৬ (৯৩.৭৮%) | হিন্দী - ৫৬৯৭ (৩.৭২%) | সাঁওতালি - ২৭৭৮ (১.৮১%) | অন্যান্য - ১০৫৮ |
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক অনুযায়ী বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা নিম্নরূপ[৭] -
ক্রম | সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের নাম | সর্বমোট জনসংখ্যা ২০১১ - ৭৭০৭৬৩ | হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ৪৯৬৮৬২ (৬৪.৪৭%) | ইসলাম ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ২৬১৪৬৫ (৩৩.৯২%) | খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ১১০২৫ (১.৪৩%) | শিখ ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ৭৪ (০০.০১%) | বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ৩৮ | জৈন ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ১১৪ (০০.০২%) | অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ১১৫৮ (০০.১৫%) | সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম ২০১১ - হিন্দু |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | কুশমণ্ডি | ১৯৮৭৫২ | ১১৯৮৯১ (৬০.৩২%) | ৭৭২৩৯ (৩৮.৮৬%) | ১৩৫৮ (০.৬৯%) | ২২ (০.০১%) | ১০ | ২১ (০.০১%) | ২১১ (০.১১%) | হিন্দু |
২ | গঙ্গারামপুর | ২৩৭৬২৮ | ১৫০৯৬২ (৬৩.৫৩%) | ৮২৩৬০ (৩৪.৬৬%) | ৩৯১৭ (১.৬৫%) | ২০ (০.০১%) | ৯ | ৮ | ৩৫২ (০.১৫%) | হিন্দু |
৩ | বংশিহারী | ১৪১২৮৬ | ১০৪২৯৪ (৭৩.৮২%) | ৩৩৮১৫ (২৩.৯৩%) | ২৭৮৫ (১.৯৭%) | ১৩ (০.০১%) | ১০ (০.০১%) | ৫ | ৩৬৪ (০.২৬%) | হিন্দু |
৪ | হরিরামপুর | ১৩৬৮৫৩ | ৬৮৬৮৪ (৫০.১৯%) | ৬৭০৫২ (৪৯.০০%) | ৮৯০ (০.৬৫%) | ৯ (০.০১%) | ৫ | ৬ | ২০৭ (০.১৫%) | হিন্দু |
৫ | গঙ্গারামপুর পৌরসভা | ৫৬২১৭ | ৫৩০৩১ (৯৪.৩৩%) | ৯৯৯ (১.৭৮%) | ২০৭৫ (৩.৬৯%) | ১০ (০.০২%) | ৪ | ৭৪ (০.১৩%) | ২৪ (০.০৫%) | হিন্দু |
ক্রম | সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের নাম | সর্বমোট জনসংখ্যা ২০১১ - ৯০৫৫৪০ | হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ৭৩৫৯৮৮ (৮১.২৮%) | ইসলাম ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ১৫১৩২৩ (১৬.৭১%) | খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ১৩৭৬৯ (১.৫২%) | শিখ ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ২০২ (০০.০২%) | বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ১১০ (০.০১%) | জৈন ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ২০৯ (০০.০২%) | অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ২০১১ - ৩৯৩৯ (০০.৪৪%) | সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম ২০১১ - হিন্দু |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | কুমারগঞ্জ | ১৬৯১০২ | ১০৮৬১০ (৬৪.২৩%) | ৫৭৭১৮ (৩৪.১৩%) | ২২২৬ (১.৩২%) | ১২ (০.০১%) | ৯ | ৮ | ৫১৯ (০.৩১%) | হিন্দু |
২ | তপন | ২৫০৫০৪ | ১৭৩২৫৫ (৬৯.১৬%) | ৭১১০৯ (২৮.৩৯%) | ৪৫৫৪ (১.৮২%) | ৩০ (০.০১%) | ৮ | ৭২ (০.০৩%) | ১৪৭৬ (০.৫৯%) | হিন্দু |
৩ | বালুরঘাট | ২৪৮৯০১ | ২২৯৪৪৬ (৯২.১৮%) | ১৩২৬৬ (৫.৩৩%) | ৪৯৭২ (২.০০%) | ৭৪ (০.০৩%) | ৪৪ (০.০২%) | ১৪ | ১০৮৫ (০.৪৪%) | হিন্দু |
