নরেন্দ্র দাভোলকার | |
---|---|
জন্ম | ১ নভেম্বর ১৯৪৫ |
মৃত্যু | ২০ আগস্ট ২০১৩ | (বয়স ৬৭)
মৃত্যুর কারণ | হত্যা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | সমাজসেবীমহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি -র প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি |
দাম্পত্য সঙ্গী | শৈল দাভোলকার |
সন্তান | মুক্তা দাভোলকর হামিদ দাভোলকার |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী (২০১৪) |
ওয়েবসাইট | antisuperstition |
নরেন্দ্র অচ্যুত দাভোলকার (১ নভেম্বর, ১৯৪৫ –২০ আগস্ট, ২০১৩)[১] ভারতীয় চিকিৎসক , সমাজসেবী, যুক্তিবাদী, কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের নেতা, লেখক এবং মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। [২] সমাজ হতে কুসংস্কার দূর করে মানুষ কে বিজ্ঞানমনস্ক হিসাবে গড়ে তুলতে যে আন্দোলনের সূচনা করছিলেন তাতে দক্ষিণপন্থী উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের বিরোধ ছিল। ফলস্বরূপ, তিনি ২০ আগস্ট ২০১৩ দুই আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান। তিনি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে তার সমাজ সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকারের মরণোত্তর পদ্মশ্রী সম্মানে তিনি ভূষিত হন। [৩]
নরেন্দ্র দাভোলকারের জন্ম ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর। পিতার নাম অচ্যুত দাভোলকার আর মায়ের নাম ছিল তারাবাঈ। নরেন্দ্র দশ ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তার পড়াশোনা শুরু হয় সাতারার নিউ ইংলিশ স্কুলে। মাধ্যমিক পাশের পর সাঙ্গলির উইলিংডন কলেজ হয়ে ডাক্তারি পড়ার জন্য মরাজ-এর সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হন এবং সেখান থেকেই এমবিবিএস পাশ করেন। নরেন্দ্র শিবাজী ইউনিভার্সিটি কাবাডি দলের অধিনায়ক ছিলেন এবং ভারতের কাবাডি দলের হয়ে তিনি বাংলাদেশ সফরে যান। কাবাডিতে সাফল্যের জন্য তিনি মহারাষ্ট্র সরকারের 'শিব ছত্রপতি যুবরাজ' সম্মানে ভূষিত হন। দাভোলকার বারো বৎসর সক্রিয়ভাবে চিকিৎসক হিসাবে পরিষেবা দেন।
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে সমাজকর্মী হিসাবে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেন দাভোলকার। “বাবা আদভ”-এর - “এক গাঁও এক পানোঠা” আদর্শে (One village – One well) ন্যায়-বিচারের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং ধীরে ধীরে দাভোলকার কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ ওঠেন এবং “অখিল ভারতীয় অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি”-র সাথে যুক্ত হন। পরে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি' প্রতিষ্ঠা করেন। কত ভণ্ড সাধু ধর্ম ও মোক্ষলাভের নামে ভাঁওতাবাজি বুজরুকির মাধ্যমে দুর্বলচিত্ত, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন কত মানুষকে প্রতারিত করে। এদের প্রতিহত করতে,সমাজে অন্ধবিশ্বাসের প্রকোপ আটকাতে এবং কুসংস্কার নির্মূল করে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করে তার এই সংগঠন। পঁচিশ বছরে মহারাষ্ট্র জুড়ে ২২৫ টি এইরকম কেন্দ্র চালু করেছেন দাভোলকর। যেসব চমৎকারী কাণ্ডকারখানা নানা সাধু-সন্তরা দেখিয়ে থাকেন,তার পেছনে লুকিয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিগুলো তিনি ফাঁস করে দিতেন। তাদের তান্ত্রিক চিকিৎসায় প্রবঞ্চিত হতেন বহু মানুষ। প্রায় তিন দশক ধরে এইসব ভণ্ড সাধুবাবাদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন তিনি। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের জীবনে স্বার্থ, সুরক্ষা মর্যাদা ও উন্নত জীবনচর্চায় শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সাতারায় 'পরিবর্তন' নামে এক সামাজিক কর্ম কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ হতে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে দাভোলকার দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি সাম্যের অধিকার, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, ভারতের ধর্মীয় ব্যবস্থা ও ধর্মীয় দাঙ্গা প্রতিহত ইত্যাদির ব্যাপারে অতি সক্রিয় ছিলেন। তিনি মারাঠাওয়াড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে "ড. বি আর আম্বেদকর মারাঠাওয়াড়া বিশ্ববিদ্যালয়" করার পক্ষে নামান্তর আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। মারাঠা পাক্ষিক "সাধনা" র সম্পাদনাও করেছেন।
বিবাহ করেছিলেন শৈল দেবীকে। তাঁদের এক পুত্র 'হামিদ' ও এক কন্যা 'মুক্তা'। ছেলের নাম মারঠি মুসলমান সমাজকর্মী ও সংস্কারক 'হামিদ দলবাই'এর নাম অনুসারে রাখেন। তিনি নাস্তিক ছিলেন বলেই তাদের বিবাহ পঞ্জিকা অনুসারে ও প্রথাগত রীতি মেনে করান নি।
২০১০ খ্রিস্টাব্দে দাভোলকারের 'মহারাষ্ট্র অন্ধ শ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি'কুসংস্কার বিরোধী ও ব্লাক ম্যাজিক বিলের খসড়া তৈরি করে। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি ও শিবসেনা দলের বিরোধিতা করে। কারণ হিসাবে বলা হয় এটি হিন্দু সংস্কৃতি রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী হবে। কিন্তু দাভোলকার এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরিষ্কার জানিয়েছিলেন - এ বিলে ঈশ্বর ও ধর্মীয় বিষয়ে কিছুই নেই, বিলটি সংবিধানে প্রদত্ত পূজা-অর্চনার মৌলিক স্বাধিকারের বিরুদ্ধে নয়, এটি সমাজে প্রবঞ্চনা প্রতিহত ও শোষণ হতে নিষ্কৃতির জন্যই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তার হত্যার চার দিনের ভিতর অর্ডিন্যান্স পাশ হয়ে যায়। এর পর ‘জাত পঞ্চায়েত’-এর ক্ষমতা কেড়ে নিতে অন্য একটি জরুরি বিল পাশ করাতে সক্ষম হয় তার সংগঠন। [৪]
কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের অচলায়তন ভেঙে ফেলা সহজ কাজ ছিল না । স্বভাবতই দাভোলকার বিরাগভাজন হয়েছেন বহু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ও তথাকথিত সমাজপতিদের। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে আগস্ট মহারাষ্ট্রের পুনেতে যখন তিনি প্রাতঃভ্রমণে বের হন তখন সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী কোন এক সংগঠনের নির্দেশে দু'জন আততায়ী তার উপর চার রাউন্ড গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই তিনি পরলোক গমন করেন
নরেন্দ্র দাভোলকার সমাজসেবী হিসাবে যে অবদান রেখেছেন তার স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকার ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে মরণোত্তর পদ্মশ্রী প্রদান করে। সর্ব ভারতীয় জনবিজ্ঞান নেটওয়ার্ক তথা অল ইন্ডিয়া পিপলস্ সায়েন্স নেটওয়ার্ক (এআইপিএসএন) দাভোলকারের প্রয়াণ দিবসটি (আগস্ট ২০) ন্যাশন্যাল সায়েন্স টেম্পার ডে তথা জাতীয় বৈজ্ঞানিক মনন দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।