নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৮ নভেম্বর ১৯৭০ | (বয়স ৫২)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী, ভারতীয় |
পেশা | লেখক |
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮ – ৮ নভেম্বর, ১৯৭০) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। জন্ম অবিভক্ত বাংলার (অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত) অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার বালিয়াডাঙ্গীতে (বর্তমানে বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও)।[১] তিন খণ্ডে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস উপনিবেশ (১৯৪২, ১৯৪৫, ১৯৪৬) পাঠকসমাজে সমাদৃত হয়। তার উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প সংকলন বীতংস (১৯৪৫), দুঃশাসন (১৯৪৫), ভোগবতী (১৯৪৭) এবং উল্লেখযোগ্য উপন্যাস বৈজ্ঞানিক (১৯৪৭), শিলালিপি (১৯৪৯), লালমাটি (১৯৫১), সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী (১৯৫৫), পদসঞ্চার (১৯৫৪)। সাহিত্যে ছোটগল্প তার একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। ছোটদের জন্য তার সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্র টেনিদা খুবই জনপ্রিয়।[২] তার লেখা কিছু উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প হল — ইতিহাস, নক্রচরিত, হাড়, বীতংস, রেকর্ড, টোপ, আদাব, প্রভৃতি।[৩]
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় দিনাজপুর জিলা স্কুল, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র ছিলেন। [৪]
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার (বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলা) বালিয়াডাঙ্গি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বরিশালের বাসুদেব পাড়া গ্রামে। তাঁর শিক্ষাকাল কাটে দিনাজপুর, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ ও কলকাতায়। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন এবং ডক্টরেট্ ডিগ্রি নেন ১৯৬০ সালে। এরপর তিনি জলপাইগুড়ি কলেজ, সিটি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।[৫]
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছেলেবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম লেখা ছাপা হয় মাস পয়লা শিশু মাসিকে। সন্দেশ, মুকুল, পাঠশালা, শুকতারা প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন। সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় সুনন্দর জার্নাল লিখে সুখ্যাতি অর্জন করেন। বাঙালির জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, রোজকার সমস্যা ও রাজনীতি নিয়ে লেখা নিয়মিত এই জার্নাল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল বাঙালি পাঠকের কাছে।[৬] এ সময় তিনি বড়দের জন্য আনন্দবাজার, বিচিত্রা, শনিবারের চিঠি ও চতুরঙ্গে লেখালেখি করেন। তার সাহিত্য জীবন শুরু হয় কাব্যচর্চা দিয়ে। পরে তিনি গল্প-উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। বড়দের জন্য রচিত প্রথম প্রকাশিত ‘উপনিবেশ’ ছাপা হয় মাসিক ভারতবর্ষে। ওটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে। তার উপন্যাস-গল্প রচনার অনুপ্রেরণা যোগান উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, সুধাংশুকুমার রায় চৌধুরী, বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়, মন্মথ সান্যাল, সজনীকান্ত দাস ও ফনীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অমর খ্যাতি বড়দের জন্য রচিত উপন্যাস ও গল্পের জন্য। কিন্তু শিশু-কিশোর সাহিত্য রচনায় তার খ্যাতি বড়দের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। টেনিদা তার অনন্য সৃষ্টি। এছাড়াও শিশুদের জন্যে অজস্র ছোটগল্প লিখেছেন। তার রচিত পদ্মপাতার দিন, পঞ্চাননের হাতি, লালমাটি, তারা ফোটার সময়, ক্যাম্বের আকাশ, বাংলা গল্প বিচিত্রা, ঘণ্টাদার কাবলু কাকা, খুশির হাওয়া, কম্বল নিরুদ্দেশ, চারমূর্তির অভিযান, ঝাউবাংলার রহস্য ও ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যে নতুন সংযোজন।
বড়দের জন্য রচিত তার উলেস্নখযোগ্য বইগুলো হলো: একতলা, কালা বদর, কৃষ্ণপক্ষ, গন্ধরাজ, পন্নন্তর, ট্রফি, তিমির তীর্থ, দুঃশাসন, গদসঞ্চার, বনজ্যোৎন্সা, বিদিশা, বীতংস, বৈতালিক, ভাঙাবন্দর, চন্দ্রমুখর, মহানন্দা, রামমোহন, শিলালিপি, শ্বেতকমল, সাগরিকা, স্বর্ণ সীতা, সূর্যসারথী, সঞ্চারিণী, সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী, সাপের মাথায় মণি, আশিধারা, ভাটিয়ালী, আগন্তুক, অমাবস্যার গান, বিদুষক, সাহিত্যে ছোটগল্প, বাংলা সাহিত্য পরিচয়, ছোটগল্পের সীমারেখা ও কথাকোবিদ রবীন্দ্রনাথ।
তিনি ছোট গল্প বিষয়ে ডি.লিট ডিগ্রি লাভ করেন।[৭]
নবডঙ্কা
বীতংস (১৯৪৫)(প্রথম গল্প সংকলন)
দুঃশাসন (১৯৪৫) ভোগবতী (১৯৪৭)
ডি.এম লাইব্রেরীর প্রকাশনায় ১৩৬৩ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয় 'সাহিত্যে ছোটগল্প' গ্রন্থখানি। পরিমার্জিত প্রকাশ ১৩৬৫ বঙ্গাব্দে। প্রথম মিত্র ও ঘোষ সংস্করণ শ্রাবণ ১৪০৫ বঙ্গাব্দে। অষ্টম মুদ্রণ ভাদ্র ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। গ্রন্থখানি উৎসর্গ করেন 'গল্পগুরু মহাকবি রবীন্দ্রনাথকে'।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ৮ই নভেম্বর ৫২ বছর বয়সে মারা যান।