নামসমূহ | |
---|---|
ইউপ্যাক নাম
১,২,৩-ট্রাইনাইট্রোক্সিপ্রোপেন
| |
অন্যান্য নাম
১,৩-ডাইনাইট্রোঅক্সিপ্রোপান-২-আইল নাইট্রেট
প্রোপেন-১,২,৩-ট্রাইআইল ট্রাইনাইট্রেট | |
শনাক্তকারী | |
ত্রিমাত্রিক মডেল (জেমল)
|
|
ইসিএইচএ ইনফোকার্ড | ১০০.০০০.২১৯ |
ইসি-নম্বর | |
পাবকেম CID
|
|
ইউএন নম্বর | 0143, 0144, 1204, 3064 |
কম্পটক্স ড্যাশবোর্ড (EPA)
|
|
| |
বৈশিষ্ট্য | |
C3H5N3O9 | |
আণবিক ভর | 227.09 g/mol |
বর্ণ | স্পষ্ট হলুদ বা বর্ণহীন তৈলাক্ত তরল |
ঘনত্ব | 1.6 g/cm³ at 15 °C |
গলনাঙ্ক | ১৩.২ °সে (৫৫.৮ °ফা; ২৮৬.৩ K) |
স্ফুটনাঙ্ক | 50-60 °C (122-140 °F) তাপমাত্রায় এর উপাদানগুলোতে বিশ্লিষ্ট হয়। |
বিষ্ফোরক উপাত্ত | |
আঘাত সংবেদনশীলতা | উচ্চ |
ঘর্ষণ সংবেদনশীলতা | উচ্চ |
আপেক্ষিক গুরুত্ব গুণনীয়ক | ১.৫ |
ঝুঁকি প্রবণতা | |
এনএফপিএ ৭০৪ | |
সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছাড়া, পদার্থসমূহের সকল তথ্য-উপাত্তসমূহ তাদের প্রমাণ অবস্থা (২৫ °সে (৭৭ °ফা), ১০০ kPa) অনুসারে দেওয়া হয়েছে। | |
তথ্যছক তথ্যসূত্র | |
নাইট্রোগ্লিসারিন (NG) হলো নাইট্রেটিং গ্লিসারল সমৃদ্ধ একটি ভারী, বর্ণহীন, এবং তৈলাক্ত বিস্ফোরক পদার্থ। এটি ট্রাইনাইট্রোগ্লিসারিন, ১,২,৩-ট্রাইনাইট্রোক্সিপ্রোপেন এবং গ্লিসারিল ট্রাইনাইট্রেট ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ১৮৬০-এর দশক থেকে এটি বিস্ফোরক উৎপাদনের জন্য কনস্ট্রাকশন এবং ডিমোলিশন শিল্পকারখানায় একটি কার্যকরী পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একই সাথে ১৮৮০’র দশক থেকে এটি সশস্ত্র বাহিনীতেও বিস্ফোরক তৈরিতে ও কিছু কঠিন প্রপেলান্ট যেমন, করডাইট ও ব্যালিসটাইট-এ নাইট্রোসেলুলোজের গ্যালানটিনাইজার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন সুরক্ষায়, যেমন এনজাইনা এবং ক্রনিক হার্ট ফেইলুর-এর ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার আছে। ফার্মাকোলজিতে নাইট্রোগ্লিসারিন গ্লিসারিল ট্রাইনাইট্রেট নামে পরিচিত।
ব্লাক পাউডারের পর নাইট্রোগ্লিসারিন-ই প্রথম বিস্ফোরক যেটা সহজে প্রস্তুত করা যায় এবং ব্লাক পাউডার থেকেও শক্তিশালী। রসায়নবিদ অ্যাসকানিও সোবরেরো ১৮৪৭ সালে এটি আবিষ্কার করেন। তিনি তখন টুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে টিজে পিলোউজের অধীনে কাজ করছিলেন। তিনি প্রাথমিকভাবে তার আবিষ্কারের নাম দিয়েছিলেন পাইরোগ্লিসারিন, এবং তিনি এটিকে তার ব্যক্তিগত পত্র ও জার্নালের নিবন্ধে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এটা নাড়াচাড়া করা খুবই বিপজ্জনক ও অনেকটাই অসম্ভব।
সোবেরোর একজন ফেলো ছাত্র ছিলেন আলফ্রেড নোবেল, যিনি ফর্মুলাটি তার বাড়ি সুইডেনে নিয়ে যান এবং এই বিপজ্জনক পদার্থটিকে কীভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে সেই পরীক্ষা করতে থাকেন। ১৮৬৪ সালে হেলেনবোর্গের একটি পারিবারিক অস্ত্র কারখানায় এক নাইট্রোগ্লিসারিন বিস্ফোরণে তার ছোটো ভাই এমিলসহ এবং বেশ কয়েকজন শ্রমিক মারা যান।[১] এক বছর পরে নোবেল আলফ্রেড নোবেল এন্ড কোম্পানির গোঁড়াপত্তন করেন। এ ফ্যাক্টরিতে তিনি নাইট্রোগ্লিসারিন ও গানপাউডারের তরল মিশ্রণ তৈরি উৎপাদন করতেন যার নাম তিনি দেন “ব্লাসটিং ওয়েল” বা বিষ্ফোরক তেল। এটা পরিবহন করা ছিলো খুবই ঝুকিপূর্ণ। এমনকি ক্রুমেলের এই কারাখানাটিও দুই বার মারাত্নক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো।[২]