৪ | হিলি | ৮৩৭৫৪ | ৭৩৩৩২ (৮৭.৫৬%) | ৮৪৭৫ (১০.১২%) | ১৪৪১ (১.৭২%) | ১২ (০.০১%) | ৫ | ৯৭ (০.১২%) | ৩৯২ (০.৪৭%) | হিন্দু |
৫ | বালুরঘাট পৌরসভা | ১৫৩২৭৯ | ১৫১৩৪৫ (৯৮.৭৪%) | ৭৫৫ (০.৪৯%) | ৫৭৬ (০.৩৮%) | ৭৪ (০.০৫%) | ৪৪ (০.০৩%) | ১৮ (০.০১%) | ৪৬৭ (০.৩০%) | হিন্দু |
২০১১ সালের জনগননা অনুসারে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জনসংখ্যা ১,৬৭৬,২৭৬ [৮] যেটি গ্যাবন বা গিনি-বিসাউ-এর জনসংখ্যার প্রায় সমান ৷[৯] ভারতে 715টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যা অনুসারে এটির স্থান ২৯৫তম।[৮] জেলার জনঘনত্ব ৭৫৫ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (১,৯৬০ জন/বর্গমাইল)।[৮] ২০০১-২০১১ তে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১১.৫২%। [৮] দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার লিঙ্গানুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৫৬ জন নারী[৮] এবং সাক্ষরতার হার ২০০১ সালে ৬৩.৫৯% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১ সালে ৭২.৮২% (পুরুষ সাক্ষরতা ৭৮.৩৭% ও নারী সাক্ষরতা ৬৭.০১%) হয়েছে।[৮] শিশু সংখ্যা (০-৬ বৎসর অবধি) ১৮৮১৩৫ , যা সমগ্র জনসংখ্যার ১১.২২% ৷
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা নিকট অতীতে রেলযোগে রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের সাথে যুক্ত ৷ জেলাটির সিংহভাগ সীমানা বাংলাদেশের সঙ্গে ৷
কিছুদিন আগে অরধি এ অঞ্চল রেলপথে সংযুক্ত ছিলো না ৷ ২০০৪ সনে প্রথম মালদহের একলাখি থেকে জেলা সদর বালুরঘাট অবধি রেলপথ বসানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হয় ৷ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতে সমগ্র রেলপথের দৈর্ঘ ৫৭ কিলোমিটার ৷ কিছু উল্লেখযোগ্য রেল স্টেশন ও জংশনগুলি হলো -
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাটি রেল বা সড়ক উভয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনীন্নত ৷ কিছু পুর্বে তৈরী হওয়া একমাত্র জাতীয় সড়কটি হলো - ৫১২ নং জাতীয় সড়ক দক্ষিণ দিনাজপুরে যার দৈর্ঘ ৮৩ কিলোমিটার ৷ এছাড়া ১০ নং রাজ্য সড়ক ও একাধিক জেলা সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক রয়েছে ৷ এগুলির মধ্যে অধিকাংশই নির্মীয়মান ৷
বালুরঘাট বিমানবন্দর বালুরঘাট শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে এই বিমানবন্দরটি বন্ধ। এই বিমানবন্দরটি মোট ১৩২.৬৬ একর (৩২ হেক্টর) জমির উপর অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৭৮ ফুট (২৪ মিটার)। ৪,৯০৬ X ১০০ ফুট (১,৪৯৫ X ৩০ মিটার) আয়তনের একটি পাকা রানওয়েও রয়েছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বালুরঘাট বিমানবন্দরের থেকে বিমান পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিষেবা চালুতে টাকা বরাদ্দ হবার সঙ্গে সঙ্গে টেন্ডার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে ২০১৬ প্রথম দিকে কাজ শুরু করছিল পূর্ত দফতর। এই কাজের জন্য সরকার প্রায় ১১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। বরাদ্দ টাকায় বিমানবন্দরের ভেঙ্গে যাওয়া রানওয়ে থেকে শুরু করে এয়ার স্ট্রিপ, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, এয়ার ট্র্যাফিক, স্ক্রু