১৮৬৬ সালের এপ্রিলে তিন ক্রেট (এক প্রকার পাত্র) নাইট্রোগ্লিসারিন জাহাজে করে সেন্ট্রাল প্যাসিফিক রেলরোডের জন্য ক্যালিফোর্নিয়াতে পাঠানো হয়। তারা দেখতে চেয়েছিলেন যে, এটা কতোটা বিস্ফোরণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং এর মাধ্যমে সিয়েরা নেভাদার ভিতর দিয়ে ১,৬৫৯ ফুট (৫০৬ মিটার) দীর্ঘ সামিট টানেল তৈরির প্রকল্পের কাজের গতি বাড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটা ক্রেট বিস্ফোরিত হয়ে সান ফ্রান্সিসকোতে ওয়েলস ফার্গোর অফিস উড়ে যায় এবং ১৫ জন মানুষ নিহত হন। এ ঘটনার পর ক্যালির্ফোনিয়াতে তরল নাইট্রোগ্লিসারিনের পরিবহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়।
পরবর্তীতে তরল নাইট্রোগ্লিসারিন আরো অনেক স্থানে নিষিদ্ধ করা হয়। এরকম অবস্থায় ১৮৬৭ সালে আলেফ্রেড নোবেল এন্ড কোম্পানি ডিনামাইট তৈরি করে। এতে নাইট্রোগ্লিসারিনের সাথে ক্রুমেল পাহাড়ে পাওয়া ডায়াটোমেসিউয়াস মাটি (জার্মান ভাষায় কাইসেলগার) ব্যবহার করা হয়। একই রকম মিশ্রণে তৈরি অন্যান্য বিস্ফোরক, যেমন ডুয়ালাইন (১৮৬৭), লিথোফ্র্যাকটিউর (১৮৬৯), এবং জেলিগনাইট (১৮৭৫), এছাড়াও
এভাবে আরো একটি আবিষ্কার, যেমন অ্যামিল নাইট্রেট বুকের ব্যথা উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ডাক্তার উইলিয়াম মুরেল পরীক্ষা করে দেখেন যে নাইট্রোগ্লিসারিন এনজাইনা পেকটোরিসের উপশমে এবং রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। ১৮৭৮ সালে তিনি তার রোগীদের ঔষধ হিসেবে স্বল্প মাত্রায় নাইট্রোগ্লিসরিন দেওয়া শুরু করেন। ১৮৭৯ সালে দ্য ল্যানসেট পত্রিকায় তার এই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। যে সকল রোগী নাইট্রোগ্লিসারিন বিস্ফোরণের সাথে পরিচিত তাদেরকে আতঙ্ক থেকে দূরে রাখতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নাইট্রোগ্লিসারিনকে “গ্লিসারিল ট্রাইনাইট্রেট” বা “ট্রাইনাইট্রিন” নাম দেওয়া হয়।[৩]
নাইট্রোগ্লিসারিনের শিল্পোৎপাদন সাধারণত সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিডের ৫০:৫০ মিশ্রণের মাধ্যমে করা হয়। এটি সাদা ধূমায়িত নাইট্রিক এসিড ও গাঢ় সালফিউরিক এসিড () মিশ্রিত করার মাধ্যমেও উৎপাদন করা যায়। উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য এ মিশ্রণে প্রায় সময়ই অতিগাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড হিসেবে অলিয়াম (বেশি পরিমাণ সালফার ট্রাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ সালফিউরিক এসিড), এবং অ্যাজিওট্রপিক নাইট্রিক এসিড (যেখানে নাট্রিক এসিডের পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগ ও বাকিটুকু জল) ব্যবহার করা হয়।
নাইট্রোগ্লিসারিন থেকে ১৮৭৫ সালে আলফ্রেড নোবেল ব্লাসটিং জিলেটিন (যা জেলিগনাইট নামেও পরিচিত) নামে একটি বিস্ফোরক আবিষ্কার করেন। বিস্ফোরকটি ছিলো নমনীয় এবং এর উৎপাদন খরচ ছিলো তুলনামূলক কম। তিনি এটি উৎপাদনে ব্যবহার করেন নাইট্রোগ্লিসারিন, কাঠের মণ্ড, এবং সোডিয়াম বা পটাশিয়াম নাইট্রেট।
প্রথম ও দ্বিতীয়, উভয় বিশ্বযুদ্ধেই সামরিক কাজে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রোগ্লিসারিন উৎপাদিত ও ব্যবহৃত হয়েছিলো।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গ্রেটনায় অবস্থিত এইচএম কারখানায়, যেটা ছিলো যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড়ো প্রপেলান্ট উৎপাদন কারখানা—প্রতি সপ্তাহে ৮১২ টন করডাইট আরডিবি উৎপাদন করতো। আর এর জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩৩৬ টন নাইট্রোগ্লিসারিন প্রয়োজন পড়তো। এছাড়া আরডিবি বিস্ফোরক উৎপাদনের জন্য হলটন হিথে রয়্যাল নেভি করডাইট ইন্ডাস্ট্রি নামে যুক্তরাজ্যর রয়্যাল নেভির নিজস্ব কারখানা ছিলো।
কানাডাতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আরো একটি অধূমায়িত বিস্ফোরক উৎপাদন কারখানা তৈরি হয়েছিলো। কানাডিয়ান এক্সপ্লোসিভ লিমিটেড প্রতি মাসে ১.৫০০,০০০ পাউন্ড (৬৮১ টন) করডাইট উৎপাদনের জন্য ওন্টারিওর নোবেল-এ এই কারখানাটি তৈরি করেছিলো। এর জন্য প্রতি মাসে ২৮৬ টন নাইট্রোগ্লিসারিন প্রয়োজন হতো।