এবং পাইলটদের রেস্ট রুম, প্রয়োজন মত রেস্তরা, রিফ্রেশমেন্ট কাউন্টার এবং অন্যান্য সমস্ত কিছু একেবারে নুতন ভাবে তৈরি করছে পূর্ত দফতর। সেই কাজও প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট মহকুমার হিলি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক-এ হিলি গ্রামটি একটি সীমান্ত স্থলবন্দর যার বিপরীত পাশে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার হিলি অবস্থিত ৷ প্রতিদিনই লরির মাধ্যমে এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে পণ্যসামগ্রী আদান-প্রদান করা হয় ৷
সকল ধর্মের উৎসবই খুব আনন্দ সহকারে উৎযাপিত হয় ৷ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
কিছু বাখ্যাত অনুষ্ঠান ও মেলা -#বৌরহাঠা বুড়ি মেলা কার্তিক মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
এই লোক সংস্কৃতিটি দিনাজপুর অঞ্চলের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাাবে জড়িত ৷ তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতির সম্প্রদায়ের লোকের মাধ্যমে মূলত এই ধারাটি রক্ষিত ৷ গানেরকথা ও বার্তালাপগুলি হয় স্থানীয় উপভাষা অনুযায়ী ৷ সমগ্র ভাষণই প্রতিযোগীকে তাৎক্ষণিক চিন্তা করে উপস্থাপন করতে হয় যদিও বর্তমানে দলগুলি আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয় ৷ তবে বড় সমস্যাটি হলো প্রেক্ষাপট ও গানগুলির লিখিত সংরক্ষণের অভাব ৷
মানহানিকর বা অবৈধ কোনো স্থানীয় ঘটনাকে উপস্থাপন করা ও সচেতনতা বৃদ্ধিই 'খান' এর উদ্দেশ্য ৷ এই সম্প্রদায়ের লোক বংশিহারী ও কুশমণ্ডি অঞ্চলে বেশি দেখা যায় ৷ এই উপস্থাপনাগুলি রাতের বেলা শুরু হয় ও পরদিন ভোর অবধি চলে ৷ বর্তমানে খানরা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে ও খান-দল গঠন করেছে ৷ খান এখন ঋতুকালীন উৎসবে পরিণত হয়েছে ৷ গ্রামের লোকের নবান্নের মাসের পর ঘরে মনোরঞ্জনের জন্য ব্যায় করার পরিস্থিতি উপস্থিত হলেই খানের রমরমা দেখা যায় ৷
দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি ব্লকের কিছু গ্রামেই নাটুয়া নাচ করার রীতি আছে ৷ পুরুলিয়াতে ও একই নামে অপর একটি নাচ উপস্থাপনের রীতি থাকলেও দক্ষিণ দিনাজপুরের নাটুয়া রাধা-কৃৃৃষ্ণ লীলার উপর তৈরী হয় ৷
দিনাজপুরী ও সুরজাপুরি উপভাষাতে রচিত জঙগানগুলি কুমারগঞ্জ অঞ্চলের ঐতিহ্য ৷
এই ধরনের নাচ জনজাতি ও আদিবাসীগোষ্ঠী দ্বারা উপস্থাপিত হয় ৷ ছেলেরাই সাধারণত এটি করে থাকে ৷ কাঠ দিয়ে তৈরী মুখোশগুলিতে বিভিন্ন পশু , দেব-দেবী বা কৌনো কৌতুকের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় ৷ নাচিয়েরা ছাড়াও বাদনদার ও বাঁশিবাদকরা তাদের সঙ্গ দেয় ৷
এটি দুটি রূপক গ্রামীণ চরিত্র , পুরুষটি হালনা ও মহিলা হালনানী ৷ এদের প্রধান কাজ হলো সরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন ও উদ্যোগমূলক কাজে সরকার ও সাধারণের যোগসাধন ঘটানো ৷
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অনেক জেলা সহ গড় শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর ৷ জেলার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হলো --
#ভাইওর জালালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়(1923) , তপন ব্লক
# ভাইওর জালালিয়া এ.এস. পি. বিদ্যালয়,
#মকদমপুর এ. এফ .পি. বিদ্যালয়
#বদলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বংশীহারী ব্লক
য়াবাজার এফ.পি প্রাথমিক বিদ্যালয়## খাগাইল টঙ্কনাথ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা দুটি মহকুমাতে বিভক্ত
বালুরঘাট মহকুমার অবস্থান জেলাটির পূর্বদিকে যা ৪ টি তহশিল বা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত৷
তহশিলটি ২১৮ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত; যথাক্রমে - বাটুন, ভউর, দেওর, জাকিরপুর, মোহনা, রামকৃৃষ্ণপুর, সাফানগর, সমঝিয়া৷ সদরটি কুমারগঞ্জ-এ অবস্থিত৷
তহশিলটি ২৭৯ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত; যথাক্রমে - আচমতপুর, হজরতপুর, রামচন্দ্রপুর, গুরাইল, তপন, আউটিনা, রামপাড়া চেঞ্চরা, হেরখুড়া, দীপখণ্ড, গোফানগর, মালঞ্চ৷ সদরটি তপন-এ অবস্থিত৷
তহশিলটি ৩০৭ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ১১ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত; যথাক্রমে - পতিরাম,বোল্লা, বোয়ালদার, জলঘর, চকভৃগু, ভাটপাড়া, নজিরপুর, গোপালবাটি, অমৃতখণ্ড, চিঙগিশপুর, দানগা৷ সদরটি বালুরঘাট-এ অবস্থিত৷
তহশিলটি ৮২ গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৫ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত; যথাক্রমে - বিনশিরা, ধলাপাড়া, হিলি, জামালপুর, পানজুল৷ সদরটি হিলি-তে অবস্থিত৷
গঙ্গারামপুর মহকুমার অবস্থান জেলাটির পশ্চিমে যা ৪ টি তহশিল বা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত৷
তহশিলটি ২৩১ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৮ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত; যথাক্রমে - কুশমণ্ডি, কালিকামোড়া, দেউল, বেড়াইল, আকচা, করঞ্জ, উদয়পুর, মাটিগাঁও৷ সদরটি কুশমণ্ডি-তে অবস্থিত৷
তহশিলটি ২০২ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ১১ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত; যথাক্রমে - গঙ্গারামপুর, নন্দনপুর, বেলবাড়ি-১ ও ২, দামদামা, শুকদেবপুর, জাহাঙ্গিরপুর, উদয়, বাচুরিয়া, চালুন, অশোকগ্রাম৷ সদরটি গঙ্গারামপুর-এ অবস্থিত৷
তহশিলটি ১৬১ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৫ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত; যথাক্রমে - ব্রজবল্লপুর, গাঙ্গুরিয়া, শিবপুর, এলাহাবাদ, মহাবাড়ি৷ সদরটি বংশিহারী-তে অবস্থিত৷
তহশিলটি ১৫১ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৬ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত; যথাক্রমে - বাইরহট্ট, বাগিচাপুর, সঈদপুর, পুন্ডরী, সিরসি, গোকর্ণ৷ সদরটি হরিরামপুর-এ অবস্থিত৷
জেলাটির পাঁচটি জনগণনা নগর হলো -
উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; মালদহ জেলার গাজোল , বামনগোলা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সীমানা বন্টিত৷
বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, হাকিমপুর, বিরামপুর, দিনাজপুর, বিরল উপজেলা; জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট, পাঁচবিবি উপজেলা; নওগাঁ জেলার সাপাহার, পত্নীতলা, ধামুরহাট উপজেলার সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সীমানা বন্টিত